বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
গল্পঃ স্বপ্ন ছিল হাতটা ধরার
__________♥♥__________
দুইবার গাড়ির হর্ণ শুনেই আমার মনে হল
হর্ণটা আমার জন্যই বাজানো হচ্ছে ।
যদিও আমি একেবারে ফুটপাথের উপর
দিয়েই হাটছি । পেছন ফিরে তাকিয়ে
দেখি লাল রংয়ের গাড়িটা অনেকটা
আমার পাশ এসে দাড়িয়েছে । আমি গাড়িটাকে চিনি । এও জানি এখনই
কাঁচ নামিয়ে কার মুখ দেখা যাবে ! আমার ক্যাম্পাসটা বাসে চলা রাস্তা
থেকেও বেশ ভেতরে । প্রধান সড়কে বাস
থেকে নামার পরে আরও বেশ কিছুটা সময়
হাটতে হয় । অন্যান্যরা এই পথ টুকু রিক্সা
করেই যায় । মোড়েই মাথায় সব সময় গোটা
বিশেষ রিক্সা দাড়িয়ে থাকেই এই জন্য । তবে আমার কাছে এই পথ টুকু রিক্সায় চড়া
মানে বিশাল বিলাসিতা । আমি তাই এই
পথ টুকু হেটেই যাই । আজও হেটেই
যাচ্ছিলাম তখনই নিকিতার গাড়িটা
আমার পাশে এসে দাঁড়ালো । কাঁচ নামিয়ে নিকিতা আমার দিকে
তাকিয়ে বলল
-শুভ, উঠে এসো ।
আমি একটু হেসে বললাম
-না থাক । চলে এসেছি তো !
-আরে আসো তো ! আমি আবারও না করে বললাম
-আরে সমস্যা নেই । তুমি সামনে যাও আমি
আসছি । এই পথ টুকু অবশ্য নিকিতার গাড়িতে ওঠায়
যায় তবে আমি ওর গাড়িতে উঠতে চাচ্ছি
না। এই গাড়িতে উঠে পড়া মানেই হচ্ছে
নিকিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া । যেটা আমি
মোটেই চাই না । আমি ওকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে
হাটা শুরু করলাম । নিকিতা মেয়েটা দিন
দিক কেমন যেন আরও একটু একটু করে কাছে
চলে আসছে । কিছুতেই ওকে দুরে সরানো
যাচ্ছে না । এমন যদি হতে থাকে তাহলে
সামনে গিয়ে আমি বিপদে পড়ে যাবো । আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো খানিকটা মন
খারাপ করে গাড়ি নিয়ে চলে যাবে কিন্তু
আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে ও নিজেই
গাড়ি থেকে নেমে পড়লো । তারপর আমার
পাশাপাশি হাটতে লাগলো । আমি বললাম
-এই রোদের ভেতরে তুমি আবার নামলে কেন ? এখনও অনেকটা পথ ?
-তাহলে তুমি উঠছো না কেন গাড়িতে ?
