বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

``মা-আনিসুল হক(বুক রিভিউ)(চোখ দিয়ে পানি আসার মতো একটা বই)।``

"বুক রিভিউ " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান S.A (০ পয়েন্ট)

X " মা - অানিসুল হক " মাগো, ভাত খেতে ইচ্ছে করে। জেলে সবাইকে ভাত দিয়েছিলো, অামাকে দেয়নি। মা ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে অাজাদ ছিলো না। মা চৌদ্দ বছর ছেলের প্রতীক্ষায় ছিলেন কিন্তু ছেলে ভাত খেতে ফেরেনি। মা অার কোনদিন ভাত খাননি। শুধু মৃত্যুর অাগে বলেছিলেন ওরে অামি যে মা, তোমরা অামার কবরের ফলকে নাম লিখো শহীদ অাজাদের মা! শহীদ জননী সাফিয়া বেগমের উপাখ্যানের গল্প "মা"। সত্য কাহিনীর সাথে উপন্যাসের ঢং বইকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। লেখক আনিসুল হক এই কাহিনীর সন্ধান পেয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নিকট থেকে। বাংলা ছাড়াও উপন্যাসটি Freedom's Mother নামে ইংরেজিতে ও La Madre নামে স্পেনীয় ভাষাতে অনূদিত হয়েছে। এতসময় শুনে মনে হতে পারে এ কোন মায়ের মহিষী হয়ে উঠার গল্প। কিন্তু এ গল্প তার থেকেও বেশি কিছু। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস লেখা অাছে এই বইয়ের পাতায়। মুক্তিযুদ্ধের উপর সত্য ঘটনা নিয়ে হাতে গোনা যে দু চারখানি গল্প পাওয়া যায় তন্মধ্যে অানিসুল হকের মা উল্লেখযোগ্য। কি গল্পে অাগ্রহ হচ্ছে? একটু স্পয়লার এলার্ট দেওয়া যাক। সনামধন্য ধনী পরিবারের সুখী ঘরনি সাফিয়া বেগম। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী পরিবারের বাস স্কাটনের খানদানী বাড়িতে। কিন্তু সেখানে ঝড় ওঠে যখন স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন। অাত্মসম্মানবোধে বলিয়ান এই নারী ঐশ্বর্যের প্রচুর্য থেকে বেরিয়ে অাসেন। ছোট্ট এক কুঁড়েঘরে সন্তানের হাত ধরে নতুন যুদ্ধে নামে সাফিয়া বেগম। একটুখানি দুধের বাচ্চা থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা, মানুষের মতো মানুষ করা চারটে খানিক কথা নয়। এপর্যন্ত পড়ে মনে হয় যেন সাধারণ মায়েদের গল্প। বাংলার অানাচে কানাচে এমন গল্পেরা অানাগোনা করে। এপর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে অানিসুল হক যদি অামার মায়ের গল্পটা লিখতেন। এ পর্যন্ত গল্প হয়তো সব মায়েদের হার নাও মানাতে পারে কিন্তু এরপরের অংশ অাপন মহিমায় বলিয়ান। অামি বলি এ গল্প বলিদানের গল্প। দেশের জন্য নিজের ছেলেকে বলিদান দেয় যে মা সে তো মহিষী। " আমি কী তোকে শুধু আমার জন্যই মানুষ করেছি। এ দেশটাও তোর মা। " মা দেশটাকে ওরা গ্রাস করেছে। অামার বন্ধুরা মুক্তিফৌজে যোগ দিচ্ছে। অামিও যুদ্ধে যেতে চাই। যে পুত্রকে ঘিরে সাফিয়া বেগমের সারাটা জীবন তাকে বদ্ধ ঘরে বন্ধী করে রাখেননি। শুধু ছেলেকে দেশোদ্ধারে পাঠায়নি। নিজেও সহযোগিতা করেছেন নানা ভাবে। যুদ্ধের সময় অাজাদের মায়ের ঘর যেন ছোটখাটো এক সেনানিবাস। মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদ এখন ঢাকার ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা যোদ্ধা। সম্মুখ যুদ্ধ অার