একজন হরমুজ আলী এবং...
----------------------
হরমুজ আলী সাহেব মাঝে মাঝেই তার নিজের উপর প্রচন্ড রেগে যান।
রাগটা যে অযাচিত সেটা সে নিজেও বুজতে পারে,
তার রাগ হয় সমাজ,রাষ্ট,নীতি, আদর্শ নিয়ে।
বাবা যদি ছোট সময় তোমাকে কোলে নিয়ে কাজ করতে পারে,বড় হওয়ার পর সেই বৃদ্ধ বাবাকে কোলে নিয়ে তুমি কেন কাজ করতে পারো না??
এই রকম কোন দৃশ্য যখন তার চোখে পরে তখনি সে রেগে যায়।
হর হামেশায় সে নিজের উপর রাগ করে অন্যকে থাপ্পর মারে।
সে মাথা নিচু করে ব্যক্তি,দেশ,সমাজ,পরিবার,ধর্ম সব কিছু নিয়ে চিন্তা করে,
যখন ভেবে কোন সঠিক পথ না পাই তখনই পাশে থাকা লোকটিকে থাপ্পর মারে,
এটা তার একটা রোগ বলা চলে,
তার পরম বন্ধু হলেও থাপ্পর মারে!!
সে সমাজের নিম্নবিত্ত একজন অতি দরিদ্র খেটা খাওয়া দিন মজুর,
সে মানুষের বাড়িতে কাজ করে তার বউ বাচ্চার জন্যে খাদ্য যোগান দেয়।
তার এক ছেলে,দুই মেয়ে।
বউ বাচ্চা সহ পাঁচ(৫)জনের সংসার।
দুজন মেয়ে এক জন ছেলে।
বড় মেয়ের বয়স এগারো(১১) বছর, মেঝুটি ছেলে,
তার বয়স পাঁচ(৫) বছর,
ছোট মেয়ের বয়স দুই(২) বছর।
পাঁচ(৫) জনের সংসার তার।
খাদ্যের চাহিদাও কম নয়।
একদিন কাজে না গেলে সংসার চলে না।
সারাদিন পরের বাড়িতে কাজ করে যখন নিজের বাড়িতে আসে সন্ধ্যা ভেলায়,
তার ছোট মেয়েটি তাকে কূকিলের কন্ঠে 'আব্বা' ডাকে।
আর সে ডাক শোনে তার সারাদিনের ক্লান্তি ভূলে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।
সে প্রতিদিন সকাল বেলায় যখন কাজে বের হয় তখন তার পাঁচ(৫) বছরের ছোট ছেলেটি বায়না ধরে সেও তার বাবার সাথে কাজে যাবে,
কিছু দিন ছেলেকে ঘুমে রেখেই কাজে চলে যায় সে,
আবার মাঝে-মাঝে সে সজাগ হওয়ার পূর্বেই ছেলে সজাগ হয়ে বসে থাকে,
সেদিন আর তাকে ছাড়া যেতেই পারে না।
সারা দিন বাবার সাথে থাকে,বাবার কাজে কত ধরনের যে সমস্যা তৈরী করে তা আমার ছোট্ট লেখায় বুজানো যাবে না।
তাকে পিঠে নিয়ে মাঝে-মাঝে কাজ করতে হয় তার বাবার।
ছেলের নানান বায়না,
অসম্ভব চাওয়া,
অবাস্তব প্রশ্ন,
আর হাজারো রকমের রহস্যময় বাক্যের উত্তর দিতে দিতে বাবা ক্লান্ত।
তারপরেও হরমুজ সাহেব একটুও বিরক্ত হয় না।
ছেলের মুখের দিকে তাকালে সে সব কিছু যে পরক্ষনেই ভুলে যায়।
সেসব না হয় পরেই বলি,
আগে আসি তার হরমুজ আলী থেকে হরমুজ সাহেব হয়ে উঠার গল্পে;-
হরমুজ আলীর বয়স উনপন্ঞ্চাশ(৪৯) বছর, দাড়ি হালকা পাক ধরেছে, হালকা-পাতলা দেহের গঠন, দুই ঠুটের ভেতর নিলাভ স্বচ্ছ দাত, মিষ্টি হাসি যেন সব সময় লেগেই থাকে।
গ্রামে কেউ কখনো হরমুজ আলীকে মন খারাপ করে থাকতে দেখেনি।
