বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
মুছে যাওয়া কিছু স্বপ্ন এবং আকাশের একটি তারা
------------------------------
----------------------
ওয়েলকাম টিউনটা হাবিবের একটি রোমান্টিক গান।
ছেলেটা তন্ময় হয়ে শোনে আর ভাবে, গানটা
কি তার জন্যই মেয়েটা ওয়েলকাম টিউন
দিয়েছে??একসময় ফোন কেটে যায়। কেটে
যায় ছেলেটার ঘোর। আবার ডায়াল করে মুখস্ত
নাম্বারটিতে।ছোট ভাইয়ের নাম্বার মুখস্ত নেই
তার, এই ফাজিল মেয়েটার নাম্বার তার মুখস্ত।
এবারফোন ধরে মেয়েটা। বুকটা কেন যেন ঢিব
ঢিব করে ছেলেটার। এটা তার জন্য মহা বিব্রতকর।
মেয়েটারসাথে কথা বলতে গেলেই কেন
যেন খুব লজ্জা আর আড়ষ্টতা এসে ঘিরে ধরে
তাকে। বন্ধু মহলেআড্ডাবাজ আর বেশি কথা বলার
জন্য বিখ্যাত হলেও মেয়েটার সামনে যেন
একদম বোবা হয়ে যায়সে।
-হ্যালো, কিরে কেমন আছিস?
সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বের। অন্তত তাইস্বীকৃত।
ওরা দুজনও তাই বলে। ছেলেটার বন্ধুরা যদিও
অনেক রসিকতা করে, ওদেরসম্পর্কটাকে
“বন্ধুত্ব” বলার কারণে, কিন্তু মেয়েটা
ছেলেটাকে বোঝায়, আমাদেরসম্পর্কটা শুধুই
বন্ধুত্বের। ছেলেটা বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে তাতে
সায় দেয়। বন্ধুদেরকথা নিয়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসিও
করে। মেয়েটা বুঝতে পারে না ছেলেটার
হাসিমুখে এইকথাগুলো বলতে কত কষ্ট হয়।
-এইতো, তোর কি খবর? কি করিস?
-কিছুই না, ভালো লাগছিল না, তাই কল দিলাম,কেন
ডিস্টার্ব করলাম নাকি আবার??
-আরে না, তুই না...
ছেলেটা কথা খুজে পায় না।
-আমি ফোন দিলে তুই বিরক্ত হস না?
-এইসব তুই কেন বলছিস??? শুধু শুধু খোঁচান...
-এমনি, আমার ভালো লাগে তাই...
-না, আমার ভালো লাগে না।
-না, আমি আরও ভাবলাম তোর কোন
গার্লফ্রেন্ডহয়েছে কিনা, তুই তো মনে হয়
মহাব্যস্ত থাকিস ইদানীং।
-মানে?? কে বলল আমি মহাব্যস্ত??
-ওই ফাজিল, তাহলে সারাদিনে এখনো ফোন দিস
নাইকেন??
ঝাঁঝিয়ে ওঠে মেয়েটা। ঘাবড়ে গিয়ে ছেলেটা
বলে,
-আমি ঘুম থেকে উঠলাম মাত্র। উঠেই তোকে
ফোনদিয়েছি।
-বিশাল বড় কাজ করে ফেলেছেন, এতক্ষণ
ঘুমাতে হয়কেন?? কালকে রাতে কি করছিস??
-তোর সাথে কথা বলসি।
-সেটাতো ৪ টা পর্যন্ত, তার পর??
-ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম সাথে সাথেই।
-এখন কয়টা বাজে?
-১ টার কিছু বেশি।
-এখন কোন সভ্য মানুষ উঠে?? এক্ষন যা,
ফ্রেশহ, খাওয়া দাওয়া কর, তারপর আমাকে ফোন
দে। অসভ্য মানুষের মত চলিস... তোকে আর
ঠিককরতে পারলাম না...
