বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ভারত অভিযানঃ১ম খন্ড
পর্বঃ৪
লোকটি সবুক্তগীনের সাহস ও আত্মবল পরখ করলো।কিছুক্ষণ দূর থেকে অগ্নিদৃষ্টি বর্ষন করে রাখে গরগর করে তরবারি কোষবদ্ধ করে স্থান ত্যাগ করলো সবুক্তগীন পুনরায় খঞ্জর কোমরে গুজে ঘোড়ায় চড়ে আস্তাবলের দিকে চলে গেল।
তখন সন্ধার আঁধার চতুর্দিকে চেয়ে গেছে।আস্তাবলে ঘোড়া রেখে মাত্র নিজের থাকার ঘরে প্রবেশ করেছে সবুক্তগীন। তখনই এক লোক খবর দিলো, গভর্নর আপনাকে তলব করেছেন।ভেজা কাপড়েই গভর্নর হাউসের দিকে রওনা দিলো সবুক্তগীন।
°আবু ইসহাকের সাথে কি নিয়ে ঝগড়া করলে? জিজ্ঞেস করলেন গভর্নর আলপ্তগীন।
সবুক্তগীন তাকে বিস্তারিত বলল।একথাও বলল,যা তার মেয়ে তার উদ্দেশ্য বলেছে,সবুক্তগীনের অকপট ও অকৃত্রিম বক্তব্য ভালো লাগলো গভর্নরের কাছে।
আমার একটা অনুরোধ জাহাপনা ,আপনার আদুরে মেয়েকে আমার হাতে তুলে না দেওয়াই ভালো। কিন্তু আমি আপনাকে করজোড়ে নিবেদন করছি,ওই লোকের কাছে ওকে সোপর্দ করা মোটেই ঠিক হবে না।গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন গভর্নর। অনেকক্ষণ নীরব থেকে বললেন,এখন তুমি গিয়ে আরাম করো সবুক্তগীন।পরে তোমাকে ডাকবো।
জাহাপনা!আপনি অসন্তুষ্ট হলেও আপনার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করার মতো কোনো অপরাধ আমি করিনি।মিথ্যা কথা আমি কখনো বলি না।
আলপ্তগীন মুচকি হেসে তাকে চলে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন।সবুক্তগীন গভর্নর হাউস থেকে নিজের থাকার ঘরে চলে চলে এলো।
পরদিন আলপ্তগীনের কন্যা প্রতিদিনের মতো ঘোড়া নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।সবুক্তগীন ও আস্তাবল থেকে একটা ঘোড়া নিয়ে নদীর তীরের দিকে চললো।প্রথম দিকে দুজন দুদিকে ঘোড়া ছুটালো। অনেক দূর গিয়ে উভয়ে নদীর তীরের দিকে গতি ঘুরিয়ে দিলো।নদীর তীরে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে এসে উভয়ে মুখোমুখি হলো এবং ঘোড়া থেকে নেমে নদীর তীরে সবুজ ঘাসের উপর গিয়ে বসলো।
ওই গবেটটা আমার কাছে গিয়েছিলো, বাগদত্তা সম্পর্কে বলল তরুণী। খুব রেগে ছিলো।আমাকে বলল,আমি সেনাবাহিনীর কমান্ডার। তুমি একটা গোলামের সাথে আমার সম্পর্কে কটুক্তি করে বলেছ, তুমি আমাকে পছন্দ করো না। আমাকে এমন অপদস্থ করার হেতু কী?সে প্রথমে আমাকে খুব ধমকালো। পরে হাত জোর করে মিন মিন করতে লাগলো।আমি ওকে পরিষ্কার বলে দিয়েছি,*‘পিতার মর্যাদা রক্ষার খাতিরে আমি তোমার বাগদত্তা হতে রাজী হয়েছিলাম।তাকে বললাম ,এ ব্যাপারে তুমি আব্বার সাথে কথা বলো।’
রাতে আব্বা আমাকে একাকী ডেকে বললেন,সবুক্তগীন আমার কাছে তোমার পূর্বাপর সব ঘটনা বলে দিয়েছে।আব্বা তোমার অকপট সত্যবাদিতায় দারুন খুশি হয়েছেন। তোমার সাহসী উচ্চারণের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আমি আব্বাকে বলে দিয়েছি,এই বাগদত্তা আমার একদম সহ্য হয় না। অবশ্য সে খুব বড় অফিসার। মনে হয় আজ দিনের কোনো এক সময় সে আব্বার সাথে এ নিয়ে কথা ও বলেছেন।
