বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার-১ বাকি অংশ

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ‘তোমার কথাই শেষ কথা নয়, দেখো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তোমাদের লীলা-খেলার ইতি ঘটছে, ঘটবে। সেখানে জেনারেল শ্যারনসহ তোমাদের অনেকেই বিচারের সম্মুখিন হচ্ছে।’ চোখ দুটি জ্বলে উঠলো দানিয়েল ডেভিডের। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘তার শোধ নিচ্ছি আমরা এবং নেব।’ বলে একটু থামল দানিয়েল ডেভিড। একটু পর বলল, ‘তোমাদের আস্ফালন বুদবুদের মত। জানো, মি.হাইম হারজেল তোমাদের কাছ থেকে কি জেনে নিল?’ কামাল সুলাইমানরা এ জিজ্ঞাসার জবাবে কিছুই বলল না। দানিয়েল ডেভিডই আবার কথা বলে উঠল। বলল, ‘তোমাদের ঈমান ও শক্তির গভীরতা তিনি যাচাই করলেন। দেখলেন, মূল কোরআন হাদিস থেকে কোন শিক্ষা তোমরা পাওনি। কোরআন হাদিসের গোটা শিক্ষাও তোমরা জান না। কিছু কার্যকারণের মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে একটা জাতীয় আবেগের সৃষ্টি হয়েছে মাত্র এবং এটা পরীক্ষায় টিকবে না। তোমরা আমাদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।’ হাসল কামাল সুলাইমান। বলল, ‘ইসলামের প্রথম যুগে যাঁরা মক্কায় শহীদ হয়েছিলেন, বদর প্রান্তরে যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন, ওহোদ-খন্দকে শহীদ হয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা সকলে গোটা কোরআন পড়েছেন-জেনেছেন বলেছেন বলেই শহীদ হননি। বরং ঈমানের জন্যে নয় আমলের জন্যে গোটা কোরআন জানা শর্ত। আর মানুষ জীবন দিতে পারে ঈমানের যুক্তিতেই। সুতরাং তোমাদের ইচ্ছা এতদিন পূরণ হয়নি, কোনদিনই পূরণ হবে না।’ চোখ দু’টি আবার জ্বলে উঠল দানিয়েল ডেভিডের। শক্ত হয়ে উঠল তার চোয়াল। সে তার ডান দিকে বসা আইজ্যাক শামিরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে কিছু নির্দেশ দিতে যাচ্ছিল এমন সময় একটা শক্তিশালী বীপ বীপ শব্দ ভেসে এল। সংগে সংগে নিজেকে সামলে নিয়ে লাল চোখে কামাল সুলাইমানের দিকে চেয়ে বলল, ‘বস আসছে। এখন আর সময় নেই। যে মুখে এই অহংকারের কথা বললে, সে মুখ গুঁড়ো করে দেব। তৈরী থেক।’ কথা শেষ করল এবং তার পরেই দু’পাশের দু’জনকে বলল, ‘চল এদের খোঁয়াড়ে রেখে আসি।’ বলেই বন্দী তিনজনকে টেনে নিয়ে ওরা ছুটল খোয়াড়ের দিকে। ওদের খোয়াড়ের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে, গ্রীলের দরজায় বিশাল তালা ঝুলিয়ে দ্রুত ফিরে এল নিজ নিজ চেয়ারের কাছে। বীপ বীপ শব্দ তখনও চলছিল। কিন্তু তাদের সামনের মেঝের চেহারাটা পাল্টে গেছে। বন্দীদের রক্তে ভেজা মেঝেটা কোথায় সরে গেছে। তার জায়গায় শোভা পাচ্ছে শ্বেত পাথরের সুন্দর মেঝে। ওরা তিনজন ফিরে এসে চেয়ারে বসল না। তাদের দৃষ্টি শ্বেত পাথরের মেঝের দিকে। অপেক্ষা করছে