বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
একটি হাত হারানো গোলাপ খাঁ’র ছবি দেখে নিশ্চয়ই বুক কাঁপছে। বাকিটা শুনুন।
একাত্তরের শ্রাবণ মাস।মুক্তিবাহিনী গ্রাম ছেড়ে গেছে আগের দিন।পাকিস্তানিদের বোমা পরছে বৃষ্টির মতো, কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা গ্রামে।রান্না নেই কয়েকদিন। তাই বোমায় ক্ষত-বিক্ষত একটা গরু জবাই করলেন অন্তত মাংস সিদ্ধ করেও খাওয়া যাবে এই ভেবে। মাংস কাটছিলেন গোলাপ খাঁ ও কয়েকজন। এর মধ্যে রামচন্দ্রপুর পাড়ায় খাঁ বাড়িতে এসে পরে একটা বোমা। দৌড়ে যান বাড়িতে। নাজির আলীর ঘরে তখন ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন।বুঝতে পারছিলেন না ভিতরের মানুষগুলো কেউ বেঁচে আছে কি না। কূপিবাতি নিয়ে আসেন পাশের ঘর থেকে।দেখেন সারা ঘরে রক্তের ঢল। মাটিতে ৪জন, চৌকিতে পরে আছে আজম।ওর বুক ভেদ করে গেছে স্প্লিন্টার একটা। নাজির আলীর মেয়ে ২টা পড়ে আছে মাটিতে। জীবিত কি? কূপিটা মুখের কাছে নেন ওদের। দেখেন নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে কলকল করে।ডাকলেন নাম ধরে। কোনো জবাব নেই। নাজির আলীর স্ত্রী ও নাজির আলী পড়ে আছে ওদের সাথেই।নির্বাক, নিথর দেহ। একের পর এক পরছে বোমা। এতগুলো লাশ কি ফেলে রেখেই বাড়ি ছাড়বেন? দৌলত খাঁ এগিয়ে এলেন। গেলেন কবরস্থানে। অন্ধকারেই দুটি গর্ত করেন বড়।লাশগুলো যেখানে আছে সেই অবস্থাতেই পানি ঢালেন বালতিতে করে। আল্লাহ শেষ গোসল করাচ্ছি, আপনি কবুল করুন, এই বলে নিয়ত করেন।পুরনো কাপড় জড়িয়ে নেন প্রতিটি লাশে। একটা একটা করে দুজনে দ্রুত নিয়ে যান কবরস্থানে।মাটিচাপা দেন গর্তগুলোতে।
এদিকে প্রায় দুইদিন পেটে খাবার নেই। নিদ্রাহীন- ক্ষুধার্ত গোলাপ খাঁ-রা বাড়ি ছাড়েন রাতের অন্ধকারে।একদিকে বৃষ্টি সঙ্গে বোমার কান ফাঁটানো শব্দ। অন্ধকার ডিঙ্গিয়ে যেতে থাকেন পূর্বদিকে। ৫ মাইল দূরে সীমান্তবর্তী গ্রাম চাটুয়াখোলায় পৌঁছানোর পর মনে হচ্ছিলো আর কুলোয় না শরীরে। আশ্রয় নেন একটি বাড়িতে।ওই ঘরে অনেক মানুষ। সবাই তাদের মতোই শরনার্থী। বিধি বাম।এখানেও শুরু হলো বোমা বর্ষণ। একবারে কাছেই বিস্ফোরিত হলো একটা বোমা। চান্দলা গ্রামের করিমপুর পাড়ার নুরু মিয়ার স্ত্রী দুধ খাওয়াচ্ছিলেন বাচ্চাকে। ওই অবস্থাতেই শেষ ওখানে। বাচ্চা মেয়েটা বেঁচে যায় অলৌকিকভাবে।একটা স্প্লিন্টার আঘাত করে গোলাপ খাঁর হাতে।বাহুর প্রায় অর্ধেকসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দেহ থেকে।চামড়া ছিড়ে যায় শরীরের কয়েক জায়গায়। সবাই দৌঁড়াতে থাকেন ভারতের দিকে।পেছনে পড়ে থাকে নুরু মিয়ার স্ত্রীর লাশ ও জীবিত ছোট মেয়েটা।অচেনা শরনার্থীর ৪/৫টি মরদেহ । পেছনে বাংলাদেশ। ( নুরু মিয়া পরের দিন বাচ্চাটা নিয়ে যান কিন্তু বোমা বর্ষণের কারণে দাফন করতে পারেননি স্ত্রীর লাশ ।লাশগুলো ওই ঘরেই পচে গলে কঙ্কাল হয়ে যায়।)
এক হাত নিয়ে এখনো বেঁচে আছেন গোলাপ খাঁ।
( সূত্র- নৃশংস একাত্তর)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...