বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ভারত অভিযান (১ম খন্ড)

"ইসলামিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ(guest) (০ পয়েন্ট)

X বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পর্বঃ১ ৯৭১ সালের পয়লা নভেম্বর,৩৫৭ হিজরী সনের দশই মুহাররম। সেদিন মানব ইতিহাসে সূচিত হলো এক নতুন অধ্যায়।জন্ম নিলো এমন এক কালজয়ী মহাপুরুষ,যার নাম শুনলে হাজার বছর পরে আজো মুর্তিপূজারী হিন্দুদের ঘাম কাটা দেয়।কলজে কেপে ওঠে। সেই মহাপুরুষের নাম সুলতান মাহমুদ গজনভী। ইতিহাসে তিনি আখ্যা পেয়েছেন 'মুর্তি সংহার' হিসেবে। হাজার বছর পেরিয়ে গেছে।এরই মধ্যে পৃথিবীতে ঘটে গেছে কতো ঘটনা,কতো বিবর্তন।কতো রাজা, মহারাজা,দুঃশাসন, সুশাসন দেখেছে প্রাচ্য এশিয়ার জমিন।এখানকার জমিনে কতো বনি আদমের খুন মিশে আছে তার ইয়াত্তা নেই।কতো আদম সন্তান,এক আল্লাহর ইবাদাতকারী বহু দেবতাপূজারী মুর্তিপুজকের নির্যাতনে নিপিষ্ট হয়েছে এরো নেই সঠিক পরিসংখ্যান। কিন্তু একটি কথা ইতিহাসে চির সমুজ্জল-মুর্তি ভাঙ্গার ইতিহাস।পৌত্তলিকদের মনগড়া দেবদেবীর মিথ্যা স্বর্গ ভেঙ্গেচুরে মহাজগতের সত্য ও প্রকৃত স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।একবার দুবার নয়,পরাজয় পরাভবকে দু'পায়ে দলে সতের বার ভারতের মুর্তিপুজারী পৌত্তলিক প্রভূদের সৃষ্ট সাম্রাজ্যে খান খান করে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার ইতিহাস। সেই কালজয়ী ইতিহাসেরই জনক সুলতান মাহমুদ। সুলতান মাহমুদ ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তি।এখনো জীবন্ত তার কর্মকৃতি।বেঈমানদের কাছে মাহমুদ গজনবী হিংস্র, সন্ত্রাসী,খুনী অত্যাচারী কিন্তু মুসলমানদের কাছে সুলতান মাহমুদ মর্দে মুজাহিদ,মহানায়ক,ভারতীয় মাজলুম মুসলমানদের ত্রানকর্তা,মুর্তিবিনাশী। আজ থেকে হাজার বছর আগে।মহাভারত জুরে ছিলো মুর্তি ও মুর্তিপুজারীদের একছত্র রাজত্ব। মানুষ ছিলো মানুষের দাস। মানুষের ওপর প্রভূত্ব করতো মানুষ। মানুষের হাতে তৈরি মুর্তির পদতলে জীবন দিতো মানুষ। আজ ভারতের মন্দিরে মন্দিরে শোভিত যে মুর্তি।সেসব কাঁদা মাটির মুর্তিকে ভেঙে চুরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে সুলতান মাহমুদ সেই সময়ে পরাজিত পুজারিদের সেই সময়ে বলেছিলেন, "কাদামাটির এসব ভুত ও মুর্তি মানুষের প্রভু হতে পারে না,যদি তোমাদের মাটির ওইসব দেবদেবীর কোনো ক্ষমতা থাকে তবে বলো, নিজেদের ক্ষতবিক্ষত টুকরো গুলোকে পুনর্গঠিত করে আমাকে এভাবে টুকরো টুকরো করে ফেলুক"। *__পারেনি। ধ্বংসাবশেষ থেকে দুমড়ানো মুচড়ানো মুর্তি আর জোড়া লাগেনি।মাটিতে মিশে যাওয়া দেবদেবীরা খাড়া হয়ে রুখতে পারেনি মুর্তিসংহারী মাহমুদকে।সুলতান মাহমুদের বিজয়ী সৈনিকেরা কাদা মাটির মুর্তির উপর দিয়ে তাদের ঘোড়া হাঁকিয়ে দিলো। সোমনাথ থানেশ্বরের বিশালাকার মুর্তিগুলো মাহমুদ গজনবীর অশ্ববাহিনীর খুরাঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে গেল,পদাতিক বাহিনীর পদতলে পৃষ্ট হয়ে মাটির সাথে মিশে গেল।প্রতিরোধ করবে তো দূরে থাক আত্নরক্ষা করতেও ব্যর্থ হলো।সে সময়ের *ব্রাম্মনেরা দেবতাদের অক্ষমতা প্রত্যক্ষ করেছিলো,স্বীকার করেছিলো এক আল্লাহর বড়ত্ব,মেনে নিয়েছিলো এক আল্লাহর গোলাম মাহমুদ গজনবীর বশ্যতা।অতঃপর পেরিয়ে গেল অনেক দিন। এক সময় অতীত হয়ে গেলেন মাহমুদ গজনবী।ভারতের মন্দিরে মন্দিরে আবারো শুরু হলো শঙ্খধ্বন্নি, শুরু হলো গীত ভজন।মন্দিরের শূন্য বেদীতে পুনঃস্থাপিত হলো আরো বিশাল বিরাটাকার পাথর কনক্রিটের শক্ত মুর্তি। ব্রাম্মনেরা নতুন উদ্যোগে পুনরোদ্যমে শুরু করলো ভগঃভজনা।১৯৯২ সালে বাবলী মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে হিন্দু -তপ্বসীরা মূর্তিসংহারের প্রতিশোধ নিলো;জানিয়ে দিলো,সন্ন্যাসীরা মূর্তিনাশীদের প্রতিশোধ নিয়েছে।মুসলমানদের ইবাদাতখানা মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে সেখানে মূর্তি স্থাপন করেছে।তারা মুসলমানদের শক্তি, বীরত্ব, কীর্তি গাঁথার ইতিহাস মুছে দিয়েছে। বিগত হাজার বছরে মুসলমানরা ভারতের পৌত্তলিকদের কাছে আত্নবিসর্জন দেয়নি,পৃথিবীর যে সব ভুখন্ডে মুসলমানরা ছিলো দন্ডমুন্ডের মালিক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিধর্মীদের কাছে এসবের কর্তত্ব চলে গেছে।মুসলমানরা হারিয়েছে ইমানি শক্তি,জতিয়তা বোধ,বিস্মৃত হয়েছে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য,বিশ্বনবীর দেয়া শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়েছে।পরিণতিতে চতুর্দিক থেকে হামলে পড়ছে বেঈমানরা,সন্বিত হারানো ব্রাঘ্রের মতো মুসলিম নওজোয়ানরা দংশিত হয়ে কাতরাচ্ছে।প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রহিত হয়ে গেছে নিজেদের সৃষ্ট তুফানে।এখন মুসলমানদের অবস্থা টালমাটাল। পুনরায় ভারতে ফিরে এসেছে পৌত্তলিকতার জৌলুস।গজনবী যেসব দেবালয় ধ্বংস করেছিলেন সেগুলো এখন আগের চেয়ে আরো বেশি জমজমাট। আধুনিকতার রঙ্গিন ফানুসে উজ্জলতার মুর্তিগুলো যেন পরিহাস করে বলছে ,মুসলমানদের খোদা এখন আর নেই,এখন আর নেই মুর্তি সংহারী কোনো মাহমুদ।ওরা সব মরে গেছে। মিথ্যার ভুত ধ্বংসকারীদের রুপ কেমন হয়ে থাকে,আর ইসলামের শিকড় কিভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে কেটে দেওয়া হয়,সেই সব জিজ্ঞাসার জবাব ও অজানা অধ্যায়গুলোর চাপা পড়া ভয়ঙ্কর সব ইমান কেনাবেচার উপাখ্যান জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে অতীতের দিকে, উন্মোচন করতে হবে ইতিহাসের ভাগাড় ঘেঁটে প্রকৃত সত্যকে,ঐতিহাসিকের দৃষ্টি যেখানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।সমকালীন শাসকদের তৈরি কঠিন প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে কোনো পর্যবেক্ষকের সন্ধানী দৃষ্টিও নাগাল পায়নি প্রকৃত সত্যের, অন্ধকার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এই প্রকৃত সত্য ইতিহাস,চেপে রাখা ইতিহাস। সত্য চাপা পড়ার কারণে মিথ্যার বিরুদ্ধে সংগ্রামী বীর সেনাদের কীর্তি বদলে গেছে।সত্যের পতাকাবাহী কথিত ইতিহাসে আখ্যা পেয়েছেন খলনায়ক আর খলনায়কদের দেওয়া হয়েছে মহানায়কের আসন।সত্য মিথ্যার আলো আঁধারে মিশ্রিত ইতিহাসের জঞ্জাল যাচাই করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করা যে কতটা কঠিন তা আন্দাজ করা যায় এ থেকেই যে,সুলতান মাহমুদ গজনবীকে সমকালীন প্রখ্যাত দুই মুসলিম ইতিহাসবিদ ও চিত্রিত করেছেন এভাবেঃ 'মাহমুদ ছিলেন সোনাদানা ও সম্পদ প্রাচুর্যের প্রত্যাশী।মন্দির ও মুর্তি ধ্বংসে তার বেশি আগ্রহের কারণ ছিলো সেগুলোর ভেতরের সোনাদানা মনিমুক্তা কব্জা করা।' অথচ অনেক হিন্দু ইতিহাসবিদ ও অকপটে বলেছেন যে,"মাহমুদ গজনবীর মণিমুক্তা ,সোনার প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিলো না।তিনি সোমনাথের মুর্তিগুলোকে আট আটটি টুকরা করে বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন,তার সৈনিকেরা এগুলোকে পায়ে পিষে ফেলেছিলো,মুর্তির গায়ে কিংবা মন্দিরের কোথাও সোনা দানা মণি মুক্তা গচ্ছিত হয়েছে কি না অথবা মুর্তির গায়ে অলঙ্কার ঝরানো কি না এসবের প্রতি তাদের আদৌ ভ্রুক্ষেপ ছিলো না ।মাটির ও পাথরের তৈরি এসব মুর্তির প্রতি মাহমুদ ও তার সৈনিকেরা ছিলো প্রচন্ড ঘৃণা।এগুলোর প্রতি আগ্রহ ভরে তাকানো,এসব থেকে সোনাদানা খুলে নেওয়ার কথা প্রকৃতপক্ষে মাহমুদের প্রতি আরোপিত চরম অপবাদ। মিথ্যা গুজবে ভর করে চলে। মিথ্যা ধ্বংকারীদের সন্তানরাই যখন গুজবকে সত্য বলে স্বীকার করে নেয়।