বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

শেষ বিকেলের মেয়ে-৫

"উপন্যাস" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X সেই সালমা– পরনে কালো ডোরাকাটা ফ্রক। মাথায় সাপের মত সরু একজোড়া বিনুনী। পায়ে স্লিপার। অপরিসর বারান্দায় রেলিঙের পাশে দাঁড়িয়ে মেয়েটি দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। পেছন থেকে পা টিপে টিপে এসে ওর চোখজোড়া দু’হাতে চেপে ধরলো কাসেদ। এই কি হচ্ছে, হাতজোড়া ছাড়িয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো সালমা। কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে সে সহসা ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো, সেই কখন থেকে বসে আছি। আর উনি এতক্ষণে এলেন। ওর একটা বিনুনীতে টান মেরে কাসেদ বললো, এই তোকে একশো বার নিষেধ করে দিয়েছি না মিথ্যে কথা বলিসনে। সালমা অবাক হয়ে বললো, বা-রে মিথ্যে কথা কই বললাম। এই তো বললি। কই, কখন? এইতো একটু আগে। ইস, উনি বললেই হলো, ঠোঁট উল্টে মুখ ভেংচালো সালমা। ওর বেণী জোড়া ধরে আবার টান দিলো কাসেদ, বসে আছি বললি কেন, তুই তো আসলে দাঁড়িয়েছিলি। চুলে টান পড়ায় যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলো সালমা। তারপর চিৎকার করে উঠে বললো, বলবো, একশোবার মিথ্যে কথা বলবো আমি। তাতে তোর কি শুনি। কাসেদ ক্ষেপে গিয়ে ওর মাথাটা রেলিঙের সঙ্গে ঠকে দিয়ে বললো, তুই করে বললি কেন রে, আমি কি তোর ছোট না বড়? সালমা ততক্ষণে কাঁদতে শুরু করেছে। ওকে কাঁদতে দেখে কাসেদ বিব্ৰতবোধ করলো। বার কয়েক হাফপ্যান্টে হাত মুছলো সে। তারপর কাছে এসে দাঁড়িয়ে কোমল গলায় বললো, লেগেছে না-রে? সালমা কোনো জবাব দিলো না। একটু পরে ওর পিঠের উপর ভয়ে ভয়ে একখানা হাত রেখে কাসেদ শুধালো, পার্কে যাবি না? এক ঝটিকায় ওর হাতখানা দূরে সরিয়ে দিলো সালমা। কাসেদ আবার রেগে গিয়ে বললো, এই এক দুই করে আমি দশ পর্যন্ত গুনবো; এর মধ্যে যদি তুই না যাস তাহলে আমি চললাম। বলে জোরে জোরে এক দুই গুনতে শুরু করলো সে। ন’য়ে এসে অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো কাসেদ। সালমা তখনো কাঁদছে। কাসেদকে চুপ করে থাকতে দেখে একবার শুধু আড়চোখে তাকালো সালমা। কাসেদ অতি কষ্টে দশ উচ্চারণ করলো; কিন্তু সঙ্গে বললো; দেখ তোকে পনেরো পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দিলাম। এবার কিন্তু একটুও নড়াচড় হবে না। বলে আবার গুনতে শুরু করলো সে। পনেরো বলার পূর্ব মুহূর্তে সালমা চিৎকার করে উঠলো, তুই আমাকে মেরেছিস কেন? কাসেদ হেসে দিয়ে বললো, আর মারবো না, চল। ডান হাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো সালমা। তারপর ফিক্‌ করে হেসে দিয়ে বললো, আজ কিন্তু আমাকে দোলনায় চড়াতে হবে। আর একদিন। তখন ফ্রক ছেড়ে সালওয়ার পায়জামা ধরেছে সালমা। বয়স বেড়েছে। হয়তো পনেরো কিম্বা ষোল। ঘুটফুটে সন্ধ্যা। আকাশে অসংখ্য মেঘের ভিড়। এই বুঝি বৃষ্টি এলো। কাঠের সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠে এসে কাসেদ দেখলো, বাসায় কেউ নেই। শুধু সালমা ড্রয়িং রুমে একখানা চৌকির ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে কি একটা পত্রিকা পড়ছে। কে কাসেদ ভাই, এই সন্ধ্যাবেলা কোত্থেকে? মহাবিদ্যালয় মানে কলেজ থেকে, বাসায় কি কেউ নেই? না, ওরা সবাই সিনেমায় গেছে। তুমি যাওনি? যাইনি সে তো দেখতেই পাচ্ছেন। পত্রিকাটা বন্ধ করে উঠে বসে সালমা বললো, শরীরটা সেই সকাল থেকে ভালো নেই। কেন, কি হয়েছে? ওর সামনে চৌকিতে এসে বসলো কাসেদ। সালমা বললো, অসুখ করেছে। কি অসুখ? সালমা ফিক্‌ করে হেসে দিলো এবার যান, অতো কথার জবাব দিতে পারবো না। একটা কিছু পেলেই হলো, অমনি সেটা নিয়ে প্রশ্ন আর প্রশ্ন। কি বিশ্ৰী স্বভাব আপনার। কাসেদ গম্ভীর হয়ে গেলো। একটু পরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, বিশ্ৰী স্বভাব দিয়ে তোমায় আর ব্যতিব্যস্ত করবো না, চলি এবার। মুহুর্তে ওর পথ আগ্‌লে দাঁড়ালো সালমা। যাবেন কি করে, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। হােক, তাতে তোমার কি? সালমা মুখ টিপে হাসলো একটুখানি। তারপর বললো, ইস, এত রাগ নিয়ে আপনি চলেন কি করে। সহসা ওর খোলা চুলের গোছা ধরে একটা জোরে টান মারলো কাসেদ। রাগে ফেটে পড়ে বললো, ফাজিল মেয়ে কোথাকার। ইয়ার্কির আর জায়গা পাও না, তাই না? সালমার মুখখানা মান হয়ে গেলো। দেখতে না দেখতে চোখজোড়া পানিতে টলমল করে উঠলো। ওর। সামনে থেকে সরে গিয়ে নিঃশব্দে আবার কোঁচের উপরে বসলো সে। পরীক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠলো সালমা, আমি এমন কি করেছি যে, আপনি সব সময় আমার সঙ্গে আমন দুব্যবহার করেন? চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়িয়েও থমকে দাঁড়ালো কাসেদ। সালমা কাঁদছে। কৌচের ওপর উপুড় হয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সে। খোলা জানােলা দিয়ে আসা বাতাসে নয়, কান্নার আবেগে দেহটা কাঁপছে তার। খোলা চুলগুলো পিঠময় ছড়ানো। ধীরে ধীরে ওর পাশে এসে বসলো কাসেদ। সালমা, সে ডাকলো ভয়ে ভয়ে। সালমা কোনো উত্তর দিলো না। ওর মাথার উপর আস্তে করে একখানা হাত রাখলে সে। সালমা। সহসা উঠে বসলো। সালমা তীব্র দৃষ্টিতে তাকালো এক পলক ওর দিকে। তারপর তীব্ৰ বেগে ছুটে পাশের ঘরে চলে গেল সে। কাসেদ ডাকলো, সালমা। সালমা সজোরে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। তারপর আর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না তার। সেদিন অনেকক্ষণ এক ঘরে বসেছিলো কাসেদ। ভেবেছিলো হয়তো এক সময় রাগ পড়ে গেলে বাইরে আসবে সালমা। সালমা আসেনি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৫৪৪ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now