বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শেষ বিকেলের মেয়ে-১৭

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X জাহানারা চোখ বড় বড় করে বললো, সেকি, এই এলেন আর চলে যাবেন? কথাটা কানে গেলো না ওর। ও তখন ভাবছে জাহানারার জন্যে একটা সেতারের মাস্টার ঠিক না করে দিয়ে কত বড় ভুল করেছে। জাহানারা বারবার করে বলেছিলো, একটা মাস্টার ঠিক করে দিন। তখন যদি ওর অনুরোধ রক্ষা করতো সে তাহলে হয়তো এত বড় বিপর্যয় ঘটতো না। শিউলি শুধালো, আপনি কি বাসায় ফিরবেন? কাসেদ বললো, হ্যাঁ। খুলে যাওয়া খোঁপাটা ভালো করে বাঁধতে বাঁধতে জাহানারা জানালার পাশে সরে দাঁড়ালো। তারপর সেখান থেকে জিজ্ঞেস করলো, রোববার দিন বিকেলে কি আপনি বাসায় থাকবেন? কেনো? যদি থাকেন তাহলে বাসায় আসবো। আপনার সঙ্গে কিছু কথা আছে আমার। বুকটা আবার মোচড় দিয়ে উঠলো। ওর। আড়চোখে একবার ওকে দেখে নিয়ে বললো, রোববার ছাড়া অন্য কোন দিন আসতে পারেন না? জাহানারা বললো, রোববার দিন আমার ছুটি কিনা তাই। অন্যদিন গেলে আমার সেতার শেখা হবে না। মাস্টাের ভীষণ রাগ করবেন। আবার সেতার শেখা! আবার সেতারের মাস্টার! রাগে দেহটা জ্বালা করে উঠলো ওর। পরক্ষণে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ঠিক আছে, আমি বাসায় থাকবো, আসবেন। এখন চলি। ওর সঙ্গে শিউলিও উঠে দাঁড়ালো। আমার একটা কথা রাখবেন কাসেদ সাহেব? কি? বাড়ি যাবার পথে আমাকে হােস্টেলে পৌঁছে দিয়ে যাবেন? কিন্তু…কাসেদ ইতস্তত করে বললো, পথটা তো এক হলো না। উল্টো। শিউলি বললো, আমার জন্যে না হয় একটু উল্টো পথ ঘুরেই গেলেন। যাবেন কি? কাসেদ জাহানারার দিকে এক পলক তাকালো; ও জানালা গলিয়ে বাইরে আকাশ দেখছে, দেখুন। কাসেদ বললো, যাবো বইকি, চলুন। গলার স্বরে উৎসাহের আধিক্য দেখে নিজেই চমকে উঠলো। বুঝতে পারলো না কথাটা হঠাৎ এত জোরের সঙ্গে কেন বলতে গেলো সে। জানালা থেকে সরে এলো জাহানারা। শিউলি শুধালো, তুমি এখন ঘরে বসে বসে করবে কি জাহানারা? জাহানারা ধীর গলায় বললো, কি আর করবো, মাস্টার একটা নতুন গদ দিয়ে গেছেন, বসে বসে সেতার বাজাবো। আবার মাস্টার! আবার সেতার! শিউলিকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো কাসেদ। কিছুই ভালো লাগছে না। মনটা একেবারে শূন্য হয়ে গেছে ওর। আকাশে অনেক তারা জুলছে। রাস্তায় অনেক লোক। বাতাসে কার বাগানের মিষ্টি গন্ধ আসছে ভেসে। কিন্তু এর কোন কিছু দিয়ে এ শূন্যতা ভরানো যাবে না। শুনেছেন? সহসা কাসেদ বললো, আপনার প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। আপনি আমার একটা কথা রাখুন। আজ। কি কথা? শিউলির দুচোখে ঔৎসুক্য ভীড় করেছে এসে। কাসেদ মৃদু গলায় বললো, আমার সঙ্গে একটু বেড়াবেন। ঘুরবেন যেখানে যেখানে আমি নিয়ে যাই। আজ বড় একা লাগছে আমার। শিউলি ভ্রূজোড়া প্রসারিত করে তাকালো ওর দিকে, তারপর হেসে বললো, কিন্তু আমাকে যে ন’টার মধ্যে হােস্টেলে ফিরতে হবে, নইলে সুপার ভেতরে ঢুকতে দেবে না। শেষে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। কাসেদ স্নান হেসে বললো, আমি যদি আপনার জন্যে উল্টো