বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
- আপনার নাম?
-- অলিভার চোধুরী শুভ।
-- হুম "শুভ" নামটা তো মনে হচ্ছে আপনার নিজের দেয়া।
-- ওটা আমার প্রথম প্রেমিকার দেয়া নাম।
-- প্রেমিকার নাম কি ছিল?
-- অধরা জাহান অবন্তী।
-- এখন কোথায় মেয়েটা?
-- মেয়েটা এখন মাটির নিচে। এতদিনে হয়তো মাটির সাথে মিশে গেছে।
-- হোয়াট? কি বলছেন এসব?
-- কি বলছি বোঝেন না? মানুষ মারা গেলে হয়তো কবর দেয়া হয় নয়তো পুড়িয়ে দেয়া হয়। আমার প্রেমিকা মুসলমান ছিল। তাই মৃত্যুর পর তাকে কবর দেয়া হয়েছিল। আর কবর দিলে লাশ এক বছরের মধ্যেই পঁচে গলে যাবার কথা।
.
আমার কথা শুনে এতক্ষন আমাকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকা মেয়েটা কেমন যেন ভ্রু কুঁচকে তাকালো। চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে মেয়েটা আমাকে মনে মনে পাগল বলছে।
মেয়েটার সাথে আমার আজকেই প্রথম মুখোমুখি দেখা হলো। আমার বাবা মা এই মেয়েটাকে প্রচন্ড পরিমানে পছন্দ করে। বাবা মা চাইছেন এই মেয়েটার গলায় আমাকে ঝুলিয়ে দিতে। আমি যদিও সরাসরি না বলে দিয়েছিলাম তবুও আজ আমায় ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়েছেন এমন এক মেয়ের সাথে দেখা করতে যার নামটা পর্যন্ত আমার মনে পড়ছে না।
.
-- আপনি মিথ্যা বলছেন। হয় আপনার কোন প্রেমিকা কখনো ছিল না, নয়তো আপনি প্রেমিকার মৃত্যুর ব্যাপারে মিথ্যা বলছেন।
-- আমি আপনাকে মিথ্যা বলবো এটা কেন মনে হলো আপনার?
-- কারণ আপনার চোখদুটো বারবার এদিক সেদিক চলে যাচ্ছিল যতক্ষন আপনি আপনার প্রেমিকার মৃত্যু, কবর নিয়ে কথা বলছিলেন। এমনভাবে চোখ তখনই নড়ে যখন কেউ কোন ঘটনা বানিয়ে বলার চেষ্টা করে।
.
মেয়েটাকে আমি যতটা বোকা ভেবেছিলাম মেয়েটা ঠিক ততটাই চালাক। কে জানে হয়তো তারচেয়ে বেশি চালাক। আমার প্রেমিকা নিয়ে বলা মিথ্যাটা ধরে ফেলেছে অতি সহজে। ছোটবেলা থেকে এই একটা জিনিসেই আমি খুব পাকা, তা হচ্ছে রসিয়ে রসিয়ে মিথ্যা বলা।
আচ্ছা মেয়েটার নাম তো মনে পড়ছে না। নামটা জিজ্ঞেস করবো? মেয়েটা তো ঠিকই আমার নাম জেনে নিয়েছে।
.
-- আচ্ছা আপনার নামটা বলবেন? আসলে আপনার নামটা ভুলে গেছি।
আমার প্রশ্নে মেয়েটাকে একটু আহত হলো বলে মনে হচ্ছে। আহত হওয়ারই কথা। মেয়েরা ছেলেদের নাম ভুলে যেতেই পারে, এটা কোন অন্যায় না। কিন্তু ছেলেরা মেয়েদের নাম ভুলে যাবে এটা অন্যায়, গুরুতর অন্যায়। আর সেই অন্যায়টাই আমি করে ফেলছি।
.
-- আমার নাম অনামিকা, ইশিতা ইসলাম অনামিকা।
-- ও আচ্ছা। আমার নাম বন্ড, জেমস বন্ড।
-- এক্সকিউজ মি?
-- না মানে জেসম বন্ড নিজের নাম বলার সময় শেষের নামটা আগে বলে তারপর পুরো নামটা বলে। ঠিক আপনার মত। আপনার নাম বলার স্টাইল দেখে মনে পড়ে গেল আরকি।
.
