বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
নাজনীন সুলতানা একজন গৃহবধূ। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দুরন্ত। তার জেদের কাছে সবসময় হার মানতাো তর বাবা-মা। সেই চপলা, চঞ্চলা মেয়েটি এখন গৃহবধূ। আর আগের সেই চাঞ্চল্য এখন নেই বললেই চলে। কারণ, এখন তাির চিরসাথী একটি হুইলচেয়ার। বন্দী জীবনে হাপিয়ে উঠলে মাঝেমাঝেই কল্পনা করেন আনন্দ, বেদনা মেশানো পুরনো সেই স্মৃতিগুলো।
তার ছোটবেলার পুরোটা কেটেছে গ্রামে। প্রাইমারির পাট শেষ করে গ্রামেরই এক কোচিং সেন্টারে ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছিলেন। সেখানে ফার্স্ট গার্ল হিসেবে তিনি ছিলেন সবার হিংসার কারণ। সেই কোচিংয়ে একমাত্র একজনই ছিল যে তার সাথে প্রায় প্রতিটা বিষয়েই টক্কর লাগাতো। সে ছিলো বয়েজ শাখার ফার্স্ট বয়। সে আসার পর থেকেই নাজনীনের প্রথম হারের শুরু। আগে তার রেজাল্ট কেউ টপকাতে পারতো না। সেই ছেলেটা সবসময় চাইতো সবক্ষেত্রে সবার আগে থাকতে। নাজনীনও ছেড়ে দেবার পাত্রী নন।
একবার কোচিংয়ের এক পরীক্ষায় অংকে নাজনীনের চেয়ে কম নাম্বার পেলো। নাজনীন ছেলেটাকে বললো,"এরপর থেকে আমার সাথে টক্কর নিতে আসবিনা। দেখলি তো আমিই বেস্ট।" ছেলেটা নাজনীনের কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে যায়। সেইদিনই নাজনীন বাসায় যাওয়ার পথে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল, ছেলেটা দেখেছিলো। ছেলেটা নাজনীনকে জব্দ করার ফন্দি আটলো। কোচিং ক্লাসের দেয়ালে বড়বড় করে সে লিখলো-
"জলপরী নাজনীন কাদায় পড়ে যায়
কাদায় পড়ে পা ভেংে নিজেকে রাঙায়।"
কোচিংয়ের সবাই লেখাগুলো পড়ে নাজনীনকে খেপাতে শুরু করে, তাকে দেখলেই সুর করে সবাই ওই ছড়াটা বলে। ভীষন রেগে গিয়ে নাজনীন কোচিংয়ের স্যারের কাছে ছেলেটার নামে নালিশ করে। স্যার ছেলেটাকে ভীষন মেরেছিল। ব্যথার যন্ত্রণায় ছেলেটা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কোচিংয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে, ছেলেটার অসুস্থতার কথা শুনে নাজনীনের নিজেকে অপরাধী মনে হতে থাকে। বারে বারেই মনে হয় এই সামান্য কারণে স্যারের কাছে বিচার না দিলেই ভালো হতো। ছেলেটাকে না দেখতে পেয়ে তার মনে কেমন যেন অস্বস্তি হতে থাকে।
এরপর একদিন নাজনীন ছেলেটার বাসায় গেলো। ছেলেটার কাছে ক্ষমা চাইতে। গিয়ে দেখে জ্বরে ছেলেটা একদমই শুকিয়ে গেছে। অন্যদিকে, ছেলেটা নাজনীনকে দেখেই মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। নাজনীন বারবার ক্ষমা চাওয়ার পরেও তার রাগ কমছিল না। একপ্রকার বাধ্য হয়েই নাজনীন ছেলেটাকে হুমকি দিলো, "ভালোয় ভালোয় ক্ষমাটা করে দে। নাহলে, তোর এমন অবস্থা করবো যাতে তোকে হসপিটালে যেতে হবে। এবার তো শুধুমাত্র জ্বর হয়েছে পরেরবার পিঠের ছাল তুলে দেবো।"
নাজনীনের কথা শুনে ছেলেটা ভয় পেয়ে ক্ষমা করে দেয়। কারণ, ছেলেটা জানতো যে, রেগে গেলে নাজনীন যা খুশি করতে পারে। তবে ঝগড়া দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে সেই ছেলেটাই নাজনীনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে যায়। তাদের দুজনের একজনকে ছাড়া অন্যজনের চলতো না। কিন্তু হঠাৎ একদিন নাজনীনের বাবা সেখান থেকে বদলি হয়ে সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে গেলেন। যাওয়ার মুহূর্তটাতে ছেলেটা নাজনীনের দিকে অদ্ভুত করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। দুজনেই ভেবেছিল যে, তারা একে অপরের থেকে সারাজীবনের জন্য আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
এরপর অনেকগুলো বছর কেটে গেল। নাজনীন তখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। তবুও সেই ছেলেটার কথা নাজনীনের আজো মনে পড়ে।কয়েকদিন ধরেই সে লক্ষ্য করছে একটি ছেলে প্রত্যেকদিন তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। প্রতিদিন এভাবে তাকাতে দেখে একদিন সে প্রচন্ড রেগে ছেলেটার সামনে গিয়ে বললো, "সমস্যা কি আপনার? অনেকদিন থেকেই খেয়াল করছি আপনি আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন। আজকের পর যদি আবারো দেখি আমার দিকে ওভাবে তাকাতে তাহলে আপনার চোখ আমি উপড়ে ফেলবো।"
ছেলেটা শান্তভাবে বললো, "সেই ক্ষমতা যে আপনার আছে সেটা আমি অন্তত হাড়ে হাড়ে জানি। রেগে গেলে আপনি পৃথিবীও ভস্ম করে দিতে পারেন।" নাজনীন কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করলো, "আর কি কি জানেন আমার সম্বন্ধে?" ছেলেটা বললো, "আপনার নাম নাজনীন তাইনা? আপনি ছোটবেলায় গ্রামে থাকতেন। গ্রামেই প্রাইমারি সেকশনের পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় এসেছেন।" নাজনীন হতভম্ব হয়ে ছেলেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, তুমিই সেই নিলয় তাইনা? তোমাকেই তো আমি রাগ করে স্যারের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছিলাম!"
নিলয় উত্তর দিলো," জী ম্যাডাম, আমিই সেই।" আনন্দে আত্মহারা হয়ে নাজনীন নিলয়কে জড়িয়ে ধরলো, কোনোদিকে হুশ নেই তার। নিলয় হেসে বলে উঠলো, "কি করছো তুমি!! এটা কলেজ ক্যাম্পাস, সবাই দেখছে।" লজ্জায় তক্ষুনি নাজনীন দৌড়ে পালিয়ে গেল। তারপর থেকে তাদের সম্পর্ক আরো গভীর হতে লাগলো। কলেজের বন্ধু থেকে নাজনীন একসময় নিলয়ের সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে গেল। ভালোবাসায় আর খুনসুটিতে তাদের দিনগুলো কাটতে থাকে। এভাবে কয়েকবছর পর তাদের সম্পর্কটা জানাজানি হয়ে যায়। দুই পরিবারের কেউই তাদের জীবনে বাধা হয়ে দাড়ায়নি। কারণ, দুই পরিবারই আর্থিকভাবে যথেষ্ট সচ্ছল।
অবশেষে নিলয় আর নাজনীনের সম্পর্ক পারিবারিকভাবে জোড়া লাগে। বিয়ের পরেও তাদের দিন কাটতে থাকে আগের মতো খুনসুটি করে। ভালোবাসা আর খুনসুটিতে ভরা তাদের সংসার। এরইমধ্যে একদিন দুজন মিলে বেড়াতে যায় কক্সবাজারে। প্রচুর আনন্দে সেখানে কয়েকটা দিন কাটিয়ে বাসায় ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করে তারা। এক্সিডেন্টে প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে নাজনীনের কোমরের একটি হাড় ভেঙে যায়। যার ফলে নাজনীন হারিয়ে ফেলে হাটা চলার ক্ষমতা। আর পথের পাশে থাকা একটা পাথরে নিলয়ের হাত ভেঙে যায়। পরে প্লাস্টিক সার্জারি করেও কোনো লাভ হয়নি। তাই এখন তাদের দুজনকেই বরণ করে নিতে হয়েছে এক প্রকারের বন্দী জীবন।
তবুও তাদের জীবনে ভালোবাসা আর সুখের কোনো কমতি নেই। দুজন দুজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সারাজীবন।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Suborna Akhter Zhumur
User ৬ বছর পুর্বেআনোয়ার হোসেন
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেSuborna Akhter Zhumur
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেআনোয়ার হোসেন
User ৬ বছর, ২ মাস পুর্বেশাকিম
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেsuborna akhter zhumur
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেশাকিম
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেশাকিম
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেRJ Raj
Golpobuzz ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেDristi Afroz
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেRJ Raj
Golpobuzz ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বে