বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

মনের অজান্তেই ভালোবাসা

"রোম্যান্টিক" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান মোঃআলমামুন আলম আরজু (০ পয়েন্ট)

X ক্লাস এইটে পড়তাম। লাইফটা ভাল মতই যাচ্ছিল । কিন্তু ফ্যাকড়া বাঁধালো পাশের বাসার নতুন মেয়েটা । দিনরাত খালি পড়াশোনা করে । আর এই পড়ালেখা দেখে আম্মা আমার উপরে চোটপাট করে । - দেখ দেখ মেয়েটা কত পড়তেসে ! আর তুই সারাদিন খালি গেম গেম আর আড্ডা । মেয়েটাকে দেখে কিছু শিখ । - জি আম্মা , আমি শিখছি । - এখনই পড়তে বস । এই হল সমস্যা । আম্মা ৯৯% ওকে । শুধু মেয়েটাকে পড়তে দেখলেই আম্মা আমার উপর তেড়ে আসে । পরের দিন স্কুলে আমার বন্ধু হাসানকে ঐ মেয়েটার কথা বললাম। হাসান বলল, - মামা তুমিতো ফাইসা গেসো! - কি করব সেটা বল । - মাইয়ার বাসায় যা । একটা ধমক দিয়ে চলে আয় । যেই কথা সেই কাজ । এখন ওর বাসায় কিভাবে যাব সেটাই ভাবছি । কিন্তু আমার কিছু করা লাগলো না । একদিন আম্মা বলল, - চল রিয়াদের বাসায় নিয়ে যাব তোকে । - রিয়া কে ? - আরে পাশের বাসার মেয়েটা । সামনে তোর টার্ম পরীক্ষা । মেয়ে কি ভাবে পড়ে সেটা তোর দেখা লাগবে তো । আমি কিছু বললাম না । বিকালে খেলা বাদ দিয়ে আমি আর আম্মু ওর বাসায় গেলাম । কিছুক্ষণ আলাপচারিতার পর রিয়া আসল । - স্লামালিকুম আন্টি । ভাল আছেন? এহ আইসে! মনে হচ্ছে আমরা পাত্রী দেখতে এসছি । অবশ্য দূর থেকে মাইয়া দেখতে যত সুন্দরী, কাছ থেকেও তার চেয়ে বেশি সুন্দরী ! - ওয়ালাইকুমসালাম । কেমন আছ মামণি? - ভাল আন্টি । আপনি কেমন আছেন? - এইতো ভাল আছি । তোমাকে তো সারাদিন পড়তেই দেখি । এখন তোমার সময় নষ্ট করছি নাতো? - না না আন্টি অসুবিধা নেই । - এইটা আমার ছেলে ডালিম । জানো ও একটুও পড়ে না । তাই তোমার কাছে নিয়ে এলাম । এইবার রিয়ার আম্মা বলল, - যাও মা ডালিমকে তোমার রুমে নিয়ে যাও । এরপর আমি রিয়ার পিছু পিছু রিয়ার রুমে গেলাম । কিছুক্ষণ চুপচাপ । তারপর আমি নিজেই শুরু করলাম । - এই মেয়ে তুমি এত পড় কেন? একথা শুনে মেয়ে আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো । আমি বললাম, - শোন পড়বা ঠিক আছে । জানালা লাগিয়ে পর্দা নামিয়ে পড়বা! ঐ যে দেখ জানালা দিয়ে আমাদের বারান্দা দেখা যায় । - দেখা গেলে সমস্যা কি? - ইস তুমি বুঝ না কেন? আম্মা তোমার পড়াশোনা দেখলে আমার উপর চোটপাট করে । - হিহি ঠিকই আছে । এখন পড়াশোনা না করলে কখন? - হুম সেটাই । তোমার নাম কি যেন? - রিয়া । - আমি তোমাকে ব্যাকটেরিয়া বলে ডাকব ! - কিইই? কেন কেন? - সেটা