বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন
বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গ্রহণ

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান স্নিগ্ধা আফসানা রোশনী (০ পয়েন্ট)

X গ্রহন বিছানায় সাজানো বেশ কয়েক রঙয়ের স্কার্ট,স্কার্ফ।কোনটা পড়লে তাকে ভালো লাগবে সে বুঝতে পারছেনা। হালকা হলুদ রঙয়ের একটা স্কার্ট নিয়ে সে রান্নাঘরে চলে এল।রান্নাঘরে নানী তার পছন্দের খাবার রান্না করছেন। স্কার্টটা নিজের গায়ের সাথে লাগিয়ে লিলিয়ান গম্ভীর গলায় বলল, “নানী দেখতো,এই স্কার্টটায় কেমন লাগছে দেখতে?” খাবার প্যাকেট করতে করতে নানী তার আট বছরের নাতনীর দিকে তাকিয়ে হাসলেন। হেসে বললেন, “আমার লিলি সোনাকে সবকিছুতেই ভালো লাগে”। লিলিয়ান জোরে মাথা নাড়ল, “না নানী এমন বললে হবেনা,যে কোন একটা বলতে হবে।তুমি আমার ঘরে চল নানী”।নানীর হাত ধরে টান দিল ও। নানী হাসতে হাসতে বললেন, “পাগলী একটা!” স্কুলে গরমের ছুটি শুরু হয়েছে।পুরো একমাসের লম্বা একটা ছুটি।ছুটি এমনিতেও খুব মজার ব্যাপার।পড়াশুনা নেই,ছবি আঁক,পিকনিক কর,টিভি দেখ।লিলিয়ানের স্কুল যে খুব খারাপ লাগে তা-না।স্কুল তার ভালো লাগে,স্কুলের বন্ধুদের ভালো লাগে।তাদের ক্লাস টিচার মিসেস বেনের গল্প ভালো লাগে।লাগে।স্কুলের সামনের বড় সবুজ মাঠটাতে তারা যখন টিফিন টাইমে খেলে সেটাও ভাল লাগে। তবু লিলিয়ান ছুটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। ছুটিতে সে বেড়াতে যেতে পারে।এমনিতে সে প্রায়ই তার নানীর সাথে এদিক-সেদিক ঘুরতে যায়।নানীর বান্ধবীদের বাসায় বসে কেক,চকলেট খায়।কিন্তু এই লম্বা ছুটিতে সে আরো দূরে বেড়াতে যেতে চায়। হাসপাতাল থেকে একদিনের ছুটি আগেই করিয়ে রেখেছেন ডঃ মরিস।মানুষের সেবা করা তার পছন্দের কাজ,এটার থেকেও প্রিয় একটা জিনিস হল তার মেয়ের সঙ্গ।লিলিয়ানকে আনতে যাবে সে।গরমের ছুটির কিছুদিন লিলিয়ান তার বাবার কাছে থাকবে। নিজের সবকিছু পরিপাটি করে গুছিয়ে নিল লিলিয়ান।নানী সাহায্য করলেন ওকে।বড় সুটকেসটা ড্রয়িং রুমের সোফার পাশে রেখে লিলিয়ান অপেক্ষা করতে লাগল।কলিংবেল বাজার অপেক্ষা। অপেক্ষা করতে কারোই ভালো লাগেনা।লিলিয়ানেরও লাগেনা।শুধু এই বিশেষ সময়ে ভাল লাগে।বাবার জন্য অপেক্ষা করতে ওর খুব ভালো লাগে। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলনা লিলিয়ানের।আধাঘন্টা পরেই কলিংবেলের শব্দ পাওয়া গেল।লিলিয়ানের বাবা পরপর দু’বার কলিংবেল বাজান। নানী সোফায় বসে হাসিমুখে নাতনীর দরজার দিকে ছুটে যাওয়া দেখেন। দরজায় ঘন্টার শব্দ শুনে লিলিয়ান ছুটে গেল দরজা খুলতে।নানী সোফায় বসে বসে দেখছেন।লিলির পৃথিবীতে এখন শুধু দুটো মানুষই আছে।এই মানুষদুটির জন্য লিলিয়ানের ভালবাসা পরিমাপযোগ্য না।লিলিয়ান এই দুজনের জন্য অস্থির হয়ে থাকে।