বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
"ছায়াশহর"
লেখক : রাকিব হাসান
পর্ব ৬
" জানলাটা দেখব আজ। নিশ্চয়
কোথাও ফাঁকফোকর আছে",
ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে একটা
ভাজা ডিম মুখের ভেতর পুরে
বললেন বাবা।
" কিন্তু বাবা! ব্যাপারটা ভারী
অদ্ভুত! ", আমি বললাম। ভয়টা এখনো
কাটেনি আমার। " পর্দাগুলো
পাগলের মতো ওড়াউড়ি করছিল, অথচ
জানলা বন্ধ।" " নিশ্চয় কোনও একটা
জায়গার কাঁচ খুলে পড়ে গেছে,
সেখান দিয়েই হাওয়া ঢুকছিল",
বাবা বললেন।
" বড় যন্ত্রণা দেয় রেজা", মায়ের
ভঙ্গি নকল করে বলল সুজা। ও ভাবছে,
আমি মস্ত রসিকতা করছি।
" এই তো আবার শুরু করলে", নিজের
নাস্তার প্লেটটা টেবিলে
রাখতে রাখতে বললেন মা। ক্লান্ত
দেখাচ্ছে ওনাকে। ওনার কালো
চুল সাধারণত আঁচড়ানোই থাকে, এখন
এলোমেলো। বাথরোবের বেল্ট
ধরে টানলেন মা। বললেন, " কাল
রাতে দু ঘন্টাও ঘুমোতে পারিনি।"
" আমিও না", জোরে নিশ্বাস
ফেলে বললাম আমি, " কাল রাতে
আমার খালি মনে হচ্ছিল ঐ
ছেলেটা আমার কোনও ক্ষতি
করবে!"
" রেজা! এই আজব কথাগুলো এবার
থামাও তো!", তীক্ষ্ণ হল মায়ের
কণ্ঠস্বর। " রহস্যময় ছেলে, পর্দা
ওড়াউড়ি। ভয় থেকে তৈরি হয় এসব
অতিকল্পনা। ভয় পাওয়া বন্ধ কর।"
" কিন্ত মা...."
আমায় মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে
সুজা আবার ফোড়ন কাটল, " পর্দার
আড়ালে হয়ত ভূত ছিল", বলেই ওপর
দিকে হাত দুটো তুলে " আঁ....আঁ" করে
ভূতুড়ে শব্দ করে উঠল। " এই!" সুজার কাঁধ
চেপে ধরলেন মা। শাসন করতে
গিয়ে বললেন, " তোমাদের কি
বলেছিলাম? কখনো একে অন্যকে ভয়
দেখাবে না? "
" আসলে এ জায়গাটাতে মানিয়ে
নিতে আমাদের সকলের অসুবিধে
হচ্ছে!", বাবা বলতে লাগলেন, "
রেজা, তুমি নিশ্চয় স্বপ্নে পর্দা
উড়তে দেখেছো। দুঃস্বপ্ন
দেখছিলে, বললে না?"
লাফ দিয়ে গত রাতের সেই ভয়ঙ্কর
দুঃস্বপ্নটা আমার মনের পর্দায় চলে
এল। চোখের সামনে মনে হল,
সামনের টেবিলে প্লেটের ওপর
মানুষের হাড়ের স্তুপ। কেঁপে উঠলাম
আমি। " জায়গাটা খুব স্যাঁতসেঁতে ",
মা বললেন।
" রোদ উঠলেই শুকিয়ে যাবে",
উত্তরে বললেন বাবা।
জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম।
আবার ধূসর হয়ে গেছে আকাশটা। ঘন
গাছপালা আমাদের বাড়ির
পেছনের আঙিনাটাকে অন্ধকার
করে রেখেছে। জিজ্ঞেস করলাম, "
কিটু কোথায়? " " বাইরে গেছে",
মুখের ডিমটুকু গিলে নিয়ে জবাব
দিলেন মা। সে-ও খুব ভোরে
উঠেছে। আমাদের মতোই সারারাত
ঘুমোতে পারেনি বোধহয়। অস্থির
হয়ে উঠেছিল, তাই বের করে
দিয়েছি।"
" আজ আমাদের কি কি কাজ?" , সুজা
