বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

বস ইজ অলওয়েজ রাইট ২

"মজার গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান আবিরুল ইসলাম আবির (০ পয়েন্ট)

X আমার অফিস রুমের ডেস্কের দেয়ালে আমি একটা বাণী ঝুলিয়ে রেখেছি। ‘রুল নম্বর ১: বস ইজ অলয়েজ রাইট। রুল নম্বর ২: ইফ বস ইজ রং, সি রুল নম্বর ওয়ান। আমার বসকে আমি সদাই মান্য করি। তিনি নির্ভুল। তিনি সবচেয়ে সুদর্শন। তিনি যখন অফিসে আমাদের সামনে বসেই দাঁত খিলান করেন, তখনাে তাঁকে অপরূপ সুন্দর দেখায়। আমি একটা চিঠি মুসাবিদা করে তার সামনে নিয়ে গেলাম। তাতে একটা কথা ছিল, "মিডিয়াম ইজ দি মেসেজ। তিনি সেটা কেটে দিলেন, লিখলেন, মিডিয়া ইজ দি মেসেজ। আমার মনে হলাে, কথাটা মিডিয়াম ইজ দি মেসেজ'ই হবে। মিডিয়া বহুবচন। একবচনে মিডিয়াম। মার্শাল ম্যাকলুহান মিডিয়াম ইজ দি মেসেজই বলেছিলেন। কিন্তু আমি কথাটা তাঁকে বললাম না। কারণ, ১. বস ইজ অলওয়েজ রাইট । ২. ইফ বস ইজ রং, সি রুল নম্বর ১। স্যার বললেন, এই রকম একটা বিখ্যাত কোটেশন আপনার জানা নাই । কীভাবে আপনি এই ভুলটা করতে পারলেন? আমি মাথা চুলকালাম। ভাবটা এ রকম ভুল তাে হয়েই যায়। আপনি আমার বস, পদাধিকার বলেই আপনি সব কিছু ঠিক বলবেন, ঠিক করবেন। তিনি বললেন, পড়াশােনা কিছু করেন টরেন নাকি সারা দিন ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকেন । কথা সত্য। পড়াশােনা করি না। ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকি। তবে, মার্শাল ম্যাকলুহামের 'মিডিয়াম ইজ দি মেসেজ' কথাটা আমি গুগল করেই জেনে নিয়েছিলাম। স্যার যদি গুগল করতে জানতেন, তাহলে তারও কিছু সুবিধা হতাে। আমার বস আমার থেকে বছরদুয়েকের বড়। তাঁর মাথায় একটা উইগ। আমরা, অফিসে তাঁর নয়জন কর্মচারী, সারাক্ষণ প্রার্থনা করি, একটা প্রচণ্ড ঝড় আসুক, সবার সামনে আমাদের বসের নকল চুল উড়ে চলে যাক। আমি বসের সাদা শার্ট, লাল টাই, শার্টের হাতের সােনালি বােতামের দিকে অলক্ষে তাকাই। তার সামনের দাঁত দুটো বড়, দাড়ি-গোঁফ কামানাে, মুখখানা চন্দ্রাকার। পরচুলাটা না থাকলে ষােলােকলা পূর্ণ হতাে । আমার মনে প্রশ্ন জাগে ১. পরচুলায় কি শ্যাম্পু দিতে হয়? হলে কোন ধরনের শ্যাম্পু? ২. পরচুলায় কি উকুন হয়? ৩. পরচুলা কি রাতের বেলা ঘুমনাের সময় খুলে রাখতে হয়? ওই সময় পরচুলায় একটা বিছে বা তেলাপােকা বা মাকড়সা ঢুকে থাকলে পরের দিন কী হতে পারে? আমার এ ধরনের কল্পনা কখনাে বাস্তব রূপ পায় না। আমি স্যারের সামনে থেকে চিঠিটা নিয়ে আসি । নিজের ডেস্কে বসে কম্পিউটারে ঠিক করি। আমাদের স্যারের সেন্স অব হিউমার অতুলনীয়। এটা