বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
রিকশা থেকে নেমে পকেটে হাত
দিয়ে মানিব্যাগটা বের করল সিফার।
হাতটা ধরে বাধা দিল নীরা।
- এই আমি দেই। আমার
কাছে ভাংতি আছে। মানিব্যাগ
রেখে দাও।
- আমার কাছেও ভাংতি আছে।
- চুপ। কম কথা বল। আমি দিচ্ছি না? এত
কথা বল কেন?
সিফার চুপ করে মানিব্যাগ
রেখে নীরার দিকে মুখ তুলে তাকাল।
নীল রঙের একটা ড্রেস পরে আছে নীরা।
দেখেই বোঝা যায় অনেক দামি ড্রেস।
খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। নীরার
পাশে নিজেকে মাঝে মাঝে খুব
বেমানান লাগে। সিফারের জুতা জোড়াও
ছেঁড়া। নিউ মার্কেট এর
সামনে থেকে সস্তায় কিনেছিল
জুতা জোড়া। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই
শেষ। সেই কবে থেকে একই জামা কাপড়
পরে দেখা করে সিফার। আর
নীরাকে এখন পর্যন্ত এক ড্রেস ২ দিন
পরতে দেখেছে বলে মনে হয় না। এমন
কি জুতাগুলোও মনে হয় প্রতিদিন নতুন
নতুন। নীরা কখনও
জিজ্ঞাসা করেনি প্রতিদিন একই ড্রেস
পরে আসে কেন? করবেও না কখনও। কিন্তু
সিফার নিজে থেকেই বলে - জানো?
আমার এই জামাটা অনেক প্রিয়। খুব ভাল
লাগে জামাটা পরতে।
জামাটা পরলে নিজেকে হিরো হিরো মনে
দেখ দেখ, এখনও কালার একদমই
ডিসকালার হয়নি। সেই আগের মতই আছে।
নীরা হাসে কথাগুলো শুনে। আর বলে -
আসলেই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে এই
ড্রেস এ।
মেয়েটা অনেক ভাল। সব কিছু কত
সহজে মেনে নেয়। ভাবতেই ভাল লাগে।
ইচ্ছা করলেই সিফার এর চেয়ে অনেক
ভাল ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে।
কিন্তু না, এই অপদার্থের সাথেই
পড়ে আছে। মেয়েটা একটু বোকাও মনে হয়।
তবে নীরা ভাবে সিফার অনেক বোকা।
দুনিয়ার অনেক কিছুই বোঝে না ছেলেটা।
বোকা হোক, পাগল হোক, অসম্ভব সুন্দর
একটা মন আছে সিফার এর। তাতেই চলবে।
বেশি কিছু দরকার নেই।
রেস্টুরেন্টের দিকে যেতে দেখে সিফার
হাত ধরে থামাল নীরাকে। থামিয়ে বলল
- কই যাও?
- সকাল থেকে কিছু খাইছ
বলে তো মনে হয় না। ঘুম থেকে উঠেই
চলে আসলা। চল কিছু
খাওয়া দাওয়া করে আসি।
- না। খেয়ে আসছি সকালে। এখন
ক্ষুধা নাই।
- আবার মিথ্যা বলে। আমি মোবাইল
দিলাম আর চলে আসলা। আর
বলে কি খেয়ে আসছি।
- এই রেস্টুরেন্টেই যাবে?
-হ্যাঁ।
- আসলে কি জানো,
তোমাকে বলতে লজ্জা লাগছে। বলব
কি করে বুঝছি না।
- এত লজ্জায় লাল হবার কিছু হয়নি।
ছেলে মানুষ, এত লজ্জার কি আছে? বল
কি হইছে?
