বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
এলেবেলে
..
..
- দোস্ত তুই কি কখনো সিরিয়াস হবিনা?
কলেজের মাঠে বসে আছি। হঠাৎ পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। একটু আগেই হোটেলে বিরিয়ানি খেয়ে এসেছি। খাওয়ার সময় লক্ষ করেছি হোটেলের মালিক আক্কাস মিয়া জ্বলজ্বল করে আমার খাওয়া দেখছিল। আমার মা বলে অপরিচিত কেউ যদি খাওয়ার সময় তাকিয়ে থাকে তাহলে নাকি নজর লাগে। আর নজর লাগলেই নাকি পেট ব্যাথা করে।
নিশ্চয়ই ওই হারামি আক্কাসের নজর লেগেছে। ছোটঘরে বড় কাজ করার ইচ্ছে নিয়ে যেই আমি উঠতে যাচ্ছি তখনই আমার পাশে বসে থাকা আমার বাবুনি তরী বলে উঠলো উপরের কথাগুলো। ওর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে।
- কিরে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? (তরী)
- কি বললি তুই একটু আগে? (আমি)
- বললাম তুই কি জীবনেও কোন ব্যাপারে সিরিয়াস হবি না?
- কে বললো আমি কোনো ব্যাপারে সিরিয়াস না? আমি এখন একটা ব্যাপার নিয়ে খুবই সিরিয়াস।
এইকথা শুনে তরী আমার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
- কোন ব্যাপার নিয়ে সিরিয়াস দোস্ত?
- এখন আমি ওয়াশরুমে যাওয়া নিয়ে খুবই সিরিয়াস। এখনই ওখানে না গেলে ইজ্জতের চাকা ঠাস করে ফেটে যাবে।
একথা বলেই আমি দৌড় লাগালাম ছোটঘরে। আমি জানি তরী এখন রাগে গজগজ করছে।
..
কার্যসম্পাদন শেষ করে আমি ছুটলাম আক্কাসের হোটেলে। হারামীকে দুই একটা কথা শোনাতে হবে। নজর দিয়ে আজ আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে।
- ওই আক্কাস ভাই এদিকে আসেন।
আমার ডাক শুনে সে তার পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে একটা দেঁতো হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো।
- কি কইবেন জলদি কন। অনেক কাম বাকী।
- ধূর মিয়া রাখো তোমার কাজ। আগে আমাকে একশো ত্রিশ টাকা দাও।
- কেন ভাই টেকা দিমু কেন?
- কথা বেশি না বলে টাকা দাও।
আক্কাস আর কোন কথা না বলে ক্যাশ থেকে একশো ত্রিশ টাকা আমার হাতে দিল।
আমি টাকা পকেটে পুরেই কলেজের দিকে হাঁটা দিলাম। পেছন থেকে আক্কাস মিয়া আমাকে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু এখন কিছু সময়ের জন্য আমি বধির হয়ে গেছি।
হারামীর কারনে আমার পুরো একশো ত্রিশ টাকা ছোটঘরে গেছে। টাকাটা পুরো উশুল করে এখন মনে একটা ফুরফুরে ভাব এসেছে।
..
আবার গিয়ে তরীর পাশে বসে পড়লাম। তরী আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এই মেয়ের ভ্রু কুঁচকানো দেখলেই বুকে কেমন যেন একটা অনুভূতির জন্ম হয়।
- কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? (আমি)
- এতক্ষন লাগলো আসতে? (তরী)
- কি করবো বল? একশো ত্রিশ টাকার ব্যাপার। একটু তো দেরি হবেই।
- মানে কি?
- মানে দিয়ে তুই কি করবি?
- আচ্ছা তোর কি মনে হয় আমার বাবা মা তোর কথা শুনে আমাকে তোর কাছে বিয়ে দেবে?
- আমার কথা শুনে তোকে আমার কাছে বিয়ে দিতে তারা বাধ্য।
- এত আত্মবিশ্বাসের সাথে কিভাবে বলছিস এটা?
- আমার আত্মবিশ্বাসের কারন হচ্ছিস তুই। তুই আমাকে পাগলের মত ভালবাসিস আর এটাই হচ্ছে আমার আত্মবিশ্বাসের কারন।
- ও তাই বুঝি?
- হুম তাই।
- আর তুই বুঝি আমাকে ভালবাসিস না?
- অবশ্যই ভালবাসি। তুই ভাল করেই জানিস আমি তোকে কতটা ভালবাসি।
- এতই যখন ভালবাসিস তাহলে আমার বাবা মাকে গিয়ে আমাদের সম্পর্কের কথাটা বল।
- বলবো তো অবশ্যই। তার আগে আমার বাবা মাকে বলতে হবে।
- তা বলছিস না কেন?
- হুম ভাবছি আজই বলে দেব।
- এইতো আমার লক্ষী দোস্ত।
- এই আমরা আজ প্রেম করছি দেড় বছর হয়ে গেল। তুই এখনো আমাকে দোস্ত বলিস কেন?
- কারন আমাদের সম্পর্কের শুরুটাই হয়েছে এখান থেকে।
..
নাহ এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারলাম না। আমি চেয়েছিলাম আরো কিছুদিন পর আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা বাবা মাকে বলবো। কিন্তু তরীর কথার জ্বালায় আর পারলাম না। তাই ঠিক করলাম আজই আমাদের ব্যাপারে বাসায় আলাপ করবো।
..
আম্মু রান্নাঘরে ছিলেন। আমি কলেজ থেকে ফিরে সোজা রান্নাঘরে ঢুকলাম।
আম্মু আমাকে দেখেই বলে উঠলেন,
- কি লাগবে বল?
- কি লাগবে মানে?
-ন্যাকামি করবি না একদম। কি লাগবে বলে সোজা কেটে পড়।
- মানে ইয়ে....
- আমতা আমতা করছিস কেন? কোন কুকর্ম করে এসেছিস বলতো শুনি।
- না মানে আম্মু আমি বিয়ে করতে চাই।
আম্মু তখন তরকারি নাড়ছিলেন। আমার এই কথা শুনেই তিনি একেবারে জমে গেলেন। দেখে মনে হয় স্ট্যাচু অব রাঁধুনি হয়ে গেছেন।
তারপর তিনি আমার দিকে কটমট করে তাকালেন। লক্ষন সুবিধার নয় বুঝতে পেরেই আমি চম্পট দিলাম।
কিছুক্ষন পরেই রান্নাঘর থেকে জোরে জোরে হাড়ি পাতিলের টুংটাং শব্দ শুনতে পেলাম। ঝড় উঠার পূর্বলক্ষন।
তবে স্বস্তির কথা একটাই, এখন আম্মু আমাকে কিছুই বলবেন না যতক্ষন পর্যন্ত আব্বু না আসবে।
কিন্তু রান্নাঘরে টুংটাং শব্দ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে লাগলো। বুঝতে পারলাম আজ হয়তো আব্বু আসার আগেই আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাবে। তাই নিরাপদ থাকার উদ্দেশ্যে আমার শোবার ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম।
সমস্যা একটাই, আমার ঘর থেকে আম্মুর গলা শোনা যাচ্ছে। আম্মু হাতে না মারলেও কথায় ঠিকই মারতে পারবে। তাই এর সমাধান হিসেবে কানে হেডফোন লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো তরীর মায়বী চেহারাটা।
মনে পড়ে গেল তরীর সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা।
..
আমি এবং তরী তখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। তরী আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী এবং সবচেয়ে শান্ত মেয়ে। আমি খুব কম মেয়ে দেখেছি যারা সুন্দর কিন্তু শান্ত।
আর তরীর ঠিক উল্টো। ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বান্দর ছেলে আমি। যদিও এই উপাধি প্রদানকারী আর কেউ নয় আমাদের ডিপার্টমপন্টেরই কিছু মেয়ে।
তো সেদিন ছিল ভালবাসা দিবস। আমার সকল বন্ধুদেরই কমবেশি গার্লফ্র্যান্ড ছিল। শুধুমাত্র আমি ছাড়া। তো ভালবাসা দিবসে সবাই আমাকে চেপে ধরলো যে আজকে যেকোন একজন মেয়েকে আমার প্রোপোজ করতেই হবে।
প্রথমে আমি না করেছিলাম। কিন্তু বন্ধুরা সব নাছোড়বান্দা। অবশেষে রাজি হলাম। কিন্তু প্রোপোজ করবো কাকে?
এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলো আমার সবচেয়ে শয়তান বন্ধু রাফি। সে আমার চোখ বেঁধে দিল। তরপর আমাদের ডিপার্টমেন্টের কয়েকটা মেয়ের নাম কাগজে লিখে আমার সামনে রাখলো। ঠিক হলো যেই মেয়ের নাম আমি উঠাবো তাকেই প্রোপোজ করতে হবে।
..
একটা কাগজ উঠালাম। কাগজে তরীর নাম উঠলো। কিন্তু তরীকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। যাক বাঁচা গেল।
কিন্তু নাহ! আমার খুশিতে পানি ঢেলে দিয়ে তরী এগিয়ে আসছে। তার পরনে শাড়ী। শাড়ীতে তরীকে লাগছিল পরীর মত। আমার বন্ধুরা আমাকে ঠেলে পাঠিয়ে দিল তরীর সামনে। হাতে ধরিয়ে দিল একটা লাল গোলাপ।
আমার তখন হাঁটু কাঁপছিল। জীবনে কোন মেয়েকে প্রোপোজ করিনি। তাই একটু নার্ভাস লাগছিল।
- তরী কেমন আছো?
তরী তখন একটা গাছের নিচে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি প্রশ্ন করতেই আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো।
- ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
- এইতো আছি কোনরকম।
এইটুকু কথা বলেই দুজনে নিরব। তরী আমার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি কিভাবে কি বলবো তাই ভেবে পাচ্ছি না। তারপর তরীই বলে উঠলো,
- আরমান এই ফুলটা কি আমাকে দেওয়ার জন্য এনেছো?
এই প্রশ্নে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ফুলটা তাহলে দেখেই ফেলেছে। এখন কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না।
-- কি ব্যাপার আরমান কিছু বলবে নাকি?
আবারো মাথায় গোলমাল দেখা দিল। মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। অনেক কষ্টে হাতের ফুলটা তরীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,
- তরী আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
তরী কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বললো,
- হতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে।
- কি শর্ত?
- আমরা একে অপরকে তুই করে বলবো। রাজি আছো?
- হুম রাজি আছি।
- তাহলে হাত মেলাও।
তরী আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। আমিও হাত বাড়িয়ে দিলাম। শুরু হলো আমাদের বন্ধুত্বের পথচলা।
পরে অবশ্য বন্ধুদের মিথ্যা বলেছিলাম যে, আমি তরীকে প্রোপোজ করেছি আর সে তা গ্রহন করেছে।
..
- ভাইয়া তাড়াতাড়ি আয়। আব্বু তোকে ডাকে।
আমার ছোট ভাই আবিরের ধাক্কায় অতীত থেকে বর্তমানে অবতরন করলাম। আবিরকে দেখে আমি অতি আশ্চর্য। আমি তো দরজা আটকে দিয়েছিলাম। তাহলে অাবির ভেতরে ঢুকলো কিভাবে?
- কিরে আবির ভেতরে ঢুকলি কিভাবে?
- কেন দরজা দিয়ে ঢুকেছি।
বুঝতে বাকি রইলো না যে আমি ভুল করে দরজা লাগাতেই ভুলে গেছি।
..
আমি খাটের পাশে দাঁড়িয়ে আছি। আব্বু খাটের কিনারায় বসে পা দোলাচ্ছেন, আম্মু খাটের মাঝখানে আসন গ্রহন করেছেন আর আমার ছোট ভাই আমার দিকে তাকিয়ে দাঁচ কেলাচ্ছে।
- কিরে তুই নাকি বিয়ে করবি? (আব্বু)
- (আমি নিশ্চুপ)
- কিরে কথা বলিস না কেন? (আব্বু)
- (আমি নিশ্চুপ)
- কিরে নবাবের বেটা মার সামনে তো ঠিকই বিয়ের কথা বললি এখন চুপ কেন? (আম্মু)
- তুই কি বিয়ে করতে চাস? (আব্বু)
- (মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম, চাইনা বিয়ে করতে)
- বলিস কিরে? বিয়ে করবি না? আমি যে তরীর বাবার সাথে তোদের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ করে আসলাম। এখন তার কি হবে?
এই কথা শুনে আমার শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। বাবা তরীর ব্যাপারে জানলো কিভাবে? আমি আব্বুর দিকে জীজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম। বাবা আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে বললেন,
- তোদের দেখেছিলাম সেদিন পার্কে। দেখেই বুঝেছিলাম তোরা একে অপরকে ভালবাসিস। তাই আজ যখন তোর মা আমাকে ফোনে তোর বিয়ে করার কথা বললো তখনই তরীদের বাসায় গিয়ে ওর বাবা মার সাথে কথা বলে আসলাম। ওরা সবাই রাজী আছে।
..
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! কিছুদিনের মধ্যেই তরী আমার, আমি তরীর।
..
লেখকঃ আরমান হোসেন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
Dristi Afroz
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেDristi Afroz
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেDristi Afroz
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেJoy
Guest ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেEva ahmed
User ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বেmd jahidul islam
Guest ৬ বছর, ৩ মাস পুর্বে