বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ধাপ্পাবাজ(২)

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান জাহিন আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (০ পয়েন্ট)

X ধাপ্পাবাজঃ ক্রমিক-২ আমি উঠে একেবারে দাঁড়িয়ে গেলাম। বাগদাদ জামে মসজিদের খতিবের অনেক পুরানো কথা আমার মনে পড়ে গেল, ‘তুমি সহসাই জেগে উঠবে ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও যাত্রা করবে।’ ঠিক তাই হলো। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি বাড়ী থেকে বের হয়ে এলাম এবং একদিকে হাঁটা ধরলাম। হাঁটতে হাঁটতে আমি আমার গ্রাম ও লোকালয় ছেড়ে এলাম। আমি থামতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমার পা আমাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে চললো। আমি চলতেই লাগলাম। জানি না তোমরা সে স্থানটি দেখেছো কি না। সেখানে গভিল খাদ ছিল এবং খাদের মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হচ্ছিল। খৃস্টানদের অসংখ্য সৈন্য সেই খাদের গভীরে লুকিয়েছিল। আমি শুনেছিলাম, সুলতান আইয়ুবী অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন। তিনি মাটির দেয়াল ভেদ করে লুকানো শত্রু দেখতে পারেন। কয়েক মাইল দূর থেকে শত্রুর গন্ধ পেয়ে যান। শিকারী জন্তু যেমন গন্ধ শুঁকে শিকারের কাছে চলে যায়, তেমনি তিনি শত্রুর গন্ধ শুঁকে শত্রুর কাছে চলে যেতে পারেন। হয়তো আল্লাহ সত্যি সত্যি আইয়ুবীকে এমন শক্তি দিয়েছিলেন। আর সেই শক্তির বলেই তিনি বার বার যুদ্ধে জিতে ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ অহংকারী মানুষ পছন্দ করেন না। বিজয়ের পর বিজয় তার মনে অহংকার জন্ম দিয়েছিল। তাই এবার যখন তিনি অভিযানে বের হলেন, আল্লাহর রহমত তার কাছ থেকে বিদায় হয়ে গেল। আল্লাহ তাকে যে নেয়ামত দিয়েছিলেন, তা উঠিয়ে নিলেন। তাঁর চোখের উপর আল্লাহ এমন পট্টি বেঁধে দিলেন যে, শত্রু তো দূরের কথা, তিনি নিজে কোথায় আছেন তাও জানতে পারলেন না। তাই ক্রুসেড বাহিনী তোমাদেরকে তাদের ফাঁদে ফেলে দিল। তারপর তারা খাদের ভেতর থেকে স্রোতের মত বেরিয়ে এলো এবং তোমাদের আক্রমণ করলো। তারপরের অবস্থা তো তোমরাই ভাল জানো। এই যুদ্ধের কয়েক বছর আগের কথা। আমি কোন অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে একদিন এই খাদের কাছাকাছি এক জায়গায় এসে পৌঁছলাম। সেখানে আমার পা হঠাৎ করেই থেমে গেল। তখন ছিল চাঁদনী রাত। আমি সেখানে এক মাজার দেখতে পেলাম। কবরের চারপাশ পাথরের দু’হাত উঁচু দেয়াল দ্বারা বাঁধানো। আমি পরীক্ষা করার জন্য অন্য দিকে ফিরলাম। কিন্তু আমার পা আমাকে আবার কবরের দিকেই ঘুরিয়ে দিল। এবার আমি কবরের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমার যাওয়ার জন্য