পূর্ব পুরুষদের দিকে তাকায় সংশয় আর সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে,তখন সত্যের ভিত কেঁপে ওঠে।সত্যের শিকার মূল থেকে ছিন্ন হতে থাকে।সত্যাশ্রয়ীরা আশ্রয় পায় অত্যাচারীরূপে। সেই ইতিহাসের অন্ধকারেই আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি।যদিও সত্যের নাগাল পাওয়া কঠিন।তবে ইতিহাসের দিকে নির্দেশনা চিহ্নগুলোকে অবলম্বন করে সামনে অগ্রসর হলে অবশ্যই সত্যের নাগাল পাওয়া যাবে,বিচ্ছিন্ন টুকরো টুকরো সত্যের উপাদানগুলো একত্রিত করতে পুরো ঘটনা পূর্বাপর বেড়িয়ে আসবে।খসে পড়বে মিথ্যার পলেস্তারা।তখন মাটিচাপা সত্য জীবন্ত হয়ে দেখা দিবে।একটু অনুসন্ধান করলেই বোঝা যায়,ইতিহাসকে মিথ্যার আবর্জনা দিয়ে চেপে রাখা যায় না। কীর্তিকে কলমের খোঁচায় মিটিয়ে দেয়া যায় না।জীবনত্যাগী শহিদ ও মজলুমদের ভুলে থাকা যায় না।কান পেতে শুনলে মাটি সত্য কথা বলে।সত্যাশ্রয়ীদের রক্তের উষ্ণতা অনুভব করা যায়। মজলুমের আহাজারী আছো ইথারে ভেসে বেড়ায়। এ সব কিছু অনুধাবন ও উদ্ধার করার জন্য দরকার ইমানদীপ্ত অনুভূতি,আল্লাহর দরবারে সিজদাবনত হৃদয়।ইথারে ভাসমান যেসব ইমানদীপ্ত বীর সেনানী দের ইমান জাগানীয়া তাকবির ধ্বনি।বেঈমানদের প্রতি তেজোদীপ্ত হুংকার ও তরবারীর ঝনঝনানি হৃদয়ঙ্গম করার জন্য থাকতে হবে হৃদয় খাঁচায় হেরার নূরের জ্যোতি।হৃদয়ে ঈমানের দ্যুতিহীন সেসব মানব পশুদের দলে থেকে মুমিন ও বেঈমানদের মধ্যে পার্থক্য পরখ করা অসম্ভব।যেহেতু আল্লাহ নিজেও ওইসব মিথ্যাবাদীদের আখ্যা দিয়েছেন পশুদের চেয়েও নিকৃষ্ট বলে।ঘোষণা করেছেন,যারা সত্য বিমুখ ওদের কানে সীসা গেলে দেওয়া হয়েছে। ওদের অনুভূতিকে ভোঁতা করে দেওয়া হয়েছে।ওরা দুনিয়াতেও ঘৃণিত অপমানিত আর আখেরাতেও ওদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।মহান আল্লাহ ভালো জানেন, আখেরাতের শাস্তি কতো যন্ত্রনাদায়ক।" ৯৪০সালের দুচার বছর আগের বা পরের ঘটনা।ন্যায় ও ইনসাফের প্রতিক ইরানের বাদশা নওশেরোয়ার শাসন অতীত হয়ে গেছে। ইরানের ক্ষমতার সিংহাসনে যারা আসীন হয়েছে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতি তাদের চরম অনাগ্রহ।তারা ক্ষমতা প্রিয় , ভোগ ও বিলাসব্যসনে মনোযোগী।তারা নিজেদের মনে করতো দেশের মালিক মোখতার আর সাধারণ জনগণকে ভাবতো তাদের প্রজা দাসানুদাস। প্রজাদের বেলায় ন্যায় ও আদল ইনসাফের নীতিবাক্য তারা ছিড়ে ফেলে মানুষকে গোলাম বাদীতে পরিণত করার সব ধরনের ব্যবস্থাই রপ্ত করেছিলো।তাদের নীতি ছিলো,প্রজাদের ভূখা রাখো, ওদের মুখ বন্ধ করে দাও,সত্যকে গলা টিপে মেরে ফেলো।সুবিচার ও রাজ সুবিধা তাদের দাও,যারা শাসকদের গুণ গায়,রাজ্যজুরে তোষামুদে তৈরি করো। মোসাহেব ও তোষামুদীদের মধ্য থেকে উজির নাজির বানাও।প্রজাদের অবস্থা এমন করে রাখো,রাতে মানুষ কুকুরের মুখ থেকে হাড্ডি ছিনিয়ে নিয়ে সন্তানের আহার যোগাতে বাধ্য হয়। ইরানের শাসকেরা বাদশা নওশেরোয়ার বপিত ইনসাফের বৃক্ষকে উপরে ফেলে দিয়ে ইনসাফের প্রতিক নওশেরোয়ার বংশধরদেরকেও ইরান ত্যাগ করতে বাধ্য করে। জুলুম ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নওশেরোয়ার অধঃস্তন পুরুষেরা ইরান ছেড়ে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ল।ক্ষমতার মসনদ থেকে ছিটকে পড়ে নওশেরোয়ার বংশধরেরা জীবন বাঁচানোর তাগিদে যে যেদিকে পারলো বেরিয়ে পড়ল।জীবন জীবিকার যাতনা ও দূর্ভোগ তাদের স্থান থেকে স্থানান্তরে যাযাবরে পরিণত করলো। যারা ছিলো ন্যায়ের ঝান্ডাবাহী,তারা অন্যায় ও জুলুমের যন্ত্রনায় দূর দেশে পারি জমালো। তাদের বয়স্করা দুনিয়া থেকে বিদায় নিচ্ছিলো।শিশুরা বড় হতে লাগলো অতিকষ্টে।আর এ দূরাবস্থার মধ্যেই নওশেরোয়ার বংশে নতুন নতুন শিশুর জন্ম হতে থাকলো। এই বংশের এক টগবগে যুবক কিবারুল হাকাম বিন কিরার আরসালান।মাঝারী গড়ন,দীপ্তীময় চেহারা__চেহারায় উচ্চ বংশের ছাপ পরিস্ফুট। কিন্তু দারিদ্যের মলিনতায় বংশীয় আভিজাত্যের পেলবতা দূরীভূত। বুখারার এক মেঠো পথে নতুন ঠিকানার উদ্দেশ্য চলছে যুবক। ক্লান্ত শ্রান্ত কিরার আর হাকাম একটি গাছের ছায়ায় বসে পড়লো।জায়গাটি জঙ্গলাকীর্ণ,ঝোপঝাড়ে ভরপুর।কানে ভেসে আসছে ছোট শিশু কিশোরদের হৈচৈ।আর ডাকাতের দৃঢ় বিশ্বাস,ওপাশে হয়তো কোনো যাযাবর দল তাবু ফেলেছে।ক্লান্ত আল হাকাম মাথার নীচে কাদের পুটলিটা রেখে শুয়ে পড়লো। কচি শিশুরা হৈচৈ খেলাধুলা আর দৌড়ঝাপে মগ্ন হয়ে অনেক দূরে চলে গেছে।এলাকাটা নিরব নিস্তব্ধ।দুপুর গড়িয়ে তখন পড়ন্ত বেলা।গুণ গুণ একটা মিষ্টি আওয়াজ আর হাকামকে মুগ্ধ করলো।তখন ও সে বুঝে উঠতে পারছিলো না , আওয়াজটা কোথায় থেকে আসছে,এটি কিসের আওয়াজ? কিন্তু তার মনের কোনে আওয়াজটা হঠাৎই কেমন যেনো নাড়া দিলো। গভীরভাবে কান পেতে বুঝতে চেষ্টা করলো আর হাকাম। ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে উঠলো গুন্জরণ।আর কিছু নয় তিলাওয়াত। কোনো নারী কন্ঠের আওয়াজ।গভীর মনোনিবেশে মনের মাধুরী মিশিয়ে তিলাওয়াত করছে কোনো নারী।আওয়াজের ধরন দেখেই আর হাকাম বুঝতে পারলো এটা বয়স্ক নারী কন্ঠ নয়, কোনো কিশোরী যুবতীর কন্ঠ।বেশ সুন্দর।পড়ন্ত বেলায় এই বিজন এলাকায় কিশোরীর তিলাওয়াত অপেক্ষাকৃত দূর থেকে ও স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে আল হাকাম। আর হাকাম আর শুয়ে থাকতে পারলো না। শরীরের ক্লান্তি কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে।গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলো।বেশ ফুরফুরে লাগছে তার। তারাতাড়ি হেঁটে ঝোপঝাড়ের এপাশটা ঘুরে আওয়াজটার দিকে এগিয়ে দেখলো তিন চারটে ছেড়া ফারা তাবু টানানো।কাছেই একজন কিশোরী কোরআন তেলাওয়াতে মগ্ন।কন্ঠ যেমন মধুর তেমনি কিশোরী দেখতেও হৃদয়কারা ।তাবু থেকে একটু দূরে দুই বুড়ো বসে রশি পাকাচ্ছে।তাঁবুর অন্য পাশে দুজন মহিলা আর কয়েকটি ছোট শিশু।কজন শক্ত সামর্থ্য বান পুরুষ ও আছে। কিরার আর হাকামকে আস্তে দেখে সবাই তার দিকে দৃষ্টি ফেরালো।লম্বা লম্বা পা ফেলে হাকাম তাদের কাছে এসে দাঁড়ালো। "আপনাদের এই মেয়েটি একটি আয়াত ভুল পড়ছে।"বুড়োদের প্রতি ইঙ্গিত করে বললো আল হাকাম। "আপনারা অনুমতি দিলে আমি তার ভুল শুধরে দিতে পারি।" "ও কি ভুল শুদ্ধ পড়েছে আমরা শুনিনি।কাজে ব্যস্ত ছিলাম।" বলল এক বুড়ো। "আপনাদের শোনা উচিত।কোথা থেকে এসেছেন আপনারা?" জিজ্ঞেস করলো আর হাকাম। "আমরা তুর্কি ,তুর্কি মুসলমান।" বললো এক বুড়ো। তা তো আপনাদের দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি আপনারা মুসলমান। ঠিক আছে,আমি আগে ওর ভুল শুধরে দেই। ধীর পায়ে এগিয়ে তেলাওয়াতকারী কিশোরীটির কাছে গিয়ে বসলো আর হাকাম।অজ্ঞাত কেউ কাছে বসেছে ঠাহর করে মুখ ফেরালো কিশোরী এবং কোরআন শরীফ পড়া বন্ধ করে দিলো।অচেনা পুরুষকে কাছে বসতে দেখে সে জিজ্ঞাসুনেত্রে বুড়োদের দিকে তাকালো।তার চোখের চাহনিতে অপার জিজ্ঞাসা,কে এই পুরুষ? এভাবে তার কাছে এসে আসন গ্রহণ করলো। আর হাকাম কোনো ভনিতা না করেই বলল, কোরআন শরীফ খোলো। তুমি এক জায়গায় ভুল পড়েছিলে।কিশোরী সে আয়াত থেকে আবার পরেও ভুল পড়লো। আর হাকাম তার ভুল শুধরে দিলো।নিজের ভুল ধরতে পেরে কৃতজ্ঞচিত্ত দৃষ্টিতে কিশোরী আর হাকামের মুখের দিকে তাকালো। এই আয়াতের অর্থ জানো? কিছু কিছু বুঝি ,পরিষ্কার না।লাজনম্র ভাষায় বলল কিশোরী। আমাদের সাথে এক বুজুর্গব্যক্তি থাকতেন।