বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

আক্ষেপ

"ছোট গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান ᴍᴅ. ɪǫʙᴀʟ ᴍᴀʜᴍᴜᴅ (০ পয়েন্ট)

X কিশােরকণ্ঠ জাতীয় গল্প লেখা প্রতিযােগিতা ২০২০-এর খ-গ্রুপে পঞ্চম স্থান অধিকারী গল্প। লেখক: রিয়াজ উদ্দিন। একশাে বিশ গজের প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্মটা-ই তার পৃথিবী । একটা ত্রিভুজ আকৃতির কাঠের ফ্রেমের তিন কোনায় তিনটি বিয়ারিং লাগিয়ে তৈরি একটা যানবাহন। এই বাহনের ওপর একটা কাঠের তক্তা ফেলে বসে থাকে সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানাে কাশেম। পূর্ব দিকে ফারুকের চায়ের দোকান থেকে পশ্চিমে আম গাছটা পর্যন্ত প্লাটফর্ম। হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে এই গাড়িটিকে নিয়ে প্লাটফর্মের আগা-মাথা দিনে কয়েকবার আসা-যাওয়া করে সে। তার কাছে এই বিয়ারিংয়ের গাড়িটা শরীরের অন্যান্য অঙ্গের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় । ঢাকামুখী প্রাটফর্ম বলে এখানে প্রচুর ভিড় হয় । ভিড় হলে সুবিধা হয় যেমন কষ্টও তেমনই । ট্রেন এলে মানুষের এত তাড়াহুড়া থাকে যে নিচে পড়ে থেকে একজন আল্লাহর নামে সাহায্য চাইছে এর কোনো খেয়াল থাকে না। বেশির ভাগ ট্রেনই ঠিক সময়ে আসে না। কাশেমের সুবিধা হয়। মানুষ অপেক্ষা করতে থাকে । কাশেম সবার কাছে হাত পাতে । আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু সাহায্য দেন মা, বাজান, ভাই, আপু ইত্যাদি বলে সাহায্য চায় সে । অনেকে পাঁচ দশ টাকা দেয় । অনেকে না দেখার ভান করে আর অনেকে দেয় ধমক । এভাবেই বছরের পর বছর কাটছে কাশেমের । আসরের সময় থেকে এশারের সময় পর্যস্ত এ লাইনে কোন ট্রেন নেই । এশারের সময় পরপর দু'টি ট্রেন ছেড়ে যায় । রাতে যায় মেইল ট্রেনগুলো । এগুলো এই স্টেশনে থামে না। বরং স্টেশনটা ক্রস করে উচ্চস্বরে হর্ন দিতে দিতে বুক চিতিয়ে । মাগরিবের সময় থেকে জমে উঠে ফারুকের চায়ের দোকান । স্টেশনের একটু সামনে গিয়ে ডানপাশেই একটা কলেজ । কলেজের ছেলেরা দলবেঁধে চা খেতে আসে । এরা চা খায় আর আড্ডা দেয় । কাশেম এদের কাছে টাকা চায় না। তবে কাছাকাছি থাকে ৷ এদের কথা শোনে । শুনতে শুনতে অনেক কথা কাশেমের মুখস্থ । কয়েকটি ছেলে আসে যাদের কাছ থেকে কাশেম দেশের খবরাখবর শোনে । ইন্ডিয়া কোন নদীর পানি ছেড়ে দিল; কয়টা গ্রাম পানিতে ভুবে গেল । কোথায় ঝড় হলো; কয়জন লোক মারা গেল । কোন মন্ত্র কি বললেন এগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করে আর আফসোস করে । অনেক সময় ছেলেগুলো বেশ হতাশার সুরে বলে । কেউ বলে দেশে চাকরির অভাব, পড়াশোনা করে কী হবে। কেউ বলে বিদেশ পাড়ি জমাবে আবার কেউ বলে মরলে দেশেই পড়ে মরবে । সময় যখন এরা সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলে কাশেম হারিয়ে যায় তার অতীতে। একটা