নাতনীর জন্য মায়ায় তাঁর মন ভরে গেল। লিলিয়ানের হতাশ কন্ঠস্বর শোনা গেল। “ ও,দুধওয়ালা আংকেল আপনি?নানী পাত্র নিয়ে এস”।লিলিয়ান স্বর উঁচু করল। দুধওয়ালার পিছন থেকে বড় রাস্তা দেখা যায়।লিলিয়ান বিস্ফোরিত চোখে সেদিকে তাকালো।দু’হাতে চোখ ডলে আবার দেখল।নানীর দিকে ফিরে খুশি খুশি গলায় বলল, “নানী তাড়াতাড়ি এস,তাড়াতাড়ি!”বলে লিলিয়ান অপেক্ষা করলনা।দুধওয়ালাকে পাশ কাটিয়ে সামনে ছুটে গেল।রাস্তার উপরেই বাবাকে জড়িয়ে ধরল। ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “তুমি দু’দিন দেরি করেছ বাবা!’ মেয়ের চোখে জল দেখে বাবার চোখও জলে ভরে গেল।তিনি মেয়েকে জরিয়ে ধরে গাঢ় গলায় বললেন, “মাই প্রিন্সেস,মাই প্রিন্সেস!” লিলিয়ানের বাবা কয়েকমাস পর পরই মেয়েকে দেখতে আসেন।কিন্তু তাতে বাপ-মেয়ে কারোরই মন ভরেনা। শেষ তিনবছর ধরে তারা দুজনেই গ্রীষ্মের ছুটিটার জন্য অপেক্ষা করে থাকে! নানী লিলিয়ানের কপালে চুপু খেলেন। মেয়েজামাইয়ের দিকে তাকিয়ে মজার ভঙ্গিতে বললেন, “আমার কলিজাটাকে ঠিকঠাক ফিরিয়ে দিয়ে যেও কিন্ত,নয়ত ভালো হবেনা!” লিলিয়ানের বাবা শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো ফিক করে হেসে ফেললেন। নানীর গালে চুমু খেল লিলি।প্রতিবার নানী লিলির বিদায়ের সময় কেঁদে কেটে একটা কান্ড করেন।তারও তো লিলি ছাড়া কেউ নেই।লিলি ওর ছোট্ট হাত দিয়ে নানীর চোখ মুছিয়ে দিল।বড়দের মত করে বলল, “শোনো নানী,একদম লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবে।আমি এসে যেন তোমাকে ঠিকঠাক পাই,ওকে?” নানী হেসে ফেললেন, “ওকে আমার নানী,আমি লক্ষী হয়েই থাকব”। ডঃ মরিস কিছুদিন পরপর জায়গা বদল করেন।একজায়গায় বেশিদিন তিনি থাকতে পারেননা।আগে এরকম হতনা।এখন বেশিক্ষন একজায়গায় থাকলেই অস্থির বোধ হয় তার!মেয়েকে নিয়ে হাসপাতাল-ক্লিনিক করা সম্ভবনা বলেই শাশুড়ির সাহায্য নিলেন।মেয়েকে একমাত্র তার কাছে রেখেই নিশ্চিন্তে রোগী দেখতে পারেন তিনি। লিলিয়ানের গরমের ছুটির একমাস তাই একটু ঝামেলা হয়।ডাক্তার জন তাই এবার একজায়গায় থিতু হবেন চিন্তা করেছেন। নানীর বাড়ি থেকে থেকে লিলিয়ান টুকটাক রান্নাবান্না করতে শিখে গেছে।নানী এমনিতে তাকে চুলোর কাছে ঘেঁষতে দেননা।সে নানীর পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে শিখে নেয়।যেন গরমের ছুটিতে বাবাকে রান্না করে খাওয়াতে পারে! ডিনারে আজ পনির দেওয়া নুডলস রান্না করার চেষ্টা করল লিলিয়ান।বাবা তাকে রান্না করতে দেবেননা তার সে রান্না করবেই!বাবা আর কি করেন,তার একটা মাত্র মেয়ের ইচ্ছা!অগত্যা বাবা রান্নাঘরে বসে বসে মেয়ের দিকে চোখ রাখেন।বাচ্চা মেয়েটা না আবার হাত পুড়িয়ে ফেলে! “মামনি,আগে এটা শেষ কর,বাকি গল্প খাওয়ার পর বলব”। “না বাবা,আগে গল্প শেষ কর।