বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
আমি আরও একটু চুপ থেকে বললাম,
-আপনাদের বুয়াটাকে যদি একটু ধার দিতেন,তাহলে হয়তো কাজটা একটু সহজ হতো।
আমার কথায় মিসেস জামান কিছু বললেন না খুব একটা অবাক চোখেও তাকালেন না আমার দিকে।অবশ্য এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই।ধার চাওয়ার কারনটা যে ওনার বেশ ভালভাবেই জানা।তবে ওনার পাশে দাড়ানো বুয়ার মুখটা একটু কুচকে গেলো।ভদ্র মহিলাটা ঠোট বাকিয়ে বললেন,
-আমি পারুম না এসব,আমার আইজ ম্যালা কাম।
কথাটি বলে উনি আর দাড়ালেন না।রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ালেন।মিসেস জামান এখনও বেশ চুপচাপ।হয়তো এখানে ওনার বলার মত কিছু নেই,বা খুজে পাচ্ছেন না।আমি আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়াই।আমার সমাধান টা এখানে নেই।বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।মিসেস জামান আরও কিছুক্ষন চুপ থেকে বলেন,
-বাবা,তুমি বরং এই বুয়া ধার নেওয়ার চেয়ে তোমার নিজের জিনিসটাই নিয়ে যাও।এতে অন্তত বুয়ার রান্না আর খেতে হবে না।
মিসেস জামান।ওনার অবশ্য নিজস্ব একটা নাম আছে।শায়লা জামান।জামান সাহেবের একমাত্র স্ত্রী।আমি ভদ্রমহিলার কথায় কিছু বললাম না।ওনার কথাটা যে আমি বুঝিনি তেমন নয়।তবে এটা চাইলেও সম্ভব হচ্ছে না।আমি একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করলাম।ওনার দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে বললাম,
-আমার জিনিস!
মিসেস শায়লা আমার কথায় মুচকি হাসলেন।হাসতে হাসতে বললেন,
-কেন,আভা তোমার নয়?
ভদ্রমহিলার কথায় আমি লজ্জা পাই না।তবে এসময় লজ্জা পাওয়া উচিত।সে হিসেবে মুখে লজ্জা লজ্জা ভাবটা আনা জরুরী।আমি একটু চুপ থেকে লজ্জা মাখা মুখে বলি,
-ও হয়তো যাবে না,আমার সাথে।সেও বুয়ার মতই রাগ দেখাবে।মুখ বাকিয়ে বলবে, আমি কি বুয়া নাকি!এসব কাজ আমাকে দিয়ে নয়,মোটেই না।
আমার কথায় মিসেস জামান আবারও হাসে।তবে আগের বারের মত মুচকি হাসি নয়,এ হাসিতে শব্দ ভেসে আসে।উনি একটু থেমে বলেন,
-আচ্ছা বাবা,তোমার বাসায় আসবে ক জন?
-জ্বী,সাত আটজন হবে।
আমার কথায় মিসেস শায়লা একটু চুপ থেকে বললেন,
-তুমি চাইলে আমি নিজেই রান্না করে দিতে পারি।
ওনার কথায় আমার ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলেও তা খুব একটা দেখাতে পারলাম না।দু দিন পর যে ভদ্রমহিলাটা আমার শ্বাশুড়ি আম্মা হবেন তাকে দিয়ে অন্তত আর যাই হোক রান্না করানোটা এখন মোটেই উচিত হবে না।আমি কিছুটা চুপ থেকে ওনার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলি,
-ধন্যবাদ।তবে এটা হয়তো উচিত হবে না।আমি বরং বিকল্প কিছু ভাবি।
কথাটি বলে আমি আর দাড়াই না।রুম থেকে বের হয়ে সিড়ির দিকে আসি।এসময় এই সিড়ি দিয়ে নামার ইচ্ছেটাও যেন হারিয়ে গেছে।আমি দাড়াই। সিড়ির কোনায়।
.
সিড়িটা আজ বেশ চকচকে লাগছে।মনে হচ্ছে সদ্য পরিষ্কার করা হয়েছে।যেটাতে আর দাগ লেগে নেই।কিন্তু আমার চিন্তায় আবার নতুন করে দাগ লেগে যায়।জামান সাহেবের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ আগের।পুরোনো অফিসে আমার উপরের চেয়ারে ছিলেন।সেই সুবাদেই পরিচয়।
আভা।জামান সাহেবের একমাত্র মেয়ে।আভার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয় আরও মাস তিনেক আগে।তারপরই আগের বাসা ছেড়ে এই বাসাতে ওঠা।আমি দ্বিতীয় তলায়, আভাদের ফ্লাট তৃতীয় তলা।আমি আরও কিছুটা দাড়িয়ে থেকে নিচের দিকে নামতে থাকি। অফিসে আমার প্রমোশন হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে।সে হিসেবে কলিগদের চাওয়া তাদের ভোজন করাতে হবে।সুন্দর কথা।আমি হাসিমাথা মুখে বলি,
-অবশ্যই, আপনারাই বলুন কোথায় খাবেন।কখন?কোন রেস্টুরেন্ট?