তিনি আমাকে কোরআন শরীফ পরিয়েছেন।অর্থ ও শিখাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু শাপের দংশনে তিনি মারা গেছেন।এখন আমি কিছু কিছু অর্থ বুঝি কিন্তু সব আয়াতের অর্থ বুঝিনা। আমার কাছে শোন! আমি তোমাকে অর্থ বলে দিচ্ছি: "ইব্রাহিম কে সরণ করো,নিশ্চই তিনি সত্য নবী ছিলেন।তিনি তার পিতাকে বলেছিলেন,আপনি এমন সব জিনিসের পুজা করেন,যেগুলো কোনো কিছু শুনতে পারে না।আমার কাছে এমন তথ্য আছে যা আপনার জানা নাই।আপনি আমার কথা মানুন,আমি আপনাকে সঠিক পথের সন্ধান দিবো।" আর হাকাম কিশোরীকে পঠিত আয়াতের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়ার পর বলল, সামনের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন__ ["অতঃপর ইব্রাহিম যখন ওসব মুর্তি ও মুর্তিপুজারীদের থেকে ভিন্ন হয়ে গেলেন,তখন আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকুবকে দান করেছি এবং তাদের সবাইকে নবী বানিয়েছি।"] তুমি জানো, এখানে আল্লাহ তায়ালা কোন ঘটনা বললেন?ওরা মুর্তি পুজা করতো আর ওসব মাটির মুর্তির কাছে নিজেদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরনের জন্য প্রার্থনা করতো। তুমি তো জানো আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আর হাকাম কিশোরীকে বলছিলো,যেসব মুর্তি কিছু বলতে পারে না,শুনতে পারে না, কিছু করতে পারে না পৌত্তলিকরা সে সবের পুজা করে।আসলে সবই ওদের হাতে তৈরি মাটির পুতুল। আর হাকামের মাথা থেকে পা পর্যন্ত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো কিশোরী।আর তন্ময় হয়ে শুনছিলো তার কথা। মুখে কোন শব্দ ছিল না।তার হৃদয় মনে অনাবিল আনন্দের ঢেউ তরঙ্গায়িত হচ্ছিলো। গোত্রের অন্যান্য পুরুষ ও ইতিমধ্যে আল হাকামের পাশে এসে বসে গেল। হঠাৎ গমনোদ্যত হলো আল হাকাম।পা বাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য।বুড়োরা তাকে থামালো।কিশোরীর কাছ থেকে একটু দূরে বড়দের আগের জায়গায় গিয়ে বসলো সে। তুমি কে? কোথা থেকে এসেছ? কোথায় যাবে? জিজ্ঞেস করলো এক বুড়ো। ইরানের মাটি আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেছে।বলল আল হাকাম।যাদের বাপ দাদা,ন্যায় ইনসাফের দ্বারা ইরানের মাটিকে দিয়েছিলো সীমাহীন মর্যাদা,যারা মানুষের জন্য ইরানকে পরিণত করেছিলো সুখের ঠিকানায়, তাদের সন্তানেরা আজ জীবজন্তুর মতো বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।আমরা তো কোনো কীট পতঙ্গ ছিলাম না, যে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে ঝাড় জঙ্গলে বসবাস করবো। কিন্তু তিন চার পুরুষ যাবত আমাদের তাই করতে হচ্ছে।জালেমদের অত্যাচার ও জুলুমে অতিষ্ট হয়ে আমাদের খান্দান যাযাবরে পরিণত হয়েছে।যেদিকে তখন মন চায় সেদিকে চলতে থাকে। তুমি কি বলতে চাচ্ছ, তুমি ন্যায় শাসক নওশেরোয়ার বংশধর?বলল এক বুড়ো। আমাদের বাপ দাদার কাছে তার অনেক কিচ্ছা কাহিনী শুনেছি। কিন্তু আমাদের কাছে ওইসব কাহিনী রূপকথার গল্পের মতো মনে হয়। আচ্ছা,তোমরা কোথায় তাবু ফেলেছো?জিজ্ঞাসু নেত্রে প্রশ্ন করলো অপর বুড়ো। আমি একা। বলল আল হাকাম। ছোটবেলা থেকে কোরআন শরীফের সাথে আমি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছি। তোমার কথা দারুন সুন্দর।বলল এক বুড়ো।যদি থাকতে চাও আমাদের সাথে থাকতে পারো,আর মেতে চাইলেও অন্তত একদিন আমাদের এখানে আতিথ্য গ্রহণ করো। আজ রাতটা এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করলো আল হাকাম।খুব একটা জ্ঞান গরীমা ওয়ালা লোক নয় আল হাকাম। কিন্তু যাযাবরদের কাছে আল হাকামকে মনে হলো বুজুর্গ লোক। থেকে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজী হওয়ার পর তার পাশে দাঁড়ালো সবাই। আল ডাকাতের কথা রূপকথার গল্পের মতো স্বপ্নলোকে নিয়ে যাচ্ছিলো।সেই বিকেল থেকে রাত অবধি তার কথাই শুনছিলো তাঁবুর সব লোক। রাত যখন সন্ধা পেরিয়ে গভীর হতে লাগলো,একজন দুজন করে উঠতে শুরু করলো। শেষ পর্যন্ত যুবক,পৌঢ়, শিশু- কিশোর,মহিলা সবাই তাঁবুতে চলে গেল।বুড়ো দুজন খোলা আকাশের নিচে বিছানা পেতে আল হাকামের কাছেই শুয়ে পড়লো।নানা কথার ফাঁকে বুড়ো দু'জন জোর দিয়ে বলল, তুমি আমাদের সাথেই থাক। আর হাকাম ভাবছিলো,ওরা কেন তাকে তাদের সাথে থাকতে বলছে।আল হাকামের মনের কোণে কিশোরীর শান্ত সৌম্য কান্তিময় চেহারা উঁকি মারলো। কিন্তু বেশি ভাবনায় না গিয়ে সরাসরি বুড়োদের জিজ্ঞেস করে বসল আর হাকাম : "আমার দ্বারা কি আপনাদের কোনো কাজ হবে।" আমাদের গোত্রে পুরুষ কম,নারী বেশি। পুরুষ বেশি থাকলে সুবিধা। আমাদের নানাবিধ ভয়। জঙ্গলের হিংস্র জীবজন্তুই নয় ,এর চেয়েও হিংস্র মানুষ লুটেরা,ডাকাতের ভয়টা সবচেয়ে বেশি।ওই যে মেয়েটা,ওকে নিয়ে আমাদের ভীষণ দুশ্চিন্তা। আমাদের দলে কোনো অবিবাহিত পুরুষ নাই। বড়দের সবার বউ আছে,আর বাকীরা সবাই ছোট।ওই মেয়েটার জন্য কোনো বর পাওয়া যাচ্ছে না।ওটা আমাদের কাঁধে কঠিন দায়িত্বের বোঝা হয়ে আছে।বলল এক বুড়ো। ওকে তো তুমি দেখেছ।ওর কুরআন পড়া শুনেই তো তুমি এদিকে এলে।ওর রূপ ও হয়তো দেখে থাকবেন তুমি। তুমি আমাদের সাথে থাকো।আর ওই মেয়েটাকে বিয়ে কর।বলল অপর বুড়ো। আমি ছাড়া আর কোনো মানুষ কি আপনারা পাননি?অন্য কোনো মানুষের কাছে কেন ওকে বিয়ে দেননি?নাকি আমিই আপনাদের কাছে আসা প্রথম পুরুষ ব্যক্তি। অনেক লোকই এসেছে।ওকে নিয়ে কাড়াকাড়িও হয়েছে বেশ। কিন্তু ওদের সবাই ব্যবসায়ী।মেয়েটাকে কিনে নিতে চাইলো।কে কার চেয়ে বেশি দিবে এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিবাদ ও হয়ে গেছে।আমরা একবার ব্যবসায়ীদের হাতে ওকে তুলে দেওয়ার চিন্তাও করেছিলাম। কিন্তু মেয়েটা বড়ই জেদী। এমন করলে সে আত্নহত্যা করবে হলে হুমকি দিলো।এরপর এ সিদ্ধান্ত বাদ দিলাম। সেই সময়ে অবাধে নারী কেনা বেচা হতো।ধনাঢ্য ও আমীর উমরা পছন্দ মতো নারীদের টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করে নিজেদের হেরেমে গুলজার করতো।ইরানী বেদুইন ও যাযাবর নারীদের অঙ্গসৌঠব ,রূপলাবণ্য, সৌন্দর্য কিংবদন্তিতুল্য।এ জন্য এ ধরনের যাযাবর গোত্রে নারীলোভীরা মেয়ের তালাশ করতো।মেয়ে কেনা বেচা বেদুইন ও যাযাবরদের কাছে দোষণীয় ছিলো না।অনেকটাই রেওয়াজে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। রীতিমত মানুষ কেনা বেচার হাট বসতো।ওসব হাটে সব ধরনের নারী পুরুষ কেনা বেচা হতো।যুবতী নারী ও বালক বালিকাদের সরবরাহ আসতো ডাকাতদের কাছ থেকে।ওরা মুসাফিরদের আক্রমন করে ধন সম্পদ ,ছোট ছেলে মেয়ে ও যুবতী মেয়েদের অপহরণ করে বাজারে এনে বিক্রি করে দিতো।এসব হাটে সুন্দরী যুবতী কিশোরীদের কদর ছিলো বেশি। অধিকাংশ আমীর ক্ষমতাবান লোকেরা সুন্দরী মেয়েদের চড়া দামে খরিদ করে নিজেদের হেরেমের শোভা বর্ধন করতো।শরিফ মেহমানদের মনোরঞ্জন,আপ্যায়ন ও নিজেদের সেবা যত্নের কাজে ,আত্নদৈহিক মনোরঞ্জনে ব্যবহার করা হতো এদের।ক্ষমতার মসনদে থাকা লোকদের কেও স্বার্থান্বেষী মহল সুন্দরী যুবতী উপঢৌকন দিতো। "কোনো যাযাবর বেদুইন মেয়ে বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এমন তো শুনিনি।আপনারা ওর কথা মেনে নিলেন কেনো?" ও এমন সব কথা বলে যে, আমাদের ভয় হয়।বলল এক বুড়ো। তুমি হয়তো জানো, আমাদের মতো ছন্নছাড়া লোকদের মধ্যে ধর্মকর্ম তেমন থাকে না। কোনো মানুষ যদি সুন্দরী মেয়েকে চড়া দামে বিক্রি করে দিতে পারে,নিজ স্ত্রীকেও বেশি টাকা পেয়ে তালাক দিতে পারে,তার আর ধর্ম থাকে! কিন্তু আমরা মুসলমান।