নানাবিধ অপারেশন করে চলছে সে। কিন্তু আগস্টে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে অাজাদ। হানাদাররা তথ্য জানার জন্য অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে। নির্মম অত্যাচারের মুখেও আজাদ কিছু বলেননি। জেলে রাখা হয় অাজাদকে, মা দেখতে যায়। অাজাদের মাকে বলা হয় ছেলেকে বোঝান, ছেলে যদি সবার নাম-পরিচয় বলে, তাহলে ছেড়ে দেওয়া হবে। না, ছেলেকে মুক্ত করার বাসনা নেই মনে! তিনি ছেলের সাথে দেখা করলেন মুক্ত করার বাসনায় নয়। বরং তিনি আজাদকে বললেন, বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো, সহ্য করো। কারো নাম যেন বলে দিও না। "আজাদ তাকে কথা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন জেলের দুর্বিষহ জীবনের কথা, প্রচণ্ড নির্যাতনের কথা। আর শেষে বলেছিলো, মাগো, খুব ভাত খেতে ইচ্ছা করে। দুইদিন ভাত খাই না।" তারপর ১৪ বছর বেঁচে ছিলেন সাফিয়া বেগম। প্রতীক্ষায় ছিলেন তার ছেলে ফিরে আসবে। কিন্তু আজাদ আর ফেরেননি। আজাদের শোকে স্বাধীনতার পর যে ক’বছর বেঁচে ছিলেন আর কখনও তিনি ভাত খাননি। হাপাঁনী থাকা সত্ত্বেও শুয়েছেন মাটিতে মাদুর বিছিয়ে। ১৯৮৫ সালের ৩০ শে আগস্ট, মারা যাওয়ার আগেই তিনি বলে গিয়েছিলেন তার কবরের ফলকে পরিচয় হিসেবে লিখতে 'শহীদ আজাদের মা'। তাই আজও জুরাইনে একটি কবর দেখা যায়। যাখানে লেখা 'মোসাঃ সাফিয়া বেগম, শহীদ আজাদের মা'। এক পাল্লায় মা অন্য পাল্লায় অানিসুল হক, অামি বলবো মা এর পাল্লা ভারী থাকবে অাজীবন। কালের পরিক্রমায় মানুষ হয়তো ভুলে যেতে পারে লেখককে নাম কিন্তু এই সৃষ্টি অমর। কিন্তু এই উপন্যাসে লেখকের অাবেগ যুক্ত হওয়াকে দুর্বলতা মনে হয়েছে। যা সাহিত্য মানকে ক্ষুন্ন করে। অাবার কখনো মনে হয়েছে এখানে মনঃতত্ত্বিক বিশ্লেষণের থেকে অাবেগ বেশি জরুরি। বাস্তবিক কাহিনীর সাথে লেখকের কল্পনাশক্তি ও লেখনশৈলী যুক্ত হলে এই উপন্যাস বিশ্বসাহিত্যে এতদিন রাজত্ব করতো বলে অামি মনে করি। কারণ বাঙালী হিসাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মা নিয়ে অাবেগ থাকা বাঞ্ছনীয় কিন্তু বিশ্বসাহিত্য! অামি বলবো লেখকের অাবেগ উপন্যাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে নতুবা দুর্বল করেছে! বই পড়ার অাগে অামি সাহিত্য খুঁজি। লোকে বলে এটুকু বয়স কি এমন বুঝিস। অাসলেই প্রথমবার যখন বইটা পড়ি তখন মস্তিষ্ক থেকে বিস্মৃত হয়েছিল সাহিত্যের মানদন্ডের কথা। খুঁজেছিলাম একজন মহিষী নারী ও তার সন্তানকে। অস্পষ্টে বলে যেতাম মা, মা। লেখকের সার্থকতা হয়তো এখানেই। একজন পাঠক এবং একজন বাংলাদেশী হিসাবে অাপনাকে অানিসুল হকের মা পাঠ করা উচিত বলে অামি মনে করি। একজন মা এবং তার বীর সন্তান অাজাদের জীবন কাহিনীর সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঢাকার গেরিলা অাক্রমণ ও জনজীবন সম্পর্কে জানতে অাপনাকে মা পাঠে স্বাগতম। বইঃ মা। লেখকঃ অানিসুল হক। প্রকাশনীঃ সময় প্রকাশন। মূল্যঃ চারশত চল্লিশ টাকা। [Robi10 Minute School Book Club]


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৭২২ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now