আমি কথাটা বলে হেসে দেই। অনামিকা আমার এই সস্তা জোক শুনে হয়তো বিরক্ত হয়েছে। কারণ তার চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি এসে ভর করেছে বলে মনে হচ্ছে। অনামিকা দেখতে সুন্দরী, একেবারে আগুন সুন্দরী। যেকোন ছেলেই অনামিকাকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলবে। কিন্তু আমি কেন যেন অনামিকাকে পছন্দ করতে পারছি না। কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা হয় ফ্রেন্ড মেটারিয়াল। এদেরকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবা যায় না।
কিছু কিছু মেয়ে হয় লাভ মেটারিয়াল। এদের সাথে শুধু প্রেম করা যায়, কিন্তু বিয়ে করা যায় না।
আর কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা সেক্স মেটারিয়াল। এদের সাথে সেক্স ছাড়া আর কিছু করার কথা ভাবাই যায় না। আর কিছু কিছু মেয়ে আছে ওয়াইফ মেটারিয়াল। এদেরকে চোখ বন্ধ করে বিয়ে করা যায়। কারণ এরা বউ হওয়ার জন্য একেবারেই পারফ্যাক্ট। কিন্তু এই অনামিকা নামের মেয়েটাকে কোনভাবেই ওয়াইফ মেটারিয়াল বলে মনে হচ্ছে না। অনামিকার সাথে বড়জোর বন্ধুত্ব, প্রেম করা যেতে পারে। এরচেয়ে বেশী কিছু না।
-- তো মিঃ শুভ, আমরা কিছু খাবার অর্ডার করতে পারি?
-- অবশ্যই। আসলে আমি দুপুর একটার ভেতরেই লাঞ্চ সেরে ফেলি। কিন্তু আপনার সাথে দেখা করবো তো তাই না খেয়েই চলে এসেছি। অনেকক্ষন ধরেই পেটে ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। লজ্জায় বলতে পারছিলাম না। আপনি খাওয়ার কথা বলে বড্ড উপকারই করলেন।
-- হুম।
.
আমি এখন কথা শেষ করে চুপচাপ বসে আছি। অনামিকা তাকিয়ে আছে আমার চোখের দিকে, একেবারে সরাসরি চোখের দিকে। আমার কাছে কেন যেন এখন একটু অস্বস্তি লাগছে অনামিকা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে।
-- আচ্ছা শুভ, আপনার কি সত্যিই কোন প্রেমিকা আছে বা ছিল?
-- আমার চেহারা দেখে আপনার কি মনে হয়?
-- মনে হয় আপনি একটা প্লেবয়।
-- একারণেই বর্তমানে সব মেয়েরা বলে সব ছেলেরা এক, সব ছেলেরা শুধু শারীরিক সম্পর্ক করতে চায়। মেয়েরা নিপাট ভদ্র ছেলেদেরকে প্লেবয় ভেবে দূরে ঠেলে দেয়। আর প্লেবয়দের নিপাট ভদ্র ছেলে ভেবে কাছে টেনে নিয়ে ছক্কা খেয়ে যায়।
-- তো আপনি বলতে চাইছেন যে আপনি একজন নিপাট ভদ্রছেলে?
-- মোটেও না। আমি মাঝামাঝি লেভেলের। প্লেবয় আর জেন্টেলবয়ের সংমিশ্রণে তৈরী আমি। আর আমি হচ্ছি ছেলে সমাজের সবচেয়ে ভয়ংঙ্কর ক্যারেক্টারের সিম্বল।
-- সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্যারেক্টার? আমার কাছে মনে হয় ধর্ষকই হচ্ছে পুরুষ সমাজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্যারেক্টার।
-- পুরোপুরি ভুল ধারণা। একজন ছেলে যদি খারাপ হয় তাহলে আপনি সবসময় তার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন। একজন ভদ্র ছেলেদের কাছাকাছি চলতে আপনি দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবেন না। কিন্তু আমাদের মত মিশ্র স্বভাবের ছেলের কাছথেকে না পারবেন দূরে যেতে, না পারবেন কাছে আসতে। কারণ আপনি বুঝতে পারবেন না যে আমি আসলে কে? ধর্ষক নাকি নিরব দর্শক।
.
খাবার চলে এসেছে এই ফাঁকে। ফ্রাইড রাইচ উইথ চিলি চিকেন। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে খেয়ে বেরিয়েছিলাম। তাই এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু অনামিকার সামনে অলরেডি খাওয়ার ব্যাপার নিয়ে মিথ্যে বলে ফেলেছি। তাই খাওয়া শুরু করতে হলো।
.
