বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
-- সরি শুভ আমার পক্ষে তোমার সাথে রিলেশন কন্টিনিউ করা আর সম্ভব না
মহুয়ার কথা শুনে আমার বুকের ভিতরটা দুমরে মচরে উঠলো । আমি ভিষন অবাক হয়ে যাই ওর কথা শুনে ।
-- কেনো ? আমার অপরাধ কি ?
-- তোমার কোনো অপরাধ নেই । আমি পরিস্থিতির শিকার
-- কোন পরিস্থিতির শিকার তুমি ?
-- দেখো আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে । আমার আর কিচ্ছু করার নেই
-- বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে দেখেই সব শেষ হয়ে যাবে ? চলো পালিয়ে বিয়ে করি
-- হাহাহাহা পালিয়ে বিয়ে করবে ? নিজেই তো চলো তোমার বাবার টাকায় । আমাকে নিয়ে রাখবে কই ?
-- এই সব কি বলছো তুমি ? কথা দিয়ে ছিলে তো সব সময় পাশে থাকবে
-- আবেগ আর বাস্তবতা এক না
-- দয়া করো আমায় । প্লিজ দয়া করো আমি তোমাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি । তোমাকে অন্য কারোর সাথে আমি সহ্য করতে পারবো না
-- সরি শুভ আমার কিচ্ছু করার নেই
-- দেখো আমি তোমায় কত কেয়ার করি , কত ভালোবাসি , তুমিও তো আমায়...
-- ভালোবাসতাম তবে এখন বাসতে পারবো না ।
-- প্লিজ
-- আমাকে যদি পাওয়ারই হতো তা হলে তুমি নিজেকে যোগ্য করে তুলতে । একটা চাকরির জোগার করতে পারলে না পাঁচ বছর ধরে এখন এই সব নেকামো করে কি লাভ ?
-- আমার পাঁচ বছরের ভালোবাসা তোমার কাছে নেকামো মনে হয় ?
-- হ্যা মনে হয় । আসছি আমি
-- মহুয়া চলে যাচ্ছো যাও মনে রেখো আমার মতো করে তোমায় আর কেউ ভালোবাসবে না
* সেদিন মহুয়া চলে যাওয়ার পরে প্রচন্ড কাঁন্না করেছি আমি । এতোটা কষ্ট যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না । যাকে পাঁচটি বছর ধরে পাগলের মতো ভালোবেসেছি আজ সেই মহুয়াই আমায় ঠকালো ! আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিলো ! সামান্য একটা চাকরির জন্য আমায় ফেলে চলে গেলো !
মহুয়ার কথা ভেবে ভেবে পুরো রাস্তাটা অনেক কষ্টে পার করে বাড়িতে ফিরেছি আমি । আমার পরিবার বলতে আছে শুধু মা আর বাবা । মন খারাপ তাই বাসায় ফিরে তাদের সঙ্গে কোনো কথা বললাম না । নিজের রুমে বসে বসে কাঁন্না করচ্ছি আমি । বুকটা মনে হচ্ছে ফেঁটে যাবে । পাঁচ বছর ধরে যেই পাখিকে সযত্নে নিজের বুকের খাঁচায় আটকে রেখেছিলাম সেই পাখিটা আজ খাঁচা ভেঙে চলে গেলো । কি করে পারলো সে ।
সেই রাতে ঘুম হলো না আমার । মহুয়ার সৃতী নিয়েই কেটে গেলো পুরো রাত । নিজেকে প্রচন্ড একা মনে হতে থাকলো আমার । ধিরে ধিরে বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছেটাও আমি হারাতে বসেছি । এই দিকে যতই দিন যাচ্ছে মহুয়ার বিয়ের দিন তত এগিয়ে আসছে । আর আমি ততই নেশায় আসক্ত হয়ে পরচ্ছি । এই ভাবে চলে গেলো আরও দু দিন । এই কয় দিন মহুয়া আমাকে একটিবারের জন্যও কল করে নাই । আমি নিজেও অনেক চেষ্টা করেছি ওর সাথে যোগাযোগ করতে কিন্তু সম্ভব হয় নাই । যেদিন মহুয়ার বিয়ে হয়ে গেলো । ঐ দিন আমি সিধান্ত নিয়ে ফেললাম নিজেই আত্নহত্যা করবো । জানি এটা পাপ কিন্তু এটাই হলো আমার মুক্তির এক মাত্র রাস্তা । বাসা থেকে বেরিয়ে চলে যাই ডক্টরের দোকানে । সেখান থেকে অনেক গুলো টকসি জাতিয় ( বিষাক্ত ঔষধ ) মেডিসিন কিনে নিয়ে এলাম । আত্নহত্যা করার জন্য । বাসায় আসতেই দেখি মা রাঁন্না করচ্ছে আমার জন্য । বাবা অফিসের কিছু কাজ করচ্ছে । আমি নিজের রুমে চলে গেলাম । বিছানার উপর ঔষধ গুলো রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি এই ব্যর্থ জিবন থেকে মুক্তি পাওয়ার । আমি বোতল খুলতেই দেখলাম বাবা দরজার সামনে দারিয়ে আছে । বাবাকে দেখে হাত কাঁপতে লাগলো আমার । বাবা রুমের ভিতরে এসে নিশ্চুপ হয়ে দারিয়ে আছে । বাবার চোখ বেয়ে পানি পরচ্ছে । আমি তার চোখের জলের কারন বুঝতে পারলাম না । বাবা আমার কাছে এসে আমায় বললো
