বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
গল্পঃহাত ধরে হাটা
উৎসর্গঃ যিনি এই গল্পটি লিখতে বলেছেন। যদিও বা তার মনমতো লিখতে পারি নি। হুমম, সেই সামিয়া মেহজাবিন আপুকে
সামিয়ার খুবই ইচ্ছা করে সূর্যোদয় দেখার। কিন্তু সময়ই পায় না। আর সময়টা পাবেই বা কি করে ! রোজ মসজিদের ইমাম সাহেবের কন্ঠে সুমধুর আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে। তার খুবই ভালো লাগে এই আজান। সে শুয়ে শুয়ে আজান শোনে। আজান শেষ হলে বিছানা ছেড়ে উঠে। তারপর অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করে। নামাজ আদায় শেষ করে সে কোরআন তেলোওয়াত করা শুরু করে। তার কন্ঠে কোরআন তেলোওয়াত শুনে বাড়ির
সবাই অবাক হয়। তার বাবা বলে, দেখতে হবে না মেয়েটা কার!
কোরআন তেলোওয়াতের পর সে বই নিয়ে পড়তে বসে। সামনে এবার এসএসসি। মানে সামিয়া দশম শ্রেণিতে পড়ে। লেখাপড়াতেও ভালো।
।যাইহোক, তার মনে যে কি করে সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছা জাগলো কে জানে! সেদিন তার বান্ধবী শিলা বলছিলো যে সে নাকি প্রতিদিন সূর্যোদয় দেখে। তখন নাকি পূবাকাশ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। হয় তো তার জন্য সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছা!তাছাড়াও যখন বৃষ্টি আসে, তখন বৃষ্টিতে গোসল করতেও ইচ্ছা করে। তার বৃষ্টি খুবই ভালো লাগে।
সেদিন সে ঘুম থেকে উঠে অজু করে নামাজ আদায় করলো। তারপর কোরআন থেকে কয়েকটা সূরা তেলোওয়াত করলো। তারপর আর দেরী না করে সে চুপচাপ করে বাড়ির বাইরে এলো। আর সেখানে একটা ছেলে দাড়িয়ে ছিল। সামিয়া তো অবাক! ছেলেটা তাদের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটিকে দেখতে ভালোই লাগছে। কিন্তু ছেলেটির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে আজ তার কিছু একটা অপ্রাপ্তি আছে।
যাইহোক, ছেলেটির মাথায় টুপিও আছে। তার মানে ছেলেটি নিশ্চয়ই মসজিদ থেকে আসছে। তাই সে ছেলেটিকে সালাম জানালো। ছেলেটি চমকে উঠে। সে সালামের জবাব দিয়ে পূর্ব দিকে যেতে থাকে।
কি আপদ! সামিয়া সূর্যোদয় দেখতে পূর্বদিকে যাবে। আর ছেলেটাও কিনা ওইদিকে গেলো! এখন যদি সে ওইদিকে যায়, তাহলে যদি ছেলেটা মনে মনে কিছু ভাবে! ভাবুক গে। তাতে সামিয়ার কি!
সেও হাটা শুরু করলো। চারিদিকে এখনো নিরবতা বিরাজ করছে। তাই সামিয়া যে হাটছে, সেটা ছেলেটা বুঝতে পারলো। সে পিছন ফিরে সামিয়াকে দেখে বললো, আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন?
কি আপদ! সামিয়া যাচ্ছে সূর্যোদয় দেখতে। আর ছেলেটি বলে কিনা যে সে ছেলেটিকে ফলো করছে!! ইচ্ছা করছে ছেলেটিকে রেগে গিয়ে বলে যে সে ছেলেটিকে ফলো করছে না। কিন্তু ছেলেটিকে ভালো বলে মনে হচ্ছে। তাই তার রাগ করলো না।
তাই সে একটু মিষ্টি করে বললো, আসলে আমি আপনাকে ফলো করছি না। আমি যাচ্ছি সূর্যোদয় দেখতে।
ছেলেটির মুখ কিছুক্ষণের জন্য চিন্তিত হয়ে গেলো। কি যেনো একটা ভাবলো। তারপর বললো, আসলে সামনেই আমার বাড়ি। আপনি যদি আমার পেছনে না আসেন তাহলে আমি খুব খুশি হতাম।
-- বারে! আমি আমার রাস্তায় যাচ্ছি, আপনি আপনার রাস্তায়। তাতে আপনার সমস্যা কি?
