বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
দরজাটা খুলে দিতেই আমি ,যথারিতি ভংগীতেই ঢুকে পড়লাম|আড় চোখে আশ পাশ দেখে নিলাম|কিছু সময় পরে চা আর বিস্কিট আসলো|চা খাওয়ার একদম ইচ্ছা নাই আমার তবুও চেস্টা করলাম খাবার|কারন প্রাইভেট টিউটর রা যদি বাসায় দেয়া নাস্তা না খেয়ে চলে যায় তবে বাসায় মাইন্ড করে|এমন একবার অভিজ্ঞতা হয়েছে|তাই চা আর বিস্কিট খেলাম|ভার্সিটির ক্লাশ শেষ করে টিউশনিতে আসতে আসতে অনেক কস্ট হয়|কিন্তু কিচ্ছু করার নেই|খুব কস্ট হলে ও এই কাজটাই আমাকে করতে হবে|
.
সকাল বেলা ব্যাগ হাতে নিতেই দেখি,ব্যাগের মাঝে দুইশ টাকা|ভার্সিটি যেতে যেতে একশ টাকার মত খরচ হয়ে গেছে||এবার ভরসা টিউশনির টাকা|পড়া শেষে আন্টি কে বল্লাম,--- আন্টি আমার টাকাটা কি আজ দেয়া যাবে?
আন্টি বল্লো,দুই তিন দিন দেরি হবে|
আজ মাসের পাচ তারিখ,কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারিনি|হোস্টেল ভাড়া দিতে হবে,খাবার খরচ ,ভার্সিটির আসা যাওয়ার খরচ সব মিলিয়ে আমি অস্থির ||মাকে ফোন দিয়েছিলাম টাকার জন্য|মা বল্লো আরো কয়েক দিন লাগবে টাকা পাঠাতে||
খুব এলোমেলো লাগছে আমার|টাকা বাঁচাতে টিউশনির ওই বাসা থেকে রিকসা না নিয়েই পায়ে হেটে রওনা দিলাম|পথটা কিন্তু কম ছিল না,প্রায় ত্রিশ টাকা ভাড়া রিকসায়|তবু হাটতে শুরু করলাম আগ পাছ না ভেবে|
.
সব ঠিক ই ছিল,কিন্তু বাবার চলে যাওয়ার পরে আমাদের সব কিছুই এলোমেলো|দুই বছর টানা চিকিৎসা চলছে|লিভারটা তখন প্রায় পচনের শেষ পর্যায়|এতই ব্যায় বহুল ছিল যে,আমাদের সব কিছু শেষ পর্যায়||মা স্কুল টিচার,ছোট দুই ভাই আছে|আমি বড় সবার তাই ,চাইলেই সব আবদার করতে পারি না|
অথচ আমার ও একদিন স্বর্ন যুগ ছিল|বাবা আমার কোন কিছুই অপুর্ন রাখেননি|যা চাইতাম তাই বাবা এনে দিতেন|রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে যেতে চোখ গুলো জলে ভরে গেলো|স্কুল থেকে ছুটির পরে বাবাই নিয়ে আসতেন|তখন আমাদের একটা এক্স করোলা গাড়ি ছিল|বাবা প্রাইভেট জব করতেন,সব মিলিয়ে আমাদের ছিল সুখের একটা সংসার|
.
আমার এখনো মনে আছে,একদিন স্কুল থেকে পায়ে হেটে বাসায় এসেছিলাম বান্ধবীদের সাথে|কারন আব্বুর ট্যুর ছিল বাইরে|গাড়ি সাথে নিয়ে যান|মাকে বলেছিলাম,---আমাকে আনতে যেতে হবে না,পাড়ার অনেকেই আছে যাদের বাসা আমাদের আশে পাশে আমি ওদের সাথেই আসব|অনেক মজা হয়েছিল ওদের সাথে বাসায় ফিরে|সন্ধ্যায় আব্বু বাসায় ফিরে,যখন ফিরে এসে শুনতে পায় আমি হেটে এসেছি বাসায় তখন আম্মুর সাথে প্রচন্ড মেজাজ দেখায়|আসলে আব্বু কখনো আমার কোন কস্ট সহ্য করতে পারতেন না|পায়ে সে দিন অনেক ব্যাথা হচ্ছিলো,আব্বু পায়ে মুভ মেখে দেয় ঘুমানোর সময়|বার বার বলেছিলাম ,আমার কিছু হয়নি যাস্ট খেলেছিলাম স্কুলে তাই ব্যাথা পায়ে|
পুরানো কথা ভাবতে ভাবতে প্রায় হোস্টেলের কাছে চলে এসেছি|সময়ের সাথে জীবন কত পাল্টে যায় তার প্রমান আমি|ভীষন কাদতে ইচ্ছে হচ্ছিলো চিৎকার করে,কিন্তু পারলাম না|রাতে সবাই ডিনার করছে হোস্টেলের|আমাকে বল্লো এক বড় আপু,
.
---অর্পি খাবারের টাকা দাওনি|আমি বল্লাম, আপু আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি|
---আচ্ছা তুমি কয়েক দিন ধরেই দেখছি বাইরে থেকে খেয়ে আসছো|ব্যাপার কি বলতো?
উত্তরে আপুকে বল্লাম,
-- আপু ভার্সিটির এক বন্ধু ট্রিট দিলো |
--তাই বলে, দুই তিন দিন ধরে?
--হ্যা আপু এক দিন একেক জন খাইয়েছে|
.
রুমের আপুকে বুঝতে দিলাম না যে,আমি খারাপ সময় পার করছি|
রাত দুটো খুব পেটে ব্যাথা করছে|উঠে পানি খেলাম দুই গ্লাস|তবু ও কমছে না|রুমের কৌটা গুলো খুজতে শুরু করলাম কি খাবার আছে|এক টিতে কয়েক টা বিস্কিট পেলাম|তারপর আবার পানি খেলাম|খুব ঘুমানোর চেস্টা করছি,কিন্তু ঘুম আসছে না|কাল হোস্টেলের ফি দিতে হবে|খাবারের টাকা ও দিতে হবে|এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুম চলে আসছে মনে নাই|
সকালে ক্লাশ আমার,কিন্তু যাবো না ভাবছি|মাত্র একশ টাকা সম্বল ,এ নিয়ে বাইরে বেরুতে ইচ্ছে হচ্ছে না|কিন্তু বিকেলে টিউশনিতে যেতে হবে|মনটা ভাল লাগছিল না,তাই গোসলটা সেরে ঘুমিয়ে পড়লাম|রুমের দরজাটা হালকা চাপানো|আমার হোস্টেলে দুইটা ফ্লোরে একজন বুয়া রান্না করেন|অনেক বছর ধরে ওই খালা রান্না করেন এখানে|সবাই বুয়া বল্লে ও আমি ওনাকে খালা বলে ডাকি|তখন প্রায় দুপুর তিনটা |খালা আমাকে ডাকছেন শুনে চোখ খুলে তাকালাম|উঠে বসে দেখি,আমার টেবিলের ওপর একটা প্লেটে ভাত,পাশে এক টুকরো মাছ ও একটু ভাজি|আমি বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বল্লাম,এই গুলা কার?
খালা বল্লেন,আপনার জন্য আনছি|ওঠেন খেয়ে নেন|
---আমার কেন!আমি তো টাকা দেইনি মিলের|
**তাতে কি!সবার খাওয়া শেষ ,আমি আপনার জন্য তুলে রাখছিলাম|আমি দেখছি আপনি দুই দিন ধরে খাচ্ছেন না ||নেন খেয়ে নেন, বলেই ভাতের প্লেট টা ধরে আমার হাতে তুলে দিল|পাশে পানির বোতলটা খাটের উপর রেখে গেলো|| ভাতের প্লেটে হাত দিয়ে ভাত মুখে দিতেই চোখটা দিয়ে পানি টপ টপ করে পড়তে লাগলো||মনে হচ্ছিলো এটা মায়ের মত ভালবাসা|খুব ইচ্ছে করছিল,খালাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি|
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now