বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
রাত ১০ : ২৫ মিনিট......।।
বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোনের মেসেজের টোন বেজে উঠলো, পকেট থেকে ফোনটা বের করে মেসেজ টা সিন করলাম। মেসেজে লিখা ছিল এমন...!
-- তুই যদি ১৫মিনিটের ভিতরে বাসায় না আসিস,তবে আমি আজকে আবার হাত কাটবো...।।
.
পাগলীটা ৯:০০টার পর থেকেই একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছিল।
একবার রিসিভ করে বলেছি, একটু পরে আসতেছি বলে রেখে দিয়ে ছিলাম। তারপর আর রিসিভ করিনি। তাই রাগ করে এই মেসেজটা করেছে আমায়।
ও যা বলে তাই করে, খুবই রাগি। এর আগেও অনেকবার আমার উপর রাগ করে হাত কেটেছে। তাই আর এক মুহুর্ত দেরী না করে,বাড়ির দিকে দৌড় দিলাম...।।
.
দরজায় একবার নক করতেই পাগলীটা একটা মোমবাতি হাতে বেরিয়ে এলো!.(তখন কারেন্ট ছিলনা)
– এই তুই এতক্ষন বাইরে কি করলি? সেই কখন থেকে তোকে ফোন দিচ্ছি? সত্যি করে বল কোথায় ছিলি?
– ওইতো বন্ধুদের সাথে ছিলাম। অনেকদিন পর ওদের সাথে দেখা হলো তাই একটু আড্ডা দিলাম।
– আমার চেয়ে তোর আড্ডাটাই বড় হয়ে গেল? তুই জানিস না বাসায় একা একা আমার ভয় করে। বলেই কান্না শুরু করে দিয়েছে। (ওর কান্নাটা আমি একদম সহ্য করতে পারি না)
– আচ্ছা সোনা আমি আর কখনও রাতে বাইরে থাকবো না, এবারের মত ক্ষমা করে দেও ? প্লীজ
– তুই এর আগেও অনেকবার একথা বলেছিস,কিন্তুু পরে আর মনে থাকে না। তুই আর আমার সাথে কথা বলবিনা বলে দিলাম।
– আমার জানটা দেখি আমার উপর খুব রাগ করেছে।আমার সাথে কথা না বলে আমার রাগি বউটা কি থাকতে পারবে? (একটু মায়া কন্ঠে বললাম )
– হ্যা পারবো, তুই আমার সাথে কথা বলবি না ভাল করে বলে দিচ্ছি।
(কথা গুলো বলার সময় আমার বউটার প্রতি খুব মায়া হচ্ছিলো, চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছিলো, মেয়েটা খুব অভিমানী)
– আচ্ছা ঠিক আছে কতক্ষন থাকতে পারিস দেখাই যাবে, খেয়েছিস কি ?
– কুত্তা,বান্দর,সঝাড়ু…(আমার চুল গুলো একটু খাড়া খাড়া, তাই পাগলীটা আমাকে সজাড়ু বলে ক্ষ্যাপায়, পাগলীটা আমাকে ছাড়া কখনও খাইনি,তাই এইসব বলছিল)
– জানি তো,আমার জানটা আমাকে ছাড়া খেতেই পারে না,চল খাই
– যা তুই একাই গিল,আমি খাবো না, (বলেই শুবার ঘরে চলে গেল)
.
প্লেটে কিছু ভাত নিয়ে ঘরে গিয়ে ওকে বোঝানো শুরু করলাম,কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
---------এক সময়
আমিঃ- জান, আমার না খুব খিদে লাগছে।
– খিদে লাগছে তো খা, আমাকে কেন বলছিস?
– তুই একটু খাওয়াই’দে প্লীজ!…….
– পারবো না, যা তো এখান থেকে।(বুঝতে পারলাম পাগলীটা আজকে খুব বেশি রাগ করে ফেলেছে)
.
প্লেটটা টেবিলে রেখে শুয়ে পড়লাম। কেবল চোখে ঘুম ঘুম ভাব তখনি দেখি পাগলীটা ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে আমাকে ডাকছে।
– ঐ ওঠ, নে গিল, আমাকে ছাড়া তো আর খাবি না !
– তোকে ছাড়া আমি কি করে খাবো বল?
আমার দিকে একটু বড় বড় চোখ তাকিয়ে, মুখ ভেটকি দিয়ে বলে উঠলো,
– "তোকে ছাড়া কি করে খাবো বল "। কুত্তা আর একদিন যদি বাসায় আমাকে একা ফেলে বাইরে থাকিস, তোকে আমি ঠিকই মেরেই ফেলবো।
– আচ্ছা ঠিক আছে,দে খিদে লাগছে !ও আমাকে তুলে খাওয়াচ্ছিল,(আসলে আপন মানুষের হাতে খাওয়ার মজাই আলাদা)
আমিও পাগলীটা’কে খায়িয়ে দিলাম,তারপর দুজনে শুয়ে পড়লাম…
.
কিছুক্ষন পর……….