ধর্মকর্ম ঠিকমতো পালন না করলেও খোদার ভয় তো আছে।আমরা কুরআন কিতাব ভয় করি।মরনের ও ভয় আছে।এই মেয়েটা কুরআন পড়ে।ও আমাদের বলেছে,সে নাকি সাদা শুভ্র দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখেছে।তিনি তাকে বলেছেন,"তুমি কখনো কোনো ব্যক্তির কেনা দাসী হবে না। তুমি বিয়ে করে কারো স্ত্রী হবে।তোমার পেটে এমন এক সন্তান জন্ম নেবে,যে পথ ভোলা বিভ্রান্ত মানুষকে ধর্মের সঠিক পথ দেখাবে।দুঃখী মানুষের সেবা করবে। "ও কি প্রায়ই এমন স্বপ্ন দেখে?" আমিও মাঝে মাঝে এ ধরনের স্বপ্ন দেখি।বলল আল হাকাম। দুই চাঁদ আগের ঘটনা।আমরা মেয়েটিকে বিক্রি করে দিয়েছিলাম।ক্রেতার হাতে পুরো দাম ছিলো না।আমরা মেয়েটির বিনিময়ে স্বর্ণমুদ্রা দাবী করেছিলাম।বিক্রির কথা শুনে মেয়েটি বলল আমি পালিয়ে যাব। ওর পালানোর কথা শুনে রাতে ওর তাঁবুর বাইরে দুজনকে পাহারা দিতে বললাম।ওর পালানোর পথ আটকে দেয়ার কথা শুনে বলল, "আমার উদর থেকে কোনো হারামজাদার জন্ম হবে না।জীবন থাকতে আমি তা হতে দেবো না।আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।" মধ্যে রাতে মেঘের গর্জনে আমাদের ঘুম ভাঙ্গল। প্রচন্ড ঝড় আর ভারী বর্ষণে আমাদের তাবু লন্ডভন্ড হয়ে গেল।বিজলী আর আকাশের ভয়ঙ্কর গর্জনে আমরা ভরকে গেলাম। হঠাৎ করে বিজলী থেমে গিয়ে ঘন অন্ধকার নেমে এলো।আমরা নিজের হাতটাও ঠাহর করতে পারছিলাম না।ভয়ে আতঙ্কে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে নারী শিশু চিৎকার জুড়ে দিলো।কোলের বাচ্চাগুলোকে বড়রা বুকে চেপে ধরে জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু আকাশের বিকট গর্জন আর ঝড়ের তান্ডবে বড়রাও ভয়ে কাপছিলো।বিজলির একেকটা ঝলকানিতে মৃত্যুর সাক্ষাত পাচ্ছিলাম আমরা।অথচ এই মেয়েটি ছিলো সম্পূর্ণ নির্বিকার নিরুদ্বিগ্ন।আমরা তখন জীবন বাঁচানোর কোনো অবলম্বন পাচ্ছিলাম না,তখন সে একটি তাবু ধরে অবিচল বসে ছিলো।এমন সময় একটি গাছের ডাল এসে আমাদের সামনে পড়লো। মৃত্যুর আশঙ্কায় সবাই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো।একে অপরকে জরিয়ে ধরে মরণ থেকে লুকাতে চাচ্ছিলো। কিন্তু এই মেয়েটি নির্ভয়ে চিৎকার করে বলছিলো, "কেউ আজান দাও আর বাকীরা যে যেখানে আছো লুটিয়ে পড়।আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো।" তিনজন ওর কথা মতো আজান দিতে শুরু করলো।বাকীরা প্রলয়ঙ্কারী ঝড় বৃষ্টিতে কাদা মাটির মধ্যেই সে জায়গায় লুটিয়ে পড়লো। অনেকক্ষণ পর তুফান থামলো।এর চেয়েও তীব্র তুফানের মুখোমুখি আমরা হয়েছি কিন্তু এমন আতঙ্কিত কখনো হইনি।মাথার উপরে আসমান পায়ের নিচে মাটি এইতো আমাদের ঠিকানা।আসমান তার অফুরন্ত নেয়ামত নিয়ে আমাদের প্রাণ বাঁচাতে সহায়তা করে আবার কখনো আমাদের ওপর দুর্ভোগ ও চাপিয়ে দেয়।আসমান জমিনের আপতিত এসব সুখ দুঃখ মিলিয়েই আমরা বেঁচে আছি।এসবে কখনো ভীত হইনা। কিন্তু ওই রাতের ঝড় বৃষ্টি ছিলো ভয়ঙ্কর।আর তার চিত্র ছিলো ভয়াল।আমরা ওই ঝড়কে ওই মেয়ের অভিশাপ মনে করেছিলাম। রাত পোহালো।সবাই তখনো কাঁপছে।ভয়ে আতঙ্কে সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়েছে।কারো মুখে রা করার হিম্মতটুকু ছিলো না। *এই মেয়েটি আমাদের চোখ উল্টিয়ে উল্টিয়ে ভর্ৎসনার দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটু দূরে সরে গেল।আমরাও লজ্জায় ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না।ওর হুঁশিয়ারী আমাদের কানে বাজছিলো: "আমার উদরে কখনো হারাম সন্তান আসবেনা,এর অপচেষ্টা করলে তোমরা সব ধ্বংস হয়ে যাবে।" তখন ও সে কুরআন শরীফ বুকে চেপে রেখেছিলো আর অনুচ্চস্বরে কি যেন পড়ছিলো...। আমরা ছেড়াফাড়া তাবু গুলো আর বিক্ষিপ্ত জিনিসপত্র একত্র করে শুকানোর ব্যবস্থা করলাম।বেলা চড়লে দুই অশ্বারোহী এসে হাজির হলো।তারা আমাদের প্রত্যাশিত স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে এলো।মুদ্রা ভর্তি দলে আমাদের পায়ের কাছে ছুড়ে মেরে বলল,"এই দিনার গুলো নাও,আর মেয়েটিকে আমাদের হাতে তুলে দাও।" আমি থলেটি তুলে এক অশ্বারোহীর হাতে দিয়ে বললাম,"তোমরা দিনার নিয়ে চলে যাও,আমি মেয়ে দিতে পারবোনা।" অপর আরোহী আরো দুটি দিনার আমার পায়ের কাছে ছুড়ে বলল, আরো চাইলে বলো।যা চাও তাই দিবো। তবুও মেয়েটিকে আমাদের দিতেই হবে। কিন্তু মেয়েকে তাদের হাতে না দিয়ে ফিরিয়ে দিলাম। "ও কার মেয়ে?" "মেয়েটি আমার ভাতিজী,এতিম।" বলল শ্বেতশ্মশ্রুধারী বুড়ো। আল হাকাম দুহাত দেখিয়ে বলল,আমার হাত খালি ।মেয়ের দাম দেওয়ার মতো কিছুই নাই আমার হাতে।আপনারা কি আল্লাহর ওয়াস্তে বিনা দামে আমাকে মেয়ে দেবেন? আমাদের সাথে তোমাকে থাকতে হবে।প্রতি রাতেই ডাকাতের আক্রমণাশঙ্কা থাকে। তুমি থাকলে পুরুষের সংখ্যা বাড়বে। পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকলে ভয় কম থাকে।এই যে এটাকে যে কতো লুকিয়ে ছাপিয়ে এ পর্যন্ত রেখেছি তা বলে শেষ করা যাবে না।ভারী গলায় বলল পক্বকেশী বুড়ো। বুড়োর প্রস্তাবে সম্মত হলো আল হাকাম।সেই মেয়েটির সাথে বিয়ে হয়ে গেল আল হাকামের। বেদুইন যাযাবরদের বিয়ে। কোনো আয়োজন প্রস্তুতি নেই। বড়দের সিদ্ধান্ত আর পাত্রের আগ্রহ এই যথেষ্ট। অধিকাংশ যাযাবর মেয়েদের সতিচ্ছেদ ঘটে বিয়ে ছাড়াই।হয়তো ডাকাতের হাতে,না হয় কোনো বেশি দামের ক্রেতার শয্যায়।বিবাহকালীন ধুমধাম ও খাবার আয়োজন ও ওদের সমাজে নেই। "আমার জীবন ও স্বাধীনতার বিনিময়ে তোমাকে পেলাম।তোমাকে দাসী করার পর বন্ধ করে নিজের গোলাম হয়ে গেলাম।" প্রথম রাতেই স্ত্রীকে বলল আল হাকাম। "আমি বন্দীদশায় থাকার মানুষ নই।তোমার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গেছি একথাও ঠিক নয়।তোমার চাচা তোমার আদি অন্ত সব শুনিয়ে তোমাকে বিয়ে করে এখানে থাকতে অনুরোধ করলো। তাৎক্ষণিক তোমার উজ্জত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি মমত্ববোধ আমাকে রাজী হতে বাধ্য করেছে।যদি কখনো এখান থেকে চলে যেতে চাই, তুমি আমার সাথে যাবে?" "আমি আল্লাহর নামে আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি।আমার জীবন মরণ আপনার হাতে।এরা আর আমাকে বন্দী করে রাখতে পারবেনা।আপনাকে প্রথম দেখাতেই আমার মনে বলছিলো,এই লোক যদি তোমাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে গ্রহণ করতে পারো।" শুনেছি,এক শ্বেতশুভ্র শ্মশ্রুধারী লোক নাকি তোমাকে স্বপ্নে বলছিলো যে,এমন এক সন্তান তুমি জন্ম দিবে যে পথভোলা মানুষকে আল্লাহর পথের দিশা দিবে। "সে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।বললো,এটা আমার আকাঙ্ক্ষা ছিলো। আকাঙ্ক্ষাটা এমনভাবে আমার মধ্যে শিকড় গেরেছিলো যে,আমি নিজের কানে শুনতে পেতাম," তোমার কোলে এমন এক শিশু জন্ম নেবে যে সত্যের পথে এতো খ্যাতি অর্জন করবে পৃথিবীর মানুষ তাকে চিরকাল স্বরণ রাখবে।" তুমি জানো না? হতো দরিদ্র ঘরের সন্তানেরা মিথ্যা বিনাশী হয় না।পেট পুজারীই হয়ে থাকে।এটা তোমার অলীক আকাঙ্ক্ষা।এই অসম্ভব কল্পনা ছেড়ে নিজের সত্য পথের উপর থাকো এটাই যথেষ্ট। আমাদের সন্তান আমাদের মতোই যাযাবর হবে।নয়তো কোনো আমীরের ঘরের নোংরা কাজের চাকর হবে। "আমি কি এমন অসম্ভব কল্পনা করেছি?আমার এই কল্পনা কি অসম্ভব।" "মে আকাঙ্ক্ষা অসম্ভব।তা কল্পনা হয়ে মানুষের মনে সুখ দেয়।"বলল আল হাকাম। "সেদিন আপনি আমার ভুল শুধরে দেওয়ার জন্য এসেছিলেন।