বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

হারানোর পথে চিঠি লেখা

"স্মৃতির পাতা" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান সাফায়েত হোসেন (০ পয়েন্ট)

X আমি জাফর ইকবাল এবং আমার স্ত্রী রেহানা বেগম পড়ন্ত বিকেলে বাড়ির ছাদে বসে গল্প করছি।প্রতিদিন বিকেল ই আমরা দুজন ছাদে বসে গল্প করি।আমরা দুজন এখন মধ্যবয়সী।আসলে মধ্যবয়সি না বলে বৃদ্ধই বলা যায়।আমাদের দুজনের ই বয়স এখন পঁঞ্চাশ এর ঘরে।তাই গায়ে বল শক্তি তেমন আর নেই।আমি স্কুল শিক্ষক ছিলাম এখন অবসর জীবন যাপন করছি।আর আমার স্ত্রী গৃহিণি।আমাদের এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে।মেয়েটি বড় আর ছেলে তার থেকে শুধু ২ বছরের ছোট।ছেলে আর মেয়েকে আমরা ভালোভাবে পড়াশুনা করিয়েছি।তারা আজ পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করছে।মেয়েটিকে একটা ভালো পরিবারে এবং একটা ভালো ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছি।ছেলের বিয়েও দিয়ে দিবো কিছুদিনের মধ্যে।ছেলেমেয়েকে আজ প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি বলে আজ আমরা অনেক খুশি।যাই হোক রোজকার মতো আজও বিকেলে আমরা স্বামি স্ত্রী ছাদে বসে গল্প করছি।বলে রাখি আমার মেয়ে আছে এখন তার শশুর বাড়িতে আর ছেলে অফিসে আছে সন্ধ্যায় বাসায় আসবে।তাই আমরা দুই জন বাসায় একা।বিকেল হলেই আমরা ছাদে আসি।এসে বসে আমাদের সুখ দু:খের কথা বলি।আমাদের অতীত এর কথা বলি।আজও বসে আমরা অতীত এর কথা বলছিলাম।কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে এবার আমি চুপ হয়ে গেলাম। আমার চুপ হয়ে যাওয়া দেখে আমার স্ত্রী বললো কি হলো কথা বলতে বলতে চুপ হয়ে গেলে কেন? আমি:-রেহানা আমাদের বিয়ের পর আমাদের খুনসুটি তারপর একে অপরকে চিঠি লেখা সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। রেহানা:-সত্যি সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে অনেক ভাল লাগে।এখন তো চিঠি লেখা প্রায় উঠেই গেছে। আমি:-হ্যা ঠিক বলছো।আমাদের তো বিয়ে হয় ১৯৮৫সালে।তখন আমার বয়স ছিল ২৭ আর তোমার ২৩।আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল।তোমাদের আর আমাদের বাড়ি ছিল এক গ্রামে।ওই সময় বাল্যবিবাহের যেই রমরমা ছিল তাও আমাদের বিয়েটা অনেকটা দেরিতে হয়েছিল।বিয়ের পর আমি শিক্ষিত থাকা সত্তেও কাপড়ে ব্যাবসা করতাম চাকরি পায় নি বলে।আমার কাপড়ের দোকান ছিল শহরে এই জন্য আমায় শহরে গিয়ে অনেকদিন থাকা লাগতো।তারপর আমার চাকরি হয়।ব্যাবসা করার সময় যখন শহরে চলে যেতাম তখন তুমি চিঠি লিখতে আমার জন্য। রেহানা:-হ্যা ঠিক।সেই সময় তো এখন কার মতো মোবাইল ছিল না।বিয়ের পর তুমি এক বছর কাপড়ের ব্যাবসা করেছো।বেশির ভাগ সময়ই শহরে থাকতে।তখন একে অপরের খোজ নেওয়ার জন্য আমরা চিঠি লিখতাম। আমি:-আর সে চিঠি পৌছাতে দশ পনেরো বা অনেক সময় এক মাস লাগতো।এর ফলে আমাদের মাঝে অপেক্ষা বাড়তো।আমরা বসে থাকতাম একে অপরের চিঠির অপেক্ষায়।একে অপরকে নিয়ে অনেক ভাবতাম। এর ফলে আমাদের মাঝে ভালোবাসা টা অনেক গাঢ় হয়েছে।কিন্তু এখনকার মোবাইল,ফেসবুক এসে যোগাযোগ অনেক দ্রুত হয়েছে।কেউ ম্যাসেজ করলে তার উত্তর এক সেকেন্ড এর মধ্যেই চলে আসে।অপেক্ষা জিনিষটা এখন নাই বললেই চলে।তাই আগের মতো প্রিয়জনের প্রতি আর আবেগটাও তেমন কাজ করে না। রেহানা:-হ্যা ঠিক বলেছো তুমি।এখনকার প্রজন্মের ভালোবাসায় একে অপরের থেকে দূরে থাকলে তারা মোবাইলের ম্যাসেজের মাধ্যেমে কথা বলে।আবার ভিডিও কলে কথা বলে।তাই দূরে থাকলেও তারা আজ থাকে একে অপরের কাছে।চিঠি লেখার প্রতি আর কারো আগ্রহ কাজ করে না। আমি:-একটা গানও তো আছে যে "চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হতে"।