অটোরিকশায় ছেলেটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে কাশেম। ডানপাশে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে তার স্ত্রী কোহিনূর । সুলতানপুর বিশ্বরােডে মােড় নিলাে গাড়িটা । হঠাৎ সামনে থেকে এগিয়ে আসছে একটা ট্রাক। তারপর আর কিছু বলতে পারে না। সদর হাসপাতাল থেকে এক মাস পর ফিরে এসে দেখে তার ঘরের আর কেউ বেঁচে নেই । কিছুদিন পরই তার জায়গা হলাে এই প্লাটফর্মে । এসব ভেবে কাশেমের চোখে পানি আসে। কনুই দিয়ে সে পানি মুছে নেয় । কাশেমেরও ইচ্ছে হয় কারাে সাথে আড্ডা দিতে। কিন্তু কার সাথে দেবে! দুইটা টাকা চাওয়া ছাড়া আর কোনাে কথা বলা হয় কারাে সাথে । অনেকগুলাে ছেলেই আছে। যারা মুখচেনা। মাঝে মাঝে চোখাচোখি হয়, ছেলেরা চোখ ফিরিয়ে নেয়। আর কোনাে কথা হয় না। আশ্বিন মাসের দিন। শেষ রাতে হালকা বৃষ্টির পর ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। পাকা প্লাটফর্মে খুব ঠাণ্ডা । ঘুম আসছে না কাশেমের। লেজ কাটা কুকুরটাও জেগে আছে। কর্ণফুলী মেইল ট্রেনটা আসছে কাউতুলি ব্রিজ পার হয়ে । এই স্টেশনে থামে না ট্রেনটি । ব্রিজ পার হওয়ার সময় ঝকঝক আওয়াজ করে ট্রেনগুলাে । শুনলেই বুঝা যায় ট্রেনটা পার হয়ে আসছে। যে। হঠাৎ রেললাইনের দিকে চোখ পড়লাে কাশেমের। একটা লােক রেললাইনের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে; নড়ছে না একটুও। ট্রেনটাও শব্দ করে এগিয়ে আসছে । হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে পূর্ব দিকে একটু এগিয়ে গেল কাশেম। আরে, লােকটা তাে তার চেনা। কলেজে পড়ে; বিকেলে ফারুকের দোকানে চা খেতে আসে বন্ধুদের নিয়ে। এখনি তাে ট্রেনটা এসে শেষ করে দেবে তাকে । সইরা পড়েন ভাইজান, ট্রেন আসছে ভাইজান, নিজের জীবনটা নিজে এভাবে দেবেন না ভাইজান বলে চিৎকার করে ডাকতে থাকলো কাশেম । ছেলেটি শুনছে কিন্ত সরছে না। কাশেমের ইচ্ছে হলো লাফ দিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে রেললাইন থেকে সরিয়ে নিতে । কিন্তু তার যে পা নেই! বিয়ারিংয়ের গাড়িটা এতটুকু কাজে লাগলো না! এই মুহূর্তে দুটি পায়ের অভাব সবচেয়ে বেশি উপলদ্ধি করলো কাশেম । কাশেম চিৎকার করে ডাকছে আর তাকিয়ে দেখলো আশপাশে কেউ আছে কি না । আশপাশে কোথাও কেউ নেই, আছে শুধু লেজকাটা কুকুরটা । দানবের মতো চিৎকার করতে করতে ট্রেনটা চলে গেল। সাথে সাথে পৃথিবী থেকে চলে গেল একটা প্রাণ । আস্ত মানুষটা রেললাইনের পাশে রক্ত আর মাংসের দলা হয়ে পড়ে রইলো । ভেজা ভেজা চোখে এদিকে তাকিয়ে আছে কাশেম । মনে মনে বলতে গেলে জমে যাওয়া গলা ছিড়ে বেরিয়ে এলো এত সুন্দর মানুষগুলো মরতে চায় কেন?


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ আক্ষেপ
→ আক্ষেপের হাতছানি
→ আক্ষেপ তোমি অহর্নিশ!
→ কিছু আক্ষেপ! কিছু কষ্ট !
→ রাজা রাণীর আক্ষেপ
→ তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now