আপনি আমাকে আয়াতের তরজমায় বলেছিলেন, ইব্রাহিম আঃ তার পিতাকে বলেছিলেন,আপনি কেন মুর্তিপুজা করেন? যেগুলো কিছু শোনে না,বলতে পারে না,করতে পারে না,আপনি আমার সাথে আসুন,আমি আপনাকে সত্য পথ দেখাবো।" এই কথাগুলো আমার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল।এরপর আমি কুরআন পড়তে বসলে আমার কানে শুধু এ কথাই বাজে_তুমি এক ইব্রাহিমকে জন্ম দিবে।আমি রাতে নূরানী চেহারার এক সৌম্য কান্তিময় ব্যক্তিকে দেখেছি ,তিনি আপনার মতোই সেই ভুল শুধরে সেই আয়াতটিই পড়াচ্ছিলেন।তিনি বলছিলেন,সুন্দর ফুটফুটে অথচ নির্বোধ সন্তান হলে বেশি খুশি হবে না কদাকার কিন্তু বুদ্ধিমান সন্তান পেলে সুখী হবে ? আমি তখন সেই বুযুর্গ ব্যক্তিকে বলেছি,আমি ইব্রাহিমের মতো এমন এক সত্যের বাহক সন্তান চাই যার পিতা বিপথে থাকলে পিতাকে ত্যাগ করতে দ্বিধা করবে না।আর মেয়ে হলে যেন এমন কদাকার হয় যেন, কোনো ডাকাতের দৃষ্টি ওর প্রতি না পড়ে,কেউ ওকে কিনে নিতে না চায়। "তোমার মধ্যে তোমার গোত্রের রীতিনীতি বিরোধী স্বভাব কি করে এলো? যাযাবরদের মেয়েরা তো বিক্রি হতে অপছন্দ করে না।" "জানি না, আমার মধ্যে কীভাবে এ আকাঙ্ক্ষা জন্ম নিলো যে,"তুমি বিয়ে করে একজন পুরুষের স্ত্রী হিসেবে থাকবে।" এ কথা আমাকে কেউ শিখিয়ে দেয় নি। আমার কল্পনাই আমার কানে বাজতো।হৃদয়ের এ কথা শুনতে শুনতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হলো , আমার আকাঙ্ক্ষা সফল হবে।" "তোমার অনাগত সন্তান বড় হয়ে বিখ্যাত হবে এ অলীক কল্পনা মন থেকে দূর করো।এ স্বপ্ন তোমার মাথা খারাপ করে ফেলবে।" বলল আল হাকাম। বংশ ধ্বংসের ভয় ও রাতে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি, আকাশের গর্জন কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে। কিন্তু দুই অশ্বারোহী দিনার ভর্তি থলে নিয়ে এসে ঠিকই কিশোরীর জন্য সাক্ষাৎ আপদ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিলো।আকষ্মিক এই ঝড় বৃষ্টি, আকাশের গর্জন অসহায় অবলা এক কিশোরীর সম্পর্ক থাকুক না থাকুক কিশোরীর মান রক্ষায় এগুলো বেশ কাজ করেছে।আল হাকাম বাস্তববাদী মানুষ।সে এগুলোকে অলৌকিক কিছু মনে করেনি,ভিত্তিহীন ও ভাবেনি।তবে ,যে বিষয়টি মনে নাড়া দিয়েছে তা হলো,এ কিশোরী সত্যিকার অর্থে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র মনের অধিকারিণী।ওর দৈহিক রুপ লাবণ্যের চেয়ে ও আত্নীক সৌন্দর্য অনেক বেশি। বিয়ে করে আর হাকাম ও যাযাবরদের সাথে মিশে গেল।কেটে গেল অনেক দিন।দু'বছরের মাথায় তাদের একটি ছেলে জন্ম নিলো।আল হাকাম ছেলের নাম রাখলো "সবুক্তগীন" । ছেলে ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার স্ত্রীর স্বপ্ন আরো দৃঢ় হলো।তার বিশ্বাস,এই ছেলে বিখ্যাত হবে।আল হাকাম তার স্ত্রীর কথা শুনে সময় সময় হাসতো।একদিন স্ত্রী আল হাকামকে জিজ্ঞেস করলো, "এই ছিন্নমূল যাযাবর জীবন কি এখন আর বিরক্তিকর লাগে না?" "আমার মধ্যে এ জীবন নিয়ে এখন আর কোনো অসস্থি নেই। কিন্তু আমার ছেলেকে আমি এই জংলী জীবন থেকে দূরে নিয়ে যাবো।জীবন নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো কি কোনো সভ্য মানুষের জীবন হতে পারে?" বলল আল হাকাম। "আমার বিশ্বাস ছিলো।এ আশাও এখন আমার পূর্ণ হবে যে,আমার কোলের সন্তান লেখাপড়া শেখার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারবে।অবশ্য আমি তোমার মতো দুনিয়ার কোথায় কি আছে জানি নি।" বলল হাকামের স্ত্রী। "কোনো আমীর শরীফ লোকের ঘরে মজদুরী তো মিলতেই পারে। আল্লাহর জগত তো আর ছোট্ট নয়।যে আল্লাহ আমাকে বাচ্চা দিয়েছেন।তিনিই তার রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।" বলল আল হাকাম। "লুকিয়ে ছাপিয়ে আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে।"বলল আল হাকামের স্ত্রী। এই গোত্রের লোকেরা তোমাকে এমনি মেতে দেবে না।কারণ, তুমি টাকা ছাড়া বিয়ে করেছ।আর তোমাকে পেয়ে ওদের শক্তি বেড়েছিলো অনেক।আমি তোমাকে একটা ফন্দির কথা বলি,"আগামীকাল আমরা লাকড়ী কুড়াতে গিয়ে আর ফিরে আসবো না।" স্ত্রীর কথামতো পরদিন তারা গোত্রের অন্যদের মতো কাঠ কুড়ানোর কথা বলে ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।ছেলের বয়স তখন ছয়মাস মাত্র। দুপুর গড়িয়ে গেল।তখন ও তাদের তাঁবুতে ফেরার নাম নাই।বুড়োদের সন্দেহ হলো।শক্ত সামর্থ্য দুটি ঘোড়া নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো তাদের খোঁজে।বুড়োদের সন্দেহ ছিলো বিবিধ।আল হাকামের পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তো ছিলোই।তার ওপরে ছিলো ওই সুন্দরী যুবতী অপহরণের শিকার হওয়া।তারা আশঙ্কা করছিলো,না জানি কোন ডাকাতের পাল্লায় পড়লো কি না তারা।দৈবাৎ এক পথিক সন্ধানী অশ্বারোহীদের বলল,এক যুবক সুন্দরী যুবতী ও এক শিশুকে নিয়ে সে নদীর দিকে যেতে দেখেছে। সন্ধানকারীরা পথিকের কথামতো ওইদিকেই ঘোড়া হাঁকিয়ে দিলো। তাদের সন্দেহ ছিলো,আল হাকাম হয়তো তাদের মেয়েটিকে নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করছে।আল হাকাম ও তার স্ত্রী হেঁটে যাচ্ছিল।পথ ছিলো অসমতল এবড়ো থেবড়ো।তারা যে পথে যাচ্ছিলো তার পাশেই ছিলো নদী। হঠাৎ পিছনে থেকে ঘোড়ার আওয়াজ শোনা গেল।পিছনে ফিরে দেখলো দুই অশ্বারোহী তাদের দিকেই আসছে।একটু অগ্রসর হলে আর হাকাম তাদের চিনে ফেললো।আরোহীরা খাপ থেকে তলোয়ার বের করে আক্রমণোদ্যত হয়ে অগ্রসর হচ্ছিলো।আল হাকাম নিরস্ত্র ছিলো।এটা ছিলো আল হাকামের মারাত্মক ভুল যে সে অস্ত্র সাথে রাখেনি।সে কিংকর্তব্যবিমূঢ়।হতাশার দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকালো। "নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়।" বলল তার স্ত্রী। "অনেক গভীর তীব্র স্রোত।ওরা তো ঘোড়া নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেবে।"বলল আল হাকাম। "আমি তোমাকে বলছি, তুমি নদীতে ঝাঁপ দাও!বাচ্চাকে তুমি বাঁচাও ,ওকে ছাড়া আমি সাঁতরাতে পারবো।" স্ত্রী কথাগুলো এমন দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলল যেন সে আল্লাহর নির্দেশে বলছে। "বেশি কিছু চিন্তা ভাবনার অবকাশ ছিলো না।আল হাকাম স্ত্রীর কোল থেকে সবুক্তগীনকে নিয়ে এক হাতে ওকে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিলো।এক হাতে সাঁতরাচ্ছিলো আল হাকাম।স্ত্রী তার সাথে সাথেই নদীতে ওর পাশাপাশি থাকার চেষ্টা করছিলো।নদী ওই দিকেই প্রবাহিত হচ্ছিলো যেই দিকে যাত্রা করেছিলো ওরা। সন্ধানী অশ্বারোহীরা ওদের নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখে তীরে ঘোড়া থামালো এবং চিৎকার করে ওদের হুঁশিয়ার করলো। কিন্তু ততক্ষণে ওরা নদীর মাঝামাঝি চলে গেছে।ভাগ্যক্রমে ওপারে নদীর গভীরতা কম ছিলো।এক পা আর এক হাতে সাঁতরাতে সাঁতরাতে অবশ হয়ে আসছিলো আল হাকামের হাত পা। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে সে নিজেকে ও শিশুকে ভাসিয়ে রাখছিলো।এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হলো যে আল হাকাম আর সাঁতরাতে পারছিলো না।তার পা সোজা পানির তলদেশে তলিয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু সে প্রাণপনে বাচ্চাকে উর্ধ্বে তুলে রাখতে শরীরের শেষ শক্তিটুকু প্রয়োগ করলেও বাচ্চা আর নিজের জীবনের আশঙ্কা দেখা দিলো।প্রায় তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো আল হাকাম। হঠাৎ তার পা মাটি স্পর্শ করলো।সে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।শোকর আল্লাহর।