তারপর খাব”। “উহু,আগে হা করবে আমার প্রিন্সেস।খেতে খেতে গল্প শোন।তোমার মা কি বলতেন মনে পড়ে?যে বাচ্চারা ঠিকমতো খাবার খেতে চায়না,তাদের নাক লম্বা ডাইনি খেয়ে ফেলে!” লিলিয়ান ঢোক গিলল।“সত্যি,বাবা?” মরিস হাসলেন, “ধুর বোকা মেয়ে,মা তো তোমাকে গল্প শোনাতেন।গল্প তো গল্পই”। লিলিয়ানকে ঘুম পাড়িয়ে মরিস কিছু কাজ করবেন।মেয়েকে বিছানায় শুয়ে দিলেন তিনি।লিলিয়ান ঘুমুবেনা।সে গল্প শুনতে চায়,ভুতের গল্প। “বাবা,তুমি কিন্তু পচা কাজ করছো।তুমি বলেছ খাওয়া শেষ হলে গল্প বলবে আর এখন আমাকে ঘুমুতে বলছো!” মরিস বিছানায় বসলেন।মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন। “কিসের গল্প শুনবে,মামনি?” “ঐ যে একটা আংকেল তোমার হাসপাতালে চন্দ্রগ্রহণের গল্প বলেছিলেন...ডাইনীর গল্প,যে ডাইনী “মুনার এক্লিপ্সের সময় বের হয়”। লিলিয়ানের বাবা হাসলেন। “ঐ ডাইনীর গল্প?ওটা মুনার এক্লিপ্সের গল্প না সোনা,লুনার এক্লিপ্সের গল্প”। লিলিয়ানও হাসল। মরিস বললেন, “মামনি,এগুলো লোকজনের কথা,সত্যি কিনা কেউ জানে না কিন্তু তারা এগুলো বিশ্বাস করে।তারা বিশ্বাস করে যে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহনের সময়,পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হল “কম্পপ্লিট লুনার এক্লিপ্স”,তুমি পড়েছ না স্কুলে?” লিলিয়ান মাথা ঝাঁকাল। “এইরকম রাতে ডাইনী মানুষের রূপ ধারণ করে লোকের বাড়িতে আসে।তাদের নাক সরু,পা উলটো থাকে।ডাইনীরা গ্রহণ শেষ হলে উধাও হয়ে যেত।এখানের লোকেরা আরো বিশ্বাস করে এইসময় কেউ কাউকে তাদের বাসায় ঢুকতে দেবেনা।যদি ডাইনী মানুষের রূপ নিয়ে তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে!এই ভয়ে চন্দ্রগ্রহণের সময় কেউ কারো বাসায় যেত না।লোকেরা কি বলত জানো লিলিয়ান?ঐ ডাইনী লোকের দরজা তিনবার টোকা দেয়,কেউ খুলে দিলে ডাইনী তাদের বাসায় ঢুকে পড়ে”। “বাবা,আমি ভয় পাচ্ছি!” বাবা তার মেয়ের হাত ধরলেন,হেসে বললেন, “লোকেরা বলে যে ঐ ডাইনী ঝাড়ু আর সর্ষের বীজ দেখলে ভয় পেয়ে পালায়”। “সত্যি বাবা?” “এখানের লোকেরা এটাই বলে মামনি।এখন ঘুমুবে মা?” লিলিয়ান উত্তর দেওয়ার আগেই দরজার টোকার শব্দ শোনা গেল।লিলিয়ান ভয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। মরিস বললেন, “আমি দরজা খুলে দেখি আসি”। “না বাবা,তুমি যেওনা,আমার খুব ভয় লাগছে”। “কোন ভয় নেই সোনা।বাবা তোমার কাছেই আছে,শুধু একটু যাব আর আসব।ঠিক আছে?” লিলি বাবার হাত ধরে আছে। “আচ্ছা তুমিও এসো বাবার সাথে,দেখো কোন ভয় নেই”। দুজন ড্রয়িং রুমের দরজার দিকে পা বাড়ালো,তখনই তৃতীয়বারের মত বেল বেজে উঠল। লিলি তার বাবার হাত শক্ত করে চেপে ধরল।মেয়ের হাতে সামান্য চাপ দিয়ে মরিস হাসলেন।