- আমার loose motion কাল রাত থেকে।
এর মধ্যে যদি এই ফাস্টফুড খাই,
নির্ঘাত মারা যাব। এমন
কি রেস্টুরেন্টেও কাজ করে দিতে পারি।
নীরা নাকটা উঁচু করে সিফারের
দিকে তাকাল। পরক্ষনেই স্বাভাবিক
হয়ে বলল - ছিঃ , কি সব কথা বল তুমি।
loose motion মানে? সকাল
থেকে তুমি আমার সাথে। একবারও
তো যাও নায়।
- আসলে ব্যাপারটা হল, সকাল
থেকে emotion এর মধ্যে আছি তো , তাই
loose motion কাজ করছে না।
তুমি পাশে থাকলে আমার emotion
বেড়ে যায়।
নীরা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল-
হইছে। খুব বুঝছি। এখন চল।
আমি খাইয়ে দিব। so emotion এর
মধ্যে থাকবা। loose motion এ
প্রবলেম হবে না। চল।
সিফারের
হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নীরা।
সিফার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ফেলে নীরার সাথে গেল। আসলে loose
motion না, পকেটের অবস্থা খুব
একটা ভাল না। তাই আসতে চাচ্ছিল
না সিফার। সত্যিই খুব
সমস্যা চলছে ফ্যামিলিতে।
বাসা থেকে যতটা সম্ভব
বাহিরে থাকা যায়, তাই
থাকছে সিফার। ঘরে এলেই এটা নাই,
ওটা নাই, এই সমস্যা , ঐ সমস্যা,
হাজারটা ঝামেলা। উফ!! বাবা খুবই কম
বেতনের একটা চাকরি করেন। তার উপর
কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।
নিজেকে মাঝে মাঝে কাপুরুষ মনে হয়।
পরিবারের কাছেও একটা অপদার্থ,
নীরার কাছেও।
রেস্টুরেন্টে খাবার পর নীরা বলল -
আমি বিলটা দিয়ে দিচ্ছি। আমার
কাছে টাকা ভাংতি নাই তো।
টাকাটা ভাংতি করা দরকার।
সিফার আবারও অসহায় এর মত
তাকিয়ে আছে।
জমানো টাকাগুলো নিয়ে আসলেই হত।
কিন্তু ঐ টাকা তো অন্য কাজের জন্য।
মেয়েগুলো হয়ত নীরার মত এত ভাল হয়
না। এত সহজে সব কিছু মেনে নেয় না।
নীরা জানে সিফারের
ফ্যামিলিতে সমস্যা চলছে একটু। তাই
একেকটা অজুহাতে সিফারের
টাকাগুলো বাঁচিয়ে দিচ্ছে। বাসায়
আসার ভাড়াটাও দিয়ে দিল নীরা। তখন
খুব বেশিই লাগল নিজের
আত্মসম্মানে সিফারের। তাই বলেই
ফেলল নীরাকে - কি ব্যাপার ? কি শুরু
করছ তুমি?আমার কাছে ভাড়া দেওয়ার
টাকাটাও নাই নাকি?
আমাকে এভাবে অপমান করার
মানেটা কি ?
আবারও নীরা সেই
মিষ্টি হাসি মুখে নিয়ে বলল- উহ। এত
বুঝে ছেলেটা। বিয়ের আগ পর্যন্তই
তো mutual খরচপাতি। বিয়ে হোক
তারপর থেকে সব তোমার। আমার থেকে ১
টাকাও বের করতে পারবা না। জামাই
হয়ে বউয়েরটা নিবা? তা হবে না। এখন
তো ভালবেসে দিচ্ছি। আর তখন কিছু
না পেলে ঝাড়ু দিয়ে পিটাব।
বাচ্চাকাচ্চা বউ সংসার সব তোমাকেই
দেখতে হবে। তুমি শুধু দিবা আর
আমরা বসে বসে খাব। হি হি হি হি।
কি সরল হাসি মুখে। আর কিছু বলার পেল
না সিফার। বাসে করে চলে আসল বাসায়।
আসার সময় জানালা দিয়ে দেখল
নীরা হাত নেড়ে যাচ্ছে এখনও। বাসের
শব্দে শোনা যাচ্ছে না কি বলছে। হয়ত
টাটা বাই বাই।
রুমে এসে ঢুকার পরই মায়ের ডাক,
- সিফার, সারাদিন থাকিস কই তুই?