নদীর কূল যেন তাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলো।গলা পানিতে দাঁড়িয়ে স্ত্রীকে দেখলো সে।এখনো অনেক দূরে।তলিয়ে যাচ্ছে,আবার হাত পা ছুড়ে এগোতে চাচ্ছে। চিৎকার করে বললো আল হাকাম, দাঁড়িয়ে তাও ওখানে, ওখানে পানি কম। কিন্তু ওর কানে যাচ্ছিলো না সেই ডাক।আল হাকাম ও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না। স্রোতের তীব্রতায় দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব।আল হাকাম তবুও আগালো স্ত্রীর দিকে। ধরে ফেলল ওর চুল।টান দিয়ে সোজা করতেই স্ত্রীর পা মাটি স্পর্শ করলো।সেও দাঁড়ালো।স্বপ্ন দেখার মতো তাকালো বাচ্চা ও হাকামের দিকে।যেন মরতে মরতে বেঁচে গেল।মুখে কোনো কথা উচ্চারণ করা সম্ভব হলো না।নদীর এপারে বসে গেছে তারা।এখন আর পাকড়াও হবার ভয় নাই।পানি থেকে তীরে এসে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো স্ত্রী।আল হাকাম ও ছেলেটিকে কোলে শুইয়ে দিয়ে পা ছড়িয়ে বসলো।ক্লান্ত, ভীষণ ক্লান্ত উভয়ে।শরীরে হাঁটার মতো শক্তি ওদের নেই। অনেকক্ষণ বিশ্রাম করে তীর থেকে অদূরে শহরের দিকে তারা অগ্রসর হলো।পৌঁছল শহরে।এখানকার লোকগুলো তাদের দিকে তাকাচ্ছিলো চিড়িয়াখানার আজব চিড়িয়া দেখার মতো।বেশভূষায় এরা এ শহরে নবাগত,তাই দেখছিলো সবাই।অনুন্নত কাপড়ে আচ্ছাদিত আর হাকামের স্ত্রী।তার রুপই ছিলো তাদের দৃষ্টি কাড়ার প্রধান কারণ। স্বামী-স্ত্রী হাটছিলো লক্ষ্যহীন গন্তব্যে।গলির যুবক পুরুষেরা রুপসী এই যুবতী ও শিশুসহ আল হাকামের দিকে তাকিয়ে ইর্ষান্বিত হচ্ছিলো ক্ষণিকেই।চোখ ফেরাতে পারছিলো না আল হাকামের স্ত্রী থেকে অনেক কামুক পুরুষ। আল হাকামের স্ত্রী রুপ তাৎক্ষণিক তাদের ফায়দা দিলো।এক ধনাঢ্য ব্যক্তির আস্তাবলের নওকরী পেয়ে গেল আল হাকাম।আস্তাবলের পাশেই এক ঝুপরিতে থাকতে দিলো তাদের।স্ত্রী ঝুপড়িতেই কোলের ছেলে নিয়ে সংসারের গোড়াপত্তন করলো। বেশিদিন আর ঝুপড়িতে থাকা হলো না আল হাকাম পত্নীর।ডাক এলো মহল থেকে।তাকে নিয়োগ দেওয়া হলো মহলের পরিচারিকার পদে। পরদিন যখন আমীরের মহলে হাকামের স্ত্রী কাজের জন্য উপস্থিত হলো ,তাকে এগিয়ে এসে নিয়ে গেল বয়স্কা মহিলা। মহিলা তাকে গোছল করালো এবং খুব দামী জরিদার শাহী জামা পড়িয়ে দিলো।জামার নকশাই বলে দেয় এটা মামুলি পরিধেয় বস্ত্র নয়।এটা এমন ভাবে ডিজাইন করা আর কাপড় এতো পাতলা যে,শরীরের ভাঁজগুলো দেখা যায়।হাত ,বাজু ,গলা ,বুকের অর্ধাংশ খোলা থাকে।হাকাম পত্নীর এসব কাপড় পড়তে ভালো লাগছিলো না।যাযাবর হলেও শরীর ঢেকে রাখতে অভ্যস্থ ছিলো হাকামের স্ত্রী। মহিলাটি তাকে বোঝালো, আমাদের মালিক নোংরামি পছন্দ করেন না,তিনি পরিপাটি দেখতে অভ্যস্ত।এগুলোতে সেজে থাকলে তোমাকে দেখে খুশি হবেন।কাপড় গায়ে জরিয়ে তাকে একটি আরশীর সামনে নেয়া হলো।আরশীতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই নিজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেল।নিজেকে শাহজাদী মনে হতে লাগলো।তার চুল আঁচড়ে দেয়া হলো,ছড়িয়ে দেয়া হলো পিঠের ওপর।মহিলা তার সারা শরীরে মন মাতানো সুগন্ধি ছিটিয়ে দিলো। নতুন এই সাজে আল হাকামের স্ত্রীকে পরীর মতো মনে হচ্ছিল। দেরী না করে মহিলা তাকে নিয়ে গেল মনিবের সামনে।বিশাল এক সুসজ্জিত ঘর।মেঝেতে কার্পেটে,সাজানো ঘর, ঝলমলে আলো দেখেনি জীবনে যাযাবর যুবতী।আমীর উমরার জীবনের গল্পই তা শুনেছে জীবনে। আল হাকামের স্ত্রীকে দেখে আমীরের দৃষ্টি ওর শরীরেই আটকে রইলো।ভূতে পাওয়ার মতো ওর দিকে তাকিয়ে রইল দীর্ঘক্ষণ। জ্বলজ্বল করে উঠলো তার চোখ। নেশাগ্রস্তের মতো কন্ঠে মহিলাকে বলল, তুমি যাও!মহিলা চলে গেল। আমীর আল হাকামের স্ত্রীকে কাছে ডাকলো।বসতে বলল। কিন্তু যুবতী বসল না।আমীর দাড়িয়ে তার দুই বাজু ধরে নিজের দিকে আকৃষ্ট করলো। কিন্তু যুবতী মোচড় দিয়ে দূরে সরে গেল।তার বুঝতে বাকী রইল না।পরিচারিকা কাজের কথা বলে আসলে তাকে কেন আমীরের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। শুনেছি তুমি যাযাবর মেয়ে।এখন তো দেখছি তুমি নিজেকে শাহজাদী মনে করছো।দেখ আমি তোমার ওপর কোনো হুকুম চালাবো না।তোমাকে উপযুক্ত এনাম দিবো।আমার হেরেমে শাহজাদী হয়ে থাকবে। একথা শুনে যুবতী দরজার কাছে সরে গেল। আমীরের চেহারা আগুনের মতো লাল হয়ে উঠলো। "আমি সোনার দিনার ভর্তি থলেতে লাথি মেরে এখানে ফেরার হয়েছি।নিজেকে নিলামে বিক্রি করতে ইচ্ছুক নই।তা না হলে বিয়ে করে স্বামী নিয়ে কেন নদী সাঁতরে পালিয়ে এসেছি নিজের গোত্র ছেড়ে।আমার স্বামীকে তোমার দশ মেয়ে দিলেও আমি তোমার কাছে যেতে পারবো না। "স্বামী থেকে হাত ধুয়ে ফেললো লাড়কি। বাচ্চার মমত্ব ও ভুলে যাও।এসো, আমার কাছে এসো।" তুফানের মতো দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে আসলো আল হাকামের স্ত্রী।সোজা চলে গেল সেই ঘরে যেখানে তার পরিধেয় কাপড়গুলো ফেলে এসেছিলো। রাগে গর্জে উঠলো আমীর।ডাকলো বয়স্ক মহিলাকে।দৌড়ে এলো বয়স্ক মহিলা,আরো এক সেবিকা ও হেরেমের দুজন নারী।তারা মনিবের রাগত্ব চেহারা দেখে হতভম্ব। "হারামজাদী,শরমালে ভিন্ন কথা ছিলো। কিন্তু ও আমাকে অপমান করে বেড়িয়ে গেল।" আমরা ওকে চুল ধরে নিয়ে আসছি।বলল এক খাদেমা। না, এই যাযাবর ভিখারীনিকে আমি এমন শাস্তি দেবো যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বহুদিন।আমীর দুজন বিশেষ প্রহরীকে ঢেকে বলল,"আমার আস্তাবলের পাশের ঝুপড়িতে যে হতোভাগা থাকে ওকে আজ রাতে হত্যা করে ওর স্ত্রীকে আমার কাছে নিয়ে আসবে,আর ওর কোলের বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেবে। হেরেমের মেয়েরা পরস্পর চোখাচোখি করলো।উভয়েই নির্বিকার।মনিব ক্ষোভে জ্বলছে। "কোনো শাহজাদী হলে না হয় এমন দেমাগ সহ্য করা যেতো।হতভাগী এক যাযাবর ভিখারিনীর এতো স্পর্ধা? যাও, সবাই এখান থেকে চলে যাও।" গভীর রাতে আল হাকামকে হত্যা করে তার স্ত্রীকে হত্যা করার চক্রান্ত করা হলো।বেলা অস্ত যাওয়ার পর আর হাকাম তার ঝুপড়িতে এলো।স্ত্রী নিজের কাপড়েই।আমীরের রক্ষিতা যে পোশাক পরিয়েছিলো তা খুলে ছুড়ে ফেলে এসেছিলো সে। ভাবছিলো,আজকে তার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চক্রান্তের কথা তার স্বামীকে বলবে কি না। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত সে নিয়ে ফেলেছে,আর এক মুহূর্ত ও এখানে থাকবেনা।স্বামীকে নানাভাবে সে এখানে না থাকার বিষয়টা বোঝাতে পেরেছিল। কিন্তু ঘূর্ণাক্ষরেও তার এই বিষয়টি জানা ছিলো না যে,আজই সে স্বামীকে জীবিত দেখছে,তার কলিজার টুকরা সন্তানকে তার কাছে থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছে,তার ইজ্জত সম্মান লুটে নেয়ার চক্রান্ত পাকা হয়েছে। সে স্বামীর সাথে যাবতীয় কথা শেষ করে তার সামনে খানা পরিবেশন করলো। ঠিক এ সময়ে ঝুপরিতে এক অপরিচিতা মেয়ে প্রবেশ করলো।সে প্রবেশ করেই ঝুপরির দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,"তারাতাড়ি খানা শেষ করে ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে এখনই শহর ছেড়ে পালিয়ে যাও,কোথাও দাঁড়াবে না।" এই মহিলা ছিলো আমীরের বিশেষ আস্থাভাজন দুই রক্ষিতার একজন।সে আমীরের চিৎকার শুনে খাস কামরায় প্রবেশ করে আল হাকামকে হত্যা ও তার স্ত্রীকে অপহরণের চক্রান্ত শুনে ফেলেছিলো।সে আল হাকামের স্ত্রীকে এক ঝলক দেখেও ছিলো।নিষ্পাপ এই মেয়েটির সম্ভম ও তার নিরাপরাধ স্বামী সন্তানের জীবন বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নিলো সে।