বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
- “না মহারাজ, এটা অন্যায়! আপনি এটা করতে পারেন না।” মহারাজের কথার প্রত্যুত্তরে কথাটি বলে উঠল রাজকুমার বল্লাল সেন।
- “ন্যায়-অন্যায় কি আমার তোমার থেকে শিখতে হবে কুমার??” রাগান্বিত দৃষ্টিতে কুমারকে উদ্দেশ্যে করে পরক্ষণে কথাটা বলে উঠলেন মাহারাজ।
- “কিন্তু আপনি ভুল করতেছেন মহারাজ। বড় রাজকুমার হিসেবে এই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী একমাত্র আমি। আপনি ছোট রাজকুমারকে এই সিংহাসন কিছুতেই দিতে পারেন না।”
- “চুপ থাকো কুমার, আমাকে ঠিক ভুল শিখাতে এসো না। এই সমগ্র স্যাবিলুইন সাম্রাজ্যে আমার কথাই শেষ কথা। আজ থেকে এই সিংহাসনের মালিক ছোট রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন।”
- “কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটা কখনোই হতে দেব না মহারাজ।” বসা থেকে দাঁড়িয়ে এক প্রকার বিদ্রোহ ঘোষণা করার মত করে কথাটা বলল রাজকুমার বল্লাল সেন।
কুমারের কথা পাত্তা না দিয়ে সেনাপতিকে উদ্দেশ্যে করে মহারাজা বলতে শুরু করলেন,
- “সেনাপতি সাহেব। স্যাবিলুইন বাসির উদ্দেশ্যে ঘোষণা করে দাও; আজ থেকে তাদের রাজা রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন।”
- “কিন্তু তার আগেই আপনার মৃত্যুর সংবাদ স্যাবিলুইন বাসির সামনে ঘোষণা করতে হবে।”
কথাটি বলেই বল্লাল সেন তার তরবারিটাকে কোষমুক্ত করে ঘুরে গিয়ে মহারাজের গলার কাছে ধারলো অস্ত্রটা দিয়ে একটা টান মারল।
সাথে সাথে মহারাজ মেঝেতে লুঁটিয়ে পরে গেলেন। শিরা থেকে ফিনকি দিয়ে অঝর ধারায় রক্ত বেরিয়ে যেতে লাগল। মহারাজ হাত-পা গুলি ছটফট করে লাফাতে লাগলেন।
সেনাপতি, নাজির, উজিরসহ প্রাসাদের সবাই দাঁড়িয়ে পরলেন। কিছু একটা ঘটে যাবার আগেই রাজকুমার বল্লাল সেন তাঁর তরবারিটাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে সবাইকে সাবধান করে দিল।
দেখতে দেখতে মহারাজ প্রাণহীন হয়ে তাঁর নিথর দেহটা মেঝেতে পরে রইল। বল্লাল সেন প্রহরীদের ডেকে মহারাজের মৃত্যু দেহটাকে সরিয়ে নিতে বললেন। মহারাজের মৃত্যু দেহটাকে প্রহরীরা রাজপ্রাসাদের ভিতর থেকে মুহূর্তের মধ্যেই সরিয়ে ফেলল ।রাজকুমার বল্লাল সেন প্রাসাদেই সবার সামনে সিংহাসনে গিয়ে বসলেন।
কিছুক্ষণের জন্য নিরবতায় ছেয়ে গেল পুরো প্রাসাদ। কারো মুখে কোন টু শব্দটিও নেই। রাজকুমার বল্লাল সেন সিংহাসনেই বসে রইলেন।
হঠাৎ অশ্বের পায়ের ঠক ঠক শব্দে হুশ ফিরলো সবার!
