বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
নিতুর অসুস্থতা
"ছোট গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Mahmud (০ পয়েন্ট)
X
গল্পঃ নিতুর অসুস্থতা
আজ শরীরটা ভালো নেই নিতুর। তাই স্কুল যাওয়া হয় নি। মন খারাপ। শুয়ে শুয়ে জানালার বাইরে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে নিতু। পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে। সূর্যের আলোতে ঝলমল করছে প্রকৃতি। পাখিরা উড়ে যায় নীল আকাশ পাণে। গাছের পাতায় শীতল বাতাদের দোলা লেগে সুরেলা শব্দ তৈরি হয়। একটা পাখি বসে আছে গাছের ডালে। মিষ্টি সুরে গান করছে পাখিটা।
নিতুর শরীরে একটা দমকা হাওয়া দোলা দিয়ে যায়। মন-প্রাণ আনন্দে নেচে উঠে। কিন্তু তার প্রচন্ড জ্বর। বাইরে যেতে পারবেনা। একটা বিষাদের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে নিতু। আবার মনটা খারাপ হয়ে যায়।
স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার শেষ পিরিয়ডে কবিতা, গানের প্রতিযোগিতা হয়। প্রতি বৃহস্পতিবারেই হয়। তাই সবাই কবে বৃহস্পতিবার আসবে সেই অপেক্ষাতেই থাকত। বৃহস্পতিবারের দিন কেউ স্কুল মিস করত না।
সোমা আপা ক্লাস নিতেন। নিতু বরাবরই ক্লাসে ফার্স্ট। তাই সোমা আপা নিতুকে খুব পছন্দ করতেন। নিতুর একটা চমৎকার প্রতিভা আছে। নিতু খুব সুন্দর কবিতা লিখতে পারে। আর আবৃতিও করতে পারে। তাই গানের দিক দিয়ে নাহোক, কবিতার দিক দিয়ে নিতু প্রতিযোগিতায় সবসময় প্রথম হয়। তার কবিতা শুনে স্যার-ম্যাডামরাও মুগ্ধ হয়ে যেত।
কিন্তু আজ স্কুলে যেতে পারবেনা আর কবিতাও আবৃতি করতে পারবেনা বলে মন খারাপ। আসলে কাল রাত থেকে নিতুর জ্বর। সাথে সর্দি, আর শুকনো কাশি। আব্বু থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখেছিলেন, ১০২ ডিগ্রি। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিছানা শোয়া নিতু।
মিনিরও মনটা ভালো নেই। নিতু পাশে শোয়া সেও। মিনি নিতুর পোষা বেড়ালছানা। নিতু আদর করে ওকে মিনি ছানা ডাকে। নিতু মিনির সাথে একসঙ্গে খেলে, খাওয়া-দাওয়া করে, বিকেলে ঘুরতে বের হয়, ঘুমায়। নিতুর আর কোনো ভাই-বোন নেই। তাই মিনিই নিতুর একমাত্র খেলার সাথী।
নিতুর আব্বু একটা সরকারী চাকরী করে। আম্মু স্কুল শিক্ষিকা। তারা সকালেই বেরিয়ে পরেছে যে যার কাজে। বাসায় একা একা সময় কাটছেনা নিতুর। মিনি এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আম্মু পইপই করে বলে দিয়েছেন, বিছানায় শুয়ে রেস্ট নিতে আর আজকে স্কুলে না যেতে। কিন্তু ছোট্ট নিতুর মন মানে না।
বিছানা দেখে উঠে জানালার ধারে গিয়ে দাড়াল নিতু। বাইরে তাকিয়ে দেখল। লিচু গাছটায় একটা পাখি বাসা বেধেছে। কি পাখি জানেনা ও। তবে পাখিটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর। পাখিটা খুব ছোট। গায়ের রং হালকা বাদামি, মাথাটা ছাই রঙের, পিঠে বাদামী রঙের পালক। তার ওপর কালো ছোট দাগ। ডানার উপর লালচে রেখা। পায়ের রঙ হলুদাভাব। লেজ নাড়িয়ে টুই টুই শব্দ করছে। নিতুর মন আনন্দে পুলকিত হয়ে যায়।
দৌড়ে ঘড় থেকে বেড়িয়ে এসে লিচু গাছটার সামনে দাড়ায় ও। পাখিটার বাসাটা শুকনো ঘাস, খড়কুটো দিয়ে বানানো। খুব একটা উপরে নয় অবশ্য বাসাটা। নিতু গাছে চড়তে জানে। তার খুব ইচ্ছে হলো গাছে উঠে দেখে বাসাটায় কি আছে। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও উপায় কি আছে?
মনে মনে ভাবে বাসাটায় হয়তো পাখিটার ডিম রয়েছে, ছোট ছোট ছানাও থাকতে পারে। আমি যদি গাছে উঠি তাহলে যদি পাখিটা রেগে যায়। অথবা ছানারা যদি চেচামেচি শুরু করে...
তাই গাছে উঠার ইচ্ছাটা বাদ দিল ও।
নিতুর একটা শখ হলো বাগান করা। অবসর সময়ে বাগানে কাটায় নিতু। বাগানের গাছগুলোর যত্ন নেয়। কত্ত রকমের ফুল ফলের গাছ নিতুর বাগানে! লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, শিউলি, বেলি, গাঁদা, পাতাবাহার, লেবু আরও অনেক রকম গাছ। সবগুলো নিজ হাতে আব্বুর সাথে লাগিয়েছে ও। গাছগুলোতে যখন ফুল আসে, ফল হয়, প্রজাপতি মৌমাছিরা ফুলে ফুলে ঘুড়ে বেড়ায় তখন যে কি আনন্দই না হয় নিতুর, বলে বোঝানো যাবে না।
গতকাল গাছগুলোতে পানি দেওয়া হয় নি। আজ দেওয়ার মনস্থির করলেও মনে হয় দেওয়া হবে না। বাগানে গিয়ে ঘুড়ে ঘুড়ে গাছগুলো দেখতে লাগল নিতু।
বাইরে বেশিক্ষণ ভালো লাগল না। আবার নিজ ঘরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল নিতু। শরীরটা কেপে কেপে উঠছে। আবার মনে হয় জ্বর আসবে। দুচোখে ক্লান্তিময় চাহনি, ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু করছে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে অনেক কিছু, স্কুলের কথা, স্যার-ম্যাডামদের কথা, বাগানের কথা, ছোট পাখিটার কথা, তার ছোট্ট হৃদয়ে যা আসে। এসব ভাবতে ভাবে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে নিতু।
শরীর ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। আর মন ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি আমরা। সুস্থ শরীরের গুরুত্ব তারাই বোঝে যারা বর্তমানে হাসপাতালে রয়েছে...
যাইহোক, নিতু এখন গভীর ঘুমে আচ্ছ। ঘুমের দেশের নানা রঙের রঙিন স্বপ্ন ভেসে আসছে তার চোখের পাতায়।
এই অপেক্ষাটা খুব দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আবার নিতু সুস্থ হয়ে উঠবে, আগের মতো স্কুলে যাবে, হাসিখুশি থাকবে, খেলাধুলা করবে, পড়ালেখা করবে, কবিতা লিখবে...
আপতত নিতু গুনতে থাকে অপেক্ষার প্রহর......
লেখকঃ ডিএল মাহমুদ হোসেন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now