তারা তাদের বসের। মাত্র কয়েক মুহূর্তের অপেক্ষা। তার পরেই শ্বেত পাথরের ওপাশ ঘেঁষে অনেকখানি জায়গায় মেঝে সরে গেল এবং সেখানে চোখের পলকে উঠে এল একটা চেয়ার সমেত একজন মানুষ। চেয়ারে বসা লোকটার তীরের মত ঋজু দেহ। লাল মুখটা পাথরের মত কঠিন। চোখের দৃষ্টিটা শূণ্য। তাতে কোন ভাষা নেই। গায়ে সামরিক পোশাক। হাতে সোনার একটি গ্লোব। গ্লোবের মাঝে জেরুসালেমের প্রোথিত নল আকারের একটা সোনারই দন্ড। তার মাথায় ছয় তারকার একটা পতাকা। ইনিই আজর ওয়াইজম্যান। ‘ওয়ার্ল্ড ফ্রিডম আর্মির’ অবিসংবাদিত নেতা। তার হাতের গ্লোবটি নেতার মনোগ্রাম। নেতার হাতেই শুধু এটা শোভা পায়। ওরা তিনজন দাঁড়িয়েই ছিল। আজর ওয়াইজম্যান উঠে এসে স্থির হতেই ওরা তিনজন তাকে সামরিক কায়দায় স্যালুট দিল। আজর ওয়াইজম্যানও একজন সর্বাধিনায়কের মত সামরিক কায়দায় স্যালুট গ্রহন করল এবং তাদেরকে ‘গুড মর্নিং’ বলে স্বাগত জানিয়ে বসতে বলল। বসল ওরা তিনজন। ‘মি.দানিয়েল ডেভিড, আপনাদের মুখ দেখেই বুঝতে পারছি, আপনাদের হাত শূণ্য। কিন্তু আজ তিন সপ্তাহ যাচ্ছে।’ বলল আজর ওয়াইজম্যান। ‘আমরা দুঃখিত। আমাদের হাত সত্যিই শূণ্য। অবিশ্বাস্য ব্যাপার স্যার, শারীরিক এধরনের নির্যাতনে হাতিও কথা বলে কিন্তু এই নির্যাতনেও তাদের কথা বলা পারছে না।’ বলল দানিয়েল ডেভিড। ‘বিস্ময়ের কথা বলছেন কেন? এটা তো জানা কথা। আর হাতির সাথেও তুলনা চলে না। হাতি পশু, মানুষ নয়। সুতরাং মানুষ হাতির চেয়ে শক্ত হবে। আর মানুষের মধ্যে মুসলমানরা শক্তিশালী, একথা বাইরে না বললেও তোমাদের তো মনে রাখা উচিত।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘ঠিক বলেছেন স্যার। নির্যাতনের এখানকার সকল প্রক্রিয়াই ব্যর্থ হয়েছে তাদের কথা বলাতে। তারা বলে জাহান্নামের শাস্তি এর চেয়েও ভয়াবহ।’ বলল দানিয়েল ডেভিড। ‘এটাই তো ওদের শক্তি। মৃত্যুকে যারা সোনালী জগতে প্রবেশের সোনার সিংহদ্বার বলে মনে করে, তারা দুনিয়ার সব ভয়কেই জয় করে। কিন্তু মি.দানিয়েল ডেভিড, তাদের কথা বলাতে হবে। ডকুমেন্টের ডুপ্লিকেট তাদের কাছে অবশ্যই আছে এবং সেগুলো আমাদের অবশ্যই চাই।’ আর ওয়াইজম্যান বলল। ‘ডুপ্লিকেটগুলো যখন ওদের কাছে আছে, নিশ্চয় তারা কোথাও সেগুলো রেখেছে। স্যার, সেগুলো খুঁজে পাওয়া কি সম্ভব নয়?’ বলল দানিয়েল ডেভিড। ‘তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা আমরা করেছি। ফল হয়নি। আবার চেষ্টা আমরা শুরু করতে যাচ্ছি। এই সাতজনের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব কাউকেই এই অনুসন্ধান তালিকা থেকে বাদ দেয়া হবে না। এরপর আমরা চিন্তা করেছি, এই সাতজনের যাদের স্ত্রী-সন্তান-সন্ততি আছে তাদের এখানে নিয়ে আসব। তাদের কথা বলাবার এটাই শেষ পথ।