-নিকি, সবাইকে সব কিছু মানায় না । এটা
তোমাকে বুঝতে হবে ।
-আমি বুঝতে চাই না । আমি কিছুটা সময় নিকিতার চেহারার
দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটার পাতলা
লিপস্টিক বিহীন ঠোঁটটা থেকে কেমন
আভা ছড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে এই ঠোঁট দুটো
আমার সব চিন্তা ভাবনা গুলো উলটপালট
করে দেয় । ইচ্ছে সব কিছু ভুলে গিয়ে ঐ ঠোঁট দুটো নিজের করে নেই । কিন্তু সেই
চিন্তা বেশি সময় স্থায়ী হয় না । আমাকে
আবার বাস্তবে ফিরে আসতে হয় । আর কথা না বলে আমি সামনের দিকে
হাটতে থাকি । একটু হাটুক । হাটলে বুঝতে
পারবে । একটু হয়তো বুঝতে পারবে যে ওর
জীবন আমার জীবন থেকে কত আলাদা । আমার কোন ইচ্ছেই ছিল না এখান থেকে
এমবিএ করার । আসলে এই স্বনামধন্য
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ
করার মত টাকা পয়সা আমার নেই । তবুও
ভাগ্যে থাকলে যা হয় ! আমার ছাত্রকে
এখানে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছিলাম তার বাবা মায়ের অনুরোধে । তখন আবার
এমবিএর সার্কুলারও চলছিলো । কি মনে
করে আমিও এপ্লাই করে দিলাম । ছাত্রের
বিবিএর এডমিশন টেস্টের সাথেই আমার
পরীক্ষার ডেট ছিল । সেই জন্য এপ্লাই
করেছিলাম । ঐদিনও আমার আসতে হত । পরীক্ষা দিলাম । পরীক্ষা দেওয়ার সময়ই
জানতাম চান্স হয়ে যাবে । তবে এও
জানতাম এখানে পড়ার কোন উপায় নেই ।
এতো টাকা আমার নেই । কিন্তু ভাগ্য
থাকলে কি আর কেউ আটকাতে পারে ? এডমিশনে রেজাল্ট একেবারে সবার উপরে
চলে এল । একেবারে ১০০% স্কলারশীপে
পড়ার সুযোগ । এমন সুযোগ হাত ছাড়া করতে
মন চাইলো না । কিছু অবশ্য খরচ হবে
সেটা চেষ্টা করলে যোগার করতে পারবো
। একটা আলাদা ডিগ্রি থাকুক । ক্লাস শুরুর প্রথম দিনই নিকিতাকে লক্ষ্য
করলাম । কেবল যে আমি একা লক্ষ্য করলাম
এটা বললে ভুল হবে । কারন নিকিতা এমনই
মেয়ে ছিল । তাকে লক্ষ্য না করে কোন
উপায় নেই । ক্লাসের প্রত্যেকটা ছেলে
নিকিতাকে প্রথম দিন থেকেই লক্ষ্য করা শুরু করে । তারপর যতই দিন যেতে লাগলো
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করা শুরু করলাম যে
নিকিতা কেমন জেকে বসা শুরু করেছে
মাথার ভেতরে। তখনই মায়ের চেহারা
ভেসে উঠলো । নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা
করতে লাগলাম যে আমার জন্য সব কিছু নয় । আমাকে নিকিতার চিন্তা থেকে বের
হয়ে আসতে হবেই । যা সম্ভব নয় তা
চিন্তা করার কোন মানে নেই । এই পর্যন্ত হলে হয়তো ভাল হত ! কিন্তু
কদিন যাওয়ার পরে আমি নিজে লক্ষ্য
করলাম যে একটা চোখ যেন আমার দিকে
প্রায়ই তাকায় । মাঝে মাঝে দুষ্টামীর
চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসে ।
কখনও কখনও চোখাচোখি হয়ে যায় তখন অস্বস্থির সীমা থাকে না । আমি এড়িয়ে
যাওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না ।
একদিন মুখোমুখি হয়ে গেলাম । সেদিন বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো । ক্লাস
শেষ করে লাইব্রেরীতে একটা কাজ
করছিলাম । যখন কাজ শেষ করে বের হলাম
দেখি চারিদিক ভেঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে ।
ক্লাস অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায়
প্রায় সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে । আমি বারান্দায় বৃষ্টি থামার অপেক্ষা
করতে লাগলাম । এমন সময় কেউ একজন
আমার পাশে এসে দাড়ালো । মিষ্টি একটা
সুগন্ধ আমার নামে লাগলো । মৃদ্যু কন্ঠে
বলে উঠলো
-মুষল ধারে বৃষ্টির আলাদা একটা মাদকতা আছে । তাইনা ? আমি কি বলব খুজে পেলাম না । এতো দিনে
নিকিতা আমার সাথে কোন দিন কথা বলে
নি । আমি নিজের এগিয়ে যাওয়ার তো
প্রশ্নই আসে না । আমি কেবল নিশ্চুপ ভাবে
নিকিতার দিকে তাকিয়ে রইলাম । একটা
কথাও বলতে পারলাম না । নিকিতা অবশ্য আর কিছু বলল না । আমরা অনেকটা সময়
সেই বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম । নিশ্চুপ
ভাবে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
নিকিতা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি তোমার বৃষ্টি পছন্দ না ?