পাথরের রাস্তা বানানোই ছিল। সেই পথ ধরে আমি কবরের চৌহদ্দিতে প্রবেশ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত দোয়ার জন্য উঠে গেলো। আমার মনে হতে লাগলো, চাঁদ যেন আরও বেশী উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। আমার মনে হলো, আমার ওস্তাদ মনে হয় আমাকে এই স্থানের কথাই বলেছিলেন। আমি কবরের পাশে বসে গেলাম ও করবের উপর হাত রেখে আবেদন করলাম, ‘আমার মত দাসের উপর আপনার কি আদেশ?’ আমি এ প্রশ্নের কোন উত্তর পেলাম না। আমার মন বলল, এখানে কিছু চাইতে নেই। যে কল্যাণ ও সুবিধা তোমার পাওয়া উচিত তা স্বাভাবিক ভাবেই তার তরফ থেকে হয়ে যাবে। আমি রাতটা সেখানেই কাটিয়ে দেলাম। সকালে নদীতে অজু ও গোছল করতে গেলাম। তারপর কবরের কাছে এসে নামাজ পড়লাম। সেখান থেকে যখন বিদায় হলাম তখন মাতালের মত আমার নেশা নেশা ভাব হলো। আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমার মনে হলো, এটাই সে জায়গা, যেখানে আমাকে আস্তানা গাড়তে বলেছিলেন আমার ওস্তাদ। তারপর থেকে আমি নিয়মিত সেই মাজারে যাতায়াত শুরু করলাম। বলতে গেলে সেখানেই আমার আস্তানা বানিয়ে নিলাম। সেই কবরের পাশে দাঁড়ালে আপনাতেই আমার মনে নতুন নতুন ভাব জাগতো। তাপর সেটাই আমার বিশ্বাসে পরিণত হতো। আমি কবরের উপর উঁচু করে গুম্বুজ বানিয়ে নিলাম। লোকজন জোর করে আমার মুরীদ হতে লাগলো। ক্রমে আমি দূর দূরান্ত পর্যন্ত সফল শুরু করলাম। হাজার হাজার মানুষ আমার মুরীদ হয়ে গেল। আমি হলব এবং মুশেলের বিভিন্ন অঞ্চলে গেলাম। এমনকি বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত সফল করলাম। কিছুদিন থেকে আমি দিনের বেলাতেই উমন সব ইশারা পেতে লাগলাম, যা খুব ভাল নয়। মনে হলো, যে মহামানব এই মাজারে শুয়ে আছেন তার আত্মা অশান্ত হয়ে উঠেছে। কবরের উপর আমি সবুজ চাদর বিছিয়ে দিলাম। এক রাতে চাদরে ফড়ফড় শব্দ হতে লাগল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি চাদরের উপর হাত দিয়ে বললাম, ‘মুরশিদ! আমার জন্য কি আদেশ?’ মাজারের মধ্য থেকে শব্দ হল, ‘তুমি দেখছোনা, মুসলমানরা এখন মদ পান করতে শুরু করেছে?’ এর আগে আমি আর এমন শব্দ কোনদিন শুনিনি। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি মুসলমানদেরকে মদের অপকারিতা সম্পর্কে সাবধান করো।’ আমি তার আদেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করলাম। কিন্তু দেখতে পেলাম, গরীবরা কেউ মদ পান করে না। মদ পান করে বড় বড় অফিসার ও আমীররা। তাদের কান পর্যন্ত আমার সাবধান বাণী পৌঁছতো না। আবারও এক রাতে কবরে চাদর ফরফড় করে আমাকে জানিয়ে দিল, মিশর থেকে আসা সৈন্যরা মুসলিম এলাকায় মুসলমানদের সাথে ঠিক সেই ব্যবহার করছে, যেমন ব্যবহার ক্রুসেড বাহিনী করে থাকে। সে সময় সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর সৈন্য দামেশকেও ছিল। দামেশক থেকে হলব পর্যন্ত এবং হলব থেকে রমলা পর্য়ন্ত সৈন্যদল স্থানে স্থানে ছড়ানো ছিটানো ছিল। এই সব সৈন্যদের কমাণ্ডাররা মুসলমান বাড়ীতে ঢুকে মূল্যবান জিনিস ও নগদ অর্থ জোর করে কেড়ে নিতো। তারা পর্দানশীল মেয়েদের উপরেও হাত বাড়াল। তাদের দেখাদেখি সাধারণ সৈনিকরাও লুটপাট শুরু করে দিল এবং নারীদের লাঞ্ছিত করতে লাগল। এমন সংবাদও পাওয়া গেছে, সেনাপিত ও কমাণ্ডাররা মুসলমান মেয়েদেরকে ধরে নিয়ে তাদের ক্যাম্পে তুলেছে। মাজার থেকে আমাকে আদেশ দেয়া হলো, তুমি সলতান আইয়ুবীর কাছে যাও। তাঁকে বলো, এই সৈন্য তো খেলাফতে বাগদাদের বাহিনী, মিশরের ফেরাউনের বাহিনী নয়। তারা যদি এমন পাপ কর্ম চালু রাখে, তবে তাদের হাশর ফেরাউনের মতই হবে। সে সময় সুলতান আইয়ুবী হলবের নিকটে ক্যাম্প করেছিলেন। আমি এত দূর রাস্তা অতিক্রম করে তাঁর সঙ্গে যখন দেখা করতে গেলাম, তখন তাঁর রক্ষীরা বললো, ‘তুমি সুলতাদের সাথে কেন দেখা করতে চাও?’ আমি বললাম, ‘আমি রমলা থেকে এসেছি ও একটি সংবাদ এনেছি।’ তারা জিজ্ঞেস করলো, ‘সংবাদ কে দিয়েছে?’ আমি বললাম, ‘সংবাদ যিনি দিয়েছেন, তিনি জীবিত নন।’ রক্ষীরা হো হো করে হেসে উঠলো। তাদের কমাণ্ডার উচ্চস্বরে বললো, ‘ওগো, তোমরা যদি পাগল দেখতে চাও তো আসো। এই লোক বলছে সে কবর থেকে সুলতানের জন্য সংবাদ এসেছে।’ অন্য একজন বললো, ‘এ লোক নিশ্চয় শেখ মান্নানের চেলা। বেটা ফেদাইন দলের লোক, সুলতানকে হত্যা করতে এসেছে। একে, ধরো, বন্দী করো।’ অন্য একজন বললো, ‘এ লোক খৃষ্টানদের চর! একে হত্যা করো।’ আমি বন্দী হওয়ার ভয়ে বললাম, ‘আমি সত্যি একজন পাগল!’ আমি সেখান থেকে পালিয়ে এলাম। আমি স্বচক্ষে দেখলাম, সুলতান আইয়ুবীর ক্যাম্প থেকে দু’টি মেয়ে মাথা বের করে পাগলের তামাশা দেখার জন্য আমার দিকে তাকিয়ে আছে।’ ‘আমারা তাঁর কোন সৈন্যের কাছে কোন মেয়ে দেখিনি।’ এক সৈনিক বললো। ‘তোমরা কি সেই সময় যখন তাঁর সৈন্যরা দামেশকে গিয়েছিল, তখন তাদের সাথে ছিলে? সাদা পোষাকধারী লোকটি প্রশ্ন করলো। ‘আমরা তো এই প্রথমবারের মত এদিকে এসেছি।’ এক সিপাই বললো, ‘আমরা সৈন্য বিভাগে নতুন ভর্তি হয়েছি। তখন আমরা সুলতাদের বাহিনীতে ভর্তিই হইনি তো সেখানে থাকবো কেমন করে?’ ‘আমি পুরাতন সৈন্যদের কথা বলছি।’ লোকটি বললো, ‘সেই কমাণ্ডার ও সৈন্যদের কথাই বলছি, যাদের পাপের শাস্তি তোমাদের মাথার ওপর এসে পড়েছে। তোমরা নতুন তো, সে জন্য কোন পাপের সাথে জড়াতে পারোনি। এ জন্যই তোমরা এখনো জীবিত আছো, নিপরাপদে ফিরে আসতে পেরেছো। কিন্তু যারা মুসলমান হয়েও মুসলমানদের বাড়ীতে লুটপাট করেছে ও পর্দানশীন নারীদের উপর হস্তক্ষেপ করেছে, তারা সবাই মারা গেছে। আর যারা পাপী ও চোনাহগার তাদের কারো ঠ্যাং কেটেছে, কারো বাহু ও হাত কেটেছে। তোমরা খবর নিলেই জানতে পারবে, তোমাদের