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। আজর ওয়াইজম্যানের শেষের কথাগুলো শুনে তিনজনের চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল দানিয়েল ডেভিড, ‘স্যার ওদের কথা বলাবার হন্যে ওদের স্ত্রী সন্তান ও মায়েরাই হবে অব্যর্থ অস্ত্র। স্যার, আমার মতে এই সাতজনের আত্মীয় বন্ধুদের সন্ধানে সময় ব্যয় না করে অবিলম্বে এদের পরিবার পরিজনদের এখানে আনলেই কাজ হবে বেশি।’ ‘হ্যাঁ, সেটাও আমরা ভাবছি। আমি যাচ্ছি স্ট্রাসবার্গে দু’একদিনের মধ্যে।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘আপনাকেই যেতে হবে? খুব বড় কাজ তো ওটা নয়। নির্দেশ দিলেই তো ওদের এখানে নিয়ে আসবে।’ বলল দানিয়েল ডেভিড। ‘ওখানে যেতে হবে। মনে হচ্ছে আমরা নতুন এক বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছি। খবর পাওয়া গেছে, আহমদ মুসা নাকি স্ট্রাসবার্গের উদ্দেশ্যে সুরিনাম ছেড়েছে। আমরা খবরটাকে অবিশ্বাস করছি না। যে মাফিয়া গ্রুপের কাছে থেকে খবর পাওয়া গেছে তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক সুরিনাম সরকারের। তাদের মাধ্যমে আহমদ মুসার টিকিটের বিস্তারিত বিবরণ পেয়ে গেছি। সে সুরিনাম থেকে মদিনায়, মদিনা থেকে আসছে স্ট্রাসবার্গে। এই স্ট্রাসবার্গে আসার দিনক্ষণটাই অনিশ্চিত রয়ে গেছে আমাদের কাছে।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘কেন সে আসছে স্ট্রাসবার্গে?’ জিজ্ঞেস করল দানিয়েল ডেভিডের পাশ থেকে হাইম হারজেল। ‘ইউরোপের একমাত্র কার্যকর মুসলিম গোয়েন্দা সংস্থা স্পুটনিক ধ্বংস হয়েছে, সংস্থার ৭জন পরিচালকের সবাই নিখোঁজ। স্ট্রাসবার্গে এমন সাংঘাতিক ঘটনা ঘটার পর জিজ্ঞাসার প্রয়োজন আছে কি যে আহমদ মুসা সেখানে কেন আসছে!’ ‘স্যরি। ঠিক বলেছেন স্যার। কিন্তু আমি ভাবছিলাম, ইউরোপের বাঘা বাঘা গোয়েন্দারা যেখানে স্পুটনিক ঘটনার কোন কুল কিনারা করতে পারেনি, সেখানে আহমদ মুসা এসে কি করবে।’ বলল হাইম হারজেল। ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আহমদ মুসা কি ঘটিয়েছে এটা দেখার পরেও আপনি একথা বলছেন? মার্কিন এফবিআই বহু বছরেও যার টিকির নাগাল পায়নি, আহমদ মুসা তার শুধু নাগাল পাওয়া নয়, ইহুদীদের শত বছরের সব আয়োজনই তো সে ধ্বংস করে দিয়েছে। ইহুদি গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল শ্যারনের গায়ে কেউ কোন দিন হাত দিতে পারে নি। কিন্তু আহমদ মুসা তাকে মার্কিন কারাগারে নিক্ষেপ করে এমন মামলায় জড়িয়েছে যে জেলের বাইরে আসাই হয়তো তার পক্ষে আর সম্ভব নয়।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। মুখ শুকিয়ে গেছে হাইম হারজেলের। মুখ নিচু করল সে। কথা বলতে পারল না। মুখ খুলল দানিয়েল ডেভিড। বলল, ‘স্ট্রাসবার্গে আহমদ মুসার আগমন সত্যিই খুব খারাপ খবর। আজ পর্যন্ত দুনিয়ার যে জায়গাতেই সে পা দিয়েছে, সেখানেই ভাগ্যের আনুকুল্য সে পেয়েছে। আর.........।’ ‘মি.