বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

♥ বন্দী ♥

"জীবনের গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান Siam 2.0 (০ পয়েন্ট)

X হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো তনিমার! ঘড়ির কাটায় ঠিক ঠিক রাত তিনটে আটাশ।পুকুর পাড়ে কয়েকটা কুকুরের ডাক রাতের নিস্তব্ধতায় আঘাত করছে।মিশমিশে অন্ধকার চারিদিকে,গোরস্থানে আজই একটা নতুন লাশ দাফন করা হয়েছে,সারারাত বাতি জ্বলছে ওখানে। ডানদিকের ফ্ল্যাটের জানালা গলে রোজ রাতেই কেমন একটা গুনগুন আওয়াজ ভেসে আসে। কেউ কাঁদে নাকি গান গায়??? গুটিগুটি পায়ে দরজা খুলে বেলকনির চেয়ারটাই গিয়ে বসলো সে- "এতো রাতে কে কাঁদে? এতো করুণ সুরে! পৃথিবীতে এমন কেউ কি আছে যার দুঃখগুলো আমাকে হার মানায়! আর কে আছে যে আমার মতো বন্দী?কেউ কি আছো??" শ্রোতাবিহীন বেলকনিতে কথাগুলোর শেষে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুহাতে মুখ ঢাকলো তনিমা।রাতটাও হয়তো তার দুঃখের সংলাপ শুনতে রাজি নয়,রাজি নয় তার কান্নাভেজা মুখপানে চেয়ে স্বান্তনার আলতো পরশ তার মনে ঢেলে দিতে। নিচে একটা শব্দ হলো! উচ্চস্বরে "কে" বলে তনিমা হকচকিয়ে উঠলো। গুনগুন আওয়াজটাও মিলিয়ে গেলো। মানুষ যখন বিষণ্ণতা আর একাকিত্বে ভুগে, নিরবতা আর কোলাহল দুটোই সমানতালে কষ্ট দেয়। "নেই!কোথাও কেউ নেই....শুধু আমি একা!" চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে চোখ পড়লো ওপাশের ফ্ল্যাটের জানালায়। মাঝারি এক ভারবয়সী নারী এসে দাড়িয়েছে জানালার গ্রিলে হাত রেখে।মাথায় সাদা ওড়না চেহারাটাকে আরো শূভ্রকরে তুলেছে।নিয়ন বাতির হালকা আলো পড়েছে তার মুখে। ভেজা চোখে সারা পৃথিবীর সমস্ত মায়া এসে ভীড় করেছে।তনিমা একটু জোরে প্রশ্ন করলো- "কে???" "আমায় চিনবেনা,তবে তোমার মুখটা আমার পরিচিত।রোজ রাতে এখানে এসে বসে থাকো কেন?তোমারও কি এমন কোনো দুঃখ আছে যার কাছে তোমার রাতের ঘুম বন্দী?" - মহিলা সহজভাবে বলে গেলো কথাগুলো।বাসের সহযাত্রীরা যেমন বলে 'কোথায় যাবেন' অনেকটা তেমন শোনালো কথাটা। "হয়তোবা! রোজরাতে আপনি গুনগুন করে কাঁদেন কেন?"-তনিমা স্নেহমাখা কন্ঠে জানতে চাইলো। "কাঁদি কই? অভিযোগ আর অনুরোধ জানাই"- মহিলার কন্ঠ ধরে এলো। "কার কাছে অভিযোগ করেন?কি এমন অভিযোগ?" "আরশের মালিকের কাছে। অসুস্থ,নিঃসন্তান, বিধবা এক অসহায়কে কবে তিনি নিজের কাছে ডেকে নিবেন।কবে পরের ওপর নিজের বোঝাটা হালকা হবে আমার!"-অনেকক্ষণ চেপে রাখা আবেগে মহিলা হু হু করে কেঁদে উঠলেন। তনিমা নিশ্চুপ! "রোজ রাতে অনেকক্ষণ ধরে সিজদা দিই,যেনো সিজদাবস্থায় মালিক আমাকে কাছে টেনে নেন।মাথা তুলে দেখি আমি সেই চিরচেনা পৃথীবিতেই বন্দী।"-আঁচলে চোখ মুছে চুপ করে গেলেন তিনি। খুব একটা দুরে নয় বলে নিঃশব্দ রাতে তার নিঃশ্বাসের শব্দও যেনো শোনা যাচ্ছে। বুকের ভিতর থেকে একটা অস্ফুট আর্তনাদ ভেসে আসছে- 'এই পরাশ্রয়ের এই বন্দী জিবন থেকে আমাকে মুক্ত করো হে আল্লাহ'।।। ফজরের আজান পড়লো চারিদিকে,মহিলা কিছু না বলে ঘরে চলে গেলেন।