সবুক্তগীন তরুণীকে গভীরভাবে দেখছিলো। গতকালের চেয়ে আজ আরো বেশি সুন্দরী মনে হচ্ছিল। তরুণী সবুক্তগীনের হাত তার হাতে নিয়ে খেলছিলো আর সবুক্তগীন ও গভীর দৃষ্টিতে তাকে পরখ করছিলো।তারা পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ হয়ে বসেছিলো।তরুণী তার শরীর ঘেসে বসে চোখে চোখ রেখে অনর্গল কথা বলছিলো।সবুক্তগীন তরুণীর কথা ও রুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলল, ‘তোমাকে দেখলে ,তোমার কথা শুনলে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে।’
“তোমার ছেলেও একই কথা বলবে।”বলে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো তরুণী।
সূর্য নদীর ওপারে টিলার আড়ালে শেষ আলো বিকিরণ করে ডুবে যাচ্ছে। পশ্চিমাকাশে সূর্যের লালিমা ঘন অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে।আর ওপারে দু যুবক যুবতী হাতে হাতে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনছে।
মাস খানিক পেরিয়ে গেছে।এরই মধ্যে আলপ্তগীনের হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিলো সবুক্তগীন।আলপ্তগীন তাকে একান্ত সচিবের মর্যাদায় অভিষিক্ত করে বললেন,“মুসলিম জাতির চেতনা নষ্ট হয়ে গেছে,শাসক শ্রেণী আরাম আয়েশ ও ভোগ বিলাশিতায় আকন্ঠ ডুবে আছে। রাজ্য গুলো প্রতিদিন টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।বেঈমান আমীররা প্রধান শাসককে ভোগবাদে নিমজ্জিত করে বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করছে জাতীর মাঝে। আমাদের নেতারা বেঈমানদের দেয়া পুরিয়া গিলে পরস্পর খুনাখুনিতে লিপ্ত হয়েছে।যে খেলাফত ছিলো মুসলমানের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্র তা এখন খেয়ালী রাজার সিংহাসনে পরিণত হয়েছে।সুলতান আব্দুল মালেক আমাদের কেন্দ্রীয় শাসক।তিনি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন।অথচ তার সিংহাসন নিয়ে উত্তরাধিকারদের মধ্যে এখনই বিবাদ শুরু হয়ে গেছে।আমরা চাচ্ছি, সুলতানের অবর্তমানে তার কনিষ্ঠ ছেলেকে সিংহাসনে বসাব। কিন্তু বড় সাহেবজাদা মনসুর তা কখনো হতে দিতে চাইবেন না।এই ফাঁকে আমি গজনীকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা ঘোষনা করবো।”
আপনার সেনাবাহিনী বিশেষ করে যারা বুখারায় আছেন তারা আপনার সহযোগিতা করবে?জানতে চাইলো সবুক্তগীন।