বাড়ে, যখন আমাদের নারীকর্মীরা সামনে থাকেন। তিনি কৌতুক করতে থাকেন। মেয়েদের সামনে তিনি যেসব কৌতুক বলে থাকেন, তার নমুনা: ১. কলা লেবুকে বলল, ওরে লেবু, মানুষ তাে তােকে কচলে কচলে খায়। লেবু কলাকে বলল, ওরে কলা, আর তাকে যে ন্যাংটো করে খায়। ২. মানুষের শরীরের কোন অঙ্গ উত্তেজিত হলে ১০ গুণ প্রসারিত হয়? সঠিক উত্তর : চোখের মণি তা ভাবেননি আপনি? বিবাহিত জীবনে হতাশ হবেন । স্যার আমাকে সব সময় বলেন, স্মার্ট হােন। গেট স্মার্ট। শুনুন, স্যান্ডেল পরবেন না। সব সময় জুতা পরবেন। জুতা পরলে স্মার্ট দেখায়। আমরা আড়ালে এই সব নিয়ে হাসাহাসি করি । কারণ, স্মার্ট কথাটার দুটো মানে আছে। একটা হলাে, বুদ্ধিমান, চালাক, চতুর। স্মার্ট সেই যার বুদ্ধি আছে। আরেকটা মানে হলাে, সুবেশ, সুসজ্জিত। স্যার দ্বিতীয় অর্থে কথাটা ব্যবহার করছেন। এটাকে আমরা, কর্মচারীরা বলি, জুতা স্মার্ট'। স্যারের সঙ্গে আমরা চলেছি সিঙ্গাপুর ট্যুরে। আমি, শান্তা আপা, কাবেরিদি, জয়নাল আবেদিন আর স্যার। মােট পাঁচজনের দল। আমার ধারণা, স্যার শান্তা আপাকে নেওয়ার জন্য বাকিদের সঙ্গে নিয়েছেন। এয়ারপাের্ট থেকেই শুরু হলাে স্যারের উপদেশ বিতরণ। আমাকে বললেন, কামাল সাহেব, এর আগে কখনাে প্লেনে উঠেছেন? জি স্যার।' কোথায় গেছেন? কলকাতা গেছি, স্যার। হা হা হা, থুতু ছিটিয়ে হাসতে হাসতে তিনি বললেন, বাংলাদেশিরা প্রথম প্রেম করে কাজিনের সঙ্গে, প্রথম বিদেশ যায় কলকাতায়, আর প্রথম... বাকি যেটা বললেন, সেটা সর্বসমক্ষে আমার বলা উচিত না। আচ্ছা তাহলে তাে ভালােই। সিটবেল্ট বাঁধতে পারেন? জি স্যার। শান্তা পারেন? জি স্যার। কোথায় শিখলেন? কেন স্যার। অফিসের গাড়িতে। সামনের সিটে বসলে তাে সিটবেল্ট বাঁধা বাধ্যতামূলক। ‘বাহ্। শান্তা তাে খুবই স্মার্ট। আমরা সবাই মিটিমিটি হাসছি। গাড়িতে সিটবেল্ট বাঁধা শেখাটাও স্যারের কাছে স্মার্টনেস। স্যার বললেন, আপনারা একটু বসেন, আমি একটু ধূমপান করে আসি। ওই ওদিকে একটা স্মােকিং জোন আছে। কিছুক্ষণ পরে এসে বললেন, এই জন্য বাংলাদেশের উন্নতি হবে না। এয়ারপাের্টে একটা স্মােকিং জোন থাকবে না? সারা পৃথিবীর সব উন্নত দেশে এয়ারপাের্টে স্মােকিং জোন থাকে। সেখানে সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধূমপান করে । প্লেনে উঠলাম। আমাদের পাশাপাশি সিট। আমি স্যারের পাশে। এখানে শান্তা আপাকে দিলে ভালাে হতাে। কিন্তু এভাবেই সিট পাওয়া গেছে। বদল করা ঠিক হবে কি না বুঝছি না। প্লেন ছাড়ল। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস । স্যার বললেন, 'আপনি ড্রিংকস করেন তাে? আমি বললাম, না স্যার। কেন করেন না? কখনাে করিনি তাে স্যার । ভয় লাগে । বমিটমি করে দেব। বমি করার অভ্যাস আছে নাকি? তাহলে খাবেন না। আমি আবার প্লেনে উঠলে একটু ড্রিংকস করি । রেড ওয়াইন । সিঙ্গাপুরিয়ান বিমানসেবিকা এলেন। তাদের গােলাপি-নীল-বেগুনি রঙের ঐতিহ্যবাহী সিংহমার্কা পােশাক পরা। স্যার বললেন, এক্সিকিউজ মি, ক্যান আই হ্যাভ সাম রেড ওয়াইন। হাসিমুখ ক্রু স্যারের সামনের তাকে একটা ওয়াইনের গ্লাস রাখলেন। তীব্র লাল রঙের ওয়াইন গ্লেসের অর্ধেকটায় ভরা। স্যার বললেন, ক্যান আই হ্যাভ সাম আইস অ্যান্ড ওয়াটার টু। বিমানসেবিকা তাঁকে আরেকটা গ্লাসে বরফমােখা জল দিলেন। স্যার বললেন, নাে নাে, আই ওয়ান্ট টু মিক্স ইট উইথ দি রেড ওয়াইন। আমি ওয়াইন খাই না। কিন্তু লজ্জায় আমার কান লাল হয়ে উঠতে লাগল। আমি জানি, রেড ওয়াইন কেউ পানি মিশিয়ে বরফ মিশিয়ে খায় না। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম, যেন আমি এই লােকের সঙ্গী নই। সিঙ্গাপুরে নেমে ইমিগ্রেশন পার হয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম এয়ারপাের্টের বাইরে। ট্যাক্সি নেওয়া হলো। একটা বড়সড় ভ্যান। একসঙ্গেই পাঁচজন উঠে পড়লাম তাতে। স্যার বললেন ড্রাইভারকে, ক্যান আই স্মােক ইন দি কার? নাে, ওয়ান থাউজান্ড ডলার ফাইন স্যার ছটফট করছেন। আমরা হােটেলে উঠলাম। একটা কনফারেন্সে এসেছি আমরা। আমাদের সেন্ট্রাল অফিস আমাদের ট্যুর স্পনসর করেছে। রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল। স্যার জিজ্ঞেস করলেন, রুমটা কি স্মােকিং, নাকি ননস্মােকিং। ননস্মােকিং। হােটেলের রিসেপশনিস্ট শুকনাে মুখে জানালেন। স্যারের মুখটা করুণ হয়ে গেল। বহুক্ষণ ধূমপান করেন না। সিঙ্গাপুর শহরে ট্যাক্সিতে ধূমপান করতে পারেননি, এই শহরের যে উন্নতি হবে না, এই বিষয়ে স্যারের উচিত কিছু বলা। স্যার আমার কানের কাছে মুখ এনে বাংলায় বললেন, কোনাে অসুবিধা নাই। কীভাবে কী করতে হয় আমি জানি। বুঝেছেন, আপনাকে স্মার্ট হতে হবে। স্মােক ডিটেকটরে টেপ পেঁচিয়ে দেব। আমার কাছে টেপ আছে। ধরতেই পারবে না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে ওঠা মানে সারা রাত জেগে থাকা। শরীর ভেঙে আসছে। আমরা যার যার রুমে চলে গেলাম। গােসল করেই শুয়ে পড়লাম দুধসাদা বিছানায় । আমার রুমসঙ্গী জয়নাল সাহেব। তাঁর বিছানাটা জানালার ধারে । তিনি ঘুমুবেন না। জানালা দিয়ে বাইরের সৌন্দর্য দেখছেন আর মােবাইল ফোনে ছবি তুলছেন।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৬২ জন


এ জাতীয় গল্প

→ দি বস ইজ অলওয়েজ রাইট

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now