বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

জেহরা

"ছোট গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান MD.Belal Hosan (০ পয়েন্ট)

X [ অনুবাদ ঃ ছোটগল্প ] প্রতিদিন স্কুল থেকে বাড়ী ফিরবার পথে গলির মোড়ের এক মাথায় লোকটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেই আমার বুকের ভেতর এক রকম ভীতির সঞ্চার হতো। শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের স্রোত গড়িয়ে নামতে থাকতো। চলতে গিয়ে ঠিক জায়গায় পা ফেলতে আমার ভুল হতো। তাকে দেখলেই মনে হতো বহুকাল আগে মারা যাওয়া কোনো একটা লোক বুঝি কাকতাড়ুয়ার গায়ে প্রাণ নিয়ে প্রেতাত্মা হয়ে উঠে এসেছে। শতচ্ছিন্ন মলিন কাপড়, উস্কো খুস্কো জটাধরা অবিন্যস্ত চুল; সব মিলিয়ে মনে হতো যেনো কোনো বাতিল কাকতাড়ুয়ার শরীর থেকে বের হয়ে আছে এক জোড়া জ্যান্ত হাত আর পা। যতোদূর মনে পড়ে, এই রিয়াদ আলাখওয়াথ সম্পর্কে আমাকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিলো। কিন্তু অবাক হবার বিষয় এটাই যে, সবাই তাকে নিয়ে সতর্ক করার কথাগুলো বলেছে বটে। কিন্তু কেউই তাকে পাগলা গারদে বা মানসিক হাসপাতালে দিয়ে আসেনি কোনোদিন। এমনটা হবার জবাব অবশ্য করোই জানা ছিল না। মানুষটা দেখতে ছিলো যেন একখানা চলমান আবর্জনার স্তুপ। গায়ে চাপানো থাকতো তার যা কিছু তাকে কাপড় বললে ভুলই হতো। তার মাঝে নব সময় ঝুলে থাকতো অনেকগুলো টিনের ক্যান। ছেলেপুলেরা নিত্যই তাকে গালাগাল আর মন্দকথা শোনাতো বলে তাদের দেখলেই সে বলে উঠতো নানান খিস্তি খেউড়; আর বকবকাতো রাজ্যের অভিসম্পাত। অন্যদিকে মেয়েরা তাকে নিয়মিতই সতর্কভাবে এড়িয়ে দূর দিয়ে চলে যেতে চাইতো। মেয়েদের দেখলেই যে সে চোখ টিপে মৃদুা হাসি উপহার দিতো। পথ চলতে বারবার এই অসহ্য মানুষটার মখোমুখি হতে হতে বিরক্তির চরমে পৌঁছে আমি একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, একে কেন কেউ কোনো পাগলা গারদে রেখে আসে না। চরম বিরক্তি নিয়ে বাবা উত্তরে বলেছিলো, “এতো এতো এরকম পাগলদের জন্য অতো হাসপাতাল আর পাগলা গারদ বানাবে কে, যে ওতে তার জায়গা হবে?” যখনই রাস্তায় তাকে দেখতে পেতাম, আমি ঠিক উল্টোপাশের দোকান পাটের সামনে দিয়ে একেবারে ধার ঘেঁষে সাবধানে ওই পথটুকুন পার হতাম। সারাটা সময়ই আমি চাইতাম তার থেকে দূরে দূরে থাকতে। আমাকে দেখলেই যে সোজাসাপ্টা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতো সে। হাসতে হাসতে মাথাটা তার একপাশে কাত করতেই থাকতো সে, যতোক্ষণ পর্যন্ত না ওটা কাঁধটাকে ছুঁতো। একটা হাত উঁচু করে সেই সাথে আমাকে সে তার কাছে যাওয়ার জন্য ইশারা করতে থাকতো।