বড় একটা সাদা অশ্বের পিঠে আরোহণ করে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করল রাজপোশাক পরিহিত একজন লোক। প্রাসাদে প্রবেশ করে সিংহাসনে চোঁখ পরতেই চোখ আঁটকে গেল তাঁর! নির্বাক হয়ে সিংহাসনের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপরই মাথার মধ্যে একটা কল্পচিত্র অঙ্কন করে মুহূর্তের মাঝেই বুঝে নিল সব। আপাতত সিংহাসনের কথা বাদ দিয়ে রাজ্যের চিন্তা করাই হবে তাঁর একমাত্র দায়িত্ব। সবাইকে অবাক করে দিয়ে যেন সব আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে এমন ভঙ্গিতে বল্লাল সেনকে উদ্দেশ্যে করে বললেন।
- “স্যাবিলুইনের রাজাকে উদ্দেশ্যে করেই বলছি, রাজ্যের এখন ঘোর বিপদ। দেওয়ানি বংশের বর্তমান সুলতান, সুলতান সুরাজ দেওয়ানি তাঁর দল-বল নিয়ে এই রাজ্যের দিকেই আসছে। তাঁর উদ্দেশ্য এই রাজ্যেকে তিনি নিজেই শাসন করবেন। এখনই যদি আমরা তাদের মোকাবেলা না করি তবে তাদের আর ফেরানো সম্ভব হবে না। এটাই ছিল স্যাবিলুইনের মহারাজের জন্য স্যাবিলুইনের ছোট রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেনের সর্বশেষ সংবাদ।” কথাগুলো একাধারে বলে অশ্বের পিঠ থেকে নেমে কুর্নিশ করে দাঁড়িয়ে পরল রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন।
- “তারা কোন দিক দিয়ে আসছেন?” সিংহাসন থেকে দাঁড়িয়ে গিয়ে বীর প্রতাপাদিত্য সেনকে উদ্দেশ্যে করে জানতে চাইল বল্লাল সেন।
- “তারা ফোরাত নদীর উপকুলের কাছাকাছি এসে গেছে প্রায়। তাদের মুখোমুখি হতে আমাদেরকে সেদিক দিয়েই যেতে হবে কুমার।” মাথা তুলে কথাটা বলল ছোট রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন।
- “যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও সবাই। এ যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করব আমি। আর হ্যা, শুনে রাখ বীর প্রতাপাদিত্য সেন, আজ থেকে আমি কুমার নই। আজ থেকে আমি মহারাজ। আমাকে মহারাজ বলেই সম্বোধন করবে।”
কথাগুলো শুনে বল্লাল সেনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল বীর প্রতাপাদিত্য সেন। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না আর। তার অনুপস্থিতিতে রাজপ্রাসাদে কি হয়ে গেল এটা।
হঠাৎ বল্লাল সেন সেনাপতিকে উদ্দেশ্যে করে আবার বলে উঠল;
- “সেনাপতি সাহেব, সবাইকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বল। আমরা এখনই শত্রুর মোকাবেলা করতে বেরিয়ে পরব। আর হ্যা, তার আগে স্যাবিলুইন বাসিকে জানিয়ে দাও তাদের বর্তমান মহারাজ, রাজকুমার বল্লাল সেন। আর হ্যা, রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন, তুমিও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। তোমাকেও এ যুদ্ধে অন্যদের মত অংশগ্রহণ করতে হবে।”
বল্লাল সেনের কথাগুলো শুনে রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেনের মুহূর্তের জন্য বল্লালের উপর অনেক রাগ হলো। কিন্তু মুহুর্তেই সে আবার নিজেকে সামলে নিলেন। সে জানে, সে চাইলেও এখন কিছু করতে পারবে না। নিজের রাগকে নিজের মাঝেই চেঁপে রেখে অশ্বের পিঠে উঠে প্রাসাদের ভিতর থেকে বেরিয়ে গেল রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন।
.
.
.
ফোরাত নদীর উপকূলে এসে মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করল দুই দেশের সেনাসৈন্য সহ প্রভাবশালী দুই রাজা বল্লাল সেন ও সুলতান সুরাজ দেওয়ানি।
সুলতান সুরাজ দেওয়ানি চিৎকার দিয়ে বল্লাল সেনকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলেন;
- “ওহে স্যাবিলুইনের তুচ্ছ রাজা, জেনে রাখ, স্যাবিলুইন সাম্রাজ্য হবে আমার। আমি রাজত্ব করব এই সুবিশাল স্যাবিলুইন সাম্রাজ্য। যদি তুমি বাঁচতে চাও তবে আমার কাছে আত্মসমর্পণ কর।”
- “তুমিও শুনে রাখ দেওয়ানি বংশের শেষ সুলতান, সুলতান সুরাজ দেওয়ানি; এ যুদ্ধে জয়ী আমিই হব। আর তুমি তোমার প্রাণ হারাবে। যদি প্রাণ নিয়ে বাঁচতে চাও তবে কুকুরের মত লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাও।”
- “হা হা হা হা! তোমার মত তুচ্ছ রাজা আমাকে পরাস্ত করবে!? হা হা হা হা!” গগন ফাটিয়ে হাসতে শুরু করে দিলেন সুলতান সুরাজ দেওয়ানি।
সৈন্যদের হাতের ইশারায় চিৎকার দিয়ে বল্লাল সেন ঘোষণা করলেন:-
----- “আ...ক্র...ম...ণ!!”