-- এগুলো কি করচ্ছিস খোকা ? এতো সহজেই আমাদের কে একা ফেলে চলে যাচ্ছিস ? বাবারে আমার ক্ষমতা নেই তো তোর লাশ কাঁধে তোলার । জানিস বাবা তুই যখন ছোট ছিলি তখন এই আমি তোকে নিজের কাঁধে করে পুরো বাড়িটা ঘোড়াতাম । বাবা যখন আমি বুড়ো হয়ে যাবো তখন কার কাঁধে হাত রেখে আমি পুরো দুনিয়া ঘুড়বো বলতে পারিস ? পাঁচ বছর ভালোবেসে তুই তার জন্য নিজের জিবন বিসর্জন দিচ্ছিস তা হলে বাবারে বল আমাকে তোকে যে দৈর্ঘ্য সাতাস বছর ধরে ভালোবেসেছি তার কি কোনো মূল্য নাই তোর কাছে ? তুই আত্নহত্যা করলে কার কি হবে ? সেই মেয়ে তো নিজের সংসার নিয়ে সুখেই থাকবে কিন্তু বাবা আমরা কি নিয়ে থাকবো ? তুই যে আমাদের শেষ ভরসা । এই পাঁচ বছর ওই মেয়ের পিছনে সময় নষ্ট না করে তুই যদি নিজের ক্যারিয়ারে পিছনে সময় নষ্ট করতিস তা হলে ওই মেয়েই তোর প্রীয়জন হয়ে এই বাড়িতে আসতো । আজ তুই সিধান্ত নিয়েছিস আত্নহত্যার । একটিবারের জন্যও আমাদের কথা তোর মাথায় এলো না ? এই তোর ভালোবাসা ? বাহ রে বাবা বাহ অসাধারন প্রতিদান দিচ্ছিস তুই অসাধারন । আর কিছু বলার নেই আমার । জিবন তোর তাই সিধান্ত তোর নিজের
* বাবা চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে গেলো রুম থেকে । আমি নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি । বাবার কথা গুলো হয়তো সামান্য তবে এই কথা গুলোই আমার কাছে অসামান্য । সত্যি তো একটা মেয়ের জন্য আমার জিবন থমকে যাবে ? আমি নিজের জিবন শেষ করে দিবো তার জন্য ? এতে কি লাভ হবে ? যে জিবিত অবস্থায়ই আমার জন্য একটি বার পিছন ফিরে তাকায়নি । সে আমার মৃত্যুতে কাঁদবে এটা সত্যি হাস্য কর । আমি আমার বাবা মা এর কথা ভূলে গেলাম । ছি নিজের উপর ঘৃণা আসছে এখন । যে মা আমাকে জন্ম দিয়েছে । যে বাবা নিজের রক্ত বিক্রি করে আমাকে মানুষ করেছে । আজ আমি তাদেরকেই ভূলে গেলাম । আমি তাদের সন্তান হওয়ার যোগ্য নই ।
* মেডিসিন গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে কথা গুলো বললাম । চোখ বেয়ে পানি পরচ্ছে আমার । কোন মুখে বাবার সামনে দারাবো আমি ? আমি আজ নিজ হাতেই হতা করে ফেলেছি আমার অধিকার । আর না এখন থেকে নিজের জন্য বাঁচবো । নিজের বাবা মা এর জন্য বাঁচবো । যেই ভূল আমি করতে বসেছিলাম তার কোনো ক্ষমা হয় না ।
* আমি রুম থেকে বেরিয়ে দৌরে চলে যাই বসার রুমে । গিয়ে দেখি বাবা মা বসার রুমে বসে আছে । তাদের চোখ ভরা পানি । তারাও আমার মতো ঔষধ কিনে বসে আছে । হয়তো আমার মৃত্যুর সাথে সাথে তাদেরও মৃত্যু হবে । আমি দৌরে বাবার পা ধরে বসে পরলাম । আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম
-- বাবা আমি ভূল করেছি আমাকে এতো বড় সাজা দিও না তোমরা ।
বাবা মাথায় হাত রেখে বললো
-- খোকা তুই না বেঁচে থাকলে আমরা কেনো বেঁচে থাকবো ? তাই তোর সাথে সাথে আমরাও মরে যাবো রে বাবা । ভেবে নিবো এটাই নিয়তি