জিজ্ঞেস করল। প্রত্যেকদিন সকালে
উঠে এই প্রশ্নটা করে ও। আসলে কোন
কাজটা বাদ দেবে সেই ফন্দি করে
ও। " তোমার বাবার আর আমার অনেক
কাজ বাকি এখনো ", মা বললেন, "
অনেক বাক্সই এখনো খোলা হয়নি। "
পেছনের বারান্দার দিকে
তাকালেন মা। প্রচুর বাক্স এখনো
ওখানে স্তুপ করে রাখা। মা বললেন,
" তোমরা বরঞ্চ এখন একটু ঘুরে আসতে
পারো। নতুন জায়গাটাকে দেখো।
কোথায় কি আছে দেখো।
তোমাদের বয়সী কাউকে পেলে
বন্ধুত্ব করতে পারবে।"
" আসলে বলো, আমাদের এখন বাড়ি
থেকে বের করতে চাইছ ", আমি
বললাম। মা-বাবা দুজনেই হেসে
উঠলেন এ কথায়। বললেন, " তুমি খুব
চালাক রেজা।"
" যাও, কাপড় পাল্টাও। ঘুরে এসো ",
বাবা বললেন, " আর কিটুকেও নিয়ে
যেয়ো। নীচে সিঁড়ির কাছে
শেকল রেখে দিয়েছি।"
" আর আমাদের সাইকেল? " সুজা
জিজ্ঞেস করল।
" ওগুলো গ্যারেজে মালপত্রের
নীচে চাপা পড়ে আছে", বাবা
বললেন, " এখন ওগুলো বের করা
যাবে না। তাছাড়া চাকায় নিশ্চয়
হাওয়াও ভরা নেই এখন। " নাস্তা
শেষ করে বাইরে বেরোবার জন্য
প্রস্তুত হতে লাগলাম। ভাবছি
আমাদের ফেলে আসা জায়গাটার
নেড আর অন্যান্য বন্ধুবান্ধবদের কথা।
গ্রীন ভ্যালির ছেলেমেয়েরা
কেমন হবে কে জানে? বন্ধু পাব
তো? সত্যিকারের বন্ধু?
কাপড় বদলানোর জন্য সিঁড়ি দিয়ে
উঠে দোতলায় নিজের ঘরে আসার
আগে সুজাকে বললাম, " কাপড়
বদলাতে পাঁচ মিনিট লাগবে
আমার। তারপর বেরবো। "
সামনের সিঁড়ি বেয়ে কয়েক ধাপ
ওপরে উঠতেই আমার চোখ আটকে
গেল। ওপরের ল্যাণ্ডিংয়ে
দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। আমার
বয়সীই হবে। ছোট করে কাটা চুল।
আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
তাতে উষ্ণতা নেই, আন্তরিকতা
নেই। আছে শীতল এক ধরনের বুক
কাঁপানো ভয়ঙ্করতা। আমার কাঁধে
হাত রাখল কেউ। পাক খেয়ে ঘুরে
দাঁড়ালাম। দেখি, পেছনে সুজা
দাঁড়িয়ে। বলল, " আমার
বাস্কেটবলটা খুঁজে পাচ্ছি না।
ওটা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমি
হাঁটতে বেরোব না।"
" সুজা প্লিজ, এমন করিস না",বিরক্ত
হয়ে ওর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে
সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ের দিকে
তাকাতেই দেখি, মেয়েটা নেই।
সারা গা কাঁপছে আমার। পা দুটো
এত বেশী কাঁপছে যে দাঁড়িয়ে
থাকতে পারছি না। সিঁড়ির
রেলিঙটা কোনমতে ধরে সামাল
দিলাম।
" বাবা, প্লিজ দেখে যাও",
চেঁচিয়ে বাবাকে ডাকলাম।
শঙ্কিত হল সুজা। বলল, " বাবাকে
ডাকছ কেন? আমি কি করলাম?"
আমি বললাম, " তোর জন্যে ডাকছি
না। তুই কিছু করিস নি।"
আবার চেঁচিয়ে ডাকলাম
বাবাকে। " কি হয়েছে রেজা?