হাজার হাজার সৈন্য মুহূর্তেই নিজেদের প্রস্তুত করে নিয়ে সুরাজ সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে অসংখ্য তীর ছুরে মারল।
সুরাজ সৈন্যরা তাদের ঢালগুলো নিয়ে একের পাশে একে এসে একটা উচুঁ প্রাচীর বানিয়ে ফেলল।
তীর গুলো ভয়ংকর ঠক ঠক শব্দ করে ঢালের গায়ে এসে বিদতে লাগল।
সুলতান সুরাজ দেওয়ানি মুহূর্তেই তাদের সৈন্যদের উদ্দেশ্যে করে ঘোষণা করলেন:-
------- “আ...ক্র...ম...ণ!!”
হাজার হাজার সৈন্যরা নিজেদের প্রস্তুত করে নিয়ে স্যাবিলুইন সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে অসংখ্য তীর ছুরে মারল।
ঢাল-বর্শা নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল স্যাবিলুইন সৈন্যরা।
হঠাৎ তীরের মাথায় আগুন জ্বলতে দেখে ভয় পেয়ে গেল পুরো স্যাবিলুইন সৈন্যরা। প্রতেকটা তীরের মাথায় জ্বলতে ছিল একটা করে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা!
তীরগুলো এসে পরতে লাগল স্যাবিলুইন সৈন্যদের উপর। কেউ সেটাকে ঢালের ওপাশে ঠেকিয়ে দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল কেউবা সেটা না পারায় জ্বলন্ত অগ্নিশিখাসহ তীরটা তাঁর বুকে বিদে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল।
দুইপাশ থেকে দুই রাজা, সুরাজ দেওয়ানি এবং বল্লাল সেন একইসাথে আবার উচ্চারণ করে উঠল:-
-------- “আ...ক্র...ম...ণ!!!”
ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই সৈন্যরা ছুঁটে যেতে লাগল একদল আরেকদলের দিকে।
মুহূর্তেই মধ্যেই শুরু হয়ে গেল এক প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধ। তরবারির ঝন ঝন শব্দে একাকার হয়ে গেল উপরের শূণ্যতা। রক্তের স্রোত বইতে লাগল রণভূমির উপর দিয়ে। একের পর এক মৃত্যুর আত্মচিৎকারে কেঁপে উঠল সমস্ত রণভূমি। এ হত্যার যেন অন্তিম নেই।
অশ্বের পিঠ ছেড়ে বল্লাল সেনের সামনে এসে উপস্থিত হলেন সুলতান সুরাজ দেওয়ানি। বল্লাল সেনও অশ্বের পিঠ ছেড়ে নেমে তরবারিটাকে কোষমুক্ত করে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন।
সুরাজ দেওয়ানি দৌঁড়ে এসে আঘাত করলেন বল্লাল সেনের উপর। বল্লাল সেন তাঁর অস্ত্রটা দ্বারা সেটাকে প্রতিহত করে ফেললেন মুহূর্তেই।
সুরাজ অস্ত্রটাকে তুলে আবার আঘাত করলেন বল্লালের উপর। বল্লাল আগের মতই প্রতিহত করে ফেললেন সুরাজের এবারের আক্রমণও। এভাবেই চলতে থাকল কিছুক্ষণ। একের পর এক আক্রমণ ও তার প্রতিহতর জন্য ব্যবহৃত তরবারির ঝন ঝন শব্দে কেঁপে উঠল সমস্ত রণভূমি।