-- না বাবা আমি আতনহতা করবো না । আমি বাঁচতে চাই । তোমাদের জন্য
বাবা আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে আমায় বুকে জরিয়ে ধরলো । মা নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলতে লাগলো
-- খাবারের সময় হয়ে গেছে আমি খাবার দিচ্ছি
* ঐ দিনটির পর থেকে আমি আর কখনই নিজের লাইফে পিছন ফিরে তাকাইনি । নিজের ক্যারিয়ারে দিকে মনযোগ দিয়েছি । আজ আমি একজন সফল মানুষ । কাস্টম ডিপার্টমেন্টে চাকরি করি । আমার স্ত্রী একজন ডক্টর । আমার স্ত্রীকে আমি যথেষ্ঠ ভালোবাসি এবং সেও আমায় ভিষন ভালোবাসে । যখন সারা দিন পরিশ্রম করে বাসায় ফিরি তখন বাবার ওই মুখ খানা দেখার পর কেনো জানি আমার আর কোনো কষ্ট থাকে না ।
অবশেষে আপনাদের জন্য কিছু কথা
আজ যাকে আপনি নিজের জিবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন । তার কাছে আপনার মূল্য কতটুকু ? হ্যা আমি আপনার সেই প্রীয় মানুষটির কথা বলছি যে একটা সময় আপনাকে পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে অন্য কারো হয়ে যাবে । আপনি যার জন্য নিজের সময় + লাইফের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় আমার মতো শেষ করে দিচ্ছেন আপনি কি জোর দিয়ে বলতে পারবেন সে আপনারই হবে ? হয় তো পারবেন না । ১০০ % রিলেশনের মধ্যে মাত্র ১ % ই রিলেশন পূর্নতা পায় । এখন আপনি হয়তো বলবেন ভাই ওই ১ % আমি । আচ্ছা আপনাকে যদি আমি একটা অফিসে চাকরি দিয়ে বলি এই অফিসে ১০০ জন কর্মীর মধ্যে শুধু মাত্র একজনই পাবে বেতন । তখন কি আপনি চাকরি করবেন ? অবশ্যই না । কারন আমরা কেউই না হয়তো করবো না । পুরো মাস পরিশ্রম করার পরে কে না কে বেতন পাবে । ধূর তার থেকে নে করাই বেটার । কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি আুপনাদের রিলেশন করতে বারন করচ্ছি না । নাই বা নারীদের কে ছোট করতে এই পোস্ট করচ্ছি । আমি বাস্তবতাটা তুলে ধরেছি শুধু । একজন নারীর জিবন এমন হয় যখন জন্ম হয় তখন সে বাবার উপর নির্ভর করে আর যখন বিয়ে হয় তখন বরের উপর । তারা একজন না একজনের উপর নির্ভর করে থাকে । কিন্তু একজন পুরুষ এর জিবন সম্পূর্ন ভিন্ন । পুরুষ জন্ম নিয়ে নির্ভর করে বাবার উপর অতপর একটা সময় পরে পুরো পরিবার সেই পুরুষের উপর নির্ভর করে । এটাই রিয়েলেটি । আমরা পুরুষরা দোষারপ করি নারীদের । নারী প্রতারক , ছলনাময়ী , বিশ্বাসঘাতক আরও কত কি ? কিন্তু সত্যি বলতে আমরা কখনও কোনো নারীর অবস্থা বুঝতে চাই না । একজন পুরুষ সকল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারলেও একজন নারী সেখানে নিরব । কারন বিধাতা তাদের সেই ভাবেই তৈরি করেছে । আমরা প্রীয়জন কে না পেয়ে নিজের জিবনকে নরক বানিয়ে দেই । হয় নেশায় নয়তো আত্নহত্যায় । কিন্তু কখনই আমরা আমাদের অন্য প্রীয়জনদের কথা ভাবি না । বাস্তবতা নিয়ে ভাবি না । আবেগের বসে সব শেষ করে দেই । যেমনটা আমি করতে চলেছিলাম । কিন্তু পরিশেষে সব বুঝতে পারলাম । কাউকে ভালোবাসার আগে নিজের জিবন কে ভালোবাসুন । কাউকে পেতে হলে তাকে পেতে গেলে কি কি যোগ্যতা লাগবে তা জেনে এবং সেই যোগ্যতা তৈরি করে ভালোবাসুন । দেখবেন সফল আপনিই হবেন । একটা কথা সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না
---------------------- সমাপ্ত---------------------
writter: Rana (jojo)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now