বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
"একটি আত্মজীবনীমূলক রচনা"
রচনা: মেহেদী হাসান প্রভা'র আত্মকথা।
সূচনা: আমি মেহেদী হাসান প্রভা ওরফে বিশিষ্ট VVIP। আমি একটি গৃহপালিত প্রাণী। তবে আমি বাপের হোটেলে খাইদাই আর মায়ের হোটেলে ঘুমাই টাইপের লোক না। কারণ আমার বাবা কিংবা মা কারোরই কোন হোটেল নেই। তবে আমি বাবা-মায়ের গৃহে পালিত একমাত্র ছেলে জন্তু। একটি মেয়ে জন্তু হিসেবে আমার ছোট বোন থাকলেও তিনি বাড়ির রাজকন্যা। আর আমি গোয়ালের মানবসদৃশ্য গরু।
বর্ণনা: আমার একটিমাত্র শরীর আছে। যাতে দুইটিমাত্র হাত রয়েছে। দুইটিমাত্র পা রয়েছে। দুইটিমাত্র চোখ রয়েছে। দুইটিমাত্র কান রয়েছে। প্রতি কানে একটিমাত্র করে গর্ত রয়েছে। একটিমাত্র নাক রয়েছে। দুইটিমাত্র নাকের ফুটো রয়েছে। একটিমাত্র মাথা রয়েছে। একটিমাত্র বুক রয়েছে। একটিমাত্র অতিকায় পেট রয়েছে।
ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে অনেক কিছুই রয়েছে। যার বর্ণনা করতে গেলে আরেকটিমাত্র মহাকাব্য মানে মহা রচনা লিখতে হবে।
শুধু এতটুকু জেনে রাখুন যে আমার কিডনির সংখ্যা দুইটিমাত্র। অর্থাৎ আমার কোনো আইফোন নেই!
প্রাপ্তিস্থান: বিশিষ্ট VVIP হওয়ার দরুণ আমাকে সহজে খুঁজে পাওয়া দূরহ। তবে আমি শুধু আমার নিজের কাছেই VVIP। তাই আমাকে শহরে, গ্রামে, দেশে, বিদেশে সকল জায়গায়, সকল সময়ে, সকল স্থানে, সকল প্রকারে, সকল বৈশিষ্ট্যে পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাকে আপনি আমার নিজের রুমের, নিজের খাটের চিপা ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাবেন না। কারণ আমি মহা একেবারে অতি মহা অলস!
পরিবার: আমার পরিবারে আমি আছি। আছেন আমার বাবা। আছেন আমার মা। আছে আমার একমাত্র ছোট বোন।
বাবা একজন বিশাল বড় ব্যবসায়ী। আক্ষরিক অর্থেই বিশাল। মানে অনেক মোটা আরকি। ব্যবসার প্রধান জায়গা চট্টগ্রামে হওয়ায় সারা বছরই ঢাকা টু চট্টগ্রাম টু ঢাকা করতে হয়।
মা একজন স্কুল শিক্ষিকা। হাইস্কুলের শিক্ষিকা। রগচটা রাগী নন। বরং শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রিয় একজন। তবে অন্যায় করলে শাস্তি পেলেই, "এই ম্যাম ডেন্জারাস। অনেক রাগী। যম!"
বোন আমার থেকে সাত বছরের ছোট। তবে একমাত্র বোন হওয়ায় আমার সব আদর ওকে নিয়েই। যদিও বড় ভাই হিসেবে শাসনটাও প্রচন্ড বেশি। তবে বাবা-মা ওকে কিছু বললে আমার বুকটা ফেটে যায়। অনেক কষ্ট লাগে তখন। আমি শাসন করার সময় একটুও খারাপ লাগে না। তবে যদি কেঁদে দেয় তখন.......।
খাদ্যাভ্যাস: আমি খুবই ভোজন রসিক। খাওয়া-দাওয়া করতে প্রচুর পছন্দ করি। তবে সত্যি বলছি খুব বেশি খাওয়া-দাওয়া করি না। তবে একবার যদি শুরু করে দেই তখন....... অন্তত পাঁচ প্লেট তো খাওয়া হয়ই। বিভিন্ন দাওয়াতে গেলে নতুন কেউ আমাকে দেখলে বলবে "পেটুক"। আর আত্মীয়-স্বজন বলবে, "খাও বাবা! আরো বেশি করে খাও! সব তো তোমার জন্যই!"