আরো একজনকে সাথে নিলো। নিজেদের দূরন্ত কৈশোরের কথা মনে পড়ল ওদের। তাদের ও স্বপ্ন ছিলো বিয়ে করে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের ঘর বাঁধবে। কিন্তু টাকার বিনিময়ে এই লম্পট আমীর তাদেরকে চার দেয়ালের ভেতর যৌনদাসীতে পরিণত করেছিলো। নিজেদের রূপ যৌবন ও তারুণ্যের বিনিময়ে ওরা ভোগ করছিলো বিলাসী জীবন।বিলাস উপকরণ ও ভোগ্য পণ্যের অভাব নেই এখানে। আমীরের হেরেমে ওরা দুজন নিজেদের ধূর্তামি ,চাতুরীপনা ও কূটকৌশলে আমীরের নষ্ট জগতকে আরো সমৃদ্ধ করেছিলো।নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিলো আমীরের ঘনিষ্ঠজন ও আস্থাভাজনরুপে।নিজেদের ধর্মীয় জীবন ও নারীত্বকে বিলিয়ে দিয়েছে ওরা। হেরেমের চক্রান্ত আর কূটচালে ওরা সিদ্ধহস্ত।স্বয়ং আমীর ছিলো তাদের হাতের পুতুল। কিন্তু নারীত্বের ঐশ্বরিক চেতনা আর  স্বামীর সংসার নিয়ে সুখময় জীবনের স্বপ্নটা যে মাঝে মাঝে তাদের কাঁদাতো না তা নয়। *মানুষের সহজাত পবিত্র সত্তাকে কখনো ছাইচাপা দিয়ে রাখা যায় না। ওরা তখন দেখলো,একটি নিরপরাধ যুবতী,দুগ্ধপোষ্য নিষ্পাপ সন্তান ও বিদেশ বিভূঁইয়ে অসহায় গরীব এক সৎ পুরুষ এক লম্পট আমীরের লাম্পট্যের শিকার হতে চলেছে ,তখন তাদের মধ্যে নিজেদের স্বপ্নময় যৌবনকে পঙ্কিলতায় ডুবিয়ে দেয়ার প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠলো। কিন্তু প্রতিশোধের ব্যবস্থা করতে না পারলেও তারা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলো , এদের জীবন বাচাবেই। আল্লাহ তায়ালা রহমতের ছায়া বিস্তার করে আল হাকামের স্ত্রীকে সকল কলঙ্ক থেকে পবিত্র রেখেছিলেন।হাজারো বিপদের পর ও এই যাযাবর মেয়েটির চরিত্রে সামান্যতম পাপের আঁচড় পরতে পারে নি।নিজেরা আকন্ঠ পাপে ডুবে থেকেও এই দু'মহিলাকে আল্লাহ তায়ালা আল হাকামের স্ত্রীর সম্ভম রক্ষার উসিলা বানিয়ে দিলেন।হয়তো এটা ছিলো আল হাকামের স্ত্রীর পবিত্রতার পুরষ্কার। "আমার পক্ষে বেশিক্ষণ এখানে থাকা সম্ভব নয়।আর এর চেয়ে বেশি কিছু বলার সম্ভব নয়। তুমি এখানে থেকে তারাতাড়ি পালিয়ে যাও এটাই আমার প্রত্যাশা।" এই বলে মহিলা বেড়িয়ে গেলো। ঘটনার আকস্মিকতায় বিস্ময়াবিষ্ট নেত্রে স্ত্রীর দিকে তাকালো আল হাকাম।দিনের বেলায় আমীরের বাড়িতে যা ঘটেছিলো স্বামীকে বলল হাকামের স্ত্রী।চিন্তায় পড়ে গেল আল হাকাম।কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।স্ত্রী তাকে তাড়া দিলো,ওঠো! আগে এখান থেকে বেড়িয়ে পড়ি। কিন্তু আল হাকামের মধ্যে পালানোর তারা নেই।সে বলল,এই মেয়ে লোকটি মনে হয় আমীর বাড়ির সেবিকা।কেন, আমাদের এখনই চলে যেতে বলল? আমি আমীরের সাথে দেখা করবো। কিন্তু স্ত্রী তাকে সাথে নিয়ে ঝুপড়ি ছেড়ে এক্ষুনি বেরিয়ে পড়তে দিল করলো।বলল,এখানে আর এক মুহূর্ত থাকাও নিরাপদ না। যে‌ ঘাতককে নির্দেশ করা হয়েছিল আল হাকামকে খুন আর স্ত্রীকে অপহরণ করতে ,তারা এখন মদের হাড়ি নিয়ে বেহিসেবে গিলছে। তাদের হাতে উন্নত হাতিয়ার। ছিন্নমূল এক হতদরিদ্রকে খুন করে তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে আসা এদের জন্য মামুলী ব্যাপার। সন্ধ্যার আগেই তারা ঝুপড়িটা ভালো করে পরখ করে এসেছিলো। কোনো বাধা বিপত্তি আইন কানুনের ভয় ছিলো না তাদের ।তারা এই ভেবে উৎফুল্ল ছিলো যে একটা পুরষ্কার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরা মদপান শেষ করে আল হাকামের বাড়ির দিকে রওনা  হলো।ঠাট্টা বিদ্রুপ,আনন্দ উল্লাস করে এরা আল হাকামের ঝুপড়ির কাছে গেলো।ঝুপড়ির দরজা বন্ধ ছিলো। একজন অপরজনকে বলল , তুমি মহিলাটাকে ধরে ফেলবে।আমি মরদটাকে সাইজ করবো। বন্ধ দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। ঘরের ভেতরটা অন্ধকার।ওরা গর্জে উঠলো। __"কে আছিস,বের হ"! কিন্তু নিস্তব্ধ। ওদের হুংকার ওদের কানেই ধ্বনিত হলো। অন্ধকার হাতরে খোঁজাখুঁজি করলো, কোনো মানুষ জন পেলো না।ঝুপড়ি ভুল হয়েছে ভেবে ওরা সেখান থেকে অন্য ঝুপড়ির খোঁজে বেরিয়ে গেলো। ততক্ষণে আল হাকাম স্ত্রী সন্তান নিয়ে শহরের বাইরে চলে এসেছে। "আমাদের জন্য আল্লাহর জমিন ও বুঝি সংকীর্ণ হয়ে গেছে।" হতাশ কন্ঠে বলল আল হাকাম। * "অধৈর্য হয়ো না সবুক্তগীনের বাপ। তুমি আমার কথা বিশ্বাস করো আর না করো, কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস।আমরা এমন কোনো পাপতো করিনি যে জন্য আমাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।আমার কোনো সন্দেহ নেই যে,কাঙ্ক্ষিত সন্তানকেই আমি ভূমিষ্ঠ করেছি তার ইশারা আমি পেয়েছিলাম।" "তুমি একটি বদ্ধ পাগল।তোমার জন্যই আমাদের এই শাস্তি।" ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলল আল হাকাম।সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসে লিপ্ত রয়েছ তুমি।বিরাট ওলী বুজুর্গ জন্ম দিয়ে ফেলেছ ,এই বিশ্বাস দেমাগ থেকে দূর না করলে কপালে দূর্ভোগ শেষ হবে না। কুরআন শরীফ কে তাবিজ মনে করো,না?তোমাকে বিয়ে করাটাই আমার ভুল হয়েছে।*গরীবের বউ অসুন্দর হলেই শান্তিতে থাকা যায়। এখন আমি তোমাকে পাহারা দেবো,না পেটের আহার যোগাবো?" *"আমার হেফাজত আমিই করবো।তোমাকে কিচ্ছু করতে হবে না। তুমি কুরআন পড়তে জানো,অর্থ বোঝ,এরপরেও মুখে এমন কথা কিভাবে  উচ্চারণ করো?" **স্ত্রীর জবাবে কোনো কথা বললো না আল হাকাম।রাগে ক্ষোভে ,নিঃশব্দে ভাগ্যের মুন্ডুপাত করছিলো আর হাকাম।ইসলাম ও আল্লাহর রহমত থেকে এখন সে নিরাশ। চল ফিরে যাই। কোথায়? তোমাদের কবিলায়।হয়তো ওখানে নয়তো আশেপাশেই পাওয়া যাবে তাদের।বলল হাকাম। *"ওখানে না গিয়ে বরং ঘোড়াওয়ালা মনিবের কাছেই চলো।আমার শরীর বিক্রি করে তোমাকে কাড়ি কাড়ি টাকা এনে দেবো। তুমি আরাম করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে খাবে আর আত্নপ্রসাদে মেতে থাকবে এই ভেবে, বউটা আমার সুযোগ্যই বটে! শুনি কোন ধাতের পুরুষ তুমি? দেখো আমি আমার ছেলেকে তোমার মতো কাপুরুষ হতে দেবো না।" ক্ষুদ্ধ  বাঘীনীর মতো ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল স্ত্রী। "আগে তোমার ছেলে বাঁচুক ,সেই দোয়া করো।তারপর না হয় শাহেনশাহ বানাবে।" তিরষ্কারের সুরে বলল আল হাকাম। "আমার ছেলে বেঁচে থাকবে।দেখো, একদিন ইব্রাহিমের মতো তোমাকে বলবে, আব্বু,আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি তোমাকে দেওয়া হয় নি‌। তুমি আমার হেদায়েত মতো চলো।আমি তোমাকে কামিয়াবীর পথ দেখাবো।" স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক ধরনের আদর্শিক লড়াই শুরু হয়ে গেল।পুরুষালী উদ্বেগ হতাশা আল হাকামকে কাবু করে ফেলেছিলো।সেই সাথে স্ত্রীর মধ্যে বিরাজ করছিলো নিজের স্বপ্নের প্রতি অবিচল আস্থা।স্বামীর বিরুপতায় ও স্বপ্ন পূরণের বিঘ্নতায় হতাশা তাকে বিব্রত করছিলো।ফলে, দুজনের দুই মেরুকরণে লাগামহীন হয়ে পরেছিলো ভাষা।পরস্পর বিপরীত মেরুকরণে লাগামহীন হয়ে পড়েছিলো তারা।এক পর্যায়ে চুপ হয়ে গেল আল হাকাম। সেই রাত থেকে আবার তারা যাযাবর জীবনে ফিরে আসে।ব্যতিক্রম এতোটুকু যে, আগে তারা থাকতো লোকালয় থেকে দূরে আর এখন থাকে লোকালয়ে। শহরের উপকণ্ঠে এখানে সেখানে। শহরের এটা ওটা করে পানাহার যোগাতে আল হাকামের তেমন কোনো বেগ পেতে হয় না।দিন কোনো মতে চলে যায়। দুই বছর এক শহরে থাকার পর আর হাকাম অন্য শহরে পারি জমালো।স্ত্রী তার কাছে বায়না ধরলো,এখন আর ভবঘুরের মতো এখানে ওখানে থাকা নয়।কোথাও স্থায়ী ডেড়া তোলো।ছেলেকে কোনো মসজিদে পড়তে দিতে হবে ।