তা দেখে ভয়ে আমার হৃদপিন্ডটা তড়পাতে তড়পাতে যেনোবা পায়ের ওপর পড়ে খান খান হয়ে যাওয়ার অবস্থা হতো। তস্ত্রে পা চালাতে থাকতাম আমি, দ্রুত আরো দ্রুত। সেই সাথে কাঁধের ওপর দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চুরি করে বার বার দেখে নিতাম সে আমার পিছু নিয়েছে কিনা। আমার বান্ধবী আমিরা আমাকে একবার বলেছিলো “রিয়াদ তোমাকে ভালোবাসে”। আমি সঙ্গে সঙ্গেই চটজলদি উত্তর দিয়েছিলাম। “প্রার্থনা করি ও একটা ব্যাঙের সাথে প্রেমে পড়ুক”। অবশেষে অন্য একটা সরু পথ আমি আবিস্কার করলাম, বাড়ী ফিরে যাবার। অচেনা বাড়ী ঘরের চারপাশ দিয়ে ঘুরে ফিরে সূচারু রকম ঘোরানো প্যাঁচানো সেই পথ। ওই মানুষটাকে ঘিরে আমার বুকের ভিতর শেকড়ের মতোন প্রোথিত হওয়া ভয়কে দূরে সরিয়ে পুরো একটা বছর এই নতুন পথ দিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ী ফিরেছি আমি। হ্যা, যা বলছি, ওটা ছিলো হাই স্কুলে আমার শেষ বছর। পরীক্ষার আগে স্কুলে ক্লাসের শেষ দিন। কিন্তু ওই দিনটা ছিল আমার জন্য এক চরম বিস্ময়ের, অন্য রকম আশ্চর্য উন্মোচনের। যা আমার জীবনে চিরস্থায়ী একটা দাগ কেটে দিয়ে গিয়েছিলো। নিত্য দিনের মতো আমি আঁকাবাঁকা সাপের মতোন প্যাঁচানো সেই পথ ধরে স্কুল থেকে বাড়ী ফিরছিলাম। মগ্ন হয়ে ভাবছিলাম সামনের দিনগুলোতে ওৎ পেতে থেকে চুপিসারে অপেক্ষমান পরীক্ষার সময়টার কথা। ভাবছিলাম খুব মগ্ন হয়ে আর দিবাস্বপ্ন দেখছিলাম অনাগত কলেজ জীবন নিয়ে। বাড়ীর কাছাকাছি এসে একটা মোড় ঘুরতেই সব ভাবনা কল্পনার ঘোর কেটে চমকে উঠলাম ভীষণ। সেই শতচ্ছিন্ন মলিন দুর্গন্ধযুক্ত টিনের ক্যান ঝোলানো কাপড় পড়া মানুষটা আচমকা উদয় হলো আমার চোখের সামনে। তার চোখের জ্বলজ্বলে দৃষ্টি যেনো আমার শরীরের হাড়গুলোকে ভেদ করে ফুঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। ঠিক তিন হাত দূরত্বে মানুষটা দাঁড়িয়ে। বিকেলের অলস সময়ে গোটা রাস্তাটা তখন পুরোপুরি জনশূন্য। আমার সেই ঘোরানো প্যাঁচানো পথ, যেটা আবিস্কার করে এতোদিন নির্বিঘ্নে চলাচল করে আসছিলাম, ওটাকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে ধরে নিয়েছিলাম। তার ভেতর অকস্মাৎ কোথা থেকে কিভাবে যে মানুষটা উদয় হলো, তার বিন্দু বিসর্গও কিছুতেই আমার মাথায় আসছিলো না। ভয়ের একটা তুফান যেনো আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমি দেয়ালের সাথে সেঁটে যাচ্ছিলাম এমনভাবে, যেনো সেঁধিয়ে যেতে পারলে বাঁচি। চিৎকার করতে চাইছিলাম। কিন্তু গলা দিয়ে একবিন্দু আওয়াজও বের হচ্ছিল না। সমস্ত শরীর যেনো অবশ হয়ে গিয়েছিলো আমার। আর পেছনের দেয়ালটা যেনো পালাবার সব পথ আগলে অনড় দাঁড়িয়ে ছিলো। লোকটা আরো কাছে এগিয়ে আসলো আর বদমাশের মতোন একটা হাসি তার সারা মুখে ছড়িয়ে আমার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকলো। মনে