বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
পাঁচ
সেই দুপুরের পর অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেছে। এরপর আর লিমনের সাথে যোগাযোগ করিনি। সে আমার সাথে দেখা করার অনেক চেষ্টা করেছিল। বন্ধুদের দিয়ে চিরকুট পাঠাত। ফোন দিত। মা ফোন ধরত এবং বলতো আমি বাড়ি নেই। শুনেছি সে পাগলের মতো মটরসাইকেলে করে আমাকে খুজে বেড়াত। আমাকে না পেয়ে রাগ করত। আবার বাড়িতে ফোন দিত। একদিন মা বিরক্ত হয়ে বাড়িরর ফোন নাম্বারই পাল্টে দিয়েছিলেন । শুনেছিলাম তারপর থেকে ভালোবাসার বদলে সে আমাকে ঘৃণা করা শুরু করেছিল।সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছিল।সিগারেট আর মদের নেশায় পরে থাকত সারাদিন। শুনেছিলাম সে খারপ লোক হয়ে গেছে। কিন্তু মনের মধ্যে আমাকে পোষণ করত সে।
এদিকে আমার বিয়ে হয়ে গেল। বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে ছিলাম। একবার ভালোবাসে এবং সেই ভালোবাসা হারিয়ে নতুন করে কাউকে ভালোবাসার সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। লিমন আমার মনের মধ্যে ছিল। কিন্তু যখন রাতুলকে দেখি তখন মনে হলো এখন এই সহজ সরল ছেলেটাই আমার জীবন।
রাতুল খুব ভালো। হয়তো রোমান্টিক হতে জানে না কিন্তু ভালোবাসতে জানে। আমি নতুন করে ভালোবাসার সাহস করে ফেললাম। এখন আমার ভালোবাসা দুইটা ভাগে আছে। রাতুলের মধ্যে আর দুষ্টু ছেলে রিয়াদের মধ্যে।
রিয়াদ লেখাপড়ায় খুব ভালো। একেবারে বাবার মতো। ভাগ্যিস আমার মতো হয়নি। সবসময় ক্লাসে ফাস্ট বা সেকেন্ড হয়। রিয়াদ আমাকে একদিন বলেছিল যদি সে ফাস্ট হয় তবে যেন তাকে কম্পিউটার কিনে দেই। সে ফাস্ট হয়েছিল এবং আমাকে কম্পিউটার কিনে দিতে হয়েছিল। এখন বই, টিভি, ফোন সব ফেলে সে কম্পিউটার নিয়ে পরে থাকে সারাদিন। ফেসবুক টেইজবুক আরো না জানি কত কি ঢুকিয়েছে সেখানে। এইসব নিয়েই থাকে সে।
একদিন আমাকে বলল,“বাবা এতো বুদ্ধিমান আর তুমি একদম বোকা। আসো কম্পিউটার চালানো শিখাই তোমাকে।”
আমার ফেসবুক একাউন্ট খুলে দেওয়া হল। কি করে কি করতে হয় কিছু বুঝিনা। তাই রিয়াদকে বলতাম সব করতে। ভালোই খেলা চলছিল মা আর ছেলের মধ্যে। কিন্তু তিন দিন আগে খেলা শেষ হয়ে গেছে!
সেদিন আমি আমার ঘরে বসেছিলাম। তখন রিয়াদ কান্না করতে করতে আমার কাছে এলো। কেউ একজন আমার একাউন্টে আমার ছবি সারা দুনিয়ার মানুষকে দেখানোর জন্য ট্যাগ করে দিয়েছে। এমন সব ছবি যা আমার ছেলের দেখার মতো ছিল না!