হঠাৎ একটা আক্রমণের টাল সামলাতে না পেরে দূরে গিয়ে ছিঁটকে পরল সুরাজ দেওয়ানি। উঠে এসে এক বিকট চিৎকার দিয়ে আঘাত করল বল্লালকে। বল্লাল সেনও এবারের আক্রমণের টাল সামলাতে না পেরে দূরে ছিঁটকে গিয়ে একটা বড় পাথরের সাথে ধাক্কা খেল। টেনে টেনে ক্লান্ত শরীরটাকে অস্ত্রের উপর ভর করে উঠে দাঁড়াল বল্লাল সেন। ততক্ষণে সুরাজ আক্রমণের উদ্দেশ্যে দৌঁড়ে চলে আসল বল্লালের কাছাকাছি। বল্লাল সেটাকে লক্ষ্য করে কোনমতে সরিয়ে নিল নিজেকে। একটুর জন্য আক্রমণটা গিয়ে পাথরের উপর পরতেই পাথরটা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। সাথে সাথে সুরাজও টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে গেল।
“বল্লাল সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দৌঁড়ে গিয়ে সুরাজের সামনে শূণ্যের উপর স্লো মোশনে ঘুরতে ঘুরতে তার কোমর থেকে ছুরিটাকে বের করে ঘূর্ণায়মান সিনটা শেষ হতেই সুরাজের বুকে ছুরিটা ঢুকিয়ে দিল।”
সুরাজ ‘না’ শব্দটাকে উচ্চারণ করে একটা গগনফাঁটা চিৎকার দিয়ে প্রাণ হারাল। সমস্ত রণভূমি মুহূর্তের মধ্যেই থেমে গেল। সৈন্যরা যার যার অস্ত্র হাতে যে যেমন ছিল সে তেমন ভাবেই নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে রইল।
সুরাজের বুকের থেকে এক ফিনকি রক্ত ছিঁটকে এসে বল্লালের মুখে পরল। বল্লাল দাঁড়িয়ে গিয়ে সমস্ত রণভূমিকে কাঁপিয়ে বিজয়ের এক হাসি দিল। এ হাসি শুধু একটিখানি বিজয়ের নয়, এ হাসি বল্লাল সেনের একই দিনে একই সাথে দুইটি বিজয়ের।
হঠাৎ ক্যাচ্ শব্দে থেমে গেল বল্লাল সেনের হাসি। থেমে গেল মুহূর্তও। “বল্লাল সেনের বুক থেকে এক হাত সামনে বেরিয়ে আসল রক্তভেজা লাল টকটকে ধারালো একটা অস্ত্র!” বল্লাল সেন অজানা আক্রমণের শত্রুকে দেখার জন্য অস্ত্রসিক্ত শরীরটাকে টেনে টেনে ঘুরিয়ে দাড় করাল। শত্রুকে দেখেই হাটু-গেঢ়ে সেখানেই বসে পড়ল বল্লাল সেন। তাঁর সামনে রক্তমাখা হাতে দাঁড়িয়ে আছে স্যাবিলুইনের ছোট রাজকুমার বীর প্রতাপাদিত্য সেন। তারই ছোট ভাই তাকে মেরে দিয়েছে এটা ভেবেই যেন বল্লাল সেনের প্রাণটা হাহাকার করে উঠল।
- “স্যাবিলুইন সাম্রাজ্যের একমাত্র রাজা হব আমি, হ্যাঁ আমিই হব স্যাবিলুইন সম্রাজ্যের একমাত্র মহারাজ!!” বল্লালের সামনে দাঁড়িয়ে বিকট এক চিৎকার দিয়ে কথাটা বলল বীর প্রতাপাদিত্য সেন।
রক্তমাখা হাতটার দিকে তাঁকিয়ে থেকে আবার বলতে লাগলেন;
- “আমার সম্রাজ্যে যে আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তাকে আমি এভাবেই........”
ক্যাচ্ শব্দে থেমে গেল বীর প্রতাপাদিত্য সেনের কথাও।
তাঁর বুক থেকেও এক হাত সামনে একটা রক্তভেজা লাল টকটকে ধারালো অস্ত্র বেরিয়ে আসল। অস্ত্রের আঘাতের টাল সামলাতে না পেরে হাটু-গেঢ়ে বল্লালের সামনে বসে পরল বীর প্রতাপাদিত্য সেনও। ততক্ষণে বল্লাল প্রাণ হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল। তাঁর পাশেই অস্ত্রসিক্ত দেহটাকে নিয়ে লুটিয়ে পরল বীর প্রতাপাদিত্য সেনও।
.
.
.