আমি ছোট্ট করে বললাম -হ্যা ।
-আসো বৃষ্টিতে ভিজি ! আমি নিকিতার কাছ থেকে এমন কথা আশা
করি নি । খানিকটা অবাক হয়ে ওর দিকে
তাকালাম । মেয়েটা যে আমাকে এমন
একটা কথা বলতে পারে সেটা আমি
ভাবতেও পারি নি । আমি বললাম
-মাথা খারাপ নাকি ! -কেন ? এই না বললে বৃষ্টি অনেক পছন্দ ।
তাহলে ভিজলে সমস্যা কোথায় ?
আমি বললাম
-আছে । একটু সমস্যা তো আছেই । এখন ভেজা
যাবে না । নিকিতা একটু যেন মন খারাপ করলো ।
বড়লোকের মেয়েদের অল্প বিষয় নিয়েই
মন খারাপ হয় । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-একদিন তোমার সাথে আমি বৃষ্টিতে
ভিজবো । কেমন ! আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই
নিকিতা বৃষ্টির ভেতরে নেমে গেল ।
কিছুটা দুরে গিয়ে আবারও ফিরে তাকালো
আমার দিকে । সেদিনের সেই দৃষ্টিতেই
আমার ভেতরের সব কিছু কেমন যেন
অলটপালট হয়ে গেল । আমি সেদিন থেকে বুঝতে পেরেছিলাম এই মেয়েটা আমাকে
ভালবাসে । আর এই জন্যই হয়তো আমাকে
মেয়েটার কাছ থেকে দুরে থাকতে হবে ! তারপর থেকেই আমি আরও সাবধান হয়ে
গেলাম । নিকিতাকে এড়িয়ে চলতে শুরু
করলাম ! কিন্তু চাইলেও সব সময় সেটা
সম্ভব হয়ে ওঠে না । ক্যাম্পাসের কাছে হাটতে হাটতে আসতেই
গেটের কাছে আমাকে থামতে হল । রূপাকে
এখানে দেখতে পাবো ভাবতে পারে নি ।
গেটের কাছে দাড়িয়ে আছে ! আমাকে
দেখে ও নিজেও যেন একটু অবাক হল । আমি
কি এগিয়ে যাবো ও নিজেই এগিয়ে এল । -এখানে ?
তাকিয়ে দেখি নিকিতা আগেই দাড়িয়ে
গেছে । রুপা নামের মেয়েটার সাথে যে
আমার পরিচয় আছে এটা যেন ও ঠিক
বিশ্বাস করতে পারছে না । আমি খুব
স্বাভাবিক ভাবে বললাম -হ্যা । এখানে ক্লাস আমার !
-ও !
রুপা মুখ টিপে হাসলো । আমি জানি ও
এখানে কেন এসেছে তারপরেও বললাম
-তুমি এখানে কি কর ?
-আমি কি করি তা তো তুমি জানোই । তোমাদের এক ভদ্র ছেলে আমাকে ডেকেছে
। তার কাছে এসেছি ! বলতে বলতেই সে ভদ্র ছেলের গাড়ি
বেরিয়ে এল গেল দিয়ে । রুপা আমার দিকে
আবারও হাসলো । তারপর গাড়িতে উঠে
পড়লো । আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি
নিকিতা আমার দিকে সেই আগের চোখে
তাকিয়ে আছে । তবে একটু আগে যেখানে বিশ্ময় ছিল এখানে সেখানে একটা তীব্র
অভিমানের রেখা দেখা যাচ্ছে । আমি ওর
অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য এগিয়ে গেলাম
না । গিয়ে কি হবে !
কিন্তু একটা জিনিস আমার ঠিক মাথায়
ঢুকলো না যে নিকিতা রুপাকে কিভাবে চেনে ?
রুপা কি এর আগেও এখানে এসেছে ?