পড়ালেখা: এই রচনা লেখার মূহুর্তে আমি কলেজে পড়ছি। একাদশ শ্রেণিতে মানে আরকি ফার্স্ট ইয়ারে। তবে করোনা ভাইরাসের জন্যে ফার্স্ট ইয়ার আর সেকেন্ড ইয়ারের মাঝখানে একটা জায়গায় আটকা পড়ে আছি! স্কুল জীবনে কখনো ফার্স্টবয় না থাকলেও সর্বদা ভালো স্টুডেন্ট হিসেবেই পরিচিত ছিলাম। পিএসসি, জেএসসি আর এসএসসি পরীক্ষা এ প্লাস পেয়েছি। যার জন্য আমাকে রিকশা চালিয়ে "ও সখিনা গেসস কিনা ভুইলা আমারে, আমি এহন রিশকা চালাই ঢাহা শহরে" গানটা গাইতে হয়নি। যদিও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমার ঘোরতর আপত্তি আছে।
পছন্দের বিষয়: অনেক কিছুই পছন্দ করি। যেমন খাওয়া-দাওয়া, বই পড়া, চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা, কবিতা লেখা আর সর্বশেষ যেটা আছে সেটা হলো বাইরের পৃথিবীটা দেখা। বিশেষ করে বৃষ্টির সময়। ঐ সময়টাতে আমার মনে হয় পৃথিবীর সব অন্যায়, সব খারাপ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কারণ ঐ সময়টা আমার কাছে খুবই পবিত্র একটা সময় মনে হয়। বৃষ্টি খুব সুন্দর। আকাশটাও। এসব নিয়ে আমার নিজের একটা পৃথিবী আছে। আমার কল্পনায়। যখন চোখ বন্ধ করে চিন্তা করি তখন আমি ঐ কল্পনার রাজ্যে ঘুরতে থাকি। আমার সাথে শুধু থাকে আমার একমাত্র ছোট বোন। কখনো কখনো বাবা-মাও থাকেন। তবে খুবই কম।
অপছন্দের বিষয়: ঘুমানো! হ্যাঁ সত্যি বলছি আমি ঘুমাতে পছন্দ করি না। চিন্তা করতে করতে ঘুম আসলে অনেক বিরক্তি লাগে। আর অন্য একটা কারণও আছে। আমার সহজে ঘুম হয় না।
শারীরিক অবস্থা: আমি একজন সুস্থ-সবল মানুষ। তবে ক্লাস ওয়ান থেকে প্রতিবছর জুন, জুলাই অথবা আগস্ট মাসে আমার প্রচন্ড জ্বর আসে। অন্তত কয়েকটা দিনের জন্য প্রচুর দুর্বল হয়ে পড়তে হয়। ঐ সময়টা কিন্তু অনেক ভালো লাগে। আম্মুর আমার পাশে বসে থাকা, মাথায় জলপট্টি দেওয়া, নিজ হাতে খাইয়ে দেওয়া, সব খুবই ভালো লাগে। আম্মুর জন্য অনেক....... আম্মুইতো....... এছাড়া আর এতো আদর-যত্ন কে করবে?
