বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
ফাহিমের মন ভালো নেই। অবশ্য এর জন্য তার বিন্দুমাত্র চিন্তাও হচ্ছে না। মন ভালো থাকলেই বরং এখন তার প্রচন্ড ভয় হয় আবার কখন এমন কিছু ঘটে যা তার সব কিছু নিয়ে চলে যায়। তাই এখন মন খারাপ করে থাকতেই তার ভালো লাগে। খুব ছোট বেলা থেকেই একা একা মানুষ হয়েছে সে, কখনও মামার কাছে থেকে পড়াশোনা করেছে, কখনও ফুফুর বাসায়, কখনও বা একা, একদম একা। বাবা-মা দুজনেই চাকুরী করত তাই তাদেরকেও দোষ দিতে পারে না সে বরং নিজের ভাগ্যকেই মাঝে মাঝে ভীষণ রকমের বকা দেয় সে। এভাবেই কখন যেন বড় হয়ে যায় ফাহিম, স্কুল-কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে উঠে পরে। ফাহিম ভেবেছিল এই বুঝি একটা মুক্ত পাখি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু জীবনের শুরুই ছিল সেখানে, সেটা ভালো নাকি খারাপ ছিল তা আজও বুঝে উঠতে পারে না সে। ছোট বেলা থেকেই অভিমানী এই ছেলেটা কখনও নিজের কষ্টের কথা মুখ ফুটে কাউকে বলতে শেখে নি, মা ছিল না সামনে, কাকে বলবে? কি বলবে ? মা ছাড়া কি আর কাউকে বলা যায় আমার খুব জোরে কান্না পাচ্ছে মা। তাই আর কাউকে বলা হত না। কিন্তু সে সবসময় আশা করত কেউ তাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করবে,“ফাহিম কি হয়েছে তোর?” কিন্তু কেউ করত না আর তাই এই অভিমানী ছেলেটা আরও অভিমানী হয়ে গেল। আর কখনও কাউকে কিছু বলত না। প্রতিটা মুহূর্তে হাসি খুঁজত ফাহিম। কখনও নিজের জন্য, কখনও বা অন্য কারও জন্য কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই তার জন্য থাকা হাসিগুলোর পেছনে বিরাট এক কান্না লুকিয়ে থাকত। ফাহিম বুঝত না, সেই হাসিটাকেই আপন মনে করে নিয়ে নিত সাথে বিশাল কান্নাটাকেও। গত রাতে ফাহিমের আব্বা মারা গেছেন। ভোরে আব্বার লাশ নিয়ে দাফন করে আবার বিকাল বিকাল ভার্সিটির হলে চলে এসেছে সে। অন্য আর দশটা ছেলে হলে হয়ত লাশের সামনে বসে কাঁদত কিংবা যদি একটু শক্ত প্রকৃতির হত তাহলে মুখ ভার করে বসে থাকত কিন্তু সবাই অন্তত এই দিনটায় একলা মায়ের পাশে থাকতে চাইত। ফাহিম থাকে নি, তার চোখে কান্নাও ছিল না, মুখ গোমরাও ছিল না। আব্বার বন্ধুরা, চাচারা যখন তাকে স্বান্তনা দিতে আসছিল সে তখন মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলেছে,“এ কিছু না, সব ঠিক হয়ে যাবে।” তখন সামনে বসে থাকা ফাহিমের আম্মা হঠাত কান্না থামিয়ে ছেলের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিল, পাশের বাড়ির খালারা বিড়বিড় করে বলছিল, “আগেই কইছিলাম পোলা সব ভুইল্যা যাইবো, এত কষ্ট কইরা মানুষ করল কিন্তু এখন কি কয় হুনছ, চোখে এক ফোডা পানিও নাই!” ফাহিম কিছু বলে নাই, তাদের দিকে তাকিয়েও একটা মিষ্টি হাসি দিল সে। হলে ফিরে আসার পর রুমমেটরা অবাক হয়ে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে ছিল। রাতে একজন তো বলেই বসল, “তুই একটা অমানুষ। নিজের বাবা মারা গেল তোর মাঝে আমি কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাই না, পারবি, তুইই পারবি স্বার্থপর।” ফাহিম কিছু বলে নাই। চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর রাতেই ঠান্ডা পানিতে একটা খুব কড়া শাওয়ার নেয়। নিজের সবচেয়ে পছন্দের শার্টটা পড়ে সে, হাতে নেয় বাবার দেওয়া সেই ছোট্ট বেলার ঘড়িটা। কালো বেল্ট আর ভেতরে কার্টুন আঁকা একটা ঘড়ি। ঘড়িতে দেখল সেই যেদিন বন্ধ হয়েছিল সেদিনের সময়েই আটকে আছে। তারপর চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেল। ফাহিম হাটছে, ভার্সিটির এই একটা মাত্র রাস্তা যা তার সবচেয়ে প্রিয় যেখানে মানুষের উৎপাত নেই। রাত তখন বারটা, ফাহিম পকেট থেকে বাবার দেওয়া ঘড়িটা বের করল, তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বিকট জোরে চিৎকার করে উঠল, “আব্বু!” “আব্বু আমাকে নিয়ে যাও, তোমার কাছে আমি অনেক আদর পাই ওগুলো আমাকে দিয়ে যাও। তোমার ঘড়ির সময় বন্ধ হয়ে আছে আব্বু, আমাকে ঐ সময়ে নিয়ে যাও। আমাকে তোমার বুকে জড়িয়ে চুপ করে বসে থাক আব্বু, আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করছে আব্বু। আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করছে।”
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Mehjabin Ebnat(Era)
User ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বে