বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ধাপ্পাবাজ(৩)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান জাহিন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (০ পয়েন্ট)

X ধাপ্পাবাজঃ ক্রমিক-৩ এ ছাড়া কিছু ভুল সামরিক অফিসাররাও করেছিল। তারা নতুন সৈন্যদের সামনে জিহাদের ফজিলত ও গুণাবলী বর্ণনা না করেই সৈন্যদের মধ্যে অর্থের লালসা ও গনিমতের লোভ দেখিয়েছিল। এটাও উচিত হয়নি তাদের। এসব পলাতক বাহিনীর সৈন্যরা কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ উট ও ঘোড়ায় চড়ে ফিরে আসছিল। যখন কোন সৈন্য কোন গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করতো, তখন লোকেরা তাকে ঘিরে ধরতো। তাকে জিজ্ঞেস করতো যুদ্ধের কথা। এইসব সৈনিকেরা নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি দূর করার জন্য কমাণ্ডার ও সেনাপতিদের অযোগ্য ও বিলাসপ্রিয় বলে দোষারোপ করতো। তাদের কেউ বলতো, ‘ক্রুসেড বাহিনীর সাথে কোন অলৌকিক শক্তি ছিল, যে শক্তির বলে তারা যেদিকে যেত সেদিক ময়দান সাফ করে দিত।’ কেউ হয়তো বলতো, ‘ক্রুসেড বাহিনীর কাছে এমন গোপন অস্ত্র আছে, সে অস্ত্র যেদিকেই ঘুরানো যায় সেদিকই সাফ হয়ে যায়। আর এই অস্ত্রই তাদের বিজয়ের কারণ।’ এ ধরনের গুজব ও অপপ্রচার মিশরের বিভিন্ন মুসলিম এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ল। এসব গুজবের সবই ছিল মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা। এসবের উদ্দেশ্য ছিল, জাতির সামনে সামরিক বাহিনীকে হেয় প্রতিপন্ন করা। দ্বিতীয় কারণ ছিল, মুসলমানদের মধ্যে খৃস্টানদের শক্তি প্রভাব ও ভয় জাগিয়ে তোলা, যাতে সুলতান আইয়ুবী নতুন ভর্তির কোন সাড়া না পান। তৃতীয় কারণ, সুলতান আইয়ুবীর ওপর থেকে জাতির আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করা। চতুর্থ কারণ, এই দূর্বলতার সুযোগে আরও কিছু লোককে স্বাধীন আমীর ও বাদশাহর দাবীদার হওয়ার জন্য উৎসাহিত করা, যাতে আবার গৃহযুদ্ধে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সুলতান আইয়ুবী শত্রুদের এই অপতৎপরতা সম্পর্কে ভালমত জ্ঞাত ছিলেন। তিনি কায়রো এসেই তাঁর গোয়েন্দা প্রধান আলী বিন সুফিয়ান, পুলিশ প্রধান গিয়াস বিলকিস ও তাদের সহকারীদের ডাকলেন। তিনি তাদের বললেন, ‘শত্রুরা গোপন ষড়যন্তে মেতে উঠেছে। কঠোর হাতে এদের দমন করতে হবে। শত্রুর গোয়েন্দাদের খুঁজে বের করতে হবে। এই পরাজয়ের যথার্থ কারণ কি তা জনগণের মাঝে তুলে ধরতে হবে।’ ০ সূর্য অস্ত যেতে তখনও অনেক দেরী। রমলা থেকে আগত আরও দু’তিনজন সিপাই তাদেরকে অতিক্রম করে চেলে গেল। দরবেশ লোকটি বললেন, ‘ওদেরকে থামাও, রাত পর্যন্ত ওরা বেঁচে থাকতে পারবে না।’ কয়েকজন দৌঁড়ে গিয়ে তাদেরকে থামালো। তারা কাফেলার কাছে এসে পানি চাইল। সাদা জোব্বা পরা দরবেশ বললেন, ‘পানি তোমাদের কাছে রাতে এসে পৌঁছবে। ততক্ষণ তোমরা সেই আল্লাহর স্মরণ করো, যে আল্লাহ তোমাদেরকে রমলা থেকে বের করে নতুন জীবন দান করেছেন।’ কিছুক্ষণ পর দু’টি লোককে দেখা গেল ঘোড়ায় চড়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। দূর থেকেই তারা টিলার আড়ালে কাফেলাটিকে বসে থাকতে দেখলো। যখন তারা কাফেলার খুব কাছাকাছি পৌঁছলো তখন তারা দেখতে পেলো কাফেলার সথে বসে আছেন কালো দাড়িওয়ালা জুব্বা পরা এক হুজুর। ভদ্রলোককে দেখে সাথে সাথেই তারা লাফিয়ে নেমে এলো অশ্বপৃষ্ঠ থেকে। ঘোড়াকে দাঁড় করিয়ে দৌড়ে জুব্বা পরা লোকটির সামনে পৌঁছে দু’জনে নতজানু হয়ৈ সিজদা করলো। পরে তার হাতে চুমু খেয়ে জিজ্ঞসে করলো, ‘হে মুরশিদ, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ লোকটি মিষ্টি করে হাসল। তারপর সৈনিকদের দেখিয়ে বলল, ‘এদের সাথে একটু সফল করছি।’ এ উত্তর শুনে অশ্বারোহী দু’জন সৈনিকদের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আপনারা বড় ভাগ্যবান। আল্লাহর এই সম্মানিত ওলির সান্বিধ্য পেয়েছেন আপনারা।’ তারা আরো বললো, ‘এই মুরশিদ অনেক বছর আগে এখানে বসেই আমাদের বলেছিলেন, মুশরের একদল পাপী সৈন্য রমলায় আসবে। তারা রমলায় এসে ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে যারা ভাগ্যবান তারা সেই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বেঁচে দেশে ফিরে যেতে পারবে। তোমরাই আহলে সেই ভাগ্যবান সৈনিক?’ এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগেই দরবেশ লোকটি বলে উঠলো, ‘তোমরা লক্ষ্য রাখবে, কোন মিশরী সৈনিককে দেখতে পেলে তাকে এখানে নিয়ে আসবে। রাতে এখানে কেউ ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকবে না।’ রমলা থেকে মিশর যাবার এউ একটিই রাস্তা। যাত্রীদের চলাচলের উপযোগী আর কোন রাস্তা নেই। সব এলাকাই শুধু টিলায় পরিপূর্ণ। সেই টিলার আড়ালে বিস্তীর্ণ অঞ্চল পড়ে আছে। কিন্তু তার ভেতর প্রবেশ করা শুধু বৃথা নয়, অনেক বিপদও সেখানে ওঁৎ পেতে আছে। বাইরে থেকে বুঝা যায়, ওখানে পানির কোন চিহ্ণমাত্র নেই। কাফেলার যাত্রীদের সামনে তখন মৃত্যুর বিভীষিকা রিবাজ করছিল। মিশর সেখান থেকে তখনও অনেক দূরে। এই লোকদের দরকার ছিল একটু আশ্রয়। দরকার ছিল সামান্য খাবার ও একটু পানি। মুরশিদরূপী লোকটি তাদের সামনে বসেছিল। তারা আশা করছিল, এই লোক অলৌকিক ক্ষমতাবলে তাদের জন্য একটু পানি ও খাবার ব্যবস্থা করে দেবেন। লোকটির প্রতিটি কথা সবাই নিজ নিজ মনের ভেতর গেঁথে নিচ্ছীল। কিন্তু শুধু আশা আর আশ্বাসে কারো পিপাসা