-- আমার বাবা-মা যদি দেখে ফেলে! তাই আপনি আজ চলে যান।
সামিয়ার সত্যি কেমন যেন একটা মায়া লাগলো। এমনিতেই আজকাল কোনো ছেলে মেয়ে রাস্তায় হাটলে লোকে সন্দেহ করে। যে ছেলে মেয়ে দুটোর মনে হয় ইটিসপিটিস আছে। আর এখন যদি এই সকালে ছেলেটার বাবা-মা যদি দেখে যে তার ছেলের পিছনে একটা মেয়ে হাটছে, তাহলে কি ভাববে!
কিন্তু সামিয়া যদি সূর্যোদয় না দেখে ফিরে আসে, তাহলে যদি ছেলেটা ভাবে যে মেয়েটা তাকেই ফলো করছিলো!
তখন সামিয়া বললো, আপনি যান। আমি পরে আসছি।
তখন ছেলেটা একটু মুচকি হেসে চলে গেলো।
আহা, কি সুন্দর মুচকি হাসি।হাসির সময় ছেলেটিকে অনেক কিউট লাগছিলো। সামিয়া তো মনে হয় সেই হাসির প্রেমেই পরে গেলো!
ধুরর্! এসব কি ভাবছে সামিয়া। ছেলেটা তো মনে হয় এতোক্ষনে বাড়ি চলে গেছে। সে জোরে জোরে পা চালানো শুরু করলো। সামনের বাড়িগুলোর জন্য সূর্যোদয় দেখা যায় না। এ বাড়িগুলো পেরুলেই দূরে নদীর ওপারে সূর্যোদয় দেখা যায়। কিন্তু হায়! একি হয়েছে!
সূর্য যে এদিকে অনেক বড় দেখাচ্ছে ! চোখ মেলে দেখাই যায় না। তেজ অনেক বেড়েছে। সব হয়েছে ওই ছেলেটার জন্য।
যাইহোক, সে ফিরে আসতে লাগলো। বাড়িগুলো দেখতে থাকে। হয় তো ছেলেটা এই বাড়িগুলোর মধ্যে কোনো একটায় থাকে। সে বাড়িগুলো মন দিয়ে দেখতে থাকে। তার চোখ কি কাউকে খুঁজছে!
ধুরর্! এ এসব কি ভাবছে।সে তারাতারি পা চালিয়ে বাড়িতে চলে এলো।
বাড়িতে ঢুকতেই সামিয়ার ছোট বোন বললো, আপু, তুই কোথায় গেছিলি? আম্মু তোকে ডাকছিলো।
-- এইতো বাইরেই ছিলাম।
সামিয়ার কন্ঠ শুনে ওর মা ওকে ডাক দিলো, সামিয়া, মা এখানে আয় তো। সামিয়া বললো, আসছি মা।
--কোথায় গেছিলি?
-- এই তো রাস্তায়।
-- কেন? আমাকে বলেছিলি?
-- ঠিক আছে, কাল বলে যাবো।
-- কাল বলে যাবি মানে? কোথায় যাবি?