ডাকছ কেন?" সিঁড়ির গোড়ায় এসে
দাঁড়ালেন বাবা। বাক্স খোলার
পরিশ্রমে ইতিমধ্যেই ঘাম ঝরছে
তাঁর।
" বাবা! কাকে যেন দেখলাম!", হাত
তুলে সিঁড়ির ল্যান্ডিংটার দিকে
হাত তুলে দেখালাম, ভয়ে ভয়ে
বললাম " মনে হল, একটা মেয়ে
দাঁড়িয়ে ছিল ওখানে।"
" রেজা, প্লিজ!" নাকমুখ কুঁচকে
বললেন বাবা, " এসব
দেখাদেখিগুলো একটু বন্ধ করো দয়া
করে। এই বাড়িতে আমরা চারজন
ছাড়া আর কেউ নেই....তবে
কয়েকটা ইঁদুর থাকলেও থাকতে
পারে।" " বাবা, আমি ভুল
দেখিনি!", বাবা আমায় অবিশ্বাস
করায় রাগ উঠছিল আমার।
বাবা এবার ল্যান্ডিংয়ের দিকে
আঙুল তুলে দেখালেন, " কই, কি আছে
ওখানে? দেখ তাকিয়ে! আমি তো
ওখানে কতগুলো কাপড় ছাড়া আর
কিছুই দেখতে পারছি না।"
অবাক হয়ে ল্যান্ডিংয়ের দিকে
তাকিয়ে দেখি, আমার কিছু কাপড়
ওখানে স্তুপ হয়ে পড়ে রয়েছে। মা
নিশ্চয় একটু আগে বাক্স থেকে
কাপড়গুলো বের করে ওখানে
রেখেছেন!
" শুধুই তো কাপড়!", অসহিষ্ণু ভঙ্গিতে
বাবা বললেন, " কাপড়ের স্তুপটাকেই
তুমি কোনও মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ভেবেছ।"
আমার দিকে তাকিয়ে এবার
হাসলেন বাবা।
লজ্জিত হয়ে বাবাকে " সরি" বলে
আমি দোতলার দিকে উঠতে
লাগলাম। ভয়টা যায়নি এখনও, তাই
বোধহয় এসব উল্টোপাল্টা দেখছি।
কিন্তু ঠিক মেনেও নিতে পারলাম
না। কাপড়ের স্তুপকে হাসিমুখে
দাঁড়িয়ে থাকা একটা মেয়ে
দেখব, এতটা অতিকল্পনা কি সম্ভব?
উঁহু, মনে হয় না।
আমি পাগল নই। দৃষ্টিশক্তিও খুব ভাল।
তাহলে এটা কি দেখলাম?
আমার ঘরের দরজা খুললাম। ছাদের
আলোটা জ্বেলে দিলাম। সামনের
জানলার দিকে তাকিয়ে দেখি,
পর্দাগুলো উড়ছে।
ওহ, আবার সেই দৃশ্য! তাড়াহুড়ো করে
জানলার কাছে এসে দাঁড়ালাম।
এবার অবশ্য জানলার পাল্লাটা
খোলা আছে দেখলাম। সেখান
দিয়েই বাতাস আসছে।
কে খুলল জানলাটা?
নিশ্চয় মা।
গরম, ভেজা ভেজা বাতাস আসছে
জানলা দিয়ে। আকাশে ভারী
মেঘ। ধূসর হয়ে আছে। যে কোনও সময়
নামবে ঝমঝম করে।
বিছানার দিকে চোখ পড়তে চমকে
উঠলাম। আমার বাইরে যাবার
পোশাকটা পরিপাটি করে
বিছানার ওপর রেখে দিয়েছে
কেউ। হাতকাটা নীল টি শার্ট আর
ফেডেড জিনস-টা কেউ যেন
বিছানার পায়ের কাছে
পাশাপাশি সাজিয়ে রেখেছে।
এগুলো কে রেখেছে? মা?
নিশ্চয় মা। বাইরে এসে সিঁড়ির
কাছ থেকে মা'কে চেঁচিয়ে
ডাকলাম, " মা, মা! আমার বিছানায়
জামাকাপড় কে রেখে গেছে?"
নীচতলা থেকে মা চিৎকার করে
কি বললেন, বোঝা গেল না।
' শান্ত হও রেজা, শান্ত হও', নিজের
মনকে স্বান্তনা দিলাম, ' নিশ্চয়
মা'ই রেখেছে। আর কে রাখবে!'
হঠাৎ কান খাড়া হয়ে উঠল আমার।
আমার ঘরের ক্লজিটের ভেতর
থেকে ফিসফিস করে কথা বলল
কেউ। ফিরে তাকালাম। ক্লজিটের
দরজা তো বাইরে থেকে
আটকানো। আবার শোনা গেল সেই
ফিসফিসানি। নীচুস্বরে, বিকৃত
গলায় হাসল কেউ। নাহ, প্রচণ্ড চাপ
বাড়ছে স্নায়ুতে। গলা ফাটিয়ে
চেঁচিয়ে বললাম, " এই কে আছ এই
ঘরে? জবাব দাও বলছি।"
গটমট করে হেঁটে গেলাম ক্লজিটের
সামনে। হ্যাঁচকা টানে খুলে
ফেললাম দরজা।
খাবলা দিয়ে কাপড়গুলো সরিয়ে
দেখতে লাগলাম। কেউ নেই।
(চলবে....)
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now