হচ্ছিলো যেনো সে আমাকে ধরবার জন্য এগিয়ে আসছে। হাত দুটো মুখের ওপর ভাঁজ করে এনে আমি তৈরী হচ্ছিলাম তাকে ধাক্কা মারার জন্য। কিন্তু অকস্মাৎ লোকটা ঝপ করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো আমার সামনে। দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢেকে সে কাঁদতে শুরু করলো। আর ওই কান্নার ভেতর থেকে বিড় বিড় করে বলতে থাকলো – “আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমাকে ভালবাসি। জেহরা। আল্লাহর কসম, বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভালবাসি, জেহরা।” বিস্ময়বিহ্বলতা আর ভয়ের বৃত্তে আটকা পড়া আমার তখন পাথরের মতোন জমে যাবার জোগাড়। মানুষটা তখনও আমার পায়ের কাছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ঝাপসা দৃষ্টিতে সামনে তখন যাকে আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, সে ছিলো যেনো এক ক্রন্দনরত ক্ষুধার্ত শিশু। খুব খিদে নিয়ে কাঁদছে এমন একটা শিশু ছাড়া যেনো অন্য কিছুই তখন সে ছিলোনা। সমস্ত ভয় যেনো আমার এক নিমিষে উধাও হয়ে গেলো। ঝুঁকে সামনের দিকে নীচু হয়ে হাত বাড়িয়ে মানুষটার উলুখাগড়ার বনের মতোন উস্কোখুস্কো চুলগুলোকে আমি স্পর্শ করলাম। আমি কিছু বলতে চাইছিলাম। কিন্তু কথাগুলো সব বিক্ষিপ্ত কিছু বিড় বিড় আওয়াজের মধ্যে হারিয়ে গেলো। লোকটা মাথা তুলে তাকালো। তার চোখ থেকে তখনো অবিরাম কান্নার স্রোত গড়িয়ে নামছিলো। হাটু মুড়ে যেভাবে বসে ছিলো সে অবস্থাতেই অনেকটা হামাগুড়ি দেবার মতোন করে পেছনে সরে গিয়ে আমার যাওয়ার পথটা উন্মুক্ত করে দিলো। আস্তে আস্তে হেঁটে আমি জায়গাটা ছেড়ে সরে যেতে থাকলাম। আর মাঝে মধ্যেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাচ্ছিলাম পেছনে ফেলে আসা মানুষটার দিকে। তখনো হাটু গেড়ে বসে সে স্থির তাকিয়েছিলো আমার দিকে। নোনাজল উপচে আসা চোখ দুটো তার চকচক করছিলো। হঠাৎ হাত দু’টো মেলে আমার দিকে সুপ্রসারিত করে দিলো সে। যেনো কোন প্রার্থনামগ্ন মানব সে। আর আমি স্বর্গমুখে উর্ধ্বগামী কোনো দেবী। সেই দিনের পর কখনোই তাকে আমি দেখিনি কোথাও আর। কেউ বলতো, লোকটা আর বেঁচে নেই। কেউ কেউ গল্প করতো, তাকে নাকি শেষ দেখা গেছে দামেস্ক অভিমুখী কোনো এক ট্রাকের ওপর। লোকটাকে শেষ দেখার দিনটা আমার বুকের মধ্যে চিরস্থায়ী ভাবে খোদাই হয়ে রয়ে গেছে যেনো। তার সেই অন্তর্ধানের পর থেকে কেবলি মনে হয়, আমার নামটা যদি সত্যি সত্যিই কোনো ভাবে হতো ‘জেহরা’। মূল ছোটগল্প ঃ নাবিল হাতেম (সিরীয় লেখক, ছোটগল্পকার ও অনুবাদক) লেখক: লুৎফুল (৭৮-৮৪)


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৭৫৭ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now