শেষ
পাথরের মূর্তির মতো আমি আমার ঘরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নড়াচড়া করার শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। রিয়াদ আমাকে টেনে তার ঘরে নিতে চাইলো। আমি গেলাম ভয়ে ভেয়ে। ছোট ছোট কদম ফেলে। কারণ আমি জানতাম অতীতের একটা ভয়ংকর মূহুর্ত কম্পিউটার স্কিনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
ছবি দেখেই আমি চিৎকার করে উঠলাম। অনেক বছর আগে একটা গেস্ট হাউজে যখন আমি লিমনের সাথে লেপ্টে ছিলাম সেই সময়ের কিছু ছবি কম্পিউটার স্কিনে ঝল ঝল করছে। লিমন বলেছিল শেষ স্মৃতি হিসাবে রেখে দেওয়ার জন্য ছবি গুলো তুলছে। ছবির মধ্যে আউলা ঝাউসা চুলে আমাকে কান্না করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি এমন কিছু বলতে চাচ্ছিল যা ঠিক সত্যি ছিল না।
অপরিচিত আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছিল এই ছবি গুলো। ইন্টারনেটে হাজারো লোক ছিল যারা সত্যিটা জানতে চায় না। তারা ছবি গুলো নিয়ে মজা লুটতে চায়। শেয়ারের পর শেয়ার হতে লাগল ছবি। লোকে নোংরা আলোচনা শুরু করে দিল ছবি নিয়ে। এক পলকের মধ্যে আমি হয়ে গেলাম তামাশার পাত্র।
আমাদের দেশে অনেক আইন আছে কিন্তু নারীদের প্রতি এই ধরণের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোন আইন আছে কি?
তিন দিন হয়ে গেল। আজ রাতুলের অফিস আর রিয়াদের স্কুলে যাওয়ার পর আমি একটা চেয়ার বসে আছি এখন। সামনে টেবিল বিষের শিশি। যেটা ব্যবহার করার সময় হয়ে গেছে।
এখন চিঠি লিখছি।
আমি আমার স্বামীকে সব সত্যি বলে দিয়েছলাম। তার মতো ভালো মানুষ আমি জীবনেও দেখিনি। দেখবো ও না হয়ত কোন দিন। লিমন এই বিষের শিশি তোমার কাছে পাঠাচ্ছি! অবাক হবে না। খেয়ে নিও। কারণ পুলিশ তোমার ঠিকানে পেয়ে গেছে। সাইভারক্রাম নামে কিছু একটা আছে জান নিশ্চয়? অাগেই সেখানে রিপোর্ট করেছিল আমার স্বামী। তারা আসছে তোমার শহরে তোমাকে ধরতে। এ চিঠি হয়তো তুমি জেলের মধ্যে পাবে। বিষ খেয়ে নিও নয়ত পুলিশের লোক তোমাকে বিষ খাওয়ার মতো অবস্থায় রাখবে না। কিন্তু জেলের মধ্যে কি বিষ নিতে দিবে? যদি না দেয় তবে আত্মহত্যা করে নিও। এটাই তোমার জন্য ভালো হবে।
লিমন তোমার মতো পুরুষ আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না কারণ আমার স্বামী আমাকে সম্মান করে। আমাকে সুরক্ষা দেয়। আমাকে ভালোবাসে। তুমি যতটা খারাপ মানুষ সে ততটাই ভালো মানুষ। তুমি আমার জীবনে সবচেয়ে বড় ভুল ছিলে। আসলে সে আমার প্রথম প্রেম। তুমি না।
কিছু কিছু মানুষ ভালোবাসে লোভে। নারী মাংসের লোভে। তারা শুধু মাংস চায় মাংস। তুমি মাংসের লোভে ভালোবাসেছিলে। আর কিছু কিছু মানুষের ভালোবাসা উপর থেকেই তৈরী করে দেওয়া হয়। রাতুলের সাথে আমার ভালোবাসাটা উপর থেকেই তৈরী করা ছিল। সেটা বুঝতে ইকটু দেরি হয়ে গিয়েছিল আরকি। আর সেই দেরিতে কিছু ভুল হয়ে গেছে। মানুষ মাত্রই ভুল করে। ভুল থেকেই শিক্ষা নেয়। আমিও নিলাম।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
ইফতেখার হাসান মাহিন
Golpobuzz ৩ বছর, ৬ মাস পুর্বেtafsirhossain
User ৩ বছর, ১০ মাস পুর্বেরিয়েন সরকার
Author ৪ বছর পুর্বেABDUR RAHMAN
User ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বেABDUR RAHMAN
User ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বেIshika ishu
User ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বে