আমার কথায় আমার বেশ কাছের লোক শফিক সাহেব, মুচকি হেসে বললেন,
-কোন রেস্টুরেন্ট নয়,আমরা আপনার বাসায় খাব,বাসার রান্না।
শফিক সাহেবের কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।বিয়ে না করার এই অসুবিধা।কাউকে বাসায় খাওয়ানো যায় না।রান্নার জন্যেও অন্তত একটা বিয়ে করা দরকার।শফিক সাহেবের কথায় অন্য সবাই যখন সম্মতি দিলেন তখন আর না করতে পারিনি।আর সেই না করতে না পারাটাই যে আজ আমার কাল হয়ে দাড়াবে আমি ভাবতেও পারিনি।এখন বুয়ার ও মুখ বাকানো কথা শুনতে হচ্ছে।
আমি রুমে ঢুকে আশেপাশে আরও একবার তাকালাম।সবকিছু বেশ গুছিয়ে নিয়েছি।কিন্তু রান্নাটা যে হয়নি।হোটেল থেকে আনাবো নাকি।এটা করলে আর বাসায় দাওয়াত দেবো কেন,হোটেলেই তো নিয়ে যাওয়া যায়। এই হোটেল ভাবনায় আমার বাধা পড়ে ফোনটা বেজে ওঠায়।এখন এই রিংটোনটাও বিরক্ত লাগছে।আমি ফোনটা ধরার আগে নামটা একবার দেখে নেই।আভার ফোন।
.
আভার সাথে আমার কথা হয়না সপ্তাহ খানেক হবে।রাগ করেছে আমার সাথে।কিন্তু রাগ করার কারনটা আমার এখনও অজানা।আমি ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে আভার রাগে ভরা অভিমানী কন্ঠে ভেসে আসে,
-বাজার করেছেন?
আভার ফোন ধরার সাথে সাথে এমন প্রশ্নে আমি মুচকি হাসি।মেয়েটা বেশ অভিমানী। আমি আস্তে করে বলি,
-বুঝতে পারছি না কি করবো।তোমাদের বুয়ার মুখ বাকানো কথায় মনে হচ্ছে দাওয়াত দেওয়াটাই আমার ভুল হয়ে গেছে।
-ভুল হলে হবে তাতে আমার কি।আমি বাজারের লিষ্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি।যান,নিয়ে আসুন।
আভার কথায় আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুকে আটকে থাকা চাপ কমিয়ে আনি।তারমানে আজ রান্না হচ্ছে।সন্মানটা রক্ষা পেলো হয়তো।
.
শফিক সাহেবের সাথে আসা সবাই যখন খাওয়া শেষে আভার রান্নার প্রশংসা করতে করতে চলে গেলেন তখক্ষনে আভার মুখে হাসির রেখা আমার চোখ এড়ায় না।মেয়েটা কত সহজেই সবকিছু ম্যানেজ করে নিলো।আমি একটু চুপ থেকে আভার দিকে এগিয়ে যেতেই মেয়েটা বেশ রাগি গলায় বললো,
-মেয়েরা যাকে নিজের ভাবে,কাছে টেনে নেয় তাদের পাশে কোন মেয়ে তো দূরে থাক,কোন মেয়ের ছায়াও সহ্য করতে পারে না।এটা অবশ্য আপনার বোঝার কথা নয়।বুঝলে অন্তত রিক্সার পাশের সিটটা ফাকা থাকতো।সেই মেয়েটার জন্যে।যে ভাবে,আপনাকে নিয়ে।সবসময়,সব জায়গায়।
কথাটি বলে আভা দাড়ায় না।আমার রুম পেরিয়ে বেলকুনির দিকে হাটা দেয়।হুট করে আভার কথাগুলা আমার উপর কেমন যেন জেকে বসে।ঘাড় নাড়াতে পারি না।কথাটা বেশ ভারী। প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার সময় আভাকে আমি তিনতলার বেলকুনিতে স্পষ্টই দেখতে পাই।তাকিয়ে থাকে।আমার দিকে।কিন্তু লামিয়ার সাথে আমি যতবারই এসেছি কোনবারই আভাকে বেলকুনিতে পাইনি।এই না পাওয়ার অস্পষ্টতা আজ আমার কাছে স্পষ্ট।লামিয়া আমার কলিগ ছিল।ওর বাসাটা আমার বাসার কয়েক বিল্ডিং পরেই।তাই মেয়েটা মাঝে মাঝে আসতো আমার সাথে।আমি না করতে পারিনা।তবে এই না বলাটা শিখতে হবে।দ্রুত শিখতে হবে।
গ্রিল ধরে দাড়িয়ে থাকা আভাকে আজ অন্যরকম লাগছে।এসময় আমার উচিত মেয়েটাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অন্তত সরি বলা।কিন্তু আমার সে সাহস এখনও হয়ে ওঠেনি।আমি একটু এগিয়ে আভার পাশে দাড়াতে দাড়াতে বলি,
-আজ থেকে তোমার জায়গাটাতে অন্য কাউকে দেখবে না,অন্য কোন ছায়া ও না।জায়গাটা তোমার,আছে,থাকবে।সবসময়,সব জায়গায়।
আমার কথায় আভা আমার দিকে শান্ত চোখেই তাকায়।যে চোখ আজ ভেজা ঘাসের মত।পানি জমে আছে।আমি আভার গালে হাত রেখে ভেজা চোখদুটো মুছে দিতে চাইলেও পারি না।আমার মনের ভাব আভা হুট করেই বুঝতে পারে।আমার হাত দুটো নিয়ে ওর গালে রাখে।আমি সাহস পাই।টলমলে চোখটা মুছে দেওয়ার।
মেয়েটা আমাকে হুট করেই জড়িয়ে ধরে।শক্ত করে।চোখ বেয়ে আবারও জল গড়িয়ে পড়ে।হয়তো এতদিনের জমানো কষ্টগুলো আজ মুক্তি পাচ্ছে।যে মুক্তিতে তারাও খুশি আমিও খুশি।এই খুশিতে আভাকে আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।এতদিনের চেপে রাখা কষ্ট মুক্তির খুশিতে।হু মুক্তির খুশিতে।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now