হাজার দুঃখেও সে কাঁদে না,
পর্বতের গায়ে এক বালতি পানি ঢেলে দিলে যেমন সে পানির চিহ্ন পাওয়া যায় না, ঠিক তেমনি হরমুজ আলীর মন এবং শরীর, তাকে যে যতই মন্দ বলুুক না কেন তার মাঝে সেই মন্দের লেশ মাত্রও খুজে পাবে না।
চোখ দুটি তার করুণায় ভরা,
তার বাড়ী ছিল পশ্চিম বাংলার কোন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তার বাবা ছিলেন সে গ্রামের সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তি।
তার বাবার সাথে তার আদর্শের মিল কখনো খুুজে পেতেন না তিনি।
তার বাবার প্রধান আদর্শই ছিল লোক ঠকানো,অন্যায় ভাবে সম্পদ গড়া।
সে কখনো সেটা পছন্দই করতে পারতেন না,তা নিয়ে বাবার সাথে তর্ক বিতর্ক লেগেই থাকতো,
একদিন তর্কের পরিমান বেড়ে গেলে বাবা তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেন, সে দিনই সে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন এই মহব্বতপুর গ্রামে।
সেই যে আসা,
আর কখনো ফিড়ে যাওয়া হলো না তার বাবার বাড়িতে, সে আজও জানে না তার বাবা বেঁচে আছে কি না, তার মা কেমন আছে তাও জানে না,
তিন(৩) ভাই,
এক(১) বোন,
ওরা কে কোথায় আছে কিছুই সে জানে না।
তার মন বার বার ফিড়ে যেতে চায়,কিন্তু তার আদর্শ কখনো ফিড়ে যেতে চায় না।
তাই তার যাওয়া আর হয়ে উঠে না।
মহব্বতপুর গ্রামে আসার সময় তার বয়স ছিল তেইশ(২৩) বছর,
ছাব্বিশ(২৬) বছর যাবৎ সে এই গ্রামে থাকে।
সে বিয়েও করেছে এই গ্রামে, এতো বছর পরেও মানুষ কখনো জানতে পারে নাই হরমুজ আলীর অতিত,
একদিন গ্রামের তার তিন বন্ধু তাদের সবার অতিত বলতেছিল,
সেদিন সবার সাথে তাল মিলিয়ে হরমুজ আলীও তার অতিতের কিছু অংশ বলেছিল।
সবাই জানতো হরমুজ কখনো মিথ্যা বলে না, আর তার কথার সততা যাচাই করার জন্যে তার তিন বন্ধু খুজতে গিয়েছিল হরমুজের বিশ বছর আগে ফেলে আসা সেই গ্রামে,
খুজে পেয়েছিল তারা সে গ্রাম।
হরমুজের বাবা-মা বেঁচে নেই,মারা গেছে ১৭ বছর আগে।
হয়তো হরমুজের শোকে চাঁপা কষ্ট বোকে নিয়ে মরে ছিল তার বাপ-মা দুজন।
হরমুুজের ভাইয়েরা বেঁচে আছে,তারা আজ প্রভাবশালী মানুষ।
হরমুজের বোন বছর চারেক আগে দুরারোগ্য ব্যধিতে মারা গিয়েছে।
তা বন্ধুরা গ্রামে ফিড়ে একে-একে গ্রামের সব মানুষকে বলেছিল হরমুজের অতিত ইতিহাস,
আর সেদিন থেকে গ্রামের স।ব মানুষের কাছে "সাহেব" উপাধী লাভ করলো।
আজ সে হরমুজ আলী সাহেব নামেই সবার কাছে চির পরিচিত একটি মুখ......!!
সংক্ষেপিত...........
[গল্পঃ একজন হরমুজ আলী এবং]
[লেখকঃ অতঃপর আল-আমিন ]
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...