বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
Attack of the Dead man-WWI
( রাশিয়ান=রাশান)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশানরা, জার্মান-রুশ সীমান্তে অসোভিচ ফরট্রেস নামে একটি দূর্গ নির্মাণ করে যা জার্মানদের জন্য মাথাব্যাথার কারণ ছিলো।জার্মানরা বেশ কিছুবার এ দূর্গ দখলের চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়।এবং ৬ আগস্ট, ১৯১৫ এর আক্রমণটিই ছিলো তাদের শেষ চেষ্টা এবং সেটিই ইতিহাসে মৃত মানুষের আক্রমণ নামে স্থান পায়।কেন এই অদ্ভূত নাম পায় এ ঘটনাটি????চলুন জেনে আসি।
জার্মানরা প্রথম আক্রমণ চালায় ১৯১৪ এর সেপ্টেম্বরের দিকে।টানা ৬ দিন ধরে আর্টিলারি বোম্বার্ডমেন্টের পর তারা বেশ আত্নবিশ্বাসের সাথে ইনফ্যান্ট্রি(পদাতিক বাহিনী) পুশ দেয়।কিন্তু তারা রাশান আর্টিলারি ও ইনফ্যান্ট্রির কাছে পরাজয় স্বীকার করে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
দ্বিতীয় আক্রমণ চলে ১৯১৫ এর ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের দিকে।এবার জার্মানরা বেশ আত্নবিশ্বাসী ছিলো দূর্গ দখলের ব্যাপারে কারণ তাদের আনা অস্ত্রের মধ্যে ছিল নতুন উদ্ভাবিত ভারী ১৪২০mm ক্যালিবারের আর্টিলারি যার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা দেখে এর নাম দেয়া হয় "বিগ বার্থা কামান (Big Bertha Canon)। বেশ তারা এবার ইনফ্যান্ট্রি পুশ না দিয়ে টানা এক মাস যাবত আর্টিলারি ও এয়ার বোম্বার্ডমেন্ট করতে থাকে এ আশায় যে রাশানরা ধোপে টিকতে না পেরে সারেন্ডার করবে।কিন্তু রাশান সৈন্য ও অফিসাররাও তাদের উদ্ধারে কমান্ড থেকে সাহায্য আসবে এবং এ সাহায্য আসা পর্যন্ত তাদের দূর্গ ধরে রাখতে হবে এই লক্ষ্য নিয়ে দূর্গের তীব্র ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি হওয়া সত্ত্বেও এক মাসের মাথায় আর্টিলারি হামলার মাধ্যমে জার্মান বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে।
রাশান বাহিনীর মনোবলের পরিচয় পেয়ে অবাক লাগছে???তাহলে পরেরটুকু শুনুন।
১৯১৫ এর জুলাইএর দিকে ফিল্ড মার্শাল ভন হিন্ডেনবার্গের আন্ডারে জার্মানরা নতুন পরিকল্পনা নিয়ে থার্ড এটেম্পট চালায় যা ইতিহাসে বহুল আলোচিত।তারা এবার রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে আসে।তাদের ধারণা আগের দুটি টানা আক্রমণের ফলে রাশান সৈন্যদের মনোবল একেবারেই ভেঙে পড়েছে।এবার নিজেদের সৈন্যদের গ্যাস মাস্কে সজ্জিত করে।তারপর ত্রিশটি গ্যাস ব্যাটারি ও ত্রিশটি আর্টিলারি গানের সাহায্যে পুনঃআক্রমণ শুরু করে।গ্যাস ব্যাটারির বিষাক্ত ক্লোরিন ও ব্রোমিন গ্যাসের কারণে পুরো দূর্গে ঘন সবুজ মেঘ প্রবেশ করে ও দূর্গ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।