আমার ইচ্ছা । I like ব্যাকটেরিয়া ! - ছি ! এইটা কোন নাম হল? না না তুমি এই নামে ডাকবা না আমাকে । - উহু ডাকব ! ব্যাকটেরিয়া ব্যাকটেরিয়া । - চুপ গাধা । আমি কিন্তু আম্মুকে বলে দিব । এভাবে ঝগড়া দিয়েই আমাদের শত্রুত্বের শুরু । মানে দুজন দুজনকে দেখলে বিরক্ত হতাম । একদিন রিকশা করে স্কুলে যাচ্ছি । রিয়া ওর বাসার গেটের কাছে দাঁড়িয়ে রিকশা খুঁজছে । আমি রিকশা থামিয়ে বললাম, - কি গো ব্যাকটেরিয়া রিকশা পাচ্ছ না? - এই দেখ রাস্তাঘাটে আমাকে এই নামে ডাকবা না । - আচ্ছা এখন উঠ । স্কুলে দেরি হয়েনযাচ্ছে । পরে আবার স্কুলে মার খেতে হবে । রিয়া রিকশায় উঠে বসল । আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল ভাড়া বাঁচানো । হেহে!! রিকশায় দুজন । একটু পর পাশে তাকিয়ে দেখি হাসান সাইকেল নিয়ে আমাদের পাশে এসে আস্তে আস্তে সাইকেল চালাচ্ছে । এই যা মাইরালাইসে । এখন কি করব? আমি মুখ ঢাকার চেষ্টা করলাম । কিন্তু লাভ হল না । হাসান বলল, - হাসানকে দেখে করিসনে ভয়, আড়ালে কিন্তু আমি হাসতেসি । কিরে মামু , নতুন বান্ধবী পেয়ে গেছিস দেখছি । - ঐ ঐ বেশি কথা বলবি না । চুপ থাকবি । - আচ্ছা ঠিক আছে । এই মেয়েটাই রিয়া নাকি? পাশ থেকে এবার রিয়া বলল, - তুমি আমার নাম জানো কিভাবে? - ডালিমের কাছে । - এই বজ্জাতটা তোমার ফ্রেন্ড? তোমার ফ্রেন্ড এত দুষ্টু ক্যান? এই গাধাটা খালি আমাকে ব্যাকটেরিয়া বলে খেপায়। - ঐ ডালিম, তুই ভাবিকে খেপাস ক্যান? থুক্কু রিয়াকে খেপাস ক্যান? তুমি চিন্তা করো না রিয়া । আমি ওকে দেখে নিব । কথা বলতে বলতে আমার স্কুলের কাছে চলে এসছি । আমি রিকশা থেকে নেমে রিয়াকে বললাম, - বাকিটুকু যেতে পারবা নাকি পৌঁছিয়ে দিতে হবে? - আমি কি কচি শিশু নাকি? কথা আর বাড়ালাম না । রিক্সাওয়ালাকে ভাব নিয়ে বললাম, - মামা একশ টাকা ভাংতি হবে? - না । - ওহ । রিয়া, তুমি টাকাটা দিয়ে দিও । আমার কাছে ভাংতি নেই । রিয়াকে বিদায় দিয়ে আমি আর হাসান রাস্তা পার হচ্ছিলাম । হাসান বলল, - মামা মাইয়া তো ফাটাফাটি । তুই ওর লগে প্রেম না করলে আমি করবো বুঝলি? - আচ্ছা করিস । - আর ভাড়াতো বাঁচিয়ে দিসো । তোমার কাছে ভাংতি নাই? পার পাবা না মামা । আজকে খাওয়াবি । ধ্যাত ভাড়াটা বাঁচাতে পারলাম না । বন্ধুরা এত হারামি হয় কেমতে? এরপর বেশি কিছুদিন কেটে গেল । আমরা ক্লাস নাইনে উঠে গেলাম । হাসানের কারণে হোক আর যে কারণেই হোক, রিয়ার সাথে আমাদের ফ্রেন্ডশীপটা ভালই জমেছে । তুমি থেকে তুই তে নেমে আসি । তবে আমাদের মোবাইল ছিল না । তাই আমার আম্মার মোবাইল ইউজ করি । রিয়াও ওর