– এই শুনছো, ওঠো না একটু..
কিরে শুনতে পাচ্ছো না,কান্না ভরা কন্ঠ আমার কানে ভেসে উঠল ।
আমিঃ- কি, কি হইছে ডাকছো কেন? ঘুমাতেও দিবা না নাকি?
– আমাকে একটু বুকে জড়িয়ে নিবা, আমার না খুব ভয় করতেছে! (বাইরে খুব বৃষ্টি আর বজ্রপাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে )
.
পাগলীটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলাম! ওয় আমার বুকে ছোট বাচ্চাদের মতো লুকিয়ে গেল!আসলেই ওর সব কিছু ছোট বাচ্চাদের মতই বাচ্চাদের মত ঠোট ফুলিয়ে বলতে লাগলো,,
.
– তোমাকে কখন থেকে ডাকছি,এতক্ষন উঠলা না কেন….?
-- ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সোনা।
– ঘুমাবিই তো আমাকে তুমি একটুও ভালোবাসো না, আমার কথা তোমার একটুও মনে থাকে না।
আমি যেদিন মরে যাবো,দেখবা সেদিন ঠিকই আমাকে মনে করে কাদবে!
আমিঃ- না সোনা এভাবে বইলো না, তুমি ছাড়া আমি একটা মুহূর্তও ভাল থাকতে পারবো না।
তোমার যদি কিছু হয় আমি প্রতিদিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করবো। (চোখ থেকে দু’ফোটা জল গড়িয়ে
পড়লো,পাগলীটার গালে)
– মাথাটা একটু উঠিয়ে, এই তুমি কাদছো কেন?
আমিঃ- তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না, প্লিজ আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যাবা না কোনোদিন!
– না সোনা, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
আমি তোমার উপর রাগ করি ঠিক আছে, কিন্তুু আমি
তোমাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি।
আমিঃ- আমি জানি,আমার আপন মানুষ আমাকে অনেক ভালবাসে,তা এখন একটু ঘুমাও….
– হ্যা ঘুমাচ্ছি, সারারাত জড়িয়ে ধরে থাকবা কিন্তুু, একটুও ছাড়বা না, না হলে সকালে আমি খুব কান্না করবো।
– আচ্ছা সোনা, তোমাকে আমি আমার বুক থেকে কখনই আলাদা করবো না। অনেক রাত হয়েছে এখন একটু ঘুমাও সুন্দরী!…….
– আচ্ছা,উম্মাহ্…
আমার গালে একটা চুমু দিয়ে পাগলীটা ঘুমিয়ে পড়লো, আর আমি ওকে জেগে জেগে বুকে জড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলাম। আমাদের ভালবাসা দেখে মনে হয় বৃষ্টিরাও আজকে অনেক হিংসে করছিলো।
হঠাৎ চোখের পাতাটা ভারি হয়ে এলো!???? পাগলীটার কপালে একটা চুমু দিয়ে,ওকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম!…………….
.
পাগলীটাকে নিয়ে ভালই কেটে যাচ্ছিল দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার দিন গুলো!…
কিছুদিন পরই পাগলীটা মা হবে,আর আমি হবো বাবা! আজকাল ওকে একটু বাড়তি কেয়ার করা শুরু করেছি। ওকে দেখে শুনে রাখার জন্য একটা কাজের মেয়েকেও রেখেছি।
.
একদিন আমি বাইরে ছিলাম,হঠাৎ কাজের মেয়েটা ফোন দিয়ে বললো,
ভাইয়া ভাবির অবস্থা খুব খারাপ.......
কথাটা শুনে বুকের মধ্যে কেমন জানি চিন চিন ব্যথা শুরু হয়য়ে গেল। সেদিন কিভাবে বাসায় এসেছি আমার খেয়াল নেই।
এসে দেখি, পাগলীটা শুয়ে থেকে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে, আমি দৌড়ে গিয়ে আমার জানটাকে মুহূর্তেই বুকে জড়িয়ে নিলাম!
.
.
আমার জান টার আজ ডেলিভারি পেইন শুরু হয়েছে, আমি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আছি।
খুব ছটফট করছিল আর কান্না করছিল পাগলীটা।
আমি আমার জানটার কষ্ট একদমই সহ্য করতে পারি না। ওর সামান্য খারাপ লাগা টুকু আমার কাছে মৃত্যুর চেয়ে ভয়াবহ। এককথায় নিজের জান নিজের দেহে আছে তা কখনোই মনে করিনা। ওকে বিয়ে করার পর কোনো কিছুর অভাব এবং কষ্ট কি জিনিষ কখনো ওকে বুঝতে দেইনি।
কোনো চাওয়া অপূর্ন রাখিনি...
সে খুব অভিমানী ছিল, অল্পতেই অভিমান করতো আর কাদতো। আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে ওর কান্না থামাতাম। কিন্তুু আজ আর ওর কষ্টের কান্না থামানোর মত কোনো উপায় জানা নেই!
দেরী না করে খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম....!
.
.
____চলবে?
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...