-- সূর্যোদয় দেখতে গেছিলাম। দেখা হলো না।
-- ওওও। ঠিক আছে। এখন নাড়ু খেয়ে পড়তে বস।
-- ওমা! নাড়ু আছে! আমার ফেবারিট মা।
-- হয়েছে, এখন যা।
এদিকে,
ছেলেটার নাম সিহাব।দেখতে বলিউড নায়কদের মতো । ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।সে একজন মেধাবী ছাত্র। সমস্যা একটাই। সে একটু রাগী।কিন্তু সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। রোজ যখন মসজিদ ফজরের নামাজ কায়েম করে বাড়ি ফিরে, তখন সে সামিয়ার কোরআন তেলোওয়াত শুনে তাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে যায়। মন দিয়ে কোরআন তেলোওয়াত শুনে বাড়ির পথে হাটা ধরে। কিন্তু আজ অল্প শুনে। অপেক্ষা করতে থাকে, হয়তো আর একটা সূরা তেলোওয়াত হবে। কিন্তু হলো না! তার বদলে একটা মেয়ে চলে আসে!
তাই সে রাগ করে চলে আসে।
পরে সামিয়া স্কুলে যায়। কিন্তু তার স্মৃতিতে ওই ছেলের চিন্তা ঢুকে পরে। হঠাৎ তার বান্ধবী শিলাকে দেখে তর মনে হয় যে ওখানে তো শিলার বাড়ি। তাই সে শিলাকে ভোরের ঘটনাটা খুলে বলে। শিলা বলে, হুম। বুঝতে পেরেছি। আমার মহারানী তো দেখি প্রেমে পরে গেছে বলে মনে হয় !
-- কি যা তা বলছিস?
-- হুম। ঠিক বলছি। না হলে তুই আমাকে সিহাবের কথা বললি কেন?
-- এই কি বললি! ওর নাম সিহাব!
-- ওমা ! আমি তাই বললাম নাকি!
-- বলনা কে সে?
-- আমার চাচাতো ভাই।
তরপর শিলা সিহাবের সম্পর্কে সবকিছু বললো। সিহাবকে বিকেলে পার্কে একা বসে থাকতে দেখা যায়। সামিয়া বিকেলে পার্কে যায়। সিহাব হাতে একটা বই নিয়ে বসে আছে। সামিয়া গিয়ে একটা সালাম দেয়। সিহাব সালামের জবাব দেয়। সামিয়া বলে, আচ্ছা, পার্কে কি কেউ বসে বই পড়ে?
সিহাব একটা রাগী লুক নিয়ে সামিয়ার দিকে তাকায়। তারপর আবার বই পড়তে শুরু করে।
-- এই যে মিস্টার, আমি কি আপনার নামটা জানতে পারি?
সিহাব এবার বইটা বন্ধ করে। বলে, আপনি ভোরের সেই মেয়েটা না? এখানে আমাকে ডিস্টার্ব করতে এসেছেন?
-- ডিস্টার্ব করতে নয়। শুধু আপনার নামটা জানতে এসেছি।
একথাতে সিহাবের যে কি হয়ে গেলো কে জানে। হঠাৎ প্রচণ্ড রেগে গিয়ে এক চড় দিয়ে চলে গেলো।
সামিয়া এধরনের আচরণ প্রত্যাশা করে নি। সেও চুপচাপ তার বাড়ি চলে গেলো।
পরদিন ভোরে সামিয়া একই কাজ করলো। আর রাস্তায় যখন বের হলো তখন সিহাবকে দেখতে পেলো। তখন সামিয়া রাগী লুক নিয়ে এগিয়ে গেলো। রেগে বললো, আপনি আজও ভোদরের মতো এই বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন? আপনার সাহস তো কম না !
সিহাবকে ভোদর বলায় চটে গেছে। রেগে বললো, আপনি জানেন এই বাড়িতে একটা মেয়ে নিয়মিত ভোরে কোরআন তেলোওয়াত করে। আর আমি প্রতিদিন মসজিদ থেকে ফেরার সময় তার তেলোওয়াত শুনি। আর আপনি আমাকে ভোদর বললেন? বেয়াদব মেয়ে কোথাকার। আপনি তো এই বাড়ির মেয়েটার এক এক শতাংশও হবেন না। ভোরে উঠে সূর্যোদয় দেখতে যাচ্ছে ! পারলে আপনিও একদিন এসে শুনেন।এই বলে সিহাব হনহন করে বাড়ি যেতে লাগলো।
এ কথা শুনে সামিয়ার ভালো লাগলো। যাক, তাহলে সিহাব প্রতিদিন সামিয়ার কোরআন তেলোওয়াত শুনতে দাড়িয়ে থাকে। যদি সামিয়া কোরআন তেলোওয়াত শুনতে আসে, তাহলে তেলোওয়াত করবে কে?