“লিলি সোনা,নিশ্চয়ই কোন রোগী এসেছে আমার কাছে,খুব জরুরী রোগী হয়ত তাই বারবার বেল বাজাচ্ছে”। একহাতে মেয়ের হাত ধরে রেখে অন্য হাতে দরজা খুলে ফেললেন মরিস। দরজার সামনে ফাঁকা,কেউ নেই সেখানে!মরিসের ভ্রু সামান্য কুঁচকে গেল।তিনি লিলির দিকে তাকালেন।মেয়ের মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। “বাবা...!” “কি মা?” লিলি জবাব দিল না।সে আঙ্গুল উঁচু করে আছে দরজার দিকে। হালকা ক্রিম রঙয়ের পোশাক পড়া একটা কমবয়সী মেয়ে,শান্ত মুখশ্রী তার। মরিস মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনি কি বেজ বাজিয়েছেন?” মেয়েটি মাথা ঝাঁকাল,বিব্রত গলায় বলল, “দুঃখিত ডাক্তার সাহেব,এত রাতে বিরক্ত করতে হল।আমি পাশের এলাকায় থাকি।আমার বাবার খুব জ্বর।ঐ এলাকায় কোন ডাক্তার পাচ্ছিনা।তখন একজন আপনার ঠিকানা দিল”। “না ঠিক আছে,আসুন ভেতরে,ইয়ে...আপনি এখানে দাঁড়ান আমি ওষুধ নিয়ে আসছি”। “জ্বি”। মরিস লিলির দিকে তাকালেন,নরম গলায় বললেন, “মা তুমি আন্টির এখানে একটু দাঁড়াও ,আমি ঘর থেকে ওষুধ এনে দিচ্ছি”। লিলি সভয়ে মাথা নাড়ল,সে থাকবে না। “থাকো মা”...মরিস দ্রুত ঘরের দিকে গেলেন। মেয়েটি লিলির দিকে তাকিয়ে হাসল, “তোমার নাম কি সোনা?” “লিলিয়ান”। “লিলিয়ান,তোমাদের বাথরুমটা কোথায়?আমি কি একটু যেতে পারি?” লিলি মাথা নাড়লো,তার খুব ভয় লাগছে।ওর মনে হচ্ছে এই সুন্দর দেখতে মেয়েটাই আসলে ডাইনি বুড়ি!ইস বাবা এখনো কেন আসেনা? মেয়েটি আস্তে আস্তে হেঁটে বাথরুমের দিকে চলে গেল।একটু পরেই মরিস এসে হাজির হলেন,মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, “কি রে লিলি,আন্টি কোথায় গেল?সে কি চলে গেছে?” লিলিয়ান জানালো সে বাথরুমে গেছে। তারা দুজন সোফায় বসে অপেক্ষা করতে লাগল, পাঁচ মিনিট,দশ মিনিট,বিশ মিনিট যায়।কিন্তু বাথরুম থেকে মেয়েটি আর বের হয়না। মরিস বারবার ঘড়ি দেখছেন।ত্রিশ মিনিট পার হয়ে গেছে।তিনি লিলিয়ানকে বললেন, “মামনি তুমি একটু দেখবে আন্টি বাথরুমে কোন অসুবিধায় পড়লেন কিনা?” মেয়ে প্রবল বেগে মাথা নাড়লো,সে যাবে না। অগত্যা,মরিস লিলিকে সাথে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগোলেন,মেয়েটির নামও জানা হয়নি যে ডাকবেন নাম ধরে! বাথরুমের দরজা বন্ধ।মরিস বাথরুমের নবে হাত রেখে খুব সাবধানে ধাক্কা দিলেন।বাথরুমে কেউ নেই!লিলি ঢোঁক গিলল। “বাবা!” মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মরিস দ্রুত বাথরুম থেকে বের হয়ে এলেন। এ-কি ঝামেলা হল! দোতলায় লিলিদের আরো দু’টো ঘর আছে।মেয়েটি কি কোন কারণে উপরতলায় গেছে?তার মনে কি কোন কু-মতলব আছে?মরিসের কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট। দোতলায় বড় ঘরটার তালা খোলা!মরিসের স্পষ্ট মনে আছে গতকাল ঘরে তালা দিয়ে রেখেছে সে!এটা কিভাবে সম্ভব? তার কি কোন ভুল হচ্ছে?মেয়েটা গেল কোথায়? দরজা ধাক্কা দিল মরিস।