খেদ ঝরে পড়ে মেয়েটার কণ্ঠে। মেয়েটা
রাগবেই বানা কেন? ছেলেটার যদি কোন কাজ
সে ঠিকভাবে করত!! নিশ্চয়ই কালকে রাতে ওর
সাথে কথাবলার পর বন্ধুদের সাথে তাস
খেলেছে... এত করে বলে দিল যে এখনি
যেন ঘুমিয়ে যায়, কেশোনে কার কথা... তিনি তার
মতই চলবেন। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া কি জিনিস সেটাই
মনে হয়জানে না। এত চেষ্টা করেছে, এত ঝাড়ি
দিয়েছে, ছেলেটাকে নাস্তা করানোর অভ্যাস
এখনোকরতে পারল না। পড়াশোনাতো অনেক
দূরের জিনিস। কিছুক্ষন পর একটা মেসেজ আসে
ছেলেটারমোবাইলে মেয়েটার কাছ থেকে।
“বিকেল ৪ টায় বাসস্ট্যান্ডে আসবি।”
ছেলেটা তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে।
পৌঁছতে ১০ মিনিট দেরি হয় ছেলেটার। দূর
থেকেইমেয়েটাকে দেখে ছেলেটা।
ইসসস!!! এত সুন্দর একটা মানুষ হয় কিভাবে??
বহুল প্রচলিত সেইপ্রবাদটা মনে পড়ে যায়,
‘কে বলে শারদশশী ও মুখের তুলা?
পদনখে পড়ে আছে তার কতগুলা...’
বুকের ভেতর কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি।
এটাই কি সুখের মত ব্যথা?? এটাই কি ভালবাসা???
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কিরে কি
অবস্থা?’মেয়েটা ওকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে
থাকে। ছেলেটা অসহায় বোধ করে। এম্নিতেই
মেয়েটার সামনে ওস্বাভাবিক থাকতে আপ্রাণ
চেষ্টা করেও পারে না, আর অভিমান ভাঙ্গানো...
-সরি রে, লেট হয়ে গেল।
-কেন দেরি হল?
-গল্পের বই পড়ছিলাম।
মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় ছেলেটার। এত এত
মিথ্যাঅজুহাত বানিয়ে নিয়ে আসে ছেলেটা কিন্তু
মেয়েটার সামনে এসেই কেন যেন সব কিছু
গুবলেটপাকিয়ে যায়। সত্যি কথাটা বের হয়ে যায়।
মেয়েটার সাথে অনেক চেষ্টা করেও মিথ্যা
বলতেপারে না ছেলেটা।
-তাহলে আসছিস কেন?? আরেকটা গল্পের বই
পড়গিয়ে। বাসা থেকে বের হয়েছিস কেন??
ছেলেটা মনে মনে হাসে। মেয়েটা কি জানে,
তার এইঝাড়িটুকুন খাওয়ার জন্য সে ইচ্ছা করে এই
ভুলগুলো করে... জানলে কি বলত...
-স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন? একটা রিকশাডাক।
‘এই মামা, যাবেন??’
‘কোথায় যাবেন?’
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে
তাকায়ছেলেটা।
‘ধানমণ্ডি’
‘চলেন’
দরদাম না করেই উঠে পড়ে ওরা। রিকশায় উঠে
জড়সড়হয়ে বসে থাকে ছেলেটা। কি যেন, যদি
কিছু মনে করে বসে মেয়েটা...
-আচ্ছা শোন, তুই আমার সামনে এত
বিব্রতবোধকরিস কেন?
বোমা মারে যেন মেয়েটা। ছেলেটা চমকে
উঠে। বলেকি এই মেয়ে!! জেনে গেছে
নাকি সব কিছু??
-কই, না তো...
-আমি জানি তুই করিস। তুই মিথ্যা কথা বলতেপারিস না,
বলার চেষ্টাও করিস না।
প্রতিবাদ করতে যায় ছেলেটা, কিন্তু তার
আগেইমেয়েটা বলে ওঠে,
-অবশ্য... সমস্যা নাই, আমি ব্যাপারটাকে এনজয়ইকরি।
J
হাঁ হয়ে যায় ছেলেটা। কি বলছে ও এগুলো??