পথে পাড়ি দিতে পারি, আপনি আমার জন্য এ ঝামেলার ঝুকিটা নিতে পারেন না? কিন্তু কেন বলুন তো? কণ্ঠে ঈষৎ বিস্ময় নিয়ে শিউলি শুধালো, আজ হঠাৎ বেড়াতে ইচ্ছে হলো কেন আপনার? বিশেষ করে আমাকে সঙ্গে নিয়ে। কাসেদ সহসা জবাব দিলো না। নীরবে কি যেন ভাবলো। জাহানারা, কেন এমন করলে তুমি! তোমাকে ভালবেসে পরিপূর্ণ ছিলাম আমি। যেদিকে তাকাতাম ভালো লাগতো আমার। আজ আকাশের নীল আর নিওনের আলো সব কিছু বিবৰ্ণ মনে হচ্ছে আমার চােখে। কেন এমন হলো জাহানারা? আমি জাহানারা নই, শিউলি। শিউলি মিটমিটি হাসছে। কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়েছে ওর। কাসেদ অপ্ৰস্তুত হয়ে গিয়ে বললো, না–মানে। কথাটা শেষ করলো না সে। সহসা শিউলির একখানা হাত নিজের হাতে তুলে নিয়ে আবেগভরা গলায় কাসেদ বললো, আচ্ছা! বলতে পারেন, আমি যা চাই তা পাইনে কেন? হাতখানা সরিয়ে নিলো না শিউলি। মৃদু চাপ দিয়ে শুধু বললো, চাওয়া পাওয়ার সঙ্গে সাপে-নেউলের সম্পর্ক রয়েছে যে। এই দেখুন না, আমি চাই ছেলেদের সঙ্গে বন্ধু হিসেবে মিশতে আর ওরা চায় আমাকে ঘরের গিনী হিসেবে পেতে। ভাবুন তো কেমন বিচ্ছিরি ব্যাপার। শিউলি হাসল শব্দ করে। কিন্তু আপনাকে যদি কেউ গিনী হিসেবে পেতে চায়, সেটা কি অন্যায়? ওর হাতে একটা নাড়া দিলো শিউলি। শিউলি পরীক্ষণে বললো, একতরফা চাওয়াটা অন্যায় বইকি। কথাটা তীরের ফলার মত এসে বিঁধল ওর বুকে। শিউলি কি বলতে চায় জাহানারার সঙ্গে একতরফা প্ৰেম করে অন্যায় করেছে কাসেদ? না। আপনার সঙ্গে একমত হতে পারলাম না। আমি। কাসেদ জোরের সঙ্গে বললো, ভালবাসা অন্যায় নয়। সে একতরফা হােক কিম্বা দুতরফা। হাতখানা ওর হাত থেকে টেনে নিয়ে শিউলি অপূর্ব কণ্ঠে বললো, ধরুন আমি যদি আপনাকে ভালবাসি। আপনি কি তা সহজ করে নিতে পারেন? অবশ্য, আপনাকে ভালবাসতে যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসছে না। কেন, কেন বলুন তো; শিউলির কথার জবাব দিতে গিয়ে বিচলিত বোধ করলো। কাসেদ। সে বুঝে উঠতে পারলো না। আর পাঁচটি ছেলেকে যদি ভালবাসা যেতে পারে, ওকে কেন নয়। শিউলি কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে রইলো তার দিকে, তারপর বললো, এসব কেনর উত্তর দেয়া কঠিন কাসেদ সাহেব। আমার তরফ থেকে কিছু বলতে গেলে বলতে হয়, আপনি বন্ধু হিসেবে অত্যন্ত ভালো, কিন্তু প্রেমিক হিসেবে নন। বলে মুখ টিপে হাসলো সে। নিজেকে বড় অসহায় মনে হলো কাসেদের। হাত-পাগুলো ভেঙ্গে আসছে। না, আমি তো বন্ধু হিসেবে জাহানারাকে পেতে চাইনে। আমি চাই আরো আপন করে। একান্তভাবে নিজের করে। কেন, কেন আমাকে ভালবাসা যেতে পারে না? আবেগের চাপে গলাটা ভেঙ্গে আসছে তার। আপনি কি মনে করেন- কথাটা শেষ করতে পারলো না কাসেদ। শিউলির হাসির শব্দে থেমে গেলো। শিউলি বললো, আপনার কি যেন হয়েছে আজ। এসব বাদ দিয়ে এখন বাসায় ফিরে যান; আমারও হােষ্টেলে যেতে হবে। কাসেদ কোন জবাব দেবার আগেই রিক্সাওয়ালাকে হােস্টেলের পথে যাবার নির্দেশ দিলো শিউলি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৭৮২ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now