হাইম হারজেল আহমদ মুসাকে জিরো করতে চেয়েছিলেন। আর আপনি তাকে ‘হিরো’ করতে চাচ্ছেন। আমরা যদি তাকে অজেয় হিরোই মনে করি, তাহলে তো আমাদের করার কিছুই থাকে না।’ বলল আজর ওয়াইজম্যান। ‘স্যরি স্যার।’ দানিয়েল ডেভিড বলল। ‘ধন্যবাদ মি.দানিয়েল ডেভিড। আসলে কি জানেন, অতীতে আহমদ মুসা সম্পর্কে আমাদের পলিটিক্স ঠিক হয়নি। তাকে বন্দী করে আমরা আর্থিক ও রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছি। এটা ঠিক হয়নি। তার মত লোককে যে বন্দী রাখা যায় না, এটা বুঝতে আমরা ভুল করেছি। সুতরাং এবার আমাদের সিদ্ধান্ত সুট অন সাইট। দেখা মাত্রই তাকে গুলী করা হবে। তাকে আমাদের দরকার নেই, তার লাশ দরকার।’ ‘স্ট্রাসবার্গে আপনি কবে যাবেন স্যার?’ জিজ্ঞেস করল দানিয়েল ডেভিড। ‘আজই।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘একটা কথা স্যার।’ বলল দানিয়েল ডেভিড। ‘কি কথা?’ ‘স্পুটনিকের ৭জন ছাড়া আর ২শর মত যারা আছে, তারা কিন্তু এদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। মুখ থেকে মুখে, কান থেকে কানে এই পদ্ধতিতে তারা তথ্য আদান-প্রদান ও শিক্ষা ক্লাস চালু করেছে। এদের এক সাথে এইভাবে রাখা আমাদের লক্ষ্যের পক্ষে কল্যাণকর হচ্ছে না।’ বলল দানিয়েল ডেভিড। হাসল আজর ওয়াইজম্যান। বলল, ‘মি.ডেভিড, স্পুটনিকের সাতজন ছাড়াও যাদের এখানে রাখা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব অঞ্চলের ইসলামের নেতা। তারা প্রত্যেকেই একটি করে শক্তির জেনারেটর। এখানে তাদের শেখার এবং শেখাবার কিছু নেই মি.ডেভিড।’ বলে একটু থামল আজর ওয়াইজম্যান। শুরু করল আবার, ‘আমাদের এটাকে ‘ক্যাম্প গ্রিনডার’ বলতে পারেন। মানুষকে পেষণ করে তার রস নিংড়ে নেয়াই এই ক্যাম্পের লক্ষ্য। ওদের কাছ থেকে সব তথ্য, সব কথা নিংড়ে নিয়ে ওদের আমরা আটলান্টিকে ডুবিয়ে দেব।’ ‘কিন্তু ওদের সন্ত্রাসী সংগঠন ও অস্ত্রপাতি সম্পর্কে তো কিছুই জানা যাচ্ছে না। বলছে না কিছুই ওরা শত নির্যাতনেও।’ বলল তিনজনের একজন আইজ্যাক শামির। ‘থাকলে তো বলবে কিছু ওরা। ওরা সন্ত্রাসী নয়, সন্ত্রাসী কোন সংগঠনও ওদের নেই।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘কিন্তু আমরা ওদের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছি সন্ত্রাসী সংগঠন হওয়ার অভিযোগে এবং ওদেরও তো আটক করেছি ভয়ানক সন্ত্রাসী হিসেবে।’ বলল সেই আইজ্যাক শামিরই। আজর ওয়াইজম্যানের পাথুরে মুখে হাসি ফুটে উঠল বলল, ‘তোমরা জান, ওটা আমাদের প্রোপাগান্ডা, ওদের সংগঠন নিষিদ্ধ করা ও ওদের আটক করার একটা ওজর। আসলে আমরা চাই, ইসলামী পূণর্জাগরনের সব সংস্থা সংগঠন ধ্বংস করতে এবং ওদের পুনর্জাগরণের গোপন কথাগুলো জানতে।’ ‘কিন্তু সেরকম কোন তথ্য আমরা বের করতে পারছি কি?’ বলল হাইম হারজেল। ‘প্রচার। এই কিছুক্ষণ আগে কামাল সুলাইমানের কাছ থেকে যে কথাগুলো বের করলেন, তার প্রিন্টের উপর আমি আসার সময় চোখ বুলিয়ে এসেছি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সে দিয়েছে। আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো, গত ৫০ বছরে মুসলিম বিশ্বে এমন কি ঘটল যে, মুসলিম তরুণরা, যুবকরা হঠাৎ করে ধর্ম নিরপেক্ষ, এমন কি তাদের অতিপ্রিয় ভাষা ও আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ ছেড়ে দিয়ে ইসলামের প্রতি অসীম ভালোবাসায় পাগল হয়ে উঠল। এই রহস্য উদঘাটন হচ্ছে। এই তো ক’মিনিট আগে কামাল সুলাইমানদের কাছ থেকে যা শুনলে, তাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।’ থামল আজর ওয়াইজম্যান। সে থামতেই দানিয়েল ডেভিড বলে উঠল, ‘সেটা কি?’ ‘এক ধরনের ইতিহাস, এক ধরনের বই-পুস্তক এবং এক ধরনের ঘটনাবলী এমনকি সেকুলার মুসলিম যুবকদেরকেও ইসলামে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে প্রবল শক্তিশালী জেনারেটরের ভূমিকা পালন করছে। কামাল সুলাইমানদের দেয়া তথ্য থেকে এই বিষয়টা সুনির্দিষ্টভাবে জানা গেল।’ বলল আজর ওয়াইজম্যান। ‘এই জানায় লাভ কি?’ কামাল সুলাইমান বলল। ‘জানায় লাভ হলো, আমরা এখন মুসলিম পাবলিকেশন্স এবং মুসলিম লাইব্রেরীসহ সব পাবলিকেশন্স ও লাইব্রেরীর দিকে নজর দেব। কিছু দিনের মধ্যেই দেখবেন, লাইব্রেরী থেকে ঐ ধরনের বইগুলো উধাও হয়ে গেছে, পুস্তক বিক্রেতাদের দোকান থেকে ঐ ধরনের বই সব রাতারাতি বিক্রি হয়ে গেছে এবং কোন প্রকাশনাই আর ঐ ধরনের বই প্রকাশ করছে না। দু’একটা প্রকাশনা যদি বেয়াড়া হয়, তাহলে স্পুটনিকের মতই সেগুলো জন্মের মতো ধ্বংস হয়ে যাবে। তাছাড়া সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অংশ হিসেবে আমরা মুসলিম সরকারগুলোকে বাধ্য করবো যাতে মৌলবাদী, উত্তেজক, প্ররোচক ঐসব বই এর প্রকাশনা শান্তির স্বার্থেই বন্ধ করে দেয়া হয়।’ থামল আজর ওয়াইজম্যান। দানিয়েল ডেভিডের চোখ-মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল দানিয়েল ডেভিড, ‘ধন্যবাদ স্যার। আমরা ঠিক পথেই এগোচ্ছি। কিন্তু স্যার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নিয়ে কি করবেন? ওরা আমাদের বিরুদ্ধে তো উঠে পড়ে লেগেছে। জেনারেল শ্যারনকে ওরা মনে হয় ফাঁসি দিয়েই ছাড়বে।’ চিন্তা করছিল আজর ওয়াইজম্যান। দানিয়েল ডেভিড থামার একটু পর বলল, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক দেশ। মার্কিন জনগণ তাদের স্বার্থে আঁচড় লাগাতে দিতেও নারাজ। আমরা ইহুদীবাদীরা এই বাস্তবতাকে গুরুত্ব দেইনি। আমরা তাদের পাতের ভাত কেড়ে খেতে শুরু করেছিলাম। কিছু মানুষকে হয়তো চিরদিনই বোকা বানিয়ে রাখা যায়, তবে সব মানুষকে সব সময়ের জন্যে বোকা বানিয়ে রাখা অসম্ভব, আমরা এ সত্যটাকেও আমলে দেইনি। নিউইয়র্কের লিবার্টি টাওয়ার ও ডেমোক্রাসি টাওয়ার ধ্বংসের দায় মুসলমানদের ঘাড়ে সফলভাবে চাপাবার পর যে মহাসুযোগ আমরা পেয়েছিলাম, তা আমাদেরকে বেশি বেপরোয়া করে তুলেছিল। এটা আমাদের ক্ষতি করেছে। আর আহমদ মুসা আমেরিকায় গিয়ে এরই সুযোগ গ্রহন করেছে। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোটা পরিবেশ আমাদের প্রতিকূলে। নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হবে আমাদের সেখানে। ভয়ের কিছু নেই, আমরা চিন্তা করছি, আগামী নির্বাচনে মার্কিন কংগ্রেসে আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল লোকদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করার চেষ্টায় আমরা হাত দিয়েছি এবং পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাদের পছন্দনীয় হয় তার জন্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের এসব প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যাবে যদি নিউইয়র্কের লিবার্টি ও ডেমোক্র্যাসি টাওয়ার ধ্বংসের আসল রহস্য মার্কিন জনগনের সামনে এসে যায়। এজন্যেই আমরা স্পুটনিক ধ্বংস করেছি, স্পুটনিকের হোতা সাত শয়তানকে আমরা আটক করেছি এবং তাদের সংগ্রহ করা লিবার্টি ও ডেমোক্র্যাসি টাওয়ার ধ্বংসের প্রকৃত প্রমাণাদি আমরা হাত করার চেষ্টা করছি। ঐ সাত শয়তানের কাছ থেকে যে কোন মূল্যে আমাদেরকে ঐ ডকুমেন্ট উদ্ধার করতেই হবে। দরকার হলে ওদের সব আত্মীয় পরিজনকে এখানে নিয়ে আসব এবং সাত শয়তানের মুখ খোলার জন্যে এদের গিনিপিগ বানাব। সুতরাং এই সাও তোরাহ দ্বীপের আমাদের মিশন সফল হওয়ার উপরই নির্ভর করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভবিষ্যত। নিউইয়র্কের লিবার্টি ও ডেমোক্র্যাসি টাওয়ার ধ্বংসের রহস্য ফাঁস হয়ে গেলে শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, গোটা দুনিয়ার কাছে আমরা বিশ্বাসঘাতকে পরিণত হবো।’ থামল আজর ওয়াইজম্যান। আজর ওয়াইজম্যানের পাথুরে মুখ ভাবলেশহীন। কিন্তু দানিয়েল ডেভিডের চোখে মুখে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। বলল দানিয়েল ডেভিড, ‘স্যার, সাও তোরাহ মিশন ব্যর্থ হবে না স্যার। সাত শয়তানকে অবশেষে কথা বলতেই হবে। তবে আহমদ মুসাকে ঠেকানো দরকার স্যার।’ ‘হ্যাঁ, আহমদ মুসার ব্যাপারটা আমরা দেখছি। যে যাতে স্পুটনিকের ঘটনার ব্যাপারে নাক গলাতে না পারে, সে ব্যবস্থা আমরা যে কোন মূল্যেই করব। আমি আজই যাচ্ছি সেখানে।’ কথা শেষ করেই ‘গুড মর্নিং টু অল। ‍উইথ ইউ গুডলাক’ বলে চলে গেল আজর ওয়াইজম্যান। ‘গুড মর্নিং’ বলে দানিয়েল ডেভিডরাও তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়াল। ততক্ষনে চেয়ার সমেত আজর ওয়াইজম্যান অদৃশ্য হয়েছে। তিনজনই আবার বসে পড়ল চেয়ারে। ঘড়ির দিকে তাকাল দানিয়েল ডেভিড। বলল, ‘চলুন আমাদেরও সময় হয়েছে যাবার।’


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩২৫ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now