আসতেও পারে অবশ্য ! ও যে কাজটা করে
সেখানে এখানে আসা ওর জন্য খুব একটা
বিচিত্র না ! তারপরের কয়টা দিন নিকিতা ক্লাসেই
এল না । সপ্তাহখানেক পরেও যখন আবার
ক্লাস করতে শুরু করলো কিন্তু আমার কাছে
আর এল না । দুর থেকে আমার দিকে মুখ
গোমড়া করে তাকিয়ে থাকতো ! আমার মনে
হল যাক, অনাকাঙ্খিত ভাবেই হোক না কেন নিকিতা হয়তো আর আমার কাছে আসবে না ।
এটা আমার জন্য এক দিন দিয়ে ভালই হল ।
এর ভেতরেই শেষ সেমিস্টার ফাইলাম
পরীক্ষা চলে এল । আর বেশি দিন
নিকিতার সাথে আমার দেখা হবে না ! কিন্তু নিকিতা ঠিকই আমার কাছে একদিন
প্রশ্নটা করেই ফেলল । একেবারে শেষ
ক্লাসের দিন । আমার কাছে এসে খুব
স্বাভাবিক ভাবেই আমার কাছে এসে বলল
-ঐ মেয়েটাকে কিভাবে চিনো ?
কোন মেয়েটার কথা বলছে সেটা আমার বুঝতে কষ্ট হল না । তারপরেও আমি না
বোঝার ভান করে বললাম
-কোন মেয়েটা ?
-ঐ যে ঐদিন কথা বললা ? কিভাবে চিনো ?
আমি স্বাভাবিক কন্ঠে বললাম
-তা দিয়ে তোমার কি দরকার ? চিনি কোন ভাবে ?
-কিভাবে ? যেভাবে কথা বললে মনে হচ্ছে
অনেক দিনের চেনা পরিচয় ! ওর নিয়মিত
ক্লাইন্ট তুমি ?
আমি অবাক হয়ে নিকিতার দিকে তাকিয়ে
রইলাম কিছুটা সময় । নিকিতা যে এই কথা আমাকে বলতে পারে এটা আমি ভাবতেই
পারি নি । নিকিতা আবার বলল
-কি কথা বলছো না কেন ? নিয়মিত যাওয়া
হয় ওর কাছে ? হঠাৎ করেই রাগ উঠে গেল । কেন উঠে
গেল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
সবাইকে হতভম্ব করে দিয়েই আমি
নিকিতাকে চড় মেরে বসলাম ! নিকিতা
নিজেও আমার দিকে কেবল অবাক হয়ে
তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । সুক্ষ একটা অশ্রুর ধারা বেয়ে নামলো ওর চোখ দিয়ে ।
আমি নিজে এতো খানি অবাক হয়েছি আমি
নিজেই বলতে পারবো না । আমার ধারনার
বাইরে ছিল যে নিকিতা আমাকে এমন
একটা কথা বলতে পারবে আর আমিও এরকম
একটা রিএকশন দেখাবো । তারপরই পিএল শুরু হয়ে গেল । ফাইনাল
পরীক্ষার আগে আর ক্যাম্পাসে যাওয়ার
কোন দরকার পড়লো না । পরীক্ষা দিতে
গিয়েও নিকিতাকে দেখলাম সেই শুকনো
মুখে পরীক্ষা দিচ্ছে । আমাকে যেন
দেখেও নি । বুকের ভেতরে একটা তীব্র কষ্ট আর অনুশোচনাবোধ কাজ করতে লাগলো
। নিজের সাথে যুদ্ধ করে সিদ্ধান্ত
নিলাম যে একেবারে চলে যাওয়ার আগে
শেষ বার ওর সাথে কয়েকটা কথা অন্তত
আমার বলা দরকার ! পরীক্ষা শেষ করে সবাই যখন সবার সাথে
কথা বলছিলো তখনই ওকে একটা মেসেজ
পাঠালাম ক্যাম্পাসের পেছনের পুকুর
পাড়ে আসার জন্য । যদিও এক বার মনে
হয়েছিলো যে ও হয়তো আসবে না । কিংবা
আমার নাম্বার হয়তো ও এতোদিনে ব্লক করে দিয়েছে । কিন্তু শেষ বারের মত ও
আমার সাথে দেখা করতে এল । আমি চুপ
করে বেঞ্চে বসে ছিলাম । ও আমার পাশে
এসে বসলো ! কিছুটা সময় কেউ কোন কথা বলল না । আমি
হঠাৎ বললাম
-শুনলাম বাইরে চলে যাচ্ছো ?