আম্মার মোবাইল ব্যবহার করে । রাত একটার পর শুরু হত আড্ডা । মাঝে মাঝে আমি, হাসান, রিয়া একসাথে কনভার্শেসনে আড্ডা দিতাম। একদিন প্রায় ধরা খেয়ে গেছিলাম । রাত দেড়টা । রিয়ার সাথে কথা বলছি । হঠাত্ দেখি আব্বা কল দিসে । আব্বা আম্মাতো পাশের রুমে ঘুমায় । বুঝতে বাকি রইলো না তারা আমাকে পরীক্ষা নিতেসে । - ঐ ব্যাকটেরিয়া ফোন রাখ । পরে কথা হবে । কল কেটে দিয়ে তড়িঘড়ি করে বারান্দায় গেলাম । তারপর হাসানকে কল দিলাম । হাসান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, - হ্যালো । - আর বলিস না দোস্ত এত পড়া আর ভাল লাগে না । আজকে দুটা গদ্য শেষ করলাম । তোর কি অবস্থা দোস্ত ? - মানে কি ? এত রাতে কি উল্টাপাল্টা বকিস? - চিন্তা করিস না । আমরা পরীক্ষা ফাটিয়ে দিব । মন দিয়ে পড় । আম্মা আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, - কিরে কার সাথে কথা বলিস? দেখি ফোন দে । আম্মা ফোন নিয়ে দেখলেন হাসান। - ও হাসানের সাথে । আচ্ছা বল । এই বলে আম্মা চলে গেল । যাক এ যাত্রা বেঁচে গেলাম । দেখতে দেখতে এসএসসি পার করে দিলাম । স্কুল লাইফটা বেশ কেটেছে । রিয়ার বান্ধবী আর আমরা বন্ধুরা জমপেশ আড্ডা দিতাম । তবে রিয়াকে খেপানো ছাড়িনি । ব্যাকটেরিয়া বলে খেপাতেই থাকি । কিন্তু আনন্দের সময়গুলো বেশিদিন থাকে না । রিয়ার আব্বা ট্রান্সফার হয়ে গেল । ফ্যামিলি সহ সবাই চলে যাবে । যাওয়ার আগের দিন রিয়া বলল, - ঐ গাধা চলে যাচ্ছি । তোর খেপানো থেকে বেঁচে যাব । - হুম যা । অন্তত বারান্দা দিয়ে তোর পড়াশোনা আর দেখতে হবে না । - হাহা । কলেজ লাইফে উঠে নতুন মোবাইল কিনলাম । প্রথমবারের মত রিয়াকে মিস করতে শুরু করলাম । ওর আম্মার নাম্বারে ফোন দিয়ে পেলাম না । মনে হয় সিম চেন্জ করসে । হাসান একদিন কল করে বলল, - দোস্ত তাড়াতাড়ি ফেসবুক আইডি খোল । রিয়ার ফেসবুক আছে । - সত্যি? - হ্যা । তারপর একটা ফেসবুক আইডি খুললাম । নিজের নাম দিয়ে নয় । '#ঘুমন্ত__বীর' নাম দিয়ে । হাসানকে বললাম আমার সাথে রিয়ার পরিচয় করিয়ে দিতে । একটু মজা নি । হাসান পরিচয় করিয়ে দিল ক্লোজ বন্ধু হিসেবে । অতঃপর শুরু হল ঘুমন্ত বীর আর ব্যাকটেরিয়ার চ্যাট । - হাই রিয়া, আমি হাসানের ফ্রেন্ড । - হুম বুঝলাম । নাম কি? - ঘুমন্ত বীর - হিহি । ঘুমন্ত বীর মানুষের নাম হয়? - হুম হয় । তারপর কলেজ লাইফ ওর সাথে চ্যাট করে কাটিয়ে দিলাম । কথা প্রসঙ্গে বুঝতে পেরেছি রিয়াও ডালিম কে মিস করে । আর বুঝতে বাকি রইলো না আমি রিয়াকে ভালবেসে ফেলেছি । এডমিশন রেজাল্টের পর হাসান দিল সারপ্রাইজ । - দোস্ত