মতই অনেকে রমলা থেকে মিশরে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু পথের মধ্যে তাদের পাপের শাস্তি শুরু হয়ে যায়। তারা ময়দান থেকে জীবিত ফিরলেও পথে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাদের দেহ থেকে চোখ শকুনে টেনে বের করেছে। আরো একদল পাপী ছিল, তারা খৃষ্টানদের হাতে বন্দী রয়েছে। এখন সেই বন্দীখানায় তারা তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করছে। এই বন্দীখানার শাস্তি জাহান্নামের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সেখানে তাদের নিরন্তর শাস্তি চলতে থাকবে। তারা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় সেখানে ধুকে ধুকে মরার মত পড়ে থাকবে, কিন্তু মরবে না। তারা মৃত্যুর জন্য দোয়া করবে, কিন্তু তাদের দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।’ ‘আমাদের পরাজয়ের কারণ কি এটাই?’ এক সৈনিক প্রশ্ন করলো। ‘আমি দুই বছর আগেই ইশারা পেয়েছিলাম, আইয়ুবীর বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে।’ লোকটি বললো, ‘তারা নিজেরা ধ্বংস হবে আর কাফেরদেকে এমন সুযোগ করে দেবে, যেন তারা ইসলামের ধ্বংস সাধন করতে পারে। কারণ এই বাহিনীর প্রতি আল্লাহ নাখোশ হয়ে গেছেন। ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন?’ একজন জিজ্ঞেস করলো। ‘আমি আল্লাহর গজব থেকে বাঁচার জন্য রমলা থেকে পালিয়ে এসেছি। রমলায় ক্রুসেড বাহিনীর রূপ ধরে আল্লাহর গজব নেমে এসেছে। এ গজব মুসলিম বিশ্বকে তছনছ করে দেবে।’ ‘তাহলে আপনি কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবেন?’ ‘আমি কোথায় আশ্রয় নেবো সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি শুধু আমার মুরশিদের হুমুক তামিল করতে পারি। ক্রুসেড বাহিনী তুফানের মত রমলায় আঘাত হানলে মুরশিদ আমাকে জানাল, ‘আইয়ুবীর বাহিনী এ তুফান রোধ করতে পারবে না।’ তোমরা নিজেরাই এর স্বাক্ষী, ক্রুসেড সৈন্যদের তোমরা বাঁধা দিতে পারোনি। যদি শুধু আমার জীবনের প্রশ্ন হতো, তবে আমি আমার মুরশিদের মাজারে আমার জীবন কুরবানী করতাম। কিন্তু মুরশিদ আমাকে এই যুবতী মেয়ে দু’টির জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য হিজরত করতে বললেন। কারণ খৃষ্টানরা দু’টি জিনিস খুব পছন্দ করে, সম্পদ ও পর্দানশীন মেয়ে। আমার মুরশিদ আমাকে বললেন, ‘তোমরা মেয়ে দু’টিকে সঙ্গে নিয়ে মিশর চলে যাও।’ আমি করজোড়ে বললাম, ‘এত দূরের পথ আমি কেমন করে পার হবো।’ মাজার থেকে আওয়াজ এলো, ‘তুমি এতদিন আমার যে খেদমকত করেছো, তার বিনিময়ে তোমরা মঙ্গল মতে কায়রো পৌঁছতে পারবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে না। সবাইকে পাপ থাকে সাবধান করবে। বলবে, যদি বাঁচতে চাও তবে পাপেরর কাজ ছেড়ে দাও। নইলে তোমরাও সেই শাস্তি পাবে যে শাস্তি আইয়ুবীর সৈন্যদের দেয়া হয়েছে। মাজার আমাকে আরও অনেক কথাই বলেছে, সে সব কথা আমি মিশরে গিয়ে বলবো। তোমরা একে অন্যের দিকে লক্ষ্য করে দেখো, তোমাদের চেহারা সব লাশের মত ফ্যাকেশে হয়ে গেছে। তোমাদের দেহে প্রাণের স্পন্দন আছে কি নেই, বুঝার উপায় নেই। কিন্তু আমাকে দেখো, আমি ও আমার কন্যারা পায়ে হেঁটে যাচ্ছি। আমাদের সাথে খাবারও নেই, পানিও নেই। তবু আমরা কত সতেজ ও প্রাণবন্ত।’ ‘আপনি কি আমাদেরকে মিশর পর্যন্ত আপনার মত শান্তিতে নিয়ে যেতে পারবেন?’ এক সৈনিক জিজ্ঞেস করলো। ‘যদি তোমরা খালেছ মনে এই প্রতিজ্ঞা করো, তোমরা পাপের চিন্তা মন থেকে মুছে ফেলবে, আর আমি যে উদ্দেশ্যে মিশর যাচ্ছি সে ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করবে, তবে আমি তোমাদেরকে সহিসালামতে মিশর ফিরিয়ে নিয়ার চেষ্টা করবো।’ ‘আমরা সত্য মনে অঙ্গিকার করছি।’ অনেকগুলো কণ্ঠস্বর এক সাথে বলে উঠলো, ‘আমরা অঙ্গীকার করছি, যে পর্যন্ত জীবিত আছি, আপনার সাথে থাকবো।’ ‘আমি শুধু আমার এবং মেয়েদের জীবন ও সম্মান বাঁচানোর জন্য রমলা থেকে বের হইনি।’ লোকটি বললো, ‘আমাকে আদেশ করা হয়েছে, মিশরে গিয়ে জনগণকে সাবাধান করার জন্য। মিশরের মাটির একটি দোষ আছে। এই মাটিতে গোনাহের একটা প্রবণতা আছে। হযরত ইউসুফ (আgj মিশরে নিলাম হয়েছিলেন। হযরত মুসা (আgj-এর ওপর অত্যাচার করা হয়েছে মিশরের মাটিতে। মিশরে ফেরাউনের হাতে নির্যাতীত হয়েছে নবী, রাসূল ও পয়গম্বরগণ।’ তিনি বললেন, ‘হে মিশরবাসী! তোমরা মাটির এই কুপ্রভাব থেকে বাঁচো এবং এর অনাচার থেকে মুক্ত হয়ে যাও। তোমরা আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো, যেন আল্লাহ তোমাদেরকে আর শাস্তিযোগ্য মনে না করেন। তাহলেই তোমরা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমি মিশরবাসীকে এই বাণী শোনানোর জন্যই যাচ্ছি। যদি তোমরা এই বাণী পৌঁছাতে আমাকে সাহায্য করো, তবে তোমাদের জন্য এই পৃথিবী যেমন জান্নাত হয়ে যাবে তেমনি পরকালেও তোমাদের জন্য খোলা থাকবে বেহেশতের দরোজা।’ ০ কায়রোর আকাশ নিরাশার মেঘে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। রমলার যুদ্ধে পরাজিত সুলতান আইয়ুবী ততক্ষণে পৌঁছে গেছেন কায়রো। কায়রোর শহর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে গুঞ্জরিত হচ্ছিল একটিই শব্দ, পরাজয়! পরাজয়! পরাজয়! মানুষের মনে এসে জমা হচ্ছিল অজানা ভয় ও ত্রাস। কেন এ পরাজয় ঘটলো মানুষ তার কিছূই জানতো না। তারা শুধু জানল, রমলার প্রান্তরে চরম মার খেয়ে সুলতান আইয়ুবী তাঁর মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। যে আইয়ুবীর পায়ের নীচে এসে চুমু খেতো বিজয়, সে আইয়ুবী পরাজয়ের কলঙ্ক নিয়ে ফিরে এসেছেন কায়রো, এ খবরে কায়রোর মানুষ বিচলিত, স্তম্ভিত। গুজর ছড়ানোর এটাই মোক্ষম সময়। খৃস্টানদের কাছ থেকে হালুয়া-রুটি খাওয়া মুসলিম গাদ্দাররা কোমরে গামছা বেঁছে নেমে পড়ল গুরব ঘড়ানোর কাজে। সাধারণ মানুষ সত্য-মিথ্যা চাযাই না করেই সে গুজব বিশ্বাস করতে লাগল। কেবল বিশ্বাস করতে লাগল বললে ভুল বলা হবে, বরং তারা সে গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছিল কোন কিছু না বুঝেই। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন গুজব বের হতে লাগলো। সেসব গুজব বাতাসের মতই দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগলো কায়রো এবং তার আশপাশের এলাকায়। আগে থেকেই কায়রোতে খৃস্টান গোয়েন্দা এবং তাদের দালার ও চরেরা কাজ করছিল। এসব চক্রান্তকারীদের কেউ ইউরোপ থেকে আসেনি, মিশরের মুসলমান নাগরিকরাই তাদের হয়ে এ দায়িত্ব পালন করছিল। এর বিনিময়ে তারা পাচ্ছিল মোটা অংকের টাকা ও নানা উপহার সামগ্রী। তারা প্রচার করতে লাগলো, ত্রুসেড বাহিনীর হাতে এত বেশী সামরিক শক্তি রয়েছে, দুনিয়ার কোন শক্তিই তাদের সামনে টিকতে পারবে না। সুলতান আইয়ুবীর পরাজিত সৈন্যদের বিরুদ্ধে তারা বলতে লাগলো, এরা সব অপদার্থ ও আরামপ্রিয় সৈন্য। লুটপাটের আশায় তারা সেনা বিভাগে নাম লিখিয়েছিল। এদের দিয়ে কি যুদ্ধ হয়! তারা সুলতান আইয়ুবীর সামরিক যোগ্যতা নিয়েও নানান প্রশ্ন তুলতে লাগল। মানুষের স্বভাবটাই এমন, তারা গুজবে কান দিতে ও ছড়াতে ভালবাসে। এই গুজবের গোলকধাঁধাঁয় পড়ে মিশরবাসী আতংক ও ভয়ে একেবারে নাজেহাল হয়েগেল। তারা সবচেয়ে বেশী আতংকিত হলো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলাতক সৈন্যদের দল ছুট অবস্থায় কায়রো ও মিশরে পৌঁছতে দেখে। এ সৈনিকরা ছিল পল্লীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের নতুন ভর্তি করা সিপাই। সামান্য ট্রিনিং দিয়েই এদের যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল, ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে এরা যে ভয় পেয়েছিল সেই আতংক লেগেছিল ওদের চোখে মুখে। তকিউদ্দিন সত্যি কথাই বলেছিলেন, গদি ও রাজ্যের লোভে মুসলমান আমীররা যদি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে সেনাবাহিনীকে টুকরো টুকরো না করতো তবে সুলতান আইয়ুবীকে এই আনাড়ি লোক ভর্তি করার ঝুঁকি নিতে হতো না। গৃহযুদ্ধ মুসলিম বাহিনীকে বিভক্ত ও দুর্বল করে দিয়েছিল। সেই শূন্যস্থান পূরণের জন্য সুলতান আউয়ুবীকে নতুন করে সেনাবাহিনীতে সৈন্য ভর্তি করতে হয়েছিল। যদি গৃহযুদ্ধ না হতো তবে সুলতানকে এই আনাড়ি সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে নামার বিপদ মাথায় নিতে হতো না। (চলবে)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৬৪৮ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now