কাষ্ঠহাসি হেসে এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়াস পায় সে।
-তুই এরকমভাবে বসছিস কেন?? মনে হচ্ছে
তোকেপাত্রীপক্ষ দেখতে আসছে??
-না... ঠিক আছে, আমি ভালো ভাবেই বসেছি।
-না তুই বসিস নাই। ঠিকভাবে বস।
এবার একটু জায়গা নিয়ে বসে ছেলেটা।
ভাবতেথাকে... এই মেয়েটা তার পাশে বসে
আছে... কিভাবে সম্ভব। ওর কোন যোগ্যতা কি
আদৌ আছেএই মেয়েটাকে পাবার?? কি হিসেবে
স্বপ্ন দেখে সে?? মেয়েটা সামনে আসলে
ছেলেটার মনে হয়যেন নাক কান লাল হয়ে যায়।
কেমন গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে মনে হয়। ওর
দিকে তাকিয়ে সেকখনই কথা বলতে পারে না।
কিছুদিন আগে ওদের বাসায় বেড়াতে গেলে
মেয়েটার সাথে ও কথাইবলে নি তেমন...
আত্মীয়স্বজন কি মনে করবে এই ভেবে।
মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল, ‘আচ্ছা,তুই আমার
দিকে তাকাতে এত লজ্জা পাস কেন বলতো??’
ছেলেটা জোর গলায় প্রতিবাদ জানাল,‘কে
বলেছে লজ্জা পাই, তুই আমার বন্ধু না?? তোর
দিকে তাকাতে লজ্জা পাবো মানে??’
-তাই, না????? লজ্জা পাস না?? আমার দিকেতাকা।
ছেলেটা মেয়েটার দিকে তাকায়। সাথে সাথে
মনে হয়তার ভিতরে কি আছে মেয়েটা এখনি
বুঝে ফেলবে। চোখ নামিয়ে নেয় সে।
হাসিতে ভেঙ্গে পড়েমেয়েটা।
-দেখ, আমি কিন্তু নেমে যাব।
-যা, একা যদি আমাকে ফেলে যেতে পারিস, যা...
-আচ্ছা, তুই এরকম করতেছিস কেন??
-এমনি, তোকে খোঁচাতে ভাল লাগছে তাই।
-আমার তো ভালো লাগছে না।
-ভালো লাগানর চেষ্টা কর।
-কি জন্য!! আমার ভালো লাগে না যেটা আমি
সেটাজোর করে ভালো লাগাব কেন??
-কারণ, আমার ওটা ভালো লাগে তাই...
-তো??
-তো কিছু না। তুই চুপ করে বসে থাক।
রিকশা যেন ঝড়ের বেগে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
মনটা একটু খারাপ হয়ে যায় ছেলেটার। এত তাড়াতাড়ি
পৌঁছে গেল!! ভাড়া জিজ্ঞেস করতেইমেয়েটা
বলে, ‘টাকা কি খুব বেশি হয়ে গেছে??’
ছেলেটা বলে, ‘আমার সাথে আসছিস, আর তুইভাড়া
দিবি??? পাগল????’ মেয়েটা দাত কিড়মিড় করে
বলে, ‘এক থাপ্পড় দিব সবার সামনে,মান ইজ্জত
কিন্তু আর থাকবে না। আমি তোকে আসতে
বলসি, নিয়ে আসছি, আমি ভাড়া দিব। একটাকথাও বলবি
না, একদম চুপ।’ ছেলেটা অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে
থাকে। কি ডাকু মেয়েরে বাবা!!
সুন্দর একটা জায়গা দেখে ওরা দুজন বসে।
মেয়েটাবলে,
-তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্য
এখানেএনেছি। তুই সিগারেট খেয়েছিস কিসের
জন্য?? তুই তো সিগারেট খাস না... তুই জানিস না?