খুলল না সেটা,কারণ তা ভেতর থেকে বন্ধ করা হয়েছে! ছোট্ট লিলিও ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে।সে ভয়ে কাঁপছে।বাবাকে ধরে আছে শক্ত করে। দরজা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিলেন মরিস,দেরি করা ঠিক হবেনা। তিনি দরজায় ধাক্কা লাগালেন।একচুলও নড়ল না ভারি কাঠের দরজা।মরিস ঠিক করলেন তিনি পাশের বারান্দা দিয়ে ঐ ঘরে যাবেন।মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে বললেন ঠিক এখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে।তিনি যাবেন আর আসবেন। লিলি কিছুতেই রাজি না,কিন্তু বাবা বলেছেন লিলি সাহসী মেয়ে।সাহসী মেয়েরা অপেক্ষা করতে ভয় পায়না। মরিস এগিয়ে গেলেন। লিলি সিড়ির নিচে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একঘন্টা হয়েছে।সে ফোঁপাচ্ছে,ফিসফিস করে বাবাকে ডাকছে ও।মরিস দোতলার ঘরে গিয়েছেন কিন্তু ফিরে আসেননি এখনও।লিলি অনেকক্ষণ বাবা,বাবা ডেকে ভয়ে সিড়িঘরে এসে লুকিয়েছে।বাবা কোথায় গেল!ছোট্ট মেয়েটি ভয়ে অস্থির হয়ে গেল। “লিলিয়ান?”নরম গলায় লিলির নাম ধরে কেউ ডাকছে।সেই মেয়েটির গলা। লিলি প্রচন্ড ভয়ে কেঁপে উঠল। “কে!” “লিলি,ছোট্ট মেয়ে।তাকাও আমার দিকে”। লিলি ছুটতে শুরু করেছে।পিছনে পায়ের শব্দ পাচ্ছে ও।খুব দ্রুত ওকে ধরে ফেলবে।কোথায় যাবে ও?ডাইনিটা ওকে খেয়ে ফেলবে!বাবা...বাবা কোথায় তুমি? শোবার ঘরে টেলিফোনটা রাখা আছে।বাবা লিলিকে শিখিয়েছেন বিপদে পড়লে কত নম্বরে ফোন করতে হয়।ফোন করে পুলিশকে ডাকতে হয়। “হ্যালো হ্যালো?” “কে বলছেন?” “আংকেল আমি ডাক্তার মরিসের মেয়ে লিলি,আংকেল আমাদের বাসায় ডাইনি এসেছে।আমার বাবাকে নিয়ে গেছে ডাইনি!হ্যালো আংকেল...! “মেয়ে তুমি এসব কি বলছ?কিসের ডাইনি?ডাইনি বলে কিছু নেই।তোমার বাবাকে ফোনটা দাও”। ওদিকে দরজার শব্দ হচ্ছে... “লিলি দরজা খোলো,পালাতে চেষ্টা কেন করছো সোনা?আমি তো আন্টি হই তোমার,লিলিয়ান?” “আংকেল,আপনি আসুন।আংকেল প্লিজ”। ফোনের লাইন কেটে গেল। লিলি লুকিয়ে আছে খাটের নিচে।হঠাত ঘরের বাতি জ্বলে উঠল। “ডাঃমরিস?কোথায় আপনি?ডাক্তার মরিস?” লিলি খাটের নিচ থেকে বের এল। কাঁদছে সে। “আংকেল,আমার বাবাকে ডাইনি ধরে নিয়ে গেছে”। পুলিশ কন্সটেবল হ্যারি পুরো ব্যাপারটা শুনলেন। “চল,দেখি তোমাদের বাথরুমে কি হয়েছে,কে লুকিয়েছে”। বাথরুমের দরজা খোলা,হ্যারি উঁকি দিয়ে হা হয়ে গেলেন।একটা মেয়ে পড়ে আছে মেঝেতে!ওহ তাহলে এই ঘটনা! “মেয়ে,তোমার বাবা কি এই মেয়েটিকে মেরে এখানে রেখেছেন?এখন নিজে লুকিয়েছেন?” লিলি কাঁদতে কাঁদতে বলল, সে মারা যায়নি,ও ডাইনি বুড়ি আসলে!” হ্যারি কিছুই বিশ্বাস করলেন না,লিলিকে নিয়ে মরিসকে খুঁজতে শুরু করলেন।তারা দোতলার দিকে এগোলো। দোতলার বড় ঘর এখন খোলা,লিলি ছুটে ভেতরে ঢুকে পড়ল।