বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
"জঙ্গল রহস্য উদঘাটন" [৬ষ্ঠ পর্ব ও রহস্য উন্মোচনের ১ম পর্ব]
X
জঙ্গল মৃত্যুর হার কমে যাওয়ায় সবাই এখন নিশ্চিন্তে আছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে। তারপরো সবার মনে একটা ভয় অশরীরী যদি গ্রামে হানা দেয় কখনো? এতসব কিছুর পরেও সবাই একটু হলেও স্বস্তিতে আছে। শুধু আকাশ স্বস্তিতে নেই, তার মনে শুধু একটাই চিন্তা! এতসব মৃত্যুর কারণ কি? তাছাড়া তার বন্ধু রাজিবকে সে এখনো ভুলতে পারেনি। এভাবে দিন কাটছিল।
একদিন হঠাৎ আকাশ সিদ্ধান্ত নিল যে ও ওই জঙ্গলে যাবে। তাতে যা হয় হবে! আকাশ সুমনকে ফোন করে বাসায় আসতে বলল। সুমন বাসায় আসলে ওকে সব বলে আকাশ। সুমন সব শুনে বজ্রাহত ব্যাক্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল।
সুমন বলল,
-- কি বলছিস এসব তুই? ওখানে যারাই যায় তারাই আর ফিরে আসতে পারে না।
-- কে বলল ফিরে আসতে পারে না? গ্রামবাসিরা যে অতগুলো লাশ উদ্ধার করলো ওখান থেকে কই তাদের তো কিছুই হলো না।
-- ওদের সবার যাওয়া আর আমাদের একা যাওয়ায় অনেক তফাৎ আছে।
-- ঠিকই তো। আমরাও তো দুজনই যাবো।
-- বুঝতে পারছিস না কেন? ওখানে অনেক রিস্ক আছে।
-- তুই যাবি না। ঠিক আছে। তোকেও বিপদে ফেলতে চাই না আমি।
-- ঠিক আছে।
-- তাহলে আমিই যাই। ওকে?
-- কোথায় যাবি তুই?
-- জঙ্গলে!
-- তুইও না আসলেই একটা জেদী। ওখানে যাবি ঠিক আছে। কিন্তু কিভাবে যাবি শুনি! রাস্তা তো সব বন্ধ করে দিয়েছে।
-- কে বলল সব বন্ধ? নদীর দিকটাই তো বন্ধ করা হয় নি। ওখান দিয়েই যাবো।
-- ঠিক আছে ভাই আমার। আমিও যাবো তোর সাথে। তোকেতো আর একা বিপদে ফেলে দিতে পারি না? মরলে না হয় একসাথেই মরবো!
-- আমি বলছি কিছু হবে না দেখ। তবে আগে ডাক্তার বাবুর কাছে যেতে হবে।
-- ওখানে কেন?
-- চলই না আগে দেখতে পাবি।
আকাশ ও সুমন দুজনেই ডাক্তার বাবুর কাছে গেল। যেতেই ডাক্তার বাবু আকাশকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল। সুমন বলল এটা কিসের ব্যাগ রে? আকাশ বলল, এটা আমাদের কাজে লাগতে পারে। এখন চল।
সুমন বলল, কাকা দোয়া করো। যদি বেচে ফিরে আসি তো দেখা হবে আর না হলে আমাদের খবরটা আপনি আমার মা বাবাকে দিয়ে দিবেন।
ডাক্তার বাবু বললেন, কিছু হবে না তোমাদের। আকাশ যতক্ষণ আছে ততক্ষণ আমি ভরসা করতে পারবো।
আকাশ বলল, এখন নাটক না করে চলতো।
আকাশ ও সুমন রওনা দিল ওদের গন্তব্যের দিকে, যেখানে গেলে আর ফিরে আসতে পারবে কি না তা জানে না। তারপরও রহস্যের টানে, কৌতূহলের কাছে তারা হার মেনে জিবনকে তুচ্ছ করে এগিয়ে চলতে লাগল। পৌঁছে গেল নদীর পাড়ে। মাঝিকে ডাকতেই মাঝি এসে বলল, কোথায় যাবে তোমরা? আকাশ বলল, ওই জঙ্গলে।
মাঝি দারুণভাবে চমকে উঠে। নিজেকে সামাল দিয়ে বলল, কি আবোল তাবোল বলছো তোমরা?.পাগল হলে নাকি?