আমি সিগারেটখোরদের কতটা অপছন্দ করি!!
তোর কথায় আমি ঘুমের ওষুধ খাওয়া বাদ
দিয়েদিয়েছি, ভোর ৫ টা পর্যন্ত ভুতের মত
জেগে বসে থাকি, তবুও খাই না কারণ তুই
মানাকরেছিস। আর তুই আমার কথায় সামান্য সিগারেটটা
ছাড়তে পারলি না!!!! তুই কোন পড়াশোনাকরিস
না, সারাদিন খালি ঘুমাস, গল্পের বই পড়িস আর মাঝে
মাঝে কোচিংএ যাস। তুই ভাবছিসআমি কিছু জানি না??
তুই না বলছিলি সিগারেট ছেড়ে দিবি......
আধা ঘণ্টা ধরে কঠোর শুনানি চলে ছেলেটার।
বিচারক মেয়েটা। মেয়েটা ছেলেটাকে
বকছে... হঠাৎ ছেলেটা বলে ওঠে,
-দোস্ত, তুই কি জানিস, রাগলে তুই লাল হয়েযাস??
কথায় বাধা পড়ায় থতমত খেয়ে যায় মেয়েটা।
অনেক “সাহসের কাজ” করে ফেলে
ছেলেটা। মেয়েটাকেবলে,
-অবশ্য... সমস্যা নাই, রাগলে তোকে আরও
সুন্দরদেখায়।
ওকে আরও রাগিয়ে দিয়ে বলে ছেলেটা।
-তোর ফরসা গাল একেবারে লাল হয়ে যায়
রাগলে,জানিস?? খুব সুন্দর লাগে তখন।
এবার লজ্জা পেয়ে যায় মেয়েটি। চোখ নামিয়ে
নেয়।পরক্ষনেই আবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে।
-হয়েছে, আর তেল মারা লাগবে না। আপনি আর
কোনদিন সিগারেট খেলে হাত কিন্তু কেটে নিব।
খেয়াল থাকে যেন।
-আচ্ছা থাকবে। এবার খুশি??
-না, খুশি না। তোর সমস্যা আছে??
রাজ্যের কথা বলে ওরা। নিজেদের স্বপ্নের
কথাবলে, কষ্টের কথা বলে, আনন্দের কথা
বলে,সুন্দর অনাগত আগামীর স্বপ্নে বিভোর
থাকে ২ জন মানব মানবী...
ঘণ্টা দুই পর। ওদের ফিরে যাবার সময় হয়েছে।
ছেলেটাকেনিয়ে রাইফেলস স্কয়ারে পুষ্পিত
সীমান্ত নামে ফুলের দোকানে ঢোকে
মেয়েটা। একটা নীলরঙের গোলাপ নিয়ে
ছেলেটাকে বলে,
-এটা কেমন রে?
-হ্যাঁ, সুন্দরই তো। কি করবি?
-আরে গাধা তোর জন্য।
লজ্জা পেয়ে যায় ছেলেটি। বলে, আমাকে এটা
না,একটা দাবা কিনে দিস। শো পিসের মত কিছু দাবা
আছে, দেখতে খুব সুন্দর...
-এখানে তো আর দাবা নাই। এটাই নে।
-থাক, পরে দিস। আগে চল কিছু খাই।
-ধুর, তোকে কিছু জিজ্ঞেস করাটাই বোকামি।
খাবনা। বাসায় যাব। এই মামা, যাবেন??
সেদিন ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে মেসে
আসামাত্রবন্ধুদের কবলে পরে ছেলেটা। সবাই
হই হই করে উঠে। বাসস্ট্যান্ডে ওকে
মেয়েটার সাথেরিকশায় দেখেছে তার বন্ধু...
