বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
????প্রসব বেদনায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে
কাতরাচ্ছে নীলা। ও আমার সাবেক প্রেমিকা। যখন
ওর বিয়ে হয়ে যায় তখন খুব অভিমান করে
বলেছিলাম,
ফের যদি তুই আমার চোখের সামনে আছিস
তাহলে খুন করে ফেলবো।
তারপর থেকে লক্ষি মেয়ের মতো কখনো
কোন যোগাযোগ করেনি। কত খুজেছি! রাস্তায়
বের হলেই রিক্সায় তাকাতাম, বাসের মহিলা সিট
গুলোতে তাকাতাম, প্রাইভেট কারের কালো
গ্লাসের দিকেও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম। মনে
হতো, এই বুঝি ওকে দেখবো। ওকে খুজতাম
শুধু একটা ছোট্ট প্রশ্ন করার জন্য।
"তুই কি সত্যি সত্যিই ধরে নিয়েছিস, আমার সামনে
আসলে তোকে খুন করবো?"
ওকে যে ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে সে ওয়ার্ডের
বাহিরেই আমি দাড়িয়ে আছি। হাসপাতালের মালিক আমি
নিজেই। অপারেশন থিয়েটারের হেড ডঃ সিরাজুল
ইসলামকে ডাকা হয়েছে নীলার জন্য। ডাক্তার
সিরাজ, নীলাকে দেখেই আমাকে ইশারায় ডাক
দিল।----
ওয়ার্ডে যেতে ভয় হচ্ছে। নীলা যদি আমাকে
দেখে ভয় পায়। তবুও গেলাম। এতদিনের কথা
হয়তো মনে নেই নীলার। ডাক্তার সিরাজ আমাকে
খুব সিরিয়াস মুডে জিজ্ঞেস করলো,
"পেশেন্ট কি আপনার পরিচিত?"
নীলার মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেই
ডাঃ সিরাজ কে ফোন করে এনিয়েছি। যেন ওর
কোন সমস্যা না হয়।----
আমি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললাম,
"হ্যা আমার পরিচিত। ভার্সিটি লাইফে একসাথে পড়েছি।"
ডাঃ সিরাজ আমাকে একটু আড়ালে নিয়ে এসে
বললো,
"পেশেন্টের কন্ডিশন খুব একটা ভাল নয়। খুব দ্রুত
অপারেশন করতে হবে। কিন্তু....."
"কিন্তু কি!?"
"ফিফটি ফিফটি চান্স বলতে পারেন।"----
অামি নির্বাক দৃষ্টিতে একবার নীলার দিকে তাকালাম।
কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখের দু কোনে দুই
ফোটা জল জমে আছে। আমার দিকেই তাকিয়ে
আছে। আমি চোখ ফিরিয়ে ডাক্তারের দিকে
তাকালাম,
"স্যার যেভাবেই হোক নীলা-কে বাঁচাতে হবে।"
ডাঃ সিরাজ নীলার মা'র কাছে যেয়ে নীলার
স্বামীকে ডাকতে বললো।----
ওর মা আমার দিকে তাকিয়ে ডাক্তারকে বললো,
"ওর স্বামী পাঁচ মাস হলো মারা গেছে।"
কথাটা বলেই মুখে আঁচল দিয়ে ডুকড়ে কাঁদতে
লাগলো। আমি নীলা-কে খুজে বেড়িয়েছি ঠিক,
কিন্তু এমন অবস্থায় দেখার জন্য নয়। ওর প্রতি আমার
অভিমান ছিল মাত্র একদিনের। সবসময় আল্লাহর কাছে
প্রার্থনা করতাম, ও যেন সুখী হয়। ওর সব দুঃখ
গুলো আমার হয়ে যাক।----
.
নীলার বেডের সামনে যেয়ে দাড়ালাম। ওর হাতটা
শক্ত করে চেপে ধরে বললাম,
-ভয় পেওনা। সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীলা আমার হাত আরো বেশি করে চেপে
ধরলো। যেন ওর হাত আমি আর কখনো না ছাড়ি।
ডাক্তার, নার্স, ওর মা সবাইকেই ও ওয়ার্ড থেকে
বের করে দিল। আমার হাত এখনো শক্ত করে
ধরে রেখেছে। নীলার ভয় পাওয়া মুখটা আমার
সহ্য হচ্ছে না। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার বললাম,
- তুই ভয় পাচ্ছিস? আরে বোকা আমি থাকতে তোর
কিচ্ছু হবে না।----
ও কিছু বলার জন্য অক্সিজেনের মুখ খুলতে
বললো। আমি অক্সিজেনের মুখ খুলে দিলাম।
নীলা খুব শান্ত গলায় বললো,
"তুই বলেছিলি না, ফের দেখা হলে খুন করে
ফেলবি আমায়?"