নিকিতা ছোট্ট করে জবাব দিল
-হুম !
-আর আসবা না ? -জানি না ! আমি বড় করে একটা দম নিয়ে বললাম
-নিকি.....
কি বলবো কিভাবে খুজে পেলাম না ।
তারপর আবার নিজের মনকে বোঝালাম ।
আজকে না বললে হয়তো আর কোন দিন বলা
হবে না । হয়তো আর কোন দিন শান্তিও পাব না । আবারও বলা শুরু করলাম
-ছোট বেলা থেকে আমার খুব বন্ধু ছিল না ।
আমার মত মানুষের বন্ধ থাকে না !
নিকিতার দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার
দিকে ফিরে তাকিয়েছে । এতোটা সময়
অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার মত মানুষ মানে ?
-ঐদিন জানতে চেয়েছিলে না আমি রুপাকে
কিভাবে চিনি ? আসলে ওর আর আমার জন্ম
একই জায়গাতে ! ফরিদপুরের একটা
ব্রোথেলে ! নিকিতা আমার দিকে তীব্র বিশ্ময় নিয়ে
তাকিয়ে আছে । আমি এবার পুকুরের পানির
দিকে তাকালাম । নিকিতার দিকে
তাকালোর শক্তি আর আমার নেই ।
-আমি জানি না আমার বাবা কে ! ছোট
বেলা থেকেই এই ব্যাপারটা যতবার মানুষের সামনে এসেছে ততবারই আমি
দেখেছি মানুষ কতটা ঘৃণা নিয়ে আমার
চোখের দিকে তাকিয়েছে । এমন একটা
পাপের বোঝা আমি বয়ে নিয়ে যাচ্ছি যা
কোন দিন আমার পিছু ছাড়বে না । তাই তো
ঐদিন তীব্র ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও আমি তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে পারি নি ।
আমার এসব মানায় না ! আমার মত মানুষের
এসব মানায় না ! আর কোন কথা খুজে পেলাম না । অনেকটা
সময় বসেই রইলাম একভাবে । খুব করে
ইচ্ছে হল নিকিতার হাতটা আমি একবার
ধরি । একবার যদি এখন বৃষ্টি হত তাহলে
এখানে বসেই ওর সাথে বৃষ্টিতে ভেজা
হয়ে যেত । কিন্তু মেঘ মুক্ত আকাশে বৃষ্টি হওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই । আমি বললাম
-সন্ধ্যা হয়ে আসছে । যাওয়া দরকার !
নিকিতা আমার কথায় যেন বাস্তবে ফিরে
এল । তারপর আমার দিকে না তাকিয়েই
বলল
-হ্যা । উঠতে হবে । আর হয়তো দেখা হবে না । নিকিতা কোন কথা বলল না । আমিও ওর
দিকে তাকানোর সাহস পেলাম না আর !
আগে থেকেই জানতাম নিকিতার
প্রতিক্রিয়া এমনই হবে । কিন্তু তারপরেও
ওর চোখের দিকে তাকানোর সাহস হল না ।
যদি সেখানে আমার জন্য ঘৃণা দেখি, এই ভয়ে ! তারপর বছর খানেক কেটে গেছে । চাকরি
নিয়ে মগবাজারে একটা বাসাতে থাকি ।
মায়ের মানষিক অবস্থা অনেক আগেই
খারাপ হয়ে গিয়েছিলো । তাকে একটা
নার্সিং হোমে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি ।
অফিস থেকে প্রায়ই দিনই সেখানে যাওয়া হয় । ফিরতে ফিরতে রাত হয় ।
অবশ্য বাসাতে ফেরার এতো তাড়াহুড়াও
নেই । আজকেও কোন তাড়াহুড়া ছিল না । আজকে
আমি ইচ্ছে করেই বাসায় ফিরছিলাম না ।
আকাশে মেঘ ছিল অনেক । যে কোন সময়
বৃষ্টি নামবে । নিকিতার সাথে শেষ
দেখা হওয়ার পরে যতবার আকাশ ভেঙ্গে
বৃষ্টি এসেছে আমি ততবার বৃষ্টিতে ভিজেছি । মনে মনে ওকে কল্পনা করে