আর তারপর যা হয়... সবাই মিলে ওকে খেপাতে
থাকে। কেন যেনমেয়েটাকে নিয়ে ওদের
খেপানোটাও ছেলেটার ভালো লাগে। হয়ত
মনে মনে স্বপ্ন দেখে, এরকমসত্যিই হবে।
পরদিন সকালে হঠাৎ জরুরিভাবে ডাকে ওকে
মেয়েটা।ধানমন্ডি লেকের পাড়ে বসে ওরা।
-হঠাৎ এত জরুরি তলব??
-শোন, তোকে একটা সিরিয়াস কথা জিজ্ঞেস
করব।
-কি সিরিয়াস কথা?
-নিশিদের বাসায় গিয়েছিলি কেন তুই??
এই ভয়টাই পাচ্ছিল এতক্ষন ছেলেটা। নিশি
মেয়েটারবান্ধবী এবং ছেলেটার কাজিন। ওদের
বাসায় যাওয়াটা খুব অপছন্দ করে মেয়েটা। নিশি আর
ওসমবয়সী, এজন্যই হয়ত। কিন্তু সেদিন আন্টি খুব
দরকারে ডেকেছিলেন। আর তাছাড়া ওকে
একটুপরীক্ষা করাও উদ্দেশ্য ছিল। ওকে সত্যিই
ভালবাসলে মেয়েটা রাগ করবে। বন্ধুরা তো
তাইবলেছে।
-আন্টি ডেকেছিল।
-হুম...
মেয়েটার মুখ দেখেই বুঝা যায় খুব রেগে
গিয়েছেসে। মেয়েটার “এই মেঘ রৌদ্র ছায়া”
জাতীয় মুডের সাথে ছেলেটি পরিচিত। তাই চুপ
করেথাকে মেয়েটি কখন কথা বলবে সে
জন্য।
-আমাকে ইকবাল প্রোপজ করেছে।
হতভম্ব হয়ে যায় ছেলেটা। আর যাই হোক,
জবাবহিসেবে অন্তত এটা আশা করেনি ছেলেটা।
চোখের সামনে তার এতদিনের সাজান স্বপ্ন
ভেঙ্গেযাচ্ছে... সে কড়া কিছু কথা আশা
করেছিল, এরকম নিষ্ঠুর কিছু না।
-তুই কি বলেছিস??? অনেক কষ্টে মুখ দিয়ে
যেনকথা বের হয় ছেলেটার।
-আমি এখনো কিছু বলি নাই, তুই কি বলিস??
-আমি কি বলব?? লাইফ তোর, ডিসিশনও তোর।
তুইদেখ ভেবে কি বলবি... বুকটা ফেটে যায়
ছেলেটার এই কথাগুলো বলতে গিয়ে।
-তোর কোন অপিনিওন নাই?? আমি তোর
ফ্রেন্ড না??
-আমার অপিনিওন আবার কি... তবে ওই
ধরণেরছেলেরা সাধারনত ভালো হয় না, তবুও
দেখ, তুই যা ভালো বুঝিস...
মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে জবাব দেয় ছেলেটি।
কেমনযেন ঘোর ঘোর লাগছে ওর, মনে
হচ্ছে দুঃস্বপ্ন, এখনই ঘুম থেকে উঠবে।
মেয়েটি বলে,
-আমি মিলিকে বলেছি। মিলি বলল আর
কয়েকদিনদেখতে, তারপর যেটা ভালো মনে
হয় আমার, সেটা করতে বলল।
মিলি ওর সবচেয়ে কাছের বান্ধবী। ওর সাথে
সবকথাই শেয়ার করে মেয়েটা। ওই মেয়েই বা
এত বেকুব কিভাবে হয় যে ইকবালের মত
একজনপ্লেবয়ের ব্যাপারে হ্যাঁ বলে?? বাসায়
ফিরে আসার পথে একটা কথাও বলে না ছেলেটা।
মেয়েটার মুচকি মুচকি হাসিও খেয়াল করে না।
মেয়েটা ঠিক করেছে আর ২ মাস পর সে
নিজেইছেলেটার কলার চেপে ধরে ‘ভালবাসবি কি
না বল’ টাইপ হুমকি দিবে... ছেলেটা যে লাজুক,ওর
আশায় বসে থাকতে গেলে নাতি নাতনি হওয়ার বয়স
হয়ে গেলেও লজ্জা ভেঙ্গে মুখ ফুটেবলতে
পারবে না ভালবাসি। গত ৩ বছরে এই ছেলেটার নাড়ি
নক্ষত্র তার জানা হয়ে গেছে।কিন্তু যেরকম চুপ
মেরে গেল, ভয় হচ্ছে, এখনই না পাগলামো
শুরু করে দেয়।
রাতে মেসে আসার পর গুম হয়ে একটার পর
একটাসিগারেট খেতে থাকে ছেলেটা। এত দিন
ধরে রাতের পর রাত ভোর সকাল পর্যন্ত কথা
বলা, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন,কিছুক্ষণ পর পর
মেসেজ, এত শেয়ারিং কেয়ারিং, এগুলো কি
“জাস্ট ফ্রেন্ড” এর জন্যছিল?? রাতে সুন্দর চাঁদ
দেখে “জাস্ট ফ্রেন্ড”কে মনে পড়ে??
“জাস্ট ফ্রেন্ড”রামেয়েদের দিকে তাকালে কি
ওরকম ভয়ঙ্করভাবে ক্ষেপে ২ দিন কথা বলা বন্ধ
রাখতে হয়?? কোনপ্রশ্নের জবাবই ছেলেটা
খুজে পায় না। বন্ধুরা এসে জিজ্ঞেস করে, কি
হয়েছে। খুলে বলেছেলেটা। সারাজীবন
মারামারি ভয় পেয়ে আসা ছেলেটা ইকবালকে
মারারও পরিকল্পনা করে।বন্ধুরা ক্ষেপে যায়
মেয়েটার উপর। ছেলেটার পছন্দের কথা তখনি
বলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়তারা। মেয়েটাকে
ফোনও দেয়া হয়। মেয়েটা অপরিচিত নাম্বার
থেকে কল এসেছে দেখে রিসিভই করে না।
ছেলেটার নাম্বার থেকে কল দেয়া হয়।
মেয়েটামোবাইল হাতে নিয়ে দেখে
ছেলেটার ফোন। হেসে ফেলে মেয়েটা।
এখনই অস্থির হয়ে গেছে এইপাগলটা।
(গল্পটা এখানেই শেষ। অনেক ভাবেই
শেষটুকবর্ণনা করা যায়। ট্র্যাজেডি হবে না কমেডি
হবে সেটা যার যার কল্পনার উপর। এমন হয়তহয়,
মেয়েটাকে পরে ছেলেটার বন্ধুরা জানিয়ে
দেয় ছেলেটার কান্ডকীর্তি। অথবা
ছেলেটাইআর সহ্য করতে না পেরে
মেয়েটাকে বলে দেয় তার এতদিন ধরে
বুকের ভেতর জমানো সব কথা।মেয়েটা
ছেলেটাকে এত দেরি করে বলার জন্য
শাস্তিস্বরূপ তার সেই “কাঙ্খিত” ঝাড়ি দিয়েআপন
করে নেয়। দুজনে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন
দেখে। খুনসুটিতে মেতে থাকে সারাক্ষন।
সেইডাকু কিন্তু লক্ষ্মী মেয়েটা সেই আড়ষ্ট
ছেলেটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নেয়।
দুজনেহয়ত দুজনকে ঘিরে স্বপ্নের জাল বুনে
