বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
অ ন্য দিনের তুলনায় আজকে
একটু বেশি শীত পড়েছে। রাত
এগারোটা নাগাদ পড়ার
টেবিলেই বসে ছিলাম। শেষ
পর্যনত্দ প্রচন্ড শীতের কাছে হার
মানতে হলো। হাত-পা গুলো
বরফের মত জমে আসছে। চোখ
জোড়াও বুঝি ক্লানত্দ হয়ে
পড়েছে। তাড়াহুড়ো করে
লেপের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
যেন ব্যাঙের মত শীতনিদ্রার
প্রস্তুতি। তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ঘুম
আসতে বেশি সময় লাগল না। এর
মধ্যেই কেউ একজন আমাকে
ডাকতে শুরু করলো। ডাকটা
ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে আসছে।
হ্যাঁ , স্পষ্ট বুঝতে পারছি এটা
একটা মেয়ে মানুষের কন্ঠ।-ওঠো
মাইকেল, ওঠো...।
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা
কি করবো। মেয়েটার কণ্ঠটা খুব
মিষ্টি।-ওঠো মাইক , আমি
উইলিয়াম শেরী।-উইলিয়াম
শেরী ? কে উইলিয়াম শেরী ?
আমি মেয়েটাকে দেখার জন্য
অনেক কষ্ট করে চোখ খুললাম।
সামনে দাড়িয়ে আছে
মেয়েটা , ধবধবে সাদা একটা
শাড়ি পরা। হাতে সাদা
কাঁচের চুড়ি। নঁখে নেলপালিশ
লাগানো , চেহারায়
খানিকটা ফ্যাকাশে
ফ্যাকাশে ভাব। ঠোঁটের
কোমলতা হ্রাস পেয়েছে। সম্ভবত
প্রচন্ড শীতের কারণে। সব
মিলিয়ে মেয়েটার সৌন্দর্য
দেখার মত। অবাক হয়ে
