বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
রসিকতা
মেয়েটির বয়স কিছুতেই বাইশ বা তেইশের বেশি হবেনা।লম্বা সোনালী চুলগুলো খুব চমৎকার করে আঁচড়ে রাখা।হালকা গোলাপী শার্ট আর গাঢ় নীল জিন্সটাতে খুব মানিয়েছে।যেন পোশাকের জন্য এই মেয়েটিই আদর্শ!এ যে একটা চমৎকার পরিবার থেকে এসেছে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে!
অনেকক্ষন ধরে ওর রেশমের মতো চুলগুলো দেখতে দেখতে মনে হল মেয়েটা দারুন সুন্দরী।আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার ইচ্ছা ছিল,কিন্তু মেয়েটার গভীর নীল চোখে জল টলমল করে উঠতে দেখে আমি সোজা হয়ে বসলাম।তাকালাম ওর চোখের দিকে,আহা গভীর!
“স্যার,আমি একজন খুনী!”
কথাটা বলতে বলতে মেয়েটা ফুঁপিয়ে উঠেছে।
গত আধাঘন্টা ধরে আমাদের পুলিশ স্টেশনে ও বসে আছে,আমার কালো কুচকুচে দেখতে টেবিলটার ওপাশের একটা চেয়ারে।মেয়েটি কি নিজেকে ধরিয়ে দিতে এসেছে?
পুলিশের চাকরি যারা করে তাদের কোন কিছুতেই অবাক হতে হয়না।আমি তবুও অবাক হলাম।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বুঝতে চেষ্টা করলাম মেয়েটা রসিকতা করছে কি-না।অবশ্যি পুলিশ ফাঁড়ি কোন রসিকতার জায়গা না।নাহ,মেয়েটার চোখে-মুখে রসিকতার কোন ছাপ নেই।বরং তার নীল চোখে গাঢ় বিষাদের একটা দেখতে পেলাম।
“কাকে কাকে খুন করেছেন আপনি?” আমি জানতে চাইলাম।
গভীর একটা নিশ্বাঃস নিয়ে মেয়েটি বলল, “তিনজন স্যার,আমি তিনজন মানুষকে খুন করেছি”।
আমি বিস্ময় নিয়ে তাকালাম মেয়েটির দিকে।এই বয়েসী একটা মেয়ে,এত চমৎকার দেখতে,বলছে সে খুন করেছে!আবার নিজে পুলিশ স্টেশন এসেছে!পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকল আমার কাছে।
“আমি...আমি আমাদের মালীকে খুন করেছি...ড্রাইভার আর...”মেয়েটি ফুঁপিয়ে উঠল।
“আর?”
“আমার মা,মাকে খুন করেছি আমি!” শব্দ করে কাঁদছে মেয়েটি।
টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলাম ওর দিকে।
গ্লাসটা হাতে নিয়ে ছোট ছোট চুমুক দিতে লাগল ও।
কিছুক্ষনের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিল সে,নিচু গলায় বলল, “প্লিজ স্যার,আমাকে এরেস্ট করে নিন।যেন আমি আর খুন না করতে পারি”।
“কেন আপনি খুন করেছেন তাদের?আর কেনই-বা অন্যদের খুন করবেন?ইয়ে,ম্যাডাম আপনার নামটা?”
“সিসি”,একটু থেমে আবার বলল, “আমার নাম সিসি”।
“ওকে, সিসি বলুন।কেন খুন করেছেন আপনি?”
“আমি জানিনা স্যার,এটা হয়ে গেছে”।
“দেখুন সিসি,আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছিনা।এবং ততক্ষন আমি আপনাকে এরেস্ট করতে পারবনা যতক্ষন এটা প্রমাণ হচ্ছে আপনি আসলেই খুন করেছেন।আমাকে নিজের চোখে লাশ দেখতে হবে,প্রমাণ দেখতে হবে!”
মেয়েটাকে খুব চিন্তিত দেখালো।
আমি আবার বললাম, “কোথায় আছে লাশগুলো?”
“আমি ওগুলো আমাদের বাগানে চাপা দিয়েছি”।
আমি মেয়েটার মুখের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকলাম, মেয়েটার চোখে-মুখে মিথ্যার ছাপ নেই।আমি ওর কথা ফেলতে পারছিনা কিন্তু বিশ্বাস করার মতোও না এসব!
তাহলে আমাকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে মেয়েটার বাড়ি চলে যাওয়া।কনেস্টটেবল দুজনকে সাথে নিয়ে নিলাম।
মেয়েটি আমাদের তাদের বাগানে নিয়ে এল।একটা জায়গা দেখিয়ে দিয়ে নিচু গলায় বলল, “হ্যা,এখানে পুঁতেছি মালী আর ড্রাইভারকে”।
আমি আমার কন্সটেবলদের নির্দেশ দিলাম জায়গায় খুঁড়ে লাশ বের করতে,হ্যা অবশ্যই যদি কিছু থেকে থাকে!
“আপনার মায়ের লাশটা কোথায় সিসি?”
“ঘরে”।মেয়েটি আবার কাঁদতে শুরু করেছে।
সিসি হাঁটতে শুরু করেছে।আমি তার পিছনে যাচ্ছি।
ঘরে ঢুকে গেলাম,এতটা অন্ধকার ঘর যে কিচ্ছুই দেখা যাচ্ছেনা।হাতে টর্চ ছিল বলে রক্ষা।আলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম।নাহ,ঘরটা খালি।কি বলল তবে মেয়েটা?
বের হয়ে অন্য একটা ঘরের সামনে দাঁড়ালাম।ঘরের দরজাটা চাপানো,ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।
বিস্মিত হয়ে দেখলাম,তিনটা লাশ ঘরের মেঝেতে রাখা!
সিসি কেন মিথ্যে বলল তবে??
“আহহহহ...”
পেছন থেকে কেউ আঘাত করেছে আমাকে!ঘুরে তাকিয়ে টর্চের আলো ফেললাম।
“সিসি”!
সিসি ছুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে,ছুড়িটা আমার রক্তে ভিজে গেছে!
“কেন সিসি?”
কাছে এসে সিসি ছুড়িটা আমার পেটে ঢুকিয়ে দিল।সামান্যতম বাধা দেওয়ার সুযোগও আমি পেলামনা।
হিসহিস করে বলল সিসি... “এটা ফান,স্যার”।
মাটিতে পড়ে যাওয়ার আগে দেখলাম সিসি হাসছে...কোমড় থেকে পিস্তল খুলে নিয়ে নিল সে।
বাইরে দুটো গুলির আওয়াজ শুনলাম,আমার কন্সটেবলরা শেষ হয়ে গেল বুঝলাম।
কে যেন গান গাইছে বাইরে,সুরেলা মিষ্টি একটা গান।সিসি গান গাইছে?আমি চোখ বুজলাম।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now