প্রজাদের মধ্যে দেখা দিয়ে কড়া বিদ্রোহ। সেনাপতি হবে তাদের রাজা এটা তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি।
রাজ্যের অবস্থাকে শিথিল করতে যে বিদ্রোহ করবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য আইন জারি করে দেওয়া হল।
জীবনের ভয়ে অনেকেই বিদ্রোহ করা থেকে নিজেকে থামিয়ে দিচ্ছেন।
রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গোপনে বিদ্রোহ করার জন্য যারা মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকেও স্যবিলুইন সম্রাজ্যের বর্তমান রাজার বড় ছেলে রাজকুমার সমিরন সিং ধরে ধরে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছেন।
জীবনের বিনিময়ে হলেও সবাইকে মেনে নিতে হয়েছে তাদের প্রাক্তন সেনাপতিই তাদের রাজা।
একদিন হঠাৎ মহারাজ অসুস্থ হয়ে পরলে প্রাসাদে খবর দেওয়া হল মহর্ষিকে। তিনি মহারাজকে ভালো করে দেখে বলে গেলেন মহারাজের এক মহাব্যাধি হয়েছে। “মহারাজকে সুস্থ করতে হলে বনবাসে দিতে হবে!”
কথাটি বলে মহর্ষি বড় অঙ্কের একটা হাদিয়া নিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করল।
যেমন কথা তেমন কাজ! রাজাকে বনবাসে দেওয়া হল ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই খবর রাখল না তাঁর।
এদিকে মহারাজের অনুপস্থিতিতে স্যাবিলুইন সাম্রাজ্য কে শাসন করবে এ নিয়ে দুই রাজকুমারের মধ্যে শুরু হয়ে গেল এক তর্কযুদ্ধ। রাজকুমার সমিরন সিং বড় হওয়াতে তার অধিকার বেশি থাকা সত্ত্বেও ছোট রাজকুমার সিমরান সিং বড় রাজকুমারকে সিংহাসন দিতে কিছুতেই রাজি হলেন না। রানী’মাও চেয়েছিলেন ছোট রাজকুমার সিংহাসনে বসুক। পরিশেষে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পেরে দুই রাজকুমারের মাঝে প্রাসাদের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল এক অস্ত্র যুদ্ধ।
সিংহাসনের লোভে ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘঠিত প্রলয়ঙ্করী যুদ্ধে কেঁপে উঠল সমস্ত রাজপ্রাসাদ। সবাই নির্বাক হয়ে শুধু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
রাণী’মা তাদের থামাতে গেলে অসাবধানশত বড় রাজকুমারের অস্ত্র গিয়ে রাণী’মাকে আঘাত করে। সাথে সাথে রাণী’মাও মাটিতে লুটিয়ে পরে প্রাণ হারালো। বড় রাজকুমার সমিরন সিং কিছু বুঝে উঠতে না পেরে দোষীর মত সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ।
- “মাকে তুমি ইচ্ছে করেই মেরে দিয়েছ কুমার! তোমাকে আমি ছাড়ব না কুমার!” কথাটি বলেই দৌঁড়ে গিয়ে যুদ্ধের নিয়মকে ভঙ্গ করে বড় কুমারকে পিছন থেকে মেরে দিল ছোট রাজকুমার সিমরান সিং।
সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পরল বড় রাজকুমার। প্রাণ হারাল সেও।
- “শোন, শোন, শোন,,, সমগ্র স্যাবিলুইন বাসি সবাই মন দিয়ে শোন; তোমাদের বর্তমান মহারাজ, ছোট রাজকুমার সিমরান সিং। তোমরা এখন থেকে দেশের সমস্ত খাজনা ও কর মহারাজ সিমরান সিং-কে প্রদান করবে।”
ঘোষণা করা হল স্যাবিলুইন সাম্রাজ্যের বুকে আরো একটা নতুন বিধান। সবাই ব্যাপারটাকে একটা সাধারণ বিষয় হিসেবে ভেবে নিয়ে যার যার মত করে নিজ নিজ কাজে চলে গেল।
তারা জানে, আগামীকাল হয়তো স্যাবিলুইনের রাজা হবেন আরেকজন!! তার পরের দিন হবেন আরেকজন!! তার পরের দিন হবেন রাজবংশীয় কাউকে বাদ দিয়েই আরো নতুন একজন!! এভাবেই চলবে স্যাবিলুইন সাম্রাজ্য!!
“স্যাবিলুইন জন্মের শুরুর থেকেই স্যাবিলুইন সাম্রাজ্যের বুকে চলতে থাকল এই অনিয়মিত রীতি; আর প্রতিবার নিয়তিও প্রত্যেকের উপর চালিয়ে যেতে লাগল তার সমীচীন নীতি!!”
(সমাপ্ত)
গল্প : সমীচীন
লেখা : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ রাফি
জানি না কেমন হয়েছে! সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now