নিয়েছি যে ওর হাত ধরে হেটেছি । সিএনজিটা ছেড়ে দিয়েছি অনেক আগেই ।
আমি হাটতে হাটতে মিন্টু রোডের দিকে
চলে এলাম । এই দিকটায় বৃষ্টিতে ভিজে
অনেক বেশি মজা । ভিআইপি এলাকা ।
যদিও মাঝে মাঝে পুলিশের জেরার মুখে
পরতে হয় তবে সেটা বেশি সময়ের জন্য নয় । আজকে মিন্টু রোডে পা দিতেই ঝুমঝুম করে
বৃষ্টি নেমে এল । আমি চুপচাপ কিছুটা সময়
বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম । তারপর ফুটপাট
দিয়ে হাটতে শুরু করলাম মনে আনন্দে ।
অন্ধকার নেমে আসলেও চারপাশটা
পুরোপুরি অন্ধকার হয় নি । আমি আপন মনে বৃষ্টিটে ভিজতে লাগলাম । তখনই গাড়ির
হর্ণ শুনতে পেলাম । আমার কেন জানি
বুকটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো । মনে হল
গাড়িটা আমার মনযোগ আকর্ষনের জন্যই
হর্ণ বাজাচ্ছে । সোজা হয়ে দাড়িয়ে
রইলাম । অদ্ভুদ এক অনুভুতি হতে লাগলো ! এতো দিন পরে আর আবছায়া আলোতেও লাল
রংয়ের গাড়িটা চিনতে আমার কষ্ট হল না
। তবে আজকে আর কাঁচ নেমে এল না গাড়ির
। পুরো দরজা খুলে গেল । বৃষ্টির ভেতরেই
আমি নিকিতাকে দেখতে পেলাম । গাড়ি
থেকে নেমে সোজা আমার সামনে এসে দাড়ালো ।
তারপর বলল
-জানো এই বৃষ্টির জন্য কতদিন ধরে
তোমার পিছু নিয়েছি !
-কি ?
-হুম । যেদিন আমাদের শেষ দেখা হয়েছিলো খুব করে চেয়েছিলাম যেন
বৃষ্টি নামুক । তাই চেয়েছিলাম আবার
যখন দেখা হবে তখন যেন বৃষ্টি থাকে ! আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম নিকিতার
দিকে । এখনও আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে
না যে নিকিতা আমার সামনে দাড়িয়ে
আছে । আমি আমার সব কিছু ভুলে গেলাম ।
আমার কেবল মনে হল এখন আমার নিকিতার
হাত ধরতেই হবে । নয়তো আমি এখনই মারা যাবো । তীব্র বৃষ্টির মাঝে আমি
নিকিতার হাত ধরলাম । ভেজা ভেজা আর
নরম হাত । কতদিনের স্বপ্ন ছিল
নিকিতার হাত ধরার ! নিকিতা ওর পায়ের স্যান্ডেল খুলে
ফেলেছে । আমিও আমার জুতা মুজা খুলে ওর
গাড়ির মধ্যে রেখে দিলাম । তারপর
প্যান্ট খানিকটা গুটিয়ে নিলাম । আমি
এখনও ঠিক নিশ্চিত না যে নিকিতা
আসলেই এসেছে নাকি আমি ওকে কল্পনা তৈরি করে নিয়েছি । তবে সেটার দিকে
খুব বেশি মনযোগ দিলাম না । ওর হাত
ধরে হাটার সুযোগ টুকু কিছুতেই নষ্ট করতে
চাই না আমি । হোক সে কল্পনা কিংবা
হোক সেটা বাস্তব । আমরা এগিয়ে চলছি বৃষ্টির মাঝে । এতো
আনন্দময় বৃষ্টি আমার জীবনে আর আসে নি ।
সমাপ্ত????????
{তবে সব আবার হারিয়ে যাবে????}
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
অাজিদুর রাহমান তাজু
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে☣KM SAJU AHMED ROKIB☣
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বেঅাজিদুর রাহমান তাজু
Golpobuzz ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে☣KM SAJU AHMED ROKIB☣
User ৫ বছর, ৩ মাস পুর্বে