না হয় ওর ও আমাদের মতো এখানে ওখানে ঘুরে ঘুরে জীবন কাটাতে হবে। বছর খানিক আগেই আর হাকাম ছেলেকে কুরআন শরীফ পড়াতে শুরু করেছিলো।মা লক্ষ্য করেছিলো তার ছেলে অন্য যাযাবর শিশুদের থেকে ভিন্ন।সে অন্য শিশুদের থেকে আলাদা চরিত্রের। কেমন যেন গম্ভীর,ভাবুক,কথা বলে বুদ্ধিদীপ্ত।অন্য বাচ্চাদের মতো বাজে জিনিসের বায়না ধরে না, কোনো জিনিসের জন্য জেদাজেদী করে না।মা এও লক্ষ্য করেছে তার ছেলে পড়ালেখার প্রতি খুব মনোযোগী। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা তার পছন্দ। এক পর্যায়ে মায়ের সে আশা পূর্ণ হলো।আল হাকাম এখন মনস্থির করলো , এখানে কিছুদিন থাকবে।ছেলেকে নিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট গেলে ইমাম সাহেব ছেলেকে মক্তবে ভর্তি করে নিলেন।ছেলেকে ইমাম সাহেব ছাত্র হিসেবে গ্রহণ করায় আল হাকাম ও তার স্ত্রী ইমাম সাহেবের যথাসাধ্য সেবা যত্ন করতে লাগলো। প্রথম দিনের সবকে ইমাম সাহেব বুঝতে পারলেন ,এই ছেলে অন্য দশটি ছেলের থেকে ভিন্ন।একবারে প্রাথমিক স্তরের পড়া সে বাবা মায়ের কাছেই শিখে ফেলেছিলো।সাধারণত পাঁচ ছয় বছরের শিশুদের যে ধরনের জ্ঞান থাকে এ ছেলের তার চেয়েও বেশি মেধা ও প্রজ্ঞা তিনি দেখতে পেলেন।তাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বসিয়ে দিলেন।সেখানেও সে অন্যদের তুলনায় এমন কৃতিত্ব দেখালো যে,ইমাম সাহেব ভাবলেন এ বাচ্চা অসাধারণ,অনন্য। এখানে শিশু সবুক্তগীন প্রায় চার বছর লেখাপড়া করল। সবুক্তগীনের বয়স এখন দশ এগারো।এর মধ্যে সে কুরআন শরীফ তরজমা ও তাফসীরসহ পড়ে ফেলেছে।বেশ কয়েকটি হাদীসের কিতাব ও সে ইমাম সাহেবের তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে পড়েছে।সবুক্তগীনের জ্ঞান পিপাসা উস্তাদের জ্ঞান পিপাসাকেও ছাড়িয়ে যেতে চায়।উস্তাদের কাছে সে এমন এমন জটিল সমস্যা তুলে ধরে যেগুলোর সমাধান উস্তাদের ও হিমশিম খেতে হয়। এমন এমন জ্ঞানগর্ভ প্রশ্ন করে যা তাকে পেরেশান করে তোলে।উস্তাদ বুঝতে পারলেন যে,এর জ্ঞান পিপাসা মিটানোর জন্য একে নিজের কাছে না রেখে বড় জ্ঞানীর নিকট কিংবা বড় প্রতিষ্ঠানে পাঠানো দরকার।সবুক্তগীন একদিন উস্তাদকে প্রশ্ন করে,"উস্তাদজী ! আমল ছাড়া এলেম কি পূর্ণতা পায়? তরবারির জোরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পয়গাম প্রসার ঘটানো কি জায়েজ? আমি যদি সারা দুনিয়ায় কুরআন হাদীসের পয়গাম ছড়িয়ে দিতে চাই তবে,এর পদ্ধতি কিরুপ হওয়া উচিত।এ ধরনের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন  হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হতে লাগলেন সবুক্তগীনের উস্তাদ।শিষ্যের ভবিষ্যত নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। অনেক ভেবে চিন্তে একদিন আর হাকামকে ঠেকে তিনি বললেন, তুমি ছেলেকে বুখারা নিয়ে যাও।তিনি একজন বিজ্ঞ আলেমের ঠিকানা দিয়ে বললেন,তোমার ছেলের মধ্যে আমি এলেমের যে তৃষ্ণা দেখেছি ,তা নিবারণ করতে না পারলে ও পাগল হয়ে যাবে। শুধু জ্ঞান পিপাসা নয় ওর মধ্যে আমি বীরত্বের লক্ষণ দেখছি ,ওকে যদি সমর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই ছেলে একদিন বিখ্যাত হবে । বর্তমানে চতুর্দিকে যুদ্ধ বিগ্রহ চলছে।মুসলমান রাজা বাদশারা পারস্পরিক হানাহানিতে লিপ্ত রয়েছে।এই সুযোগে কাফের বেঈমানরা  মুসলমানদের বিচ্ছিন্ন করে গোলামে পরিণত করছে।এই ছেলে এসব নিয়ে গভীর চিন্তা করে। সাধারণত গরীবের ঘরে এমন মন মানসিকতার ছেলে মেয়ে জন্ম নেয় না।বড় কিছুর আশা করাও গরীবের সন্তানদের জন্য মানায় না।তবুও যদি ভাগ্য প্রসন্ন হয়,কোনো সুযোগ পায় তবে এই ছেলে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শাসন কায়েম করে শান্ত হবে। মুশকিল হলো, ওর মধ্যে দারুন নীতিবোধ কাজ করে।নীতি আদর্শের ওপর অটল থেকে জীবনে বড় কিছু করা সত্যিই কঠিন ,***তবে নীতিবানের দ্বারাই বড় কিছু করা সম্ভব***।সবুক্তগীন এমন এমন নীতি আদর্শের কথা বলে যা আমি কখনো তাকে বলিনি।হয়তো ওকে ওর জীবনে বহু ঝড় তুফান মোকাবেলা করতে হবে। "নীতি নৈতিকতার কথা ওকে আমি বলেছি"_ বলল আল হাকাম।আমার এলেম কালাম বেশি নাই।তবে আমি ন্যায়ের প্রতিক নওশেরোয়ার অধঃস্তন বংশধর।আমি বাপ দাদা ও মুরুব্বিদের কাছে যেসব ন্যায়নীতি ও ইনসাফের কথা শুনেছি,সে সব আমি ছেলেকে বলেছি।তাছাড়া বাড়িতে ওকে সারাক্ষণ কুরআন কিতাব পড়তে দেখেছি।কিতাবাদী থেকে ও সে আদর্শ বানী গুলো রপ্ত করেছে। "তুমি একে বুখারায় নিয়ে যাও।আমি একখানা চিঠি লিখে দিচ্ছি। ওখানে তোমার ভালো কর্মসংস্থান ও হয়ে যেতে পারে।আর হ্যা ,একা যেও না ।এই পথটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।পথে ডাকাত লুটেরাদের খুবই উৎপাত।**তোমার তেমন কোন সহায় সম্পদ না থাকলেও তোমার স্ত্রীই বড় রত্ন।এমন যেন না হয় যে,ও বিদূষী মহিলাকে জীবনের জন্য হারিয়ে ফেল।তাছাড়া এ ধরনের শিশু কিশোররা ও খুব বেশি অপহরণের শিকার হয়।কাজেই কোনো বনিক দলের সঙ্গী হবে।কিছুদিন অপেক্ষা করো,বড় কোনো কাফেলা ওই দিকে গেলে আমিই তোমাকে খবর দিবো।" বললেন মসজিদের ইমাম। ওই যুগে দূরের কোনো সফরে ডাকাত লুটেরাদের থেকে আত্নরক্ষার জন্য দল বেঁধে লোকজন সফর করতো।এক দুজনকে পেলেই ডাকাত লুটেরা দল সর্বস্ব লুটে নিতো।কখনো পুরো কাফেলা আক্রমন করতো ডাকাতেরা।অস্ত্রের মুখে ছেলে মেয়ে ও নারীদের অপহরণ করে গোলাম দাসী হিসেবে বাজারে বিক্রি করে দিতো। ➜যাদের দায়িত্ব ছিলো ডাকাত লুটেরাদের আক্রমন-অত্যাচার  থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান করা ,সেসব আমীর - উমরারা ডাকাতদের কাছে থেকে সুন্দরী মেয়ে ও ছোট শিশুদের দাস দাসী হিসেবে কিনে নিতো।এতে ডাকাত লুটেরারা উৎসাহ পেত।// ( এই জায়গাটুকু find out করেছি বা বেশ কিছু জায়গা find out করেছি ।তার কারণ হলো একটু খেয়াল করা ।এটা কিন্তু বর্তমান সময়ের সাথে একদমই মিলে যায়।হয়তো আমির উমরার কাছে বিশেষণ ব্যবহৃত হচ্ছে। দায়িত্বশীলগণ দায়িত্বে অবহেলা করা,নিজেদের কুস্বার্থ রক্ষা করা এটা বরাবরই ছিলো, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে হয়তো।তাই এদিক থেকে দুনিয়া এক ছটাকও বদলায়নি। ) ইমাম সাহেবের আশঙ্কা ছিলো যথার্থ।আল হাকামের স্ত্রী যেমন ছিলো সুন্দরী,তার ছেলে সবুক্তগীন তেমন ছিলো বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার অধিকারী।তার চেয়েও বড় কথা ইমাম সাহেব বুঝেছিলেন,এই ছেলের মা কোন সাধারণ যাযাবর মহিলা নন,তার মধ্যে অবশ্যই অসাধারণ গুণ আছে তা অন্য মহিলাদের নেই। ***ভালো মা ছাড়া এ ধরনের শিশু জন্ম নিতে পারে না। সবুক্তগীনের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই ইমাম সাহেব আর হাকামকে সর্তক করেছিলেন।ইমাম সাহেব বুঝেছিলেন ওর বাবার চেয়ে ওর মায়ের অবদান বিশেষ গুরুত্ব রাখে এক্ষেত্রে। চলবে ইনশাআল্লাহ... ( বিঃদ্রঃ প্লিজ, কেউ বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না।যদি কিছু বলার থাকেই। তবে, তা ধৈর্য্য সহকারে পুরো গল্প পড়ে তারপর বলবেন।আমি কাউকে হাট করার জন্য গল্পটা এখানে দেইনি। এটা একজন বিখ্যাত লেখকের লেখা। বিরুপ মন্তব্য করার আগে বিস্তারিত জানা জরুরী।)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৮১৯ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ভারত অভিযান (১ম খন্ড)
→ ভারত অভিযান (১ম খন্ড)
→ ভারত অভিযান (১ম খন্ড)
→ ভারত অভিযান (১ম খন্ড)
→ ভারত অভিযান (১ম খন্ড)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now