যায়। ভাল একটা জব হয় ছেলেটার, সুন্দর একটাসংসার
হয় তাদের, ছোট শিশুর হইচই চিৎকারে মুখরিত হয়
তাদের স্বপ্নের ছোট্ট বাসা।নম্র, ভদ্র সেই
ছেলেটি তার রূপকথার রাজকন্যাকে নিয়ে সুখে
শান্তিতে বসবাস করতেথাকে।
অথবা তার ২ দিন পর আকস্মিক সড়ক দুর্ঘটনা
কেড়েনেয় তাজা কিছু প্রাণ। তার মধ্যে
মেয়েটাও থাকে। হয়ত ছেলেটা মিলির কাছ
থেকে পরেজানতে পারে মেয়েটিকে ইকবাল
কখনও প্রোপজই করে নি, এই কথা মেয়েটি
ছেলেটিকে শুধুঈর্ষান্বিত করার জন্যই বলেছিল।
মেয়েটা সেই ছেলেটাকে সত্যি সত্যিই
ভালবাসত। ছেলেটিরবন্ধুরাও আর মেয়েটিকে
জানাতে পারে না ছেলেটির অব্যক্ত কষ্ট, একা
একা আকাশের দিকেচেয়ে থাকার গল্প, ফোনে
মেয়েটির একদিন কান্না শুনে সারারাত মন খারাপ
করে বারান্দায়গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকার গল্প... রাত
৩ টায় রাস্তায় উদ্ভ্রান্তের মত অনেকদুর
হেঁটেমেয়েটার বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার
গল্প... মেয়েটার জানালার দিকে এক
দৃষ্টিতেতাকিয়ে থাকার গল্প... বন্ধুরা মিলে
ছেলেটাকে বাসায় রাত ৩ টায় জোর করে নিয়ে
আসার গল্প...
কিছু কিছু গল্প অপ্রকাশিতই থেকে যায়সারাজীবন।
কেউ জানতেও পারে না সেই সব অপ্রকাশিত
গল্পের পেছনের বুকফাটা কান্নারকথাগুলো।
তারপর হয়ত কলেজলাইফে নিরীহ গল্পের
বইপাগলনম্র, ভদ্র ছাত্র হিসেবে পরিচিত সেই
ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে পরিচিতি
পায়বেপরোয়া ছেলে হিসেবে।
হয়ত যে জিনিসটাকে ভিত্তি করে সে তার
ভবিষ্যৎস্বপ্নগুলো সাজিয়েছিল, তার সব লক্ষ্য ঠিক
করেছিল, সেই ভিত্তি সরে যাওয়াতে তার
কাছেজীবনটা এখন স্বপ্নহীন, লক্ষ্যহীন।
স্বপ্নহীন জীবনের অসহ্যরূপ তার দেখা হয়ে
গেছে... কিভাবে লক্ষ্য ছাড়া বেঁচে থাকতে
হয়, তা হয়ত সে শিখে গেছে...
জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে এড়ানোর বৈধ অবৈধ
অনেকচেষ্টা করলেও মাঝে মাঝে কোন ছবি,
কোন পুরনো স্মৃতিময় গান, অথবা পূর্ণিমা
রাতেরসুন্দর চাঁদটা সেই ছেলেটাকে বাস্তবতার
সামনে ধাক্কা দিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।অমাবস্যায়
সে মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে চেনার
চেষ্টা করে, তার স্বপ্ন এখনআকাশের কোন
তারাটা হয়ে জ্বলজ্বল করছে। হয়ত চোখ ঝাপসা
হয়ে আসে, আবার সামলে নিতে হয়,কাউকে
চোখের পানি দেখানো যাবে না, তাহলে তো
আর তার ক্যাডারিজম এর দাম থাকে না।আবেগটা
বুকে পাথরচাপা দিয়েই হয়ত চলতে হয়। এভাবেই
হয়ত তার দিন কেটে যেতে থাকে...)
এটা সম্পূর্ণ আপনাদের ইচ্ছা, আপনারা
কোনসমাপ্তিটাকে বেছে নিবেন। তবে একটা
কথা বলে রাখা ভালো, বাস্তব জীবন অনেক
কঠিন।এখানে গল্পের ঠুনকো আবেগ কার্যকর
না।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now