বলেও যাস না। তুই তো আগে এমন
ছিলি না।
কিছু না বলে বিছানায়
গিয়ে শুয়ে পড়ে সিফার।
কথা বলতে গেলেই মায়ের
সাথে ঝগড়া বেধে যাবে। ইদানীং খুব
খিটখিটে মেজাজ হয়ে যাচ্ছে। অল্প
কিছুতেই রাগ উঠে যায়।
পরশু বার্থডে নীরার।
জমানো টাকাগুলো বের করল সিফার।
অনেক কয়েক মাস ধরেই
জমাচ্ছে টাকাগুলো।
রিকশাতে না গিয়ে হেঁটে গেছে।
একটা কিছু খুব খেতে ইচ্ছা করল,
না খেয়ে টাকাটা রেখে দিছে। অনেক
দিনের শখ, একটা ভাল ব্রান্ড এর
বডি স্প্রে কিনবে সিফার। কিন্তু তাও
কিনেনি। আগে নীরার বার্থডেটা যাক
তারপর। মেয়েটা অনেক ভাল। কখনও ভাল
কোন গিফট দেয়নি সিফার। শুধু কিছু
গোলাপ ছাড়া। কিন্তু সেই গোলাপ নিয়েই
মেয়েটা কত খুশি। কখনও মুখ
বাকিয়ে বলে না, তুমি তো আমাকে কিছুই
দাও না।
অন্য মেয়ে হলে কবেই ভেগে যেত।
সিফার টাকাগুলো গুনল। না খারাপ
হয়নি। নীরাকে পিংক কালারের ড্রেস এ
খুব মানায়। ওকে একটা সুন্দর দেখে ভাল
পিংক কালারের ড্রেস
কিনে দিবে সিফার। বার্থডে গিফট।
অসাধারণ লাগবে সেই ড্রেস পরলে ওকে।
সিফার হঠাৎ হেসে উঠল।
মনে পড়ছে যে সিফারের
বার্থডেতে নীরা একটা কবুতরের
বাচ্চা এনে সিফারকে ধরিয়ে দিয়ে বলে
- Happy Birthday To You, জান। এই
নাও, বার্থডে গিফট। তোমার
গায়ে তো রক্ত কম। দেখেই বোঝা যায়।
কবুতরের বাচ্চা রোস্ট করে খাবা।
গায়ে রক্ত বাড়বে, শক্তিও বাড়বে। একটু
তো মোটাসোটা হও।
এরপর নীরা ব্যাগ থেকে কত্তগুলা আপেল
বের করে বলল- নাও, এগুলাও খাবা।
শক্তি বাড়বে।
বাসায় এসে কবুতরের
বাচ্চা মাকে দিয়ে বলেছিল- আম্মু,
এটা রান্না কর। আমার বন্ধু এটা উপহার
দিছে আমার জন্মদিনে।
এটা খেলে নাকি অনেক
শক্তি পাওয়া যায়, শরীরে রক্ত বাড়ে।
এরপর ঘরে এসে এক এক
করে সবগুলো আপেল একসাথে খেয়েছিল
সিফার। ১০ টার মতন হবে। সবগুলো।
শক্তি বাড়াতে হবে শরীরে তাই।
নীরা এত কিছু দিল। আর
নীরাকে একটা কিছু দিবে না,
তা কি হয়?তাই তো সেই
কবে থেকে টাকা জমাচ্ছে। মনটা অনেক
ফ্রেশ লাগছে। কাল পছন্দ মতন
ড্রেসটা কিনবে সিফার।
মা ঘরে হাতে একটা প্লেট নিয়ে ঢুকল।
সিফারের কাছে এসে বলল-
মুড়ি মাখলাম। পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে। আয়
তোকে খাইয়ে দেই। কতদিন তুই আমার
হাতে খাস না।
মা খাইয়ে দিচ্ছে সিফারকে। খুব
কান্না পাচ্ছে। সবাই এত ভাল কেন?
মা টা না পাগল একটা।
ভেবেছে আমি রাগ করে আছি।
সিফার মাখানো মুড়ি খাচ্ছে আর গাল
বেয়ে পানি পড়ছে।
মা পানি মুছে দিয়ে বলল- কাঁদিস ক্যান
বাবা ? মানুষের অবস্থা সবসময় একরকম
থাকে না। আমাদেরও থাকবে না। তোর
কষ্ট হয় বুঝি। তোর যা লাগবে চাবি।
যেভাবে হোক আমরা জোগাড় করে দিব।
তুই আমাদের এত আদরের ছেলে।
সিফারের কান্না থামার পরিবর্তে আরও
বেশি পাচ্ছে। বুকটা খাঁ খাঁ করছে।
নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। এই
মানুষগুলোর ভালবাসা ফেরত দেবার মতন
ক্ষমতা নেই ওর।
কেঁদে মিথ্যা সান্ত্বনা দেওয়া আর কি।
সব ঠিক হয়ে যাবে।
মা বলল- আজও বাড়িওয়ালা এসেছিল।
মানুষগুলোকে যে আর কত ঘুরাব!! তোর
বাবা বেতনও পাচ্ছে না। আর
যে কয়টা টাকা বেতন পায় তাতে কিছুই
হয় না।
- মা, আমি একটা কথা বলি?