ফজরের নামাজে হয়তো আরো লম্বা সিজদা দিবেন। চিনচিনে একটা ব্যাথা বুকে নিয়ে তনিমা এসে ঘুমিয়ে পড়লো। মামির চেচামেচিতে ঘুম ভেঙে গেলো।ঘড়িতে বেলা ৭ টা। "মহারণী পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে,আমরা মরে গেলেও তার ঘুম ফুরাবে না।বাপ-মা মরে তো হাতির পাঁচ পা দেখেছে।"-মামির রোজকার কটুকথায় আজ কেমন একটা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলো তনিমা। মামাতো বোন বাইরে থেকে এসে বললো- "জানো তনিমা আপু,পাশের ফ্ল্যাটের একটা আন্টি মারা গেছে!ভোরে সবাই গিয়ে দেখছে সিজদা করছে,অনেক ডেকে যখন গায়ে হাত দিলো তখন শরিরটা নেতিয়ে পড়লো!" তনিমার মুখটা হঠাৎই যেন পান্ডুর হয়ে উঠলো,চোখের নদী বাধ ভাঙলো কোনো এক অপরিচিত বয়স্কার জন্য। অস্ফুট স্বরে গলা থেকে বের হলো- "ইন্নালিল্লাহ......ওহ আল্লাহ!" একছুটে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো সে। ঘরজুড়ে আগরবাতি ধোয়া,পাশে তার আপনজন বলতে বয়স্ক বাবা,ভাই আর ভাবি। বাবা কাঁদলেও ভাই-ভাবি যেন অনেকটা দায়মুক্তি পেয়ে তা নিরবে উৎযাপন করছে। মেঝেতে ভারি শরিরটা বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা।অনড় শরিরটা চিরনিদ্রায় শায়িত,চোখগুলোয় সুরমা দেয়া।হাসিমাখা মুখ আর ঈষৎ খোলা ঠোটদুটো যেনো তনিমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে- "আমি আর বন্দী নই!" --------- রাত ৩ টে,নতুন লাশের আগমন উপলক্ষে আজও গোরস্থানে বাতি জ্বলছে।লম্বা সিজদা শেষে তনিমা এসে দাড়িয়েছে বেলকনির গ্রিল আকড়ে।ভেজা চোখদুটো ওপাশের বন্ধ জানালায় আবদ্ধ। আজ চাঁদ উঠেছে।মৃদ্যু বাতাসে জানালার পর্দা দুলছে,কদম ফুলের গন্ধে মাখোমাখো চারিদিক। দীর্ঘশ্বাসের সাথে তনিমার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো পরিচিত এক আওয়াজ- "পরাশ্রয়ের এই বন্দী জিবন থেকে আমাকে মুক্ত করো হে আল্লাহ।" পাশের জানালা থেকে কেউ যেনো মৃদ্যস্বরে বলে উঠলো-"আমিন,সুম্মা আমিন" __________________ বন্দী ইসরাত জাহান আশরাফি .


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৬৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ সৌরশক্তিকে বাষ্পবন্দী করার নতুন ফন্দি
→ জন রাঞ্জের জবানবন্দী
→ কাবার ঈমাম বন্দী কেন?
→ জন রাঞ্জের জবানবন্দী
→ বন্দী জীবন
→ দেয়ালে বন্দী আর্তনাদ
→ শার্লক হোমস ০৪. জন রাঞ্জের জবানবন্দী
→ কাঁচের বোতলে বন্দী আনন্দ !!!
→ জিরানা শিবিরের বন্দী মুক্তি
→ বন্দী জীবনের মুক্তি
→ বন্দী জীবনের মুক্তি
→ এক মুঠো বালি ও আফগানিস্তানের এক বন্দী হাফেয
→ ৩.মিন্দানাওয়ের বন্দী (১১)
→ ৩.মিন্দানাওয়ের বন্দী (১০)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now