আমি খুব অনুতপ্ত স্বরে বললাম,
"ঐটা আমার অভিমান ছিল। তুই ভয় পাস নে। কিচ্ছু হবে
না তোর।"
"আমাকে খুন করতে পারিস, মানা করবো না। কিন্তু
আমার গর্ভের সন্তানের কিছু হলে তোকে ক্ষমা
করবো না মরে গিয়েও।---
.
নীলা এমনি। ও কখনো আমাকে বিশ্বাস করতে
পারিনি। ওর রুপের প্রসংসা করলেও ও বলতো,
ওকে খুশি করার জন্য নাকি বলেছি। তখন খুব রাগ
হতো। কিন্তু আজ একটুও রাগ হচ্ছে না। ভয় কাজ
করছে। যদি কিছু হয়ে যায়, হয়তো নীলা ভাববে,
আমিই করিয়েছি এই কাজ।----
.
ডাঃ সিরাজ খুব দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে
যেতে বলেছে নীলাকে। ও কখনোই আমার
হাত এতো শক্ত করে চেপে ধরেনি। ওকে
অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তবুও
আমার হাত ছাড়েনি। অপারেশনে ঢুকানোর পর,
নীলাকে ইশারায় বললাম, হাত ছেড়ে দেয়ার জন্য।
কিন্তু নীলা হাত ছাড়ে নি। ডাঃ সিরাজ, নীলার মা'কে
সব কন্ডিশন সম্পর্কে জানিয়েছে। নীলার মা'র
চোখ বেয়ে শুধু পানিই গড়িয়ে পড়ছে। উনাকে
দেখে খুব হিংসে হচ্ছে!----
ইশ্ আমি যদি উনার মতো কাঁদতে পারতাম! হয়তো
মনটা হালকা হতো। মন শক্ত করে আমি নীলার হাত
ধরে বসেই রইলাম। ঘুমের ইনজেকশন দেয়ার
কিছুক্ষণ পরেই নীলা ঘুমিয়ে পড়ে। ডাঃ সিরাজ
অপারেশন শুরু করে দেয়। নীলার ঘুমের
ঘোরেও আমার হাত চেপে ধরে রেখেছে।
হয়তো এই মুহুর্তে আপন ভাবছে আমাকেই। আমি
আল্লাহকে ডাকছি বারবার।---
ডাঃ সিরাজের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা
করছি, সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না! ডাঃ সিরাজকে খুবই
নার্ভাস লাগছে। হঠাৎ নীলা আমার হাতটি খুব জোরে
চেপে ধরে আলতো করে ছেড়ে দিল। বুকটা
হু হু করে কেঁপে উঠলো। নীলার সদ্য
জন্মনেয়া বাচ্চাটির কান্নার সুর আমার কানে ঝাপসা
শোনাচ্ছে। ডাঃ সিরাজ আমার সামনে এসে মুখ
থেকে মাস্ক খুলে জানালো,
"নীলাকে বাঁচাতে পারেনি।"---
.
নীলার দিকে তাকিয়ে আছি একদৃষ্টিতে। নিথর
দেহটা পড়ে আছে বেডে। নীলার হাতটি আবার
শক্ত করে ধরলাম। কেন জানি মনে হচ্ছে, ও
আবার খুব শক্ত করে চেপে ধরবে আমার হাত। হুহু
করে কান্না করছি ওর হাত ধরে। হয়তো ভুল বুঝেই
চলে গেল না ফেরার দেশে,,----
.
বাবা কি ভাবছো তুমি? কেক কাটবো না?"
মিতু কথায় কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে
আসি। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বললাম,
"হ্যা মা কাটবো।"
মিতুর বয়স আজ ১০ বছর। নীলার মেয়ে ও। কিন্তু
আজ ওর বাবা মা দুটোই আমি। বিয়ে করিনি ওর জন্য।
করবোও না। মিতুর মাঝে আমি নীলাকে খুজে
পাই। নীলার মতোই হয়েছে দেখতে। বাকী
জীবনটাও ওকে নিয়েই কাটাবো।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now