দুষ্টু বোনটাও এসময় অনেক যত্ন করে। একটা মাত্র বোন। ও ছাড়া মনে হয় আমার জীবনটাই অসম্পূর্ণ থাকতো। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর একটা হলো ভাইবোনের একসাথে গল্প করা।
রাতে সহজে ঘুম হয় না। এজন্য যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন কেউ ডাকে না। শুধু খাওয়ার জন্য আর নামাজের জন্য ডেকে দেয়।
কলেজে উঠার পর থেকে চোখে একটু কম দেখছি। আম্মু বলেন ভিটামিনের অভাব। আব্বু বলেন অল্প আলোয় বই পড়ার পার্শপ্রতিক্রিয়া।
উপকারীতা: এমনিতে খুব অলস হওয়ায় আমার কোনো উপকারীতা নেই। তবে কোন কাজ যদি দেওয়া হয় আর ঐ সময় যদি কাজটা করতে ভালো লাগে তবে কাজটা শেষ করেই ছাড়ি। এজন্য আম্মু মাঝে মাঝে অনেক বকা দিলেও যখন কাজ করে দেই তখন বলেন যে সবসময় এমন থাকলেই তো হয়। আসলে আমি এমন অলস ছিলাম না। যখন মাত্র ক্লাস এইটে পড়ি তখন থেকেই আস্তে আস্তে অলস হতে শুরু করলাম। কেন তা বলতে পারি না। হয়তো বয়সন্ধির প্রভাব।
আমার বোনকে পড়ানোর দায়িত্ব আমার ওপর। তবে আমি যেহেতু অনেক অলস তাই........। তবে কোন কিছু বোঝানোর ব্যাপারে আমার কুড়ি বছরের অভিজ্ঞতা আছে। যদিও আমি মাত্র আঠারো বছরের এক সদ্য বড় হওয়া শিশু, যে কিনা বিছানায় করে হিসু। না না আমি বিছানায় এমন কিছু করি না। এটাতো ছন্দ মেলানোর জন্য বললাম।
অপকারীতা: আমার অপকারীতা বলে শেষ করা যাবে না। কারণ আমি এমনই এক ব্যক্তি যে কিনা অপকারীতার নোবেল পুরস্কার লাভ করেছি। অলসতা, রাত জেগে বই পড়া, ঘন্টার পর ঘন্টা শুয়ে শুয়ে চিন্তা করা, সবাইকে সহজেই বিশ্বাস করা, বোনকে নিয়মিত বিভিন্ন কাজের ফরমায়েশ দেওয়া, আম্মুকে নিজের বিভিন্ন কাজ করে দিতে বলা, কোন কাজ দিলে অবহেলা করে ফেলে দেওয়া...... এসবই আমার অপকারীতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
বিশেষ গুণাবলী: এটাই হয়তো আমার একমাত্র গুণ। সেটা হলো কোন কিছুই সিরিয়াসভাবে না নেওয়া। দুনিয়ার কোন কিছুই আমার কাছে সিরিয়াস না। এজন্য অনেক সমস্যায় পড়তে হলেও সেটাও আমার কাছে সিরিয়াস না।
হাসতে প্রচুর পছন্দ করি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও হেসেই উড়িয়ে দেই। যে জন্য অনেক কটু কথাও শুনতে হয়। তবে সেটাও হেসেই উড়িয়ে দেই।
এছাড়া আমার আর কোন গুণ নেই।
প্রিয় উক্তি:
১. পরিবার কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ এটা সবকিছু।(অজ্ঞাত)
২. একটা ভালো বই একটা বন্ধুর সমান। কিন্তু একটা ভালো বন্ধু, পুরো একটা লাইব্রেরীর সমান!(এ.পি.আব্দুল.কালাম)
৩. আগুনের মানুষের আবার আগুনের ভয় কিসের?(অজ্ঞাত)
৪. যদি বেস্ট(সেরা) হতে চাও, তবে আগে বিস্ট(জানোয়ার) হও।(আমার কলেজের একজন শিক্ষক)
৫. পৃথিবীর একদিকে অনেক খাদ্য, কিন্তু কোন ক্ষুধা নেই। আর অপরদিকে অনেক ক্ষুধা, কিন্তু কোন খাদ্য নেই।(অজ্ঞাত)
৬. সব দুঃখের মূল এই দুনিয়ার প্রতি অত্যধিক আকর্ষণ।(হযরত আলী রাঃ)
৭. তিনটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। লোভ, হিংসা ও অহংকার।(ইমাম গাজ্জালী রহঃ)
৮. বন্ধু একটা উপহারই দিতে পারে। সেটা হলো বন্ধুত্ব।(আমার নিজের কথা)
৯. আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।(সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট)
১০. যে সফলতা চেষ্টা না করে পাওয়া যায় তার কোন মূল্য নেই।(অজ্ঞাত)
উপসংহার: চেষ্টা করেছি সৎভাবে নিজের সম্পর্কে লেখার। নিজের সম্পর্কে কখনো কিছু লিখব সেটা ভাবিনি। কারণ আমি নিজেকে সবার কাছ থেকে গুটিয়ে রাখতে চাই। এই লেখাটা লেখার একমাত্র কারণ তুহিন। তুহিন আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাই এটা লেখা। আমার স্বভাবমতো নিজেকে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
**************************************************
শেষ কথা:
উৎসর্গ- যারা আমার সম্পর্কে কৌতুহলী। বিশেষ করে তুহিন।
আরেকটা কথা:
VVIP= Very Very Important Person.
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now