আসলেই কত ভালোবাসা আর আবেগ নিয়ে আগে চিঠি লিখা হতো।যারা চিঠি লিখেছে তারাই শুধু সেই আবেগটা অনুধাবন করতে পারবে।শুধু প্রেমিক প্রেমিকা বা স্বামি,স্ত্রী না বাবা,মা ভাই,বোন যেই আত্মীয় হোক না কেন কাছে না থাকলে তাদের খোজখবর নিতে তখন চিঠি লিখা হতো।চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় সবাই বসে থাকতো।যখন প্রিয়জনের চিঠি হাতে পেতো তখন তাদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যেতো।সত্যি চিঠি মনের কথা প্রিয়জনকে জানানোর সেই সময় এক অপরিহার্য মাধ্যেম ছিল।এই যুগে দূরে থাকলে ম্যাসেজ,তারপর ভিডিও কলে কথা বলে একে অপরকে দেখে আর এতে মনে হয় যেন তারা একে অপরের কাছেই আছে।আর চিঠির যুগে চিঠি আদান প্রদান করে মনে হতো সে আমার থেকে দূরে নয় সে আমার মনের মধ্যেই আছে। রেহানা:-যুগের তালে তালে আজ এই আধুনিক প্রথিবীতে চিঠি লিখা প্রায় হারিয়ে গেছে।খুব কমই এখন চিঠি আদান প্রদান হয়।এভাবে চলতে থাকলে চিঠি লিখা তো একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।তোমার কি মনে হয় কিভাবে চিঠি লিখা বাঁচিয়ে রাখা যায়? আমি:-দেখো আমাদের সময় চিঠি আদান প্রদান এ অনেক সময় লাগতো কারণ যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো ছিল না।কিন্তু এখন এই একুশ শতকে যোগাযোগ ব্যাবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।তাই এখন চিঠি আদান প্রদানে সময় কম লাগবে।তাই এই বিষয় টা সবার ভাবা দরকার।হয়তো মোবাইল এসে চিঠি লেখার প্রতি গূরুত্ব কমে গেছে।এমনকি আমরাও তো এখন ছেলেমেয়ে কাছে না থাকলে মোবাইলের সাহায্যে তাদের সাথে কথা বলি।চিঠি লেখাটা আমাদের ও তো আর হয়ে উঠে না।শুধু মাঝে মাঝে আগের লিখা চিঠিগুলো বের করে দেখি।আসলে যুগের সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের চলা লাগবে।নতুন প্রযুক্তি আমাদের মেনে নিতে হবে তাই বলে অতীত এ যেই মাধ্যেমে আমরা মনের কথা একে অপরকে জানিয়েছি সেটাকে ভূলে যাওয়া ঠিক না।তাই মোবাইল এ যোগাযোগ তো থাকবেই কিন্তু তার বাইরে এখন অন্ততো শখ করে হলেও আমরা যদি প্রিয়জনকে চিঠি লেখি তাইলে চিঠি লেখার রীতিটা আবারো ফিরে আসবে। রেহানা:-একদম ঠিক বলেছো তুমি।মানুষের এই বিষয়টা ভেবে দেখা দরকার।যাই হোক কথা বলতে বলতে যে সন্ধ্যা হয়ে আসছে দেখছো।আমি ঘরে গেলাম তুমিও আসো।ছেলেও এখন অফিস থেকে ফিরবে। আমি:-আচ্ছা তুমি ঘরে যাও আমি আসছি। তারপর রেহানা ঘরে চলে গেল। আমি এবার একা ছাদে বসে আছি আর ভাবছি।সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে যাচ্ছে।সবাই সবার ঘরে ফিরছে।চারিদিকে আধার ঘনিয়ে আসছে।দৈনিক কর্মব্যাবস্থা শেষ করে রাতে সবাই হয়তো ঘুমানোর আগে ফোন করে পিয়জনের খবর নিবে।তরুণ তরুণিরা ম্যাসেজে একে অপরের সাথে কথা বলবে।কিন্তু একটা সাদা কাগজ আর একটা কলম অবহেলায় একা পড়ে থাকবে।কেউ আর লিখবে না সাদা কাগজে পিয়জনের প্রতি মনের মাঝে জমে থাকা অভিমান,ভালোলাগা, মন্দলাগার কথা।আজ যেন সবকিছু আলোয় উজ্জ্বলিত শুধু একটা সাদা কাগজের একটি চিঠি অন্ধকারে পরে আছে।তাই আজ আফসোস করেই বলতে হয় যে যেই চিঠি লিখে একসময় আমরা একে অপরের কাছে একটু দেরিতে হলেও নিজের মনের কথা পৌছে দিতাম আর আজ যুগের বিবর্তনে মোবাইল এসে এবং মোবাইলের মাধ্যেমে পিয়জনের উত্তর খুব দ্রুত পেয়ে যাচ্ছি বলে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি,আগ্রহ হারাচ্ছে চিঠি লেখা,মনের মাঝে যেন চিঠি লিখার প্রতি ইচ্ছার উপরও পড়ে যাচ্ছে এক পশলা ধুলো।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৫৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now