আকাশ বলল, আমরা সত্যিই বলছি।
মাঝি কোনোভাবেই ওদের নিয়ে যেতে রাজি হয় নি। শেষে আকাশের জোরের কাছে হার মেনে ওদের নিয়ে যেতে বাধ্য হলো।
নৌকায় করে ওরা পৌঁছে গেল জঙ্গলে। আকাশ ও সুমন নামলো নৌকা থেকে। আর পা রাখলো জঙ্গলে, পা রাখলো সেই মৃত্যু পুরিতে যেখানে কেড়ে নেওয়া হয়েছে অগণিত মানুষের প্রাণ। আকাশ তার ব্যাগটা বের করে বলল,
-- নে এগুলো পড়ে নে।
-- এগুলো কি?
-- রাবারের গ্লাবস, মোজা।
-- এগুলো দিয়ে কি হবে?
-- তুই পড়ে নে। কি হবে পরে দেখবি!
-- ঠিক আছে।
তারা এগোতে লাগলো। আকাশের মনে বিন্দু মাত্র ভয়ের চিহ্ন নেই। আছে শুধু রহস্য উদঘাটনের আকাঙ্খা আর এত মৃত্যুর ক্ষোভ। তারা ধীরে ধীরে সামনে এগোতে থাকে। ভেতরে ঢুকতে জঙ্গল টা একটু একটু করে ঘন হচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে তারা হাটলো কিন্তু কিছুই তাদের নজরে পড়লো না। বিকেল হয়ে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে এল। জঙ্গলের ভেতরে ঘুরতে লাগলো। হঠাৎই একটা জলাশয়ের পাশে কিছু মৃত প্রাণি দেখতে পেল। শেয়াল, বেড়াল এজাতীয় প্রাণি। সুমন একটু ভয় পেয়ে বললো, আমাদের ফিরে যাওয়া উচিৎ। আকাশ বলল,
-- এখানে এসেছি যখন ভালো করে দেখেই যাবো।
-- অনেকক্ষণই তো ঘুরলাম। কই তেমন কিছুই তো দেখলাম না!
-- আমি ভাবছি এই পশু গুলো মারা গেল কিভাবে?
-- সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না।
-- সন্ধ্যে হয়ে এল প্রায়।
-- হুম ভাই এবার তো ফিরে চল!
-- এখনি না। জঙ্গলে রাতের পরিবেশটাও দেখে যাবো।
-- ঠিক আছে। যেটা ভাবিস। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করেছিস? জঙ্গলে প্রায় পাঁচটা জলাশয় দেখলাম।
-- হুম তো?
-- সব জলাশয়ই তো নদীর সাথে সম্পৃক্ত। শুধু একটা জলাশয়ই আবদ্ধ।
-- কি বলিস? কোথায়?
-- ওইদিকে চল।
-- চলতো!
-- এই তো এটা!
-- হুম তাইতো। তবে এটা দেখে তো তেমন আলাদা কিছুই মনে হচ্ছে না।
-- সন্ধ্যা হয়ে গেল ভাই। অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখা যাচ্ছে না।
-- সমস্যা নেই। আমার কাছে ব্যাবস্থা আছে।
আকাশ ওর ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করতে গেল। অমনি সুমন চেচিয়ে উঠল। আকাশ বলল কি হয়েছে? সুমন বলল ভাই ওইদিকে দেখ! আকাশ দেখলো আর দেখেই চমকে উঠলো। এবার আকাশেরও ভয় করতে শুরু করলো।
ওরা দুজনেই দেখতে পাচ্ছে ওই আবদ্ধ জলাশয়ের ভেতর থেকে কিরকম অদ্ভুত আলো জলছে নিভছে। আলো গুলো রেখার মতো লম্বা, আঁকা বাঁকা ভাবে এদিক থেকে ওদিকে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তারা দুজনেই মারাত্মক ভয় পেয়ে বের হওয়ার জন্য দৌড় লাগালো। অনেক কষ্টে বের হয়ে নদীর জঙ্গলের বাইরে আসতে পারলো। মাঝি একটু দুরে নৌকা নিয়ে বসেছিল। ওদের দেখে অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি এসে ওদের নৌকায় তুলে নিল। মাঝি ওদের জিজ্ঞেস করলো, ওরা ফিরে এল কিভবে? আকাশ ও সুমন ভয়ে কিছুই বলতে পারলো না। তাড়াতাড়ি করে করে ওরা নৌকা থেকে নেমে সোজা ডাক্তার বাবুর বাড়িতে গেল।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now