এখানকার সেনাপতি কেন্দ্রের চেয়ে বেশি আমার অনুগত। কেন্দ্রের প্রতি সে খুবই ক্ষুদ্ধ।আমার নির্দেশ পালনে সে গর্ববোধ করে,আমার নীতি আদর্শের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল।আমি আশাকরি ,গজনীকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা ঘোষনা করে এ অঞ্চলের ছোট ছোট রাজ্যগুলো একত্রিত করে কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত হবো।আমরা যদি এটা করে যেতে না পারি তাহলে,আমার ভয় হয় ,টুকরো টুকরো মুসলিম রাজ্যগুলো কাফেরদের চক্রান্তে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। ওদের বিজয় স্রোতে মদ নারী ও বিলাশিতায় আচ্ছন্ন মুসলিম আমীররা খড়কুটোর ন্যায় ভেসে যাবে।এই জমিন থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে মুসলিম শাসনের নাম নিশানা।আমি শুনতে পেলাম ,হিন্দুস্থানের মহারাজা খায়বার গিরিপথ দিয়ে আমাদের ওপর আক্রমন করার পাঁয়তারা করছে।
গজনীর তখত উল্টে ফেলার কাজটা আমাকে সোপর্দ করতে পারেন। এজন্য তেমন কোনো সৈন্য সমাবেশের দরকার হবে না।মনসুর ও মনসুর এর সহযোগীদের গ্রেফতার করাও তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। কিন্তু আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রাসঙ্গিক ও আনুষঙ্গিক দিকগুলো আরো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার। সম্ভাবনা ও আশংকাগুলো চিহ্নিত করে সামনে এগুতে হবে আমাদের।বললো সবুক্তগীন।
কিছুক্ষণ নিরব থেকে সবুক্তগীন আরো বলল, “এখনো উপযুক্ত সময় আসে হয়নি।এ ধরনের পরিকল্পনার সফলতা অনেকখানি নির্ভর করে গোপনীয়তার উপর।আপনার মেয়ের মুখে আপনার পরিকল্পনার কথা আমি শুনেছি।***অথচ এসব ব্যাপার তাদের জানার কথা নয়।আপনাকে আরো গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে এবং সর্তক হতে হবে।আপনার পরিকল্পনা যদি প্রকাশ না পায়,আর অন্যদের তৎপরতার আগাম খবর যদি আপনি সংগ্রহ করতে পারেন ,তাহলে যুদ্ধের অর্ধেক বিজয় এমনিতেই হয়ে যায়।”
আলপ্তগীনের দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস ছিলো যে,সবুক্তগীন যোগ্য সালার ও বুদ্ধিদীপ্ত যুবক। কিন্তু সে এতোটা দূরদর্শী তা আগে অনুধাবন করতে পারেননি।যুদ্ধ পরিকল্পনায় তার ভুলগুলো সবুক্তগীন এতো সরল ও সুনিপুণ ভাবে বুঝিয়ে দিলো,যার ফলে আলপ্তগীন আস্থার সাথে যুদ্ধকৌশল নির্ধারণের কাজ তার উপর ন্যাস্ত করলেন। কিন্তু সবুক্তগীন তার অদক্ষতা ও অনভিজ্ঞতার কথা সামনে তুলে ধরে বলল ,পরিকল্পনা আপনি করুন,আমি নিজেকে এ কাজে উৎসর্গ করে দিতে প্রস্তুত আছি।
দীর্ঘ পর্যালোচনার পর নতুন একটি রণকৌশল চূড়ান্ত করা হলো।এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারটি আবারো আলপ্তগীন কে স্বরণ করে দিলো সবুক্তগীন।
*ওদিকে যখন গজনীকে ইসলামী সালতানাতের কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলো , এদিকে তখন সবুক্তগীনকে হত্যার পরিকল্পনা ও পাকা হয়ে গেছে।
*এ পরিকল্পনার নায়ক আলপ্তগীনের কন্যার বাগদত্তা আবু ইসহাক।