এ অন্ধকার আর বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে দূর্গের উপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে ক্রমাগত মুহুর্মুহু পড়তে থাকে ত্রিশটি বিগ বার্থা কামানের শেল।উল্লেখ্য যে গ্যাস এতটাই বিষাক্ত ছিলো যে ওই জায়গার ঘাসগুলো মূহুর্তেই কালো হয়ে যায় আর গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়।রাশানদের ব্যনহৃত তামার তৈরী বন্দুক ও আর্টিলারি গুলো ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় ফেটে যায় ও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
রাশিয়ান ৯ম,১০ম,১১তম ও ১২ তম কোম্পানি মূহুর্তেই বিষাক্ত গ্যাসের কাছে বিলীন হয়ে যেতে শুরু করে।কিছু সময়ের মধ্যেই দূর্গে প্রাণহীন নীরবতা নেমে আসে।
গ্যাস পরিষ্কার হওয়ার পর ৭০০০ জার্মান সৈন্যের প্রায় ১৪ টি ব্যাটেলিয়ন দূর্গের দিকে অগ্রসর হয়।জার্মানরা দূর্গে প্রবেশের মুখে আচমকা একজনের চিৎকার শুনতে পায়।তারপর তারা যা দেখলো তার জন্য তারা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।গ্যাস আক্রমণের পরও দূর্গে ৮ম ও ১৩ তম কোম্পানির প্রায় ১০০ এর মত সৈন্য বেচে ছিলো।তারা হাতের কাছে যা কিছু পেয়েছে(বিশেষ করে বেয়নেট) তাই নিয়ে জার্মান সৈন্যদের দিকে কাউন্টার এটাকে যায়।কিন্তু যা জার্মানদের জন্য ভীতিকর ছিলো তা হলো এই রাশান একশো জনকে আসলে পুরোপুরি জীবিত বলা যায় না।তারা ইতোমধ্যেই মারা যাচ্ছিলো।পুরো গায়ে রাসায়নিক গ্যাসের ক্ষতের দাগ।পুরো মুখ বিকৃত।তাদের প্রতিটি নিশ্বাসের সাথেই বেরিয়ে আসছিলো রক্ত এবং ক্লোরিনে পুড়ে যাওয়া তাদের খন্ড-বিখন্ড ফুসফুসের টুকরো।এই দৃশ্যটি এতটাই ভীতিকর ছিলো যে জার্মানরা প্রতি আক্রমণ করার বদলে পালাতে শুরু করে, তারা এতটাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলো যে পালানোর পথে নিজেদের ট্রেঞ্চের কাঁটাতারে নিজেরা পড়ে হতাহত হয়।মূহুর্তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় ১৪টি ব্যাটেলিয়ন। রাশানরা চার্জ করে জার্মান আর্টিলারি পজিশন পর্যন্ত এগিয়ে যায় এবং প্রতিরোধহীন আর্টিলারি বাহিনীকেও রিট্রিটে বাধ্য করে।পুরো বিশ্বে রাশান সৈন্যদের এমন মনোবল এবং কমান্ডের প্রতি আনুগত্য বেশ আলোচিত হয়।পরদিনই বিভিন্ন বিখ্যাত পত্রিকায় ঘটনাটি এ এটাক অফ দি ডেড ম্যান শিরোনামে হেডলাইনে স্থান পায়।
ঘটনার দুই সপ্তাহ পর অবশিষ্ট সৈন্যদের উদ্ধার করা হয় এবং চিকিৎসা দেয়া হয়।এ সৈন্যরা গ্যাস বার্নের তীব্র কষ্টকর ক্ষত নিয়েও উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত দূর্গে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখে যদিও দূর্গ নামে সেটি ছিলো মৃত্যুপুরী।তাদের পাশেই তাদের প্রিয় সহযোদ্ধাদের ক্ষত বিক্ষত বিকৃত লাশ ছিলো।
এই একশতজনের শেষজন ২০০৩ এ মৃত্যুবরণ করেন।তার নাম এলেক ডারসোভিচ।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now