-- আচ্ছা অনামিকা, আমাকে কেমন লাগলো আপনার?
-- একদিনের দেখায় কি বোঝা যায় যে একজন ছেলে ধর্ষক নাকি নিরব দর্শক?
-- হ্যা অবশ্যই বোঝা যায়।
-- কিভাবে বোঝা যায়?
-- ছেলেটার হাত ধরুন আলতো করে। তারপর তার কানে কানে বলুন ' আমি তোমাকে ভালবাসি'। ছেলেটা ধর্ষক হলে ভ্যাবলার মত বসে থাকবে। আর যদি নিরব দর্শক হয় তাহলে হয়তো একসেপ্ট করবে আর নয়তো মুচকি হেসে বলবে ' আমাকে দিয়ে ভালবাসা হবে না, তবে আমরা চাইলে বন্ধু হতে পারি।'
-- এমন আজগুবি লজিক কোথায় পান?
-- এটা মোটেও আজগুবি লজিক না। ধর্ষক কখনোই কাউকে ভালবাসতে জানে না। হঠাৎ যখন কেউ তার কানে কানে ভালবাসি শব্দটা উচ্চারণ করে তখন তার নিউরনে ক্রনিকাল ঝড় উঠে। তার সবকিছু আউলায় যায়। সে কি বলবে ভেবে পায় না। ভূত যেমন সরিষা ভয় পায় ধর্ষক তেমনি ভালবাসি শব্দটাকে ভয় পায়।
-- আর নিরব দর্শক?
-- এদের মনটা ভালবাসায় ভরপুর থাকে। এরা সরাসরি কাউকে ভালবাসি বলে না। ইনিয়ে বিনিয়ে ভালবাসার কথা বোঝাতে চায়। বন্ধুত্ব করে আপনার ভালবাসার সমুদ্রের গভীরতা মাপবে। তারপর সুযোগ বুঝে ডুব দিবে।
.
কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ হলো। এই অনামিকা নামের মেয়েটাকে আমার কেন যেন একটুও ভাল লাগেনি। এই মেয়ে সবকিছুর ব্যাখা চায়। কিন্তু এই মেয়েটাকি জানে না যে সবকিছুর ব্যাখা দেয়া যায় না।
মোটা অংকের একটা বিল ধরিয়ে দিয়ে মেয়েটা দাঁত বের করে হাসলো। এই হাসিটা দেখলে যেকোন ছেলে মাতাল হয়ে যাবে। কিন্তু আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। পকেটের দফারফা হয়ে গেল অবশেষে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। অনামিকার জন্য ব্ল্যাক কালারের টয়োটা অপেক্ষা করছে। আর আমার জন্য অপেক্ষা করছে গামছা মাথায় পেঁচানো আকিজ বিড়ি ফুঁকতে থাকা রিক্সাওয়ালা মামা। এই কারণেই হয়তো বাবা মা আমাকে এই মেয়ের গলায় ঝোলাতে চাইছেন। আর আমার কেন যেন মনে হয় এই মেয়েটাও আমাকে তার গলায় ঝোলাতে চাইছে।
কিন্তু আমি কারো গলায় ঝুলতে চাইছি না। আমি চাইছি কেউ আমার গলায় ঝুলে পড়ুক। আমি চাই সংকর ধাতুর একটা মেয়েকে। যে বন্ধুর মত আমার খেয়াল রাখবে, প্রেমিকার মত নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে, রাত নামলে তার শরীর নিয়ে মত্ত হতে বাধ্য করবে আর স্ত্রীর মত তার সব অভিমান অভিযোগ আমাকে শুনিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদবে। আমি চাই একটা "সংকর ধাতুর মালা"।
অনামিকা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাত উঠিয়ে মেয়েটাকে বিদায় জানাতে চাইলাম। কিন্তু তার আগেই মেয়েটা আমার হাত ধরলো। তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
.
-- আমি তোমাকে ভালবাসি শুভ।
লেখক:- অলিভার কুইন (শুভ)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
M.H.H.RONI
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেOliver Queen(ShuvO)
Author ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেইশিকা ইশু
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেMd. Ivan
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেতাবাসসুম ধ্রুবা
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেJubayer Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেM.H.H.RONI
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেRehnuma Ahmed
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেবকুল রায়
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেOliver Queen(ShuvO)
Author ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেবকুল রায়
Golpobuzz ৪ বছর, ২ মাস পুর্বেখেয়া ঘাটের তরী
User ৪ বছর, ২ মাস পুর্বে