-বল, বাবা।
- আমার কাছে কিছু জমানো টাকা আছে।
তুমি নিবে সেগুলো ? আমি তো কিছুই
করতে পারি না। অন্তত এক মাসের ঘর
ভাড়াটা দিয়ে দাও তা দিয়ে।
- আরে না। কি বলিস? তোর
জমানো টাকা দিয়ে ঘর ভাড়া দিব কেন?
তুই বড় হইছিস। এখন তোর একটা হাত খরচ
আছে না?তোকে তো ওভাবে টাকা আর
দেওয়া হয় না। তোর টাকা রেখে দে।
কি একই শার্ট পরে ভার্সিটিতে যাস
প্রতিদিন। তার চেয়ে ২ টা শার্ট
কিনিস। জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে দেখলাম।
কম দামের মধ্যে একটা জুতাও কিনিস।
তোর বাবা বেতন পেলেই ঘর
ভাড়া দিয়ে দিব। আর এতদিন
ধরে থাকি আমরা এখানে।
বাড়িওয়ালাকে একটু বুঝিয়ে বললেই
বুঝবে।
সিফার ছলছল
চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। হঠাৎ
মায়ের পায়ের কাছে পরে বলল - মা,
আমাকে মাফ করে দাও না।
আমি তোমাদের অনেক কষ্ট দিছি।
আমি অনেক খারাপ। টাকাটা নাও না।
না নিলে আমার ভাল লাগবে না।
আমি তোমাদের অনেক ভালবাসি। এই
কথাটা অনেকদিন বলতে চাইছি,
বলতে পারি নায়। আমার নতুন
জামা কাপড় জুতা কিছু লাগবে না।
আমি বড় হয়ে যখন চাকরি করব তখন আর
কষ্ট থাকবে না আমাদের। তখন
ভুরি ভুরি জামা কাপড় কিনতে পারব।
- এই সিফার, কি হইছে বাবা? এই
তাকা এইদিকে। কি হইছে? এমন
পাগলামি করতেছিস কেন?আচ্ছা দে।
নিচ্ছি টাকা। তোর বাবা বেতন
পেলে নতুন জামা কাপড় কিনে দিব
তোকে আচ্ছা?
সিফার চোখ মুছে মায়ের
হাতে টাকাটা দিয়ে বলল- নাও, ঘর
ভাড়া দিয়ে আসো।
মা ছেলের কপালে একটা চুমু
খেয়ে চলে গেলেন।
সিফার জানালার পাশে বসল এসে।
হালকা হালকা হাওয়া বইছে। চোখের
পানিগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে সেই হাওয়ায়।
নিজেকে প্রথম বারের মতন মানুষ
বলে মনে হচ্ছে। নীরার জন্য গিফট
কেনা হল না এবারও। মেয়েটা অনেক
অনেক ভাল। হয়ত রাগ করবে না কিছু
না দিলেও। হঠাৎ চোখ পড়ল শার্টটার
দিকে। একটু খানি ছিঁড়ে গেছে শার্টটা।
কিভাবে ছিঁড়ল কে জানে!!! ছোট্ট
একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সিফার।
মনে মনেই ভাবল, প্রেম ভালবাসা,
নীরা, এগুলো নিম্নবিত্তদের জন্য না।
এদের সুখ ঐ মা বাবার একটু হাসি। অল্প
কিছু টাকা, বেঁচে থাকার জন্য।
ছেঁড়া শার্ট সেলাই করে পরা।
সস্তা জুতা। ২ বেলা পেট ভরে ভাত
খাওয়ার মধ্যেই।
ভালবাসা সবার জন্য না হয়ত।
নীরা ভাল মেয়ে অনেক। কিন্তু
কতটা দিন এভাবে মানিয়ে নিবে?
একটা সময় হয়ত ক্লান্ত হয়ে যাবে।
নিম্নবিত্তদের ছেঁড়া শার্টের
সাথে নীরার মত মেয়েদের
মানানো আসলেই খুব কঠিন !!!????????
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ...