বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
#নেশা
"তার স্বামী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আর তুমি... "। ঠিক এভাবে তিরস্কার পেতে হল সাত সকালেই রফিককে। খুব সাধাসিধে ধরনের মানুষটা। সহজে কারো কথার জবাব দেন না। কারও সাতেও না,পাঁচেও না। তিনি মনে করেন। মানুষের ক্ষুধার জ্বালাটা মিটলে হয়ত জীবনে চাওয়া পাওয়াটা খুব কম।
মাথার উপরে ছাদ,পরার জন্য কাপড়। মাসের দিনকয়েক কিছু খায়েশ মিটানোর জন্য সামান্য যা রোজগার হয় তাতেই জীবনটা বিন্দাস চলে যাবে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়াল বউটা। নিজের অমতেই অনেকটা বাবার জোরাজুরিতেই বিয়েটা করতে হল। জোরাজুরি বললে ভুলই হবে। কারণ বাবার সামনে বুক উঁচিয়ে সেও যে কখনো কিছু বলতে পারে নি। এবারের বেলাও তা হয় নি।
বাবার এককালে ভালো সুনাম থাকায় ও চলার মত জমিজমা থাকায় আত্মীয়ের কষ্টে এক সুন্দরীর সাথেই তার বিয়ে হয়। মেয়েটা অপূর্ব সুন্দর। ফারিন নাম তার। পরীর মত দেখতে মেয়েদের যেমন বিয়ে নিয়ে কিছুটা উচ্চাশাই থাকে তেমনি এই মেয়েটিরও ছিল। ভেবেছিল অনেক সুন্দর ও বিত্তবান কোনো ছেলের সাথেই তার বিয়ে হবে। অকালে বাবা মারা যাওয়ায় পরিবারে নেমে আসে অভাব অনটন। সামাল দিতে কষ্ট হওয়ায় প্রতিবেশী কাকার কথাতেই তার বিয়ে হয়। হ্যাঁ না বলার পরিস্থিতি তার ছিল না।
এমন সমঝোতার বিয়েতেও রফিককে ঠিক মেনে নিতে পারে নি ফারিন। তার উপর গতদিন রফিক অফিস থেকে ফিরেছিল হাতে ইলিশ মাছ নিয়ে যা দেখে রীতিমত রেগে গিয়েছিল ফারিন। ইদানীং প্রতিবেশী বরকতের সাথে বাজার করতে যায় রফিক। এটা তার কষ্ট আরো বাড়ায়।
"এমনিতেই মাস চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর তুমি সোহাগ করে ইলিশ নিয়ে আসলে?"
"আসলে বরকত সাহেব তার স্ত্রীর সাথে বাজার করতে এসেছিল। স্ত্রী আবদার করাতেই বরকত সাহেব কিনলেন ইলিশ মাছ। আমি মনে করলাম তোমারও হয়ত পছন্দ হবে তাই..."
ঠিক তখনি সেই নিষ্ঠুর কথাটা বলে ফারিন। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা এত সহজ না। জীবনে শখ একরকম আর নেই ফারিনের। জগতের নিষ্ঠুরতায় ফারিনও তার সব শখ ত্যাগ করেছে। এখন সংসার চালানোই তার উদ্দেশ্য। শখ করে কিছু খাওয়া সম্ভব না।
"বুঝে শুনে কাজ করতে শিখ। বোকার মত কাজ করলে চলবে না।"
"বুঝেছি। দ্বিতীয়বার এ ভুল হবে না। "
বলেই চলে গেল নির্ভেজাল মানুষটা। সে যেতেই বুকে একরকম শেল বিঁধল ফারিনের। এই মানুষটা আর যাই হোক তারর স্বামী। তবু কারণে অকারণে তার সাথে ঝগড়া করে সে। নিজের সমস্ত রাগ তার উপর প্রকাশ করে। তবে ঝগড়া করে সে তেমন মজা পায় না। অপর প্রান্ত থেকে যে কোনো প্রকার সাড়া পায় না।
সে ইলিশগুলোর দিকে তাকায়। চকচক করছে ইলিশ দুটো। এত দাম দিয়ে সে শুধু আমার জন্যে কিনে এনেছে। এটা সে জানে। তবে কাউকে ভালোবাসা দেওয়ার ক্ষমতা আর ফারিনের নেই।
তবুও সে ইলিশ সুন্দর করে রাঁধে। সরষে দিয়ে। ছোটবেলায় এটাই তার সবচেয়ে পছন্দের খাবার ছিল। একরকম নেশা ছিল ইলিশের প্রতি। বাবা থাকতে কোনোদিন বাদ যায় নি। সে নেশা আজও আছে।
বুকের আড়ালে কোথাও সে নেশাটা হয়ত রফিকের প্রতি ভালোবাসাও জন্মে দিয়েছে। তবে ফারিন সেটা জাহির করতে পারবে না। সে শক্তি তার নেই।
অন্যদিকে রফিক ইলিশের গন্ধ পায় বাসার একটু কাছে আসতেই। যথেষ্ট আছে জেনেও সে সেদিন দুপুরে আর বাসায় ফেরেনি। কারণ ফিরলে হয়ত ফারিন তার সামনে আয়েশ করে খেতে পারবে না।
ফারিনও ইলিশ বাটিতে সাজিয়ে পুরোটা দুপুর বসে থাকে। রফিক ফিরলে একসাথে খাবে। আর হয়ত একফাঁকে ক্ষমাও চেয়ে নিবে।এর নাম কি ভালোবাসা। নাকি সমঝোতার নেশা। যে নেশা তাদেকে দূরে রেখেছে। তবে তাদের হৃদয়টা হয়ত অনেক কাছেই। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
★★★
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now