বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শেষ বিকেলের মেয়ে-১৩

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X দিন কয়েক থেকে মায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে জ্বর আসে। ছেড়ে যায়। আবার আসে। এই জ্বরের মধ্যেও মা নামাজ পড়া বাদ দেন নি। পড়েন, বসে বসে। আর সারাক্ষণ শব্দ করে দেওয়া দরুদ পাঠ করেন। মাঝে মাঝে দুঃখ প্রকাশ করেন নাহারের জন্যে আর কাসেদের জন্যে। বলেন, আমি মরে গেলে তোদের যে কি হবে ভেবে পাই না। আজ বিকেলে কাসেদ বাসায় ফিরে এলে মা কাছে ডাকলেন ওকে। বললেন, এখানে এসে বসো, আমার মাথার কাছে। কপালে হাত রেখে কাসেদ দেখলো জ্বর আছে কিনা। নেই। নাহার বললো, এই একটু আগে জ্বর নেমে গেছে। মা বললেন, আমাকে নিয়ে তোরা ভাবিস নে। বুড়ো হয়ে গেছি, আর ক’দিন বাঁচবো। কাসেদ বললো, ওসব অলক্ষুণে কথা কেন বলছে মা, তুমি এখন ঘুমোও। এইতো কাল সকালেই ভাল হয়ে যাবে। মা চুপ করলেন না। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিলো তাঁর। তবু বললেন, তোর খালু এসেছিলো, নাহারের বিয়ের সেই পুরানো প্রস্তাবটা নিয়ে। শ্বাস নেবার জন্যে থামলেন মা। নাহার বিছানার ওপাশে এতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলো। বিয়ের কথা শুনে বারকয়েক ইতস্তত করে পাশের ঘরে সরে গেলো সে। মা আবার বললেন, আমি এ বিয়েতে মত দিয়েছি। অসুখে যেমন ধরেছে কে জানে কখন মরে যাই। যাবার আগে ওকে স্বামীর ঘরে তুলে দিয়ে যেতে চাই। নইলে মরেও শান্তি পাবো না। আমি। গলাটা ধরে এলো মায়ের। বার দু’য়েক ঢোক গিলে নিয়ে বললেন, তাছাড়া ছেলেটাও তো খারাপ না, ভালোই, এখন তুই মত দিলেই হয়ে যায়। মায়ের কথায় মৃদু হাত বুলোতে বুলোতে কাসেদ আস্তে করে বললো, আমার মতামতের কি আছে, তোমরা যা ভালো মনে করো, করবে। অবশ্য নাহারকে একবার জিজ্ঞেস করে নিয়ো। ওকে আবার জিজ্ঞেস করবো কি? মা চোখ তুলে তাকালেন ওর দিকে। আমরা কি ওর খারাপ চাই? ছেলেটা শুনেছি, দেখতে শুনতে ভালো। মা পাশ ফিরে শুলেন। কাসেদ নীরবে ওঁর মাথায় হাত বুলোতে লাগলো। রাতে ওর ঘরে খাবার নিয়ে এলে নাহারকে বসতে বললো কাসেদ। বললো তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে। নাহার ঈষৎ বিস্ময় নিয়ে তাকালো ওর দিকে। বসলো না। দরজার কপাট ধরে নীরবে: দাঁড়িয়ে রইলো সে। কাসেদ ভাবলো কথাটা কিভাবে বলা যেতে পারে। বিছানার ওপর থেকে উঠে টেবিলের পাশে গিয়ে বসলো সে। নাহার অপেক্ষা করছে দাঁড়িয়ে। থালার মধ্যে ভাত ঢেলে নিতে নিতে কাসেদ বললো, তোমার বিয়ের জন্যে খালু একটা প্ৰস্তাব এনেছেন শুনেছো– নাহার কোন জবাব দিলো না। কাসেদ ভাতের থালা থেকে মুখ তুলে দেখলো তাকে। তবু সে চুপ। কাসেদ বললো, মা অবশ্য তাঁর মত দিয়েছেন। তুমি যদি মত দাও, তাহলে আমারও আপত্তির কিছু নেই। নাহার নড়েচড়ে দাঁড়ালো। ক্যাঁচ করে একটা শব্দ হলো দরজায়। কাসেদ এবার আর তাকালো না। নিঃশব্দে ভাত খেতে লাগলো সে। খেতে খেতেই বললো, তোমার ইচ্ছা হলে ছেলেটিকে দেখতেও পারো। আর যদি মত না থাকে তাও বলতে পারো। সঙ্কোচের কিছু নেই। তবু চুপ করে রইলো নাহার। মুখখানা নুইয়ে পায়ের পাতার দিকে চেয়ে রইলো সে। কি ব্যাপার, কিছু বলছে না যে? নাহার নীরব। তোমার কি কোন মতামত নেই? তবু চুপ সে। তুমি কি কিছুই বলবে না? কাসেদ স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ওর দিকে। আমি কি বলবাে? এতক্ষণে কথা বললো নাহার। ওর গলার স্বরে বিরক্তি আর বিতৃষ্ণা, আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই করবেন, আমার কোন মতামত নেই। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলো। সে। শেষের দিকে গলাটা জড়িয়ে এলো তার। তখনো দাঁড়িয়ে সে। হ্যারিকেনের আলোয় মুখখানা ভালো করে দেখা গেলো না। পাশের ঘরে মা দরুদ পড়ছেন শুয়ে শুয়ে। এখান থেকে সব কিছু শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। ভাত খেয়ে উঠে দাঁড়াতে থালাবাসনগুলো নিয়ে বেরিয়ে গেলো নাহার। ও চলে যেতে খাতা-কলম নিয়ে বসলো কাসেদ। লিখবে। ভীষণ লিখতে ইচ্ছে করছে ওর।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৮২ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now