নিবারণ হচ্ছিল না। অবস্থা এমন হল যে পিপাসার তাড়নায় দু’তিন সিপাইয়ের মুর্ছা যাওয়ার উপক্রম হলো। লোকটি খাবার ও পানির বদলে তাদের তখনো শান্তনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সূর্য অস্ত গেল। মরুভূমিতে নেমে এলো আঁধার রাত। রাত গভীরতার দিকে এগিয়ে চলল, কিন্তু খাদ্য বা পানিয় কিছুই এল না। কাফেলার মুখগুলো হতাশায় মুষড়ে পড়ল। তাদের তখন করার কিছুই ছিল না। টিলার পাশে নিস্তেজ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল লোকগুলো। কোথাও কোন আওয়াজ নেই। নেই প্রাণের সামান্য স্পন্দন। এমনকি মরু শেয়ালের একটু ডাকও ভেসে এলো না কোথাও থেকে। অনেক রাতে, যখন গভীর নীরবতার মধ্যে ডুবে ছিল নিঃসঙ্গ মরুভূমি, তখন পাশেই কোথাও পাখী ডেকে উঠল। সবাই চমকে উঠলো। এমন জাহান্নামে, যেখানে পানি নেই, বৃক্ষ নেই, নেই কোন পশু বা প্রাণীর স্বাক্ষর, সেখানে পাখী এলো কোত্থেকে! যেখানে, প্রাণহীন নিস্তব্ধতার কারণে তাদের মাথার উপর মৃত্যু ঝুলছে, সেখানে পাখীর আওয়াজ কল্পনাও করা যায় না। এ আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই কাফেলার লোগুলোর নিশ্বাসের আওয়াজও যেন থেমে গেল। দম বন্ধ করে সবাই ভাবল, এটা পাখীর আওয়াজ হতেই পারে না। নিশ্চয়ই এটা কোন ভৌতিক ব্যাপার। ‘আল্লাহ, তোমার মেহেরবাণীর কোন তুলানা নেই। হাজার বার, লক্ষ-কোটি বার এ জন্য তোমার দরবারে কৃতজ্ঞতা জানাই!’ পীর সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘আমার দোয়া কবুল হয়ে গেছে।’ লোকটি তার সামনে বসা দু’জন সৈনিককে বললো, ‘তোমরা দু’জন এদিকে যাও। এখান থেকে গুণে চল্লিশ কদম এগিয়ে ডান দিকে ঘুরবে। ওখান থেকে গুণে চল্লিশ কদম এগিয়ে গেলে সামনে কোথাও আগুণ জ্বলছে দেখতে পাবে। সেই আলোর পাশে গেলে তোমরা সেখানে কিছু পানি ও খাবার পাবে। সেখানে যাই কিছু পড়ে থাক, উঠিয়ে নিয়ে আসবে। এই আওয়াজ কোন পাখীর নয় এটা এক গায়েবী ইশারা।’ ‘আমি যাবো না।’ এক সিপাই ভয় পেয়ে বললো, ‘আমি জ্বীনদের ভয় পাই।’ ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে পরে যে দু’ব্যক্তি এসেছিল তারা দু’জন উঠে দাঁড়াল। ‘হুজুর, আমরা যাই?’ হুজুর বললে, ‘যাও, একদম ভয় পাবে না। এই জ্বীন তোমাদের দুশমন নয়, বন্ধু। নইলে তোমাদের এই দুঃসময়ে তারা তোমাদের জন্য কষ্ট করে খাবার বয়ে নিয়ে আসতো না।’ তারা প্রথমে হুজুরকে সিজদা করলো। তারপর মাথা তুলে সৈনিকদের লক্ষ্য করে বললো, ‘ভয় পেয়ো না। এ জ্বীন আমাদের কোন ক্ষতি করবে না। হুজুর যেখানে যান সেখানে তাকে খাবার ও পানি পৌঁছানোই এদের দায়িত্ব। আমরা তার মোজেজা সম্পর্কে জানি। দুই তিনজন চলো আমাদের সঙ্গে, নইলে সবার খাবার আমরা বয়ে আনতে পারবো না।’ তারা দু’তিন জন সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাত্রা করলো। পীর সাহেবের নির্দেশ মত তারা কদম গুণে ও মোড় ঘুরে দুই টিলার মাঝ দিয়ে এগিয়ে গেল। সামনে এক স্থানে তারা সত্যি আগুণ জ্বলতে দেখলো। সকলে দোয়া কালাম পাঠ করতে করতে অগ্রসর হলো সেই আগুণের দিকে। সেখানে তারা চার-পাঁচটা পানির মশক ও প্রচুর খাবার প্যাকেট দেখতে পেল। তারা সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে এসে হুজুরের সামনে রেখে দিল। হুজের সবাইকে ডেকে তাদেরকে গোল হয়ে বসতে বললেন। সবাই বসলে তিনি সেই খাবার সবার মাঝে ভাগ করে দিলেন। দু’টি পানির মশক সৈনিকদের কাছে দিয়ে বললেন, ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করবে না। পানি কম খেয়ে সঞ্চিত রাখার চেষ্টা করবে।’ এর পরে আর কারো সন্দেহের কোন অবকাশ থাকরো না, কালো দাড়িওয়ালা হুজুর আসলেই কামেল পীর! আল্লাহর সঙ্গীদেরই একজন। হুজুর সবাইকে তায়াম্মুম করালেন ও জামায়াতসহ নামাজ পড়ালেন। তারপর সকলেই শুয়ে পড়লো। ভোরের আলো ফোটার আগেই হুজুর আবার সবাইকে জাগিয়ে দিলেন। ফজরের নামাজের পর কাফেলাকে নিয়ে মিশরের দিকে যাত্রা করলেন। পীর সাহেব এক উটে ও তার দুই মেয়ে দুই উটে সওয়ার হলে চলতে শুরু করলো কাফেলা। রাস্তায় আরও তিন চারজন সৈনিক এসে কাফেলায় যোগ দিল। সবারই গন্তব্য মিশর। পথে হুজুর তাদেরকে পানি পান করতে দিলেন। সবাইকে খেজুর খাওয়ালেন। এ সময় তাদের পেছন থেকে আরেকটি কাফেলা এগিয়ে এলো এবং তাদের সামান্য দূর দিয়ে সেই কাফেলা মিশরের দিকে এগিয়ে গেল। কেউ একজন বললো, ‘তাদেরকেও আমাদের সঙ্গে নিয়ে নেই।’ হুজুর বরলেন, ‘ওরা মনে হয় আমাদের মত রমলা থেকে পারিয়ে আসেনি। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক করা ঠিক হবে না। যেতে দাও ওদের।’ ০ কয়েকদি পর এই কাফেলা পীর সাহেবের নেতৃত্বে মিশরের সীমান্তে প্রবেশ করলো। সেই দুই লোক, যারা হুজুরের সামনে সিজদা করেছিল, তারা সারা রাস্তায় হুজুরের কেরামতির নানা কাহিনী বর্ণনা করে লোকদেরকে চমৎকৃত করে তুলল। তারা সৈন্যদের বললো, ‘যদি কোন লোক হুজুরকে তার বাড়ীতে থাকার জন্য রাজি করাতে পারে তবে তার এবং সেই গ্রামের কারো রিজিকের কোন অভাব হবে না। আল্লাহ তাদের উপরে সব সময় সদয় থাকেবন।’ এই কাফেলার একই গ্রামের তিন চারজন সৈনিক ছিল। তারা সবাই মিলে পরামর্শ করলো, ‘হুজুরকে আমাদের গ্রামে নিয়ে গেলে কেমন হয়?’ ‘ভালই তো! হুজুর কি রাজি হবেন?’ ‘চেষ্টা করতে দোষ কি! যদি রাজি করাতে পারি তবে আমাদের রুজি-রোজগার নিয়ে আর কোন চিন্তা থাকে না।’ ‘ঠিক বলেছো, চলো হুজুরকে বলে দেখি।’ ‘হুজুরকে নয়, চলো ওই দু’জনকে গিয়ে ধরি। তারা বললে হুজুর সহজেই রাজি হয়ে যাবে।’ ‘তাই ভাল। চলো তাই করি।’ তারা গিয়ে ওই লোক দু’জনকে বললো, ‘আমরা হুজুরকে আমাদের গ্রামে নিতে চাই। আপনারা যদি একটু সুপারিশ করেন আমরা ধন্য হবো।’ তারা বললো, ‘বেশ তো, আমরা হুজুরকে বলে দেখি তিনি রাজি হন কিনা?’ তারা দু’জনে হুজুরের কাছে গেল। বলল, ‘হুজুর, এই লোকেরা আপনাকে ওদের গ্রামে নিতে চায়। তাদের ইচ্ছা, আপনি ওদের ওখানে থেকেই আপনার বাণী প্রচান করেন। তারাও সাধ্যমত আপনার সাথে সহযোগীতা করবে।’ হুজুর বললেন, ‘আমাকে প্রথম ওরাই দাওয়াত করলো, এ দাওয়াত আমি অগ্রাহ্য করি কি করে? ঠিক আছে, আমি তাদের দাওয়াত কবুল করলাম।’ কায়রো শহরের পাশেই বড়সড় একটা গ্রাম। সে গ্রামই ছিল ওদের ঠিকানা। কাফেলা সে গ্রামে গিয়ে প্রবেশ করলো। সৈন্যদের দেখে গ্রামবাসী ছুটে এলো। দেখতে দেখতে এ বাড়ী ও বাড়ী খবর হয়ে গেল। সৈন্যদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের লোকেরা ছুটে এলো। কাফেলা গ্রামের মাদ্রাসার বিশাল মাঠে গিয়ে থেমে গেল। গ্রামবাসী ও সৈন্যদের আত্মীয় স্বজন ঘিরে ধরলো কাফেলাকে। লোক জন কাফেলার উট ও ঘোড়া এক পাশে সরিয়ে নিল। কাফেলার লোকদের আহার ও পানির ব্যবস্থা করলো। ওদের খাওয়া শেষ হলে সবাই যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা শোনার জন্য গোল হয়ে বসে গেল। সৈন্যরা যুদ্ধের কথার চাইতে হুজুরের কেরামতির কাহিনীই বেশী শোনাল লোকজনকে। তারা বলল, ‘তিনি একজন কামেল পীর ও আল্লাহর অলি। জ্বীনেরা এই অলির বশে থাকে। রমলা থেকে আসার পথে আমরা যখন ক্ষুধা ও পিপাসায় একেবারে কাতর হয়ে পড়লাম তখন পথে তাঁর সাথে সৌভাগ্যক্রমে আমাদের দেখা হয়ে গেল। তিনি জ্বীনকে হুকুম করলেন আমাদের খাবার ও পানি সরবরাহ করার জন্য। জ্বীনেরা অদৃশ্য থেকে আমাদের খাবার এনে দিল। হুজুর যদি আমার খাবার ও পানির ব্যবস্থা না করতেন তবে আমরা পথেই মরে পড়ে থাকতাম। আমাদের পক্ষে আর কোনদিনই বাড়ী ফেরা সম্ভব হতো না।’ হুজুর চোখ বন্ধ করে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এক গাছের নিচে বসে রইলেন। তার মেয়ে দু’টিকে গ্রামের এক সিপাই তার বাড়ীতে নিয়ে গেল। ‘যুদ্ধক্ষেত্রের রহস্য আমাকে জিজ্ঞেস করো!’ ধ্যানমগ্ন অবস্থা থেকে চোখ মেলে হুজুর বললেন, ‘এরা সিপাহী, এরা শুধু যুদ্ধ করে। এরা জানতে পারে না, যারা ওদের দিয়ে যুদ্ধ করায় তাদের নিয়ত কি? এই কয়েকজন সৈন্য যাদের আমি মরুভূমির জ্বলন্ত আগুণের মধ্য থেকে বের করে এনেছি, তারা সেইসব সৈন্যের পাপের শাস্তি ভোগ করে যারা যুদ্ধের নামে মুসলিম জনপদে লুটতরাজ ও নারীর ইজ্জত লুণ্ঠন করেছিল। তারা সবাই ছিল আইয়ুবীর বাহিনীর। তারা প্রতি ময়দানেই সফলতা লাভ করতো। তারা কোন অঞ্চল দিয়ে গেলে সেই অঞ্চলের মাটি এবং বৃক্ষলতাও তাদের নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি দিত। আইয়ুবীর গুণগানে ফেটে পড়তো। কিন্তু ক্রমাগত বিজয় তাদের অহংকারী করে তুলল। তারা তখন লুটতরাজ শুরু করল। সেখানকার নারীরা মিশরের নারীদের চেয়ে সুন্দরী ছিল। বিজয়ের গর্বে তারা সেই মেয়েদের ইজ্জত লুটতে শুরু করল। তাদের মধ্য থেকে মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণের চিন্তা দূর হয়ে গেল। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে ফেরাউনের মত অহংকারী বানিয়ে নিল। তাদের মস্তিষ্কে গণিমতের মাল ছাড়া আর কোন চিন্তা ছিল না। এই বাহিনীর সেনাপতি, কমাণ্ডার ও সৈন্যরা জাতির সম্মান ও ইজ্জতকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। তারা মুসলমানদের বাড়ীতে লুটপাট করেছে। সুন্দরী নারী ও যুবতীদের ধরে নিয়ে বেইজ্জতি করেছে। এইসব পর্দানশীন মুসলিম মেয়ের আর্তনাদে কেঁপে উঠেছে আল্লাহর আরশ। ফলে সুলতান আইয়ুবীর ওপর আল্লহর যে রহমত ছিল তা উঠে গেল। সেখানে নেমে এলো আল্লাহর গজব। সুলতানের বাহিনীতে নাম লিখিয়ে এইসব সৈন্যরা যখন যুদ্ধ করতে গেল তখন আল্লাহর গজব ঘিরে ধরলো তাদের। এদের ভাগ্য ভাল, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসার ফলে আল্লাহর গজব থেকে বেঁচে গেল তারা। আল্লাহ আমাকে ইশারা করলেন তাদের হেফাজতের জিম্মা নিতে। তখন আমি তাদের কাছে গেলাম। তাদেরকে খাবার ও পানি সরবরাহ করলাম। তারা আল্লাহর অসীম রহমতের কারণে আবার ঘরে ফিরে আসতে পারল।’ ‘সুলতান আউয়ুবী কি অন্ধ হয়ে গেছেন? তিনি দেখেন না এসব?’ কেউ একজন রাগের সাথে বললো, ‘তিনি কি চোখ বুজে থাকেন, তার সৈন্যরা কি করছে তার খোঁজ রাখেন না?’ ‘আল্লাহ যখন কাউকে শাস্তি দানের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তার বিবেক ও চোখের উপর পর্দা টেনে দেন।’ হুজুর বললেন, ‘সুলতান আইয়ুবী নিজে বিজয়ের নেশায় এতটাই মাতাল ছিলেন যে, কখন যে তার মধ্যে ফেরাউনের প্রেতাত্মা আছর করেছে, নিজেই টের পাননি। তাই তো ত তিনি আল্লাহ ও আল্লাহর বিধানের কথা ভুলে গেছেন। তাকে তার রক্ষী ও বিলাসপ্রিয় সেনাপতিরা এমনভাবে ঘিরে রেখেছে, কোন অভিযোগকারী ও মজলুমের আবেদন তার কানে পৌঁছতে পারে না। যে বাদশাহর কাছে জনগণের ফরিয়াদ ও নালিশ পৌঁছতে পারে না, আল্লাহর রহমত তার কাছ থেকে সরে যায়। যখন বাদশাহ ন্যায় বিচারের দরজা বন্ধ করে রাখেন আল্লাহ তখন তার বিচারের ভার নিজ হাতে নিয়ে নেন। তখন তার ওপর নেমে আসে আল্লাহর গজব। জেনে বা বা না জেনে যারাই তার সহযোগীতা করতে যায়, তারাই সেই গজবের শিকার হয়ে যায়। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫২২ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now