বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
স্নেহা ফেইসবুকে নতুন। সবেমাত্র
একাউন্টটি ক্রিয়েট করেছে। সে নিজে
একাউন্ট খুলতে পারে না। তাই তার এক
খালাতো ভাই আইডি টি খুলতে তাকে সাহায্য
করেছে। আইডি খুলার সময় খালাতো ভাই
মুহিত ওরে ফেইসবুকের ভাল খারাপ দুটি
দিক সম্বন্ধে পরামর্শ দিয়েছে। তার
আদরের খালাতো বোনটি যাতে ফেইসবুকের
নোংরা ছেলেদের দ্বারা লাঞ্চিত না হয় সেজন্য
রিয়েল নাম না দিয়ে " রাজকুমারী চন্দ্রাবতী " দিয়েছে। সেই সাথে তাকে আরও কিছু উপদেশ দিয়েছে।
যেমন, অচেনা অজানা কাউকে ফ্রেন্ড
না করতে, নিজের অরিজিন্যাল ফটো
আপলোড না দিতে। আর কত কিছু।
স্নেহারা এক ভাই এক বোন। ভাইটি সবে
মাত্র এইসএসসি পাস করে অর্থনীতিতে
অনার্স শুরু করেছে। তার নাম "রবিন"।
আর স্নেহা ইন্টার ফ্রাস্ট ইয়ারে। তারা মধ্যবিত্ত ফেম্যালির সদস্য। পরিবারের
কর্তা অর্থাত তাদের বাবা সাধারন একটা
ফার্মে চাকরি করেন। মা গৃহের কাজকর্ম
নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত।
স্নেহা প্রথম দিনেই অনেক ছেলের ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পেল। প্রায় শতখানেক। তার
মধ্যে মেয়েদের রিকুয়েষ্ট সামান্য।
প্রথম দিন তো, তাই সে সব গুলো
রিকুয়েষ্ট গ্রহন করে ফেলল। খালাতো
ভাইয়ের কথাটি মাথায় রেখে সে তার নিজের
পিকচার দিল না। প্রোফাইল পিকচারে একটা
বেবির ফটো দিয়ে রাখল। পিকচার টা সে গুগল
থেকে ডাউনলোড করেছিল। এই একটি পিকচার
ছাড়া তার প্রোফাইলে আর কোন পিকচার ছিল না।
দিন যায় দিন আসে। সে ধিরে ধিরে ফেইসবুকের অনেক কিছু শিখে ফেলেছে।
ব্লক করা থেকে পোক মারা। ইতিমধ্যে তার
অনেক ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। প্রায় হাজার বারোশতের মত হবে। এই সময়ের ব্যবধানে অনেকের সাথে তার সখ্য ঘড়ে উঠেছে। কাউকে
ছোট ভাই, কাউকে আবার বড় ভাই, আংকেল, মামা ইত্যাদি রিলেশ্যান স্ট্যাটাস দিয়ে ফেম্যালিতে
এড করেছে।
আজ রাজকুমারী চন্দ্রাবতী (স্নেহা) ফেইসবুকের একজন কড়া ইউজার। ফেইসবুকের সব বিষয়ে অভিজ্ঞ। একথায় পাকা একজন ইউজার। তার প্রতিদিনকার স্ট্যাটাস
সবার স্ট্যাটাসকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চারদিকে
তার প্রচন্ড নামডাক। ফেইসবুক সেলিব্রেটি " রাজকুমারী চন্দ্রাবতী" । এই এত দিনের ব্যবধানেও সে কাউকে তার আপন পরিচয়
দেয় নি। এমন কি তার বাসা, এডুকেশ্যান
সব কিছু গোপন রেখেছে। এমন কি কার
পরিচয় জানার চেষ্টা করে নি
সেদিনকার বারটির নাম সোমবার। কলেজ
খোলাই ছিল। তবে প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে
কলেজ যাওয়া হয় নি। তাই সে কম্বলমুড়ি
দিয়ে ফেইসবুক চালাচ্ছিল। এমন সময়
" অতঃপর আমি" নামে একটা একাউন্ট
থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট এলো। ও ফ্রীই
ছিল। তাই একাউন্টটি নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু
করে দিল। অন্য সময় হলে সে তা করতো না।
এটা তার অভ্যাসের মধ্যে নেই। কিন্তু আজ
তার ব্যতিক্রম ঘটলো।
একাউন্টটি ছিল একটা ছেলের। একাউন্টে কোন ধরনের ইনফরমেশ্যান দেওয়া ছিল না। এমন
কি ছেলেটির নিজের পিকচার পর্যন্ত না। শুধু বার্থডেট এবং জেন্ডার ছাড়া। সে একটা হিসেব করল। ছেলেটি তার
থেকে তিন বছরের বড়। ছেলেটির
টাইমলাইনের অবস্তা মোটামুটি ভালোই।
দৈনিক একটা করে পোষ্ট করে এবং সেই
পোষ্ট গুলো ছিল মান সম্মত। তাই সে
আর দেরী না করে রিকুয়েষ্ট টা গ্রহন
করে নিল।
কিছুদিন স্বাভাবিক ভাবেই চলতে থাকল।
ছেলেটি তার প্রতিটা পোষ্টে লাইক কমেন্ট
করে তাকে উত্সাহ দিতে থাকল এবং সেও
ছেলেটির প্রতিটা পোষ্টে লাইক কমেন্ট
করে তাকে বদলা দিল।
এভাবে কিছুদিন চলার পরে সে দেখল যে ছেলেটি থাকে
ম্যাসেজ করেছে।
অতঃপর আমি: কেমন আছেন?
রাজকুমারী চন্দ্রাবতী: জ্বি আমি ভাল আছি।
আপনি কেমন আছেন?
অতঃপর: আলহামদুল্লিলাহ আমি ভাল আছি।
কি করছেন?
চন্দ্রাবতী: শুনে অনেক খুশি হলাম। কিছুই
করছি না। বৃষ্টির কারনে কলেজ যেতে পারি নি। তাই বাসায় বসে আপনাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। আপনি কি করছেন?
অতঃপর: আমিও আপনার মত। তবে আমার
ভার্সিটি বন্ধ। ভাল কথা, আপনি কোন ইয়ারে?
চন্দ্রাবতী: আমি ইন্টার ফ্রাষ্ট ইয়ার।
অতঃপর: ও... তাহলে তো আপনি আমার থেকে
বয়সে অনেক ছোট হবেন?
চন্দ্রাবতী: হ্যা। আমি আপনার থেকে বয়সে
তিন বছরের ছোট।
অতঃপর: হুম.. আপনার স্ট্যাটাস গুলো দেখলে কিন্তু সেই রকম মনে হয় না। মনে হয় অনেক বড় কেউ স্ট্যাটাস গুলো দিয়েছে। আপনার প্রত্যেকটি স্ট্যাটাস কিন্তু সৃজনশীল এবং
রুচি সম্মত। সত্যি আপনার লেখার হাত খুব ভাল।
চন্দ্রাবতী: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনিও কিন্তু কম না।
আপনার স্ট্যাটাস গুলো ও কিন্তু জোস হয়। এককথায় অসাধারন।
অতঃপর: হা হা হা। নিশ্চয় পাম দিচ্ছেন?
আমার কিন্তু সেরকম মনে হয় না। আমি
জানি আমার লেখার হাত ভাল না। যাই হোক,
আপনি কি টুকটাক লেখালেখি করেন নাকি?
চন্দ্রাবতী: আশ্চর্য!!! আমি আপনাকে
পাম দিতে যাব কেন!! যা সত্য তাই বললাম।
আমি লেখালেখি করি না। কারন আমি জানি আমার দ্বারা এসব সম্ভব না।
অতঃপর: ওহু.. আপনার মুখ থেকেএসব কথা মানায় না। আপনি লেখালেখি
চালিয়ে যান। আমার বিশ্বাস আপনি একদিন নামকরা লেখিকা হবেন।
চন্দ্রাবতী: লেখিকা না ছাই!! ছাড়েন এসব
কথা। আপনি তো আমার অনেক বড়। তাই
বলছিলাম কি যদি আমাকে আপনি করে না বলে
তুমি করে বলেন তাহলে অনেক খুশি হব।
অতঃপর: আমার আপত্তি নেই। যাই হোক
আজ অনেকক্ষন আলাপ করলাম। পরে
আলাপ করব। আমাকে এখন একটু বেরুতে
হবে। ভিষন তাড়া আছে ।বাঈ! বাঈ! সি ইউ।
চন্দ্রাবতী: আপনার সাথেআলাপ করে অনেক ভাল লাগল। বাঈ!
টেইক কেয়ার।
এভাবে দিনের পর দিন যেতে লাগল। দুজনের সম্পর্কটা আর গাড় হল। এর মধ্যে চন্দ্রাবতীও(স্নেহা) "অতঃপর আমি" কে
তুমি করে বলা শুরু করেছে। অবশ্য এটা "অতঃপর" এর অনুরোধে। কিন্তু দুজন দুজনের কেউই কার পরিচয় নেওয়ার ইচ্ছে
পোষন করেনি। প্রথম দিন যে পরিচয় টুকু হয়েছিল তাই নিয়ে তারা সন্তুষ্ট থাকল। মাঝে
মাঝে ম্যাসেজ হলে একজন আরেকজনের
স্ট্যাটাসের প্রসংশায়পঞ্চমুখ থাকত। এই পর্যন্ত।
একদিন স্নেহা তার খালাতো ভাই মুহিতকে ফোন
দিল।
মুহিত: কেমন আছিস?
স্নেহা: আমি ভাল আছি ভাইয়া। বাড়ির সবাই
কেমন আছে?
মুহিত: হুম.. সবাই ভাল আছে। তা তোর কি
খবর বল। শুনলাম ফেইসবুকে নাকি তোর
খুব নাম ডাক। আমি নিজেও দেখলাম। তোর
লেখা গুলো কিন্তু আশ্চর্য রকমের ভাল হয়।
স্নেহা: তুমিও এই কথা বলছো? আসলে অনেকেই কিন্তু আমার লেখার প্রশংসা করে। সত্যি করে বলতো ভাইয়া আমার লেখাগুলো কি আসলেই ভাল হয়?
মুহিত: হুম। আমি সত্যি করেই বলছি তোর লেখাগুলো কিন্তু অসাধারন হয়। আচ্ছা তুই
এবার বলতো.. তোর পোষ্টের প্রশংসা সব থেকে
বেশি কে করে?
স্নেহা: সবাই করে। তবে "অতঃপর আমি" নামের একটা ছেলে একটু বেশি প্রশংসা করে।
মুহিত: তুই তার নাম জানিস না?
স্নেহা: না। কখনো জিজ্ঞেস করি নি। আসলে ওর সাথে যখন কথা বলি তখন ওর নাম জানার কথা মনেই আসে না। আমি যেন অন্যভুবনে হারিয়ে যাই।
মুহিত: সেকি... এত আবেগ!! তুই তোর
সম্পর্কে তাকে কিছু বলেছিস?
স্নেহা: এডুকেশ্যান আর বয়স ছাড়া কিছুই
বলি নি।
মুহিত: হুম..ভালোই করেছিস। তা প্রশংসা
ছাড়া আর কি কি নিয়ে আলাপ হয়?
স্নেহা: এইতো সে আমাকে বিভিন্ন বিষয়ে
উপদেশ এবং আদেশ দেয়। কি করে লেখালেখিতে উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে টিপস দেয়।
মুহিত: আর কিছু হয় না? হা হা হা।
স্নেহা: ভাই.....য়া।
মুহিত: এই দেখ! লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছে।গুড গুড। দেখিস আবার রোমিওর প্রেমে
পড়ে যাইস না।
স্নেহা: কি জানি ভাইয়া। হয়তো পড়েই যাব। কি রকম একটা আকর্ষন অনুভব করি ওর জন্যে। আচ্ছা ভাইয়া রাখি। বাঈ..
মুহিত ফোনটা পকেটে রাখল। তার কিরকম যেন একটা অদৃষ্ট কষ্ট হচ্ছে। অনুভব করল বুকের বাম পাশে তীব্র চিনচিনে একটা ব্যথা করছে। হাতের তালু দিয়ে চুখের জল মুছলো এবং নিজের অজান্তেই বুকের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ল।
পরেরদিন স্নেহাএফবিতে লগ ইন করল। সে বুঝতে
পারল যে "অতঃপর আমি" এর প্রতি তার
তীব্র একটা আকর্ষন জন্মেছে। তাকে ম্যাসেজ দিতে গিয়ে দেখল সে অনলাইন আছে।
চন্দ্রবতী: মিয়া সাহেব কেমন আছেন?
অতঃপর: এই যে বেগম সাহেবা.. তুমার সাথে
কথা না বলে আমি কি এক মূহুর্ত থাকতে পারি
বল? এতক্ষন তোমার অপেক্ষাই করছিলাম। তুমার কি খবর বল?
চন্দ্রবতী: মিয়া সাহেবের দেখছি আমার প্রতি প্রচন্ড টান।
অতঃপর: সত্যি বলছি গো। তোমার জন্য আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে
গেছে। যতক্ষন পঞ্চ ইন্দ্রিয় সজাগ থাকে ততক্ষন শুধু তোমার কথাই আমার মাথায়
ঘুরপাক খায়। কেন জানি তোমার প্রতি আমি
সর্বদা দূর্বলতা অনুভব করি। কেন বলতে পার?
চন্দ্রবতী: আমারও কিন্তু একই অবস্তা।
আমি তুমার কথা সব সময় ভাবি। যতক্ষন
তোমার সাথে চ্যাটে কথা বলি ততক্ষন মনে হয় যেন আমি অন্য কোন গ্রহে অবস্থান করছি। তোমার কাছে আমারও একই প্রশ্ন..আমার কেন এমন হচ্ছে? খাওয়া,গোসলএমন কি ঘুমুতে গেলেও তোমাকে স্বপ্নে
দেখি। তোমার আসল চেহারা আমি কখনো দেখি নি। কিন্তু আমি আমার মনের কৌটায় তোমার একটা রজ্ঞিন ছবি এঁকে ফেলেছি। ঘুমের ঘোরে সেই
ছবিটাই আমার চুখের সামনে এসে ঘুরতে থাকে। সত্যি... আমি তোমার জন্য অন্যরকম কিছু
ফিল করছি।
অতঃপর: শুধু তুমি একা নাকি! আমিও তোমার
জন্য কিরকম একটা ফিল করছি। একে কি
বলে? আমার জানা নেই। দয়া করে তুমি বল।
আমি আর এই নিরব যন্ত্রনা সহ্য করতেপারছি না। দয়া করে তুমি এর একটা
বিহিত কর। তা না হলে এই অসহ্য
যন্ত্রনা বুকে পুষে আমি মরে যাব।
চন্দ্রাবতী: তুমি কিন্তু সব কিছুই বুঝতে
পারছ। তারপরেও আমার মুখ থেকে শুনতে
চাইতেছ কেন? আমি না মেয়ে? আমার বুঝি
লজ্জা করে না!!
অতঃপর: সত্যি বলছি আমি কিন্তু তোমাকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে দিগ্ববিধিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেছি। আমার মাথা ঠিক মত কাজ করছে না।
চন্দ্রাবতী: আরে.... তাহলে আমাকেই বলতে হবে দেখছি। আচ্ছা তুমি এত বড়
হলে কেমন করে? সারাদিন খেয়ে শুধু মাথাটাই
বড় করেছ। বুদ্ভি বাড়ে নি। নিশ্চয় বুদ্ভির ডাক্তার দেখাতে হবে। একবার পেয়ে নেই। তাহলে মজা দেখাব। মাথাটা ঝাকিয়ে দেখব.. এতদিন ধরে এর মধ্যে কি সংগ্রহ করেছিলে।
অতঃপর: আচ্ছা সে না হয় দেখ। প্লিজ! এবার আমাকে শান্ত কর।
চন্দ্রবতী: সত্যি বলছি আমি তোমার মাথা
ফাটাব। গাধা কোথাকার.... যাও আমি বলব না। ইউনিভার্সেল লাভার কোর্সে দুই একটা ক্লাস নাও। তাহলেই বুঝতে পারবে। গাধা...গাধা...গাধা... একশ টা গাধা। আই ___ ইউ । লাভারকোর্সে ক্লাস করে শূন্যস্থান টা নিজেই পূরন করে নিও। আমি
আর বলতে পারব না। বাঈ.... সি ইউ।
এভাবেই চলতে থাকল তাদের প্রেমের অভিসার। দুজনের কেউই জানে না কে কোথা থেকে কথা
বলছে। কিন্তু তার পরেও মনে হয় একজন আরেকজনের কত কাছে। কেউ কাউকে চিনে না
জানে না। হিন্দু নাকি মুসলিম.. অথচ একজনের প্রতি আরেকজনের সেকি তীব্র টান। একজনের প্রতি
আরেকজনের সেকি ভালোবাসা। আমার পক্ষে
ভাষায় প্রকাশ করা অসাধ্য।
স্নেহা যে ফেইসবুকে ইউজ করে আর ফেইসবুকে
ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে তা কিন্তু বাসার কেউ জানল না। এমন কি স্নেহার খালাতো ভাই মুহিত পর্যন্ত। স্নেহা অবশ্য ইচ্ছে করেই বাসায় তার ফেইসবুক চালানোর কথা জানায় নি। কারন সে জানে, যদি সে কথা বাসায় জানায় তাহলে বিরাট কেলেংকারী বেধে যাবে। এমনিতেই এসএসসিতে প্লাস হয় নি। তার উপরে এখনযদি বাসার সবাই জানে যে, পড়াশোনায়
ফাকি দিয়ে সে ফেইসবুক ইউজে মত্ত। তাহলে
বাসার সবাই নিশ্চই এটা ভাল চুখে দেখবে না। সেসব কথা চিন্তা করে স্নেহা প্রায় চুরের
মতই ফেইসবুক চালাত। স্নেহা অবশ্য জানে
তার বড় ভাই রবিন ফেইসবুক ইউজ করে।
তবে তার একাউন্ট কি সে তা জানে না। বাসায়
রবিন প্রকাশ্যেই ফেইসবুক চালাত। কারন
তাকে কেউ কিছু বলত না। সে বড় হয়েছে। তার উপরে সে ভাল স্টুডেন্ট। ভার্সিটিতে পড়ায়
তারপড়াশোনার চাপ তুলনামূলক ভাবে কম। সচরাচর আমরা যেটা বলে থাকি।
সেদিন শুক্রবার ছিল। তাই রবিন এবং
স্নেহা উভয়ের কলেজ বন্ধ। তাই তারা
কেউই কলেজ ভার্সিটিতে যায় নি। রবিন
কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করে আসছিল তার
আদরের ছোট বোন স্নেহা মোবাইল আর
ল্যাপটপ নিয়ে ভিষন ব্যস্ত। তাছাড়া তার
মধ্যে একটা আমূল পরিবর্তন এসেছে।
রবিনের মনে কিছুটা সন্দেহ জাগে। সে ভাবে
স্নেহা হয়তো কার সাথে প্রেম করছে। কথার
মার প্যাচে ফেলেস্নেহার পেট থেকে কথা নেওয়ার জন্য
সে স্নেহাকে ডাক দেয়।
স্নেহা: ভাইয়া কেন ডেকেছ বল।
রবিন: বস.. কিছুদিন থেকে তোর মধ্যে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। যখনই তোকে
দেখি, দেখি যে মোবাইল আর ল্যাপটপ নিয়ে
বসে আছিস। ব্যপার কি? এসএসএসির কথা
ভুলে গিয়েছিস নাকি? বই খাতা নিয়েতো একবারও বসতে দেখি না। বলি... পড়াশোনা কে করবে?
স্নেহা: আসলে ভাইয়া আমি একটু ইন্টারনেটে পড়াশোনা করি।
রবিন: আমাকে শিখাস? আমি বুঝি না? আমি কি
ইন্টারনেট ইউজ করি না ভেবেছিস!! আমি
সব বুঝি। তোই ফেসবুক চালাস?
স্নেহা কল্পনাও করে নি, ভাইয়ার কাছে এত
সহজে ধরা খেয়ে যাবে। সরাসরি ধরা খেয়ে
লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে মাথা নিচু করে
বসে থাকল। রবিন ব্যপারটা বুঝতে পারল।
সে আর তাকে লজ্জা দিতে চাইল না। ভাল করে পড়াশোনা করার কথা বলে তাকে বিদায় দিয়ে সে কম্পিউটার নিয়ে বসে পড়ল ।
যেই সেই। একটা কথা আছে না? চুর শুনেনাধর্মের কাহিনী!! স্নেহা রবিনের রুম
থেকে এসেই আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল। চ্যাটে "অতঃপর আমি" কে পাওয়া গেল।
চন্দ্রাবতী: তুমি একটা জিনিস খেয়াল করেছ? আমাদের সম্পর্কের এতদিন হয়ে গেছে কিন্তু
আজ পর্যন্ত আমরা কেউই কারো সম্বন্ধে
তেমন কিছু জানি না। এমনকি নামটা পর্যন্ত। আজ আমাদের পরিচয় পর্বের মধ্যে আর কোন
কথা হবে না। আজ শুধু একজন আরেকজনের পরিচয় নেব। অকে?
অতঃপর আমি: ওয়েল ডান। প্রথমে তুমি শুরু কর।চন্দ্রবতী: অকে.... আমি মোছা: স্নেহা শ্রাবন্তি । আমি ঢাকার মতিজিলে থাকি। আমার
এক ভাই, নাম মো: রবিন । আমার বড়, আমাকে ভিষন ভালোবাসে। সে এবার অর্থনীতিতে অনার্স শুরু করেছে। আমার আব্বা মো: মকবুল মিয়া।
তিনি ছোটখাট একটা চাকরি করেন। আম্মু গৃহিনী। আমি রোকেয়া গার্লস কলেজে ফ্রাষ্ট ইয়ারে
সাইন্স নিয়ে পড়তেছি। এবার তোমার টা বল।
প্রায় পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে "অতঃপর আমি" এর পক্ষ থেকে কোন উত্তর না না পেয়ে স্নেহা আবার ম্যাসেজ করল।
" কি হল? তুমি কথা বলছ না কেন? তুমাকে
তো অনলাইন দেখতে পাচ্ছি।
আর দুই মিনিট পরে রিপ্লে এলো। ছোট্ট
একটা ম্যাসেজ। "." (ফুলস্টপ) । দেখেই
বুঝা যাচ্ছে অসর্তক ভাবে এবং অজান্তে মাউসে
চাপ পড়ে (.) রিপ্লেটা এসেছে।
ঠিক তখনই রবিনের রুম থেকে একটা বুক ফাটা আর্তনাদ ভেসে এলো " হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর" । স্নেহা শব্দটা শুনে তাড়াতাড়ি রবিনের রুমে চলে গেল।গিয়ে দেখে রবিনের দেহ মাঠিতে নিথর
হয়ে পড়ে রয়েছে। পাশেই কম্পিউটারের
ভগ্নাবশেষ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে
রয়েছে।
স্নেহা ভাই...য়া বলে একটা চিত্কার করে
রবিনকে জড়িয়ে ধরতে ঔষধের কৌটার মত
ঝাকাতে লাগল। ভাইয়া তোমার কি হয়েছে?
তোমার হাতের কব্জি বেয়ে রক্ত গড়াচ্ছে
কেন? প্লিজ ভাইয়া কথা বল.... প্লিজ
আল্লাহর কসম লাগে তুমি একবার চুখ
খুল। এই দেখ তোমার বোন, তোমার কলিজার
টোকরো, হৃদয়ের ধন, চুখের মনি স্নেহা...... আমি স্নেহা
ভাইয়া। আমি তোমাকে ডাকছি ভাইয়া প্লিজ
আমার ডাকে সাড়া দাও।
রবিন কিছুক্ষনের জন্য চুখ খুললো। সে
ধিরে ধিরে স্নেহার দিকে চুখ তুলে তাকাল।
তার চুখ দিয়ে দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
কোন কথা বলতে পারল না। সে তার হাতটা তার আদরের বোনের মাথায় নেওয়ার অর্ধেক
রাস্তায় থেমে গেল। পরক্ষনেই একটা বড়
ঝাকুনি দিয়ে শরিরটা চিরজীবনের জন্য নিঃস্তেজ হয়ে পড়ল স্নেহার কোলে।
সেই দিন থেকে রাজকুমারী চন্দ্রাবতী আর
কখনো " অতঃপর আমি " কে চ্যাটে পায় নি।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
★ রোদেলা রিদা ★
User ২ বছর, ৬ মাস পুর্বেMaya
User ৭ বছর, ৪ মাস পুর্বেMaya
User ৭ বছর, ৪ মাস পুর্বেZakia Arif Sharna
Golpobuzz ৭ বছর, ৫ মাস পুর্বেNusrat Faria
Guest ৭ বছর, ৫ মাস পুর্বে