একটা ব্রেকিং নিউজ আছে । - কি? - রিয়া আর তুই একই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিস। - কি কস? আমি রিয়ার সাথে শীঘ্রই দেখা করব । ফেসবুকে রিয়াকে নক করেই প্রথমেই বললাম, - তোমার সাথে দেখা করতে চাই । তোমাকে প্রপোজ করব । - এসব কি বলছ? তুমি জাস্ট আমার বন্ধু । আর আমি আরেকজনকে ভালবাসি । সাথে সাথে বুকটা ছ্যাত করে উঠল। কাপা কাপা হাতে লিখলাম, - কাকে? - ডালিম কে । আমার স্কুল লাইফের বন্ধু আর আমার প্রতিবেশি । তোমাকে ওর কথা বলেছিলাম । এইবার আমি শকড । মাইয়া বলে কি! - কিন্তু সে তো হারিয়ে গেছে । - তাতে কি ! একতরফা ভালবাসব । - আগে বলবা না? তাহলে এতদিন তোমার সাথে চ্যাট করছি কেন! নাও ব্লক খাও । ব্লক দিয়ে হাসানকে কল দিলাম । - দোস্ত রিয়াকে নিয়ে ক্যাম্পাসে আয় । আমি এখুনি আসছি । ঝিরিঝিরি বৃষ্টি । ছাতা নিয়ে বের হয়ে গেলাম । রিয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি । - ব্যাকটেরিয়া, ভাল আছিস? রিয়া চমকে পিছনে তাকালো । মনে হল ভুত দেখছে । - আরে ডালিম? তুই এখানে? - অবাক হচ্ছিস? হাসান কই? - কি জানি! আমাকে ডেকে ওর পাত্তা নাই । আর বৃষ্টিটাও হুট করে শুরু হল । ছাতাও আনি নি । - আয় আমার ছাতার নিচে আয় । রিয়া আর আমি ছাতার নিচে হাঁটছি । হাঁটতে হাঁটতে হঠাত্ করে আমি বললাম, - হাতটা ধরি? - মানে? - মানে ভালবাসি তোকে । - দেখ ডালিম আমরা শুধুই ফ্রেন্ড । - অন্য কাউকে ভালবাসিস? - জানিনা । - শোন, তুই কিন্তু আমার ব্লকলিস্টে আছিস ! হাতটা এখন না ধরতে দিলে ব্লক লিস্টেই থাকবি । - কি? ঘুমন্ত বীর তোর আইডি? এইবার কয়েকটা কিলঘুষি দিয়ে ব্যাকটেরিয়া আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল। আমিও ছাতাটা ফেলে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ব্যাকটেরিয়া ঘুমন্ত বীর দুজন হাত ধরে হাঁটছে । বৃষ্টিটা আরো ঝেপে আসে ওদের দুজনকে ঘিরে.....


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ১৪৫৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ মনের অজান্তেই ভালোবাসা

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
  • Mehjabin Ebnat(Era)
    User ৪ বছর, ৫ মাস পুর্বে
    Nice.

  • মোঃআলমামুন আলম (আরজু)
    Golpobuzz ৫ বছর পুর্বে
    Tnx bokul &Salman vai

  • বকুল রায়
    Golpobuzz ৫ বছর পুর্বে
    Nc,,,

  • Abm.Salman
    User ৫ বছর পুর্বে
    Nice and interesting story bholey BaBa

  • Abm.Salman
    User ৫ বছর পুর্বে
    Nice and interesting story bholey BaBa