সেদিন স্কুলে গতকালের বিকেলের কথা ও আজ সকালের কথা সামিয়া শিলাকে খুলে বলে।
পরে স্কুল থেকে ফিরে শিলা তার চাচাতো ভাই সিহাবের কাছে যায়। বলে, ভাইয়া, তোর সাথে একটা কথা আছে।
-- আমাকে ডিস্টার্ব না করে তারাতারি যা বলার বলে চলে যা।
-- শুনলাম তুই নাকি প্রতিদিন কার একটা কোরআন তেলোওয়াত শুনিস!
একথা শুন সিহাব চমকে যায়। বলে, কে বললো তোকে?
-- যে কোরআন তেলোওয়াত করে সে।
-- মানে! সে কি আমাকে চিনে?
-- হুম। ভালো করেই চিনে। তুইও তাকে চিনিস।
-- কে সে?
-- আমারই এক বান্ধবী।
-- তুই আমাকে তার সাথে দেখা করিয়ে দিস প্লিজ লক্ষ্মী বোনটি আমার!
-- হয়েছে তুই যা রাগী, তাতে না আবার আমার বান্ধবী ভয় পায়।
-- আমি এই তোকে কথা দিলাম আমি তোর ওই বান্ধবীর সাথে রাগবো না।
তখন শিলা সিহাবকে পরদিন পার্কে দেখা করার কথা বলে। সিহাব মনে মনে খুবই খুশি হয়। যাক, এতোদিন যাকে সে শুধু কল্পনা করে গেছে, তাকে এবার চোখে দেখতে পারবে। কিন্তু তাকে কি উপহার দেবে? কি তার পছন্দ?
পরদিন বিকেলে সিহাব হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে পার্কে যায়। কিন্তু শিলা কোথায়? শিলা তো নেই। যেখানে সে প্রতিদিন বসে থাকে, সেখানে কে যেন একটা বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখে সেই মেয়েটা!
সিহাব রেগে যায়। বলে, আপনি আজও এখানে।
তখন সামিয়া বলে, আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন যে আমার উপর রাগবেন না!
সিহাব তৎক্ষণাৎ একটা শক খেলো। নিজেকে সামলিয়ে বললো, আপনি তাহলে সেই, যার কোরআন তেলোওয়াত আমি শুনতাম?
-- হুমম। আমি সেই।
-- আসলে সেদিনের জন্য দুঃখিত ! আসলে আমি তোমাকে না মানে আপনাকে চিনতে পারি নি।
-- না না ঠিক আছে। আমি তোমার না মানে আপনার ছোট। তাই তুমি করেই বলেন।
-- আচ্ছা তুমিও আমাকে তুমি করে বলিও।
-- তোমার হাতে ওটা কিসের প্যাকেট?
-- তোমার প্রিয় বস্তু নারিকেলের নাড়ু,
-- ওমা! তাই নাকি!
-- আচ্ছা, আমি কি তোমার হাতটা একটু ধরে হাটতে পারি?
-- না, পারেন না। ধরলে একটু না। সারাজীবনের জন্য ধরতে হবে।
-- হুমম। অবস্যই।
[ এরপর শুরু হলো নতুন এক অধ্যায় ]
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Sm Samiya mehejabin
User ২ বছর, ২ মাস পুর্বেSM Samiya Mahejabin
User ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৩ বছর, ১১ মাস পুর্বেSM Samiya Mahejabin
User ৪ বছর পুর্বেSM Samiya Mahejabin
User ৪ বছর পুর্বেMd.Mofizul Hossain
Golpobuzz ৪ বছর পুর্বেবকুল রায়
Golpobuzz ৪ বছর পুর্বেMd.Mofizul Hossain
Golpobuzz ৪ বছর পুর্বে