এরা রাতে একটি সামরিক মহড়ার পরিকল্পনা করলো।অশ্বারোহী বাহিনীর একটি সামরিক মহড়ায় সবুক্তগীনকে দাওয়াত দেয়া হলো।আবু ইসহাক নিজেও সেই মহড়ায় অংশ গ্রহণ করবে।
অনেক গুলো রথ গাড়িতে ঘোড়া জুড়ে দেওয়া হলো।আবু ইসহাক ও সবুক্তগীনের জন্য বরাদ্দ করা হলো প্রথম সারির বিশটি রথের দুটি।মহড়া শুরু হলো। বাতাসের বেগে তেজি ঘোড়া রথ নিয়ে দৌড়াতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আবু ইসহাক সবুক্তগীনের রথকে এক পাশে ফেলে দিয়ে তার রথ এগিয়ে নিলো।সবুক্তগীন লক্ষ্য করলো,আবু ইসহাক উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাকে একদিকে চেপে রাখতে চাচ্ছে,আর বারবার সে সামনের দিকে তাকিয়ে কি যেন পরখ করছে। রথের ঘোড়া দৌড়াচ্ছে ঊর্ধশ্বাসে।ব্যাপারটি উদ্দেশ্য মূলক হতে পারে ভেবে সবুক্তগীন তার ঘোড়া আগ বাড়িয়ে আবু ইসহাকের রথকে ঠেলে সোজা চলতে তৎপর হলো। সাধারণ দর্শকরা একে দুই বড় কর্মকর্তার লড়াই ভেবে চিৎকার করে ময়দান মুখরিত করে তুললো।সারা ময়দান জুড়ে বিশেষ মহড়া দেখার জন্য লোক সমাগম হলো।সকলের মুখে উল্লাস ও হর্ষধন্নি। সারা ময়দান অসংখ্য মশালে উদ্ভাসিত,উৎসব মুখর।
সবুক্তগীন অবস্থাদৃষ্টে বুঝে ফেললেন,আবু ইসহাকের দৃষ্টি মহড়ায় বিজয়ী হওয়ার চেয়ে তাকে এক পাশে রাখার প্রতি নিবন্ধ।সবুক্তগীন তার রথ নিয়ে আবু ইসহাকের আগে আগে দৌড়াতে লাগলো।আবু ইসহাক গতিপথ ঠেলে সোজা চলতে বাধ্য করছিলো ।এক পর্যায়ে আবু ইসহাক চিৎকার দিয়ে বলল ,খোদার কসম! তুমি এদিক থেকে সরে যাও!সবুক্তগীন তার ঘোড়াকে দ্রুত গতিতে অপরদিকে ঘুরিয়ে নিলো।ইত্যবসরে আবু ইসহাকের ঘোড়া জমিনে ধসে গেল।রথ ছিড়ে উপরে উঠে উল্টে জমিনে আছড়ে পরে অগ্রভাগ ধসে গেছে।আবু ইসহাক তাল সামলাতে না পেরে শূন্য উঠে গিয়ে উল্টে যাওয়া রথের নিচে চাপা পড়লো।দ্রুত পিছনে ছুটে আসা রথগুলোকে চালকেরা সামলাতে পাড়লো না। সেগুলো আবু ইসহাকের উল্টে যাওয়া রথকে মাড়িয়ে চলে গেল।আবু ইসহাক রথের চাপে সংঙ্গা হারিয়ে ফেলেছিলো।সে আর দাঁড়াতে পারলো না।ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট হলো।সবুক্তগীন নিজের রথকে ঘুরিয়ে যাত্রাস্থলে ফিরে এলো।উৎসব মুহূর্তের মধ্যে থেমে গেল,নেমে এলো বিষাদের ছায়া।হাহাকার বয়ে গেল সবার মুখে।কি হলো? কি হলো?
সবাই দৌড়ে গেলো অকুস্থলে ।রথের চাকা ও ঘোড়ার খুরের আঘাতে নিহত হলো আবু ইসহাক। দেখা গেল,আবু ইসহাকের ঘোড়া গভীর গর্তে ধসে গেছে।উপরে বড় বড় গাছের পাটাতন।অথচ গতকাল পর্যন্ত কেউ কোনো গর্ত এখানে দেখেনি। হঠাৎ গর্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দূর্ঘটনার তদন্ত তখনই শুরু হয়ে গেল। কিভাবে এখানে গভীর গর্ত হলো,কি আছে এই দূর্ঘটনার অন্তরালে?
চলবে ইনশাআল্লাহ…
♣আড্ডা দেওয়া বা হাবিজাবি কমেন্ট নিষেধ♣
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now