ঐ তো,ঐ তো তার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। “আংকেল ঐ যে আমার বাবা!” “মিঃমরিস,আপনি একজন মেয়েকে খুন করে এখানে লুকিয়েছেন!” লিলির বাবার সেদিকে কান নেই,তিনি লিলিকে বারবার বলছেন, “লিলি পালা,লিলি সোনা,পালিয়ে যাও”। হ্যারি লিলিকে ধরে আছে,তার মনে হচ্ছে কোথাওকোন বড় সমস্যা হচ্ছে!তিনি ডাঃ মরিসের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললেন, “খবরদার,সামনে এগোবেন না,আমি...আমি কিন্তু আপনাকে গুলি করে দেব”।কথাটা শেষ করতে পারলেন না হ্যারি।তার মনে হল পিছন থেকে কেউ তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে,তিনি চট করে পিছনে তাকালেন।কেউ যেন সরে গেল খুব দ্রুত।হ্যারি একটা ছায়া দেখতে পেলেন,তার বুক কেঁপে উঠল। তিনি সামনে ফিরলেন,তার হার্টবিট মিস করল!মাটিতে মরিস পড়ে আছেন,তাকিয়েই বোঝা যাচ্ছে শরীরে প্রাণ নেই! লিলি বাবা বাবা করে চিৎকার করে কাঁদছে,হ্যারি লিলিকে শক্ত করে ধরে আছেন।ঘটনাটা তার হজম হচ্ছেনা আর অবিশ্বাস করার কারণও নেই।তিনি লিলির দিকে তাকিয়ে বললেন, “চল লিলি,আমরা বের হয়ে যাই,অতি দ্রুত এখান থেকে আমাদের বের হতে হবে,চল বাবা”! বের হওয়ার আগ মুহুর্তে হ্যারি আবার মরিসের দিকে তাকালেন। মেঝে খালি,সেখানে কেউ নেই! সদর দরজা খুলতে চেষ্টা করছেন হ্যারি,কোন এক শক্তি বলে দরজাটা আটকে গেছে,কোনভাবেই খোলা যাচ্ছেনা,হ্যারির বুকে অদ্ভুত কাঁপন লাগল। সিড়ি থেকে কার যেন পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে,সে পায়ে পায়েল গোছের কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে।ঝুনঝুন ধরনের শব্দ পাওয়া যায়। লিলি সিড়ির দিকে ফিরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।হ্যারি তার হাত শক্ত করে ধরেন।তার মনে এখন একটাই চিন্তা,যেভাবেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। রান্নাঘরের কেবিনেটের নিচে লুকায় দুজন।ঝুনঝুন শব্দ এগিয়ে আসছে এদিকেই।লিলি খুব সাহস করে রান্নাঘরের দরজার দিকে তাকায়।ঐ মেয়েটি দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।ওকে আর মেয়ে বলা যাবেনা।সুন্দর মুখের কুৎসিত এক চেহারা,বয়স বেড়ে গেছে যেন কয়েকশ গুন।লিলি দ্রুত চিন্তা করার চেষ্টা করে।বাবা তাকে কি বলেছিলেন তাই মনে করার চেষ্টা করে ও।লিলির মনে পড়ে যায় হঠাত।ডাইনিরা শুকনা মরিচের গুড়া আর ঝাড়ু ভয় পায় খুব। একবার ভয় দেখাতে পারলে ও চলে যাবে। লিলি আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে শুরু করে।এই বাসার রান্নাঘরের কিছুই তেমন ও চেনে না।হ্যারি ভেবে পাচ্ছেনা এই বাচ্চা মেয়েটা কি খুঁজছে এখন।ডাইনিটা ওকে দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে।এই বাড়িতে যে গ্রহণের ডাইনি এসেছে এতে তার আর কোন সন্দেহ নেই।গ্রহণ না কাটা পর্যন্ত এই ডাইনির হাত থেকে মুক্তি নেই।কিন্তু তার আগেই যদি ধরে ফেলে?যেভাবেই হোক এই বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ডাইনিটা লিলিদের খুব কাছে চলে এসেছে।তার গলা দিয়ে হিসহিস ধরনের শব্দ বের হচ্ছে।লিলি শুধু খিদে শব্দটা বুঝতে পারে।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে ওর।তখনই মরিচের গুড়ার কৌটা ওর চোখে পড়ে।কোনদিকে না তাকিয়ে লিলি সেটা ডাইনিটার দিকে ছুড়ে দেয়।রক্ত হিম করা একটা চিৎকার দিয়ে ডাইনি বাতাসে মিলিয়ে যায়। হ্যারি লিলির হাত ধরে ছুটতে শুরু করেন।আচ্ছা এই বাসা থেকে বের হওয়ার আর কি কোন পথ নেই? ছাদে উঠে এসেছে দুজন।কোথায় যাবে কিচ্ছু বুঝতে পারছেনা।মেইন দরজা কোনভাবেই খুলতে পারছেনা ওরা।তারমানে ডাইনিটার শক্তি শেষ হয়নি এখনো।হ্যারি ঢোঁক গেলে,সে নিজে ছাদের পিছনের সিড়ি দিয়ে নামতে পারবে,কিন্তু লিলি?ওকে নিয়ে কিভাবে নামবে সে? হ্যারি চাচা...! লিলি কেঁদে ওঠে। ছাদে উঠে এসেছে ডাইনিটা।তার চেহারা এখনো আর ভয়ংকর,কারো রক্ত পান না করা পর্যন্ত আগের সুন্দর নারী রূপ সে ফিরে পাবেনা।লক্ষ্য তাই লিলি আর হ্যারির দিকে। হ্যারি লিলিকে নিজের পিছনে লুকায়।কি করবে ভেবে উঠতে পারেনা।একমনে ঈশ্বরকে ডাকে। ডাইনিটা হাত বাড়িয়ে আছে,খ্যানখ্যানে গলায় কি একটা একটা অদ্ভুত সুরে গান গাইছে সে।চাঁদের গান,গ্রহণের গান! তাদের ধরার আগ মুহূর্তে ডাইনিটার হাত কেঁপে ওঠে,তার শরীর মোচড় দিতে শুরু করেছে।একরাশ ছাই হয়ে মিলিয়ে গেল ডাইনিটা! লিলি কাঁদছে হ্যারিকে ধরে।কি মনে হতে হ্যারি আকাশের দিকে তাকালেন।গ্রহণ ছেড়ে যাচ্ছে,কি সুন্দর আজকের চাঁদটা!


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২০৯৫৬ জন


এ জাতীয় গল্প

→ সূর্যগ্রহণ ও একজন সুপার স্টার
→ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আতিথেয়তায় ইসলাম গ্রহণ
→ দেখি কার দৌর কত দৌর? সার সাহস আছে খেলায় অংস গ্রহণ করুন
→ উপদেশ গ্রহণের সুন্দর ঘটনা
→ জ্বীনের ধর্ম গ্রহণ
→ একটি জ্বিনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
→ আবূ নাজীহ (রা:)-এর ইসলাম গ্রহণ
→ সেদিন আল্লাহই মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন
→ ইসলামের দৃষ্টিতে সুর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ (বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা)
→ মহানবী (সা কে খুন করতে এসে যেভাবেইসলাম গ্রহণ করল এক খুনি
→ ওমর ইবনে খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ____
→ হযরত আবু যর (র) এর ইসলাম গ্রহণ
→ খুন করতে এসে ইসলাম গ্রহণ
→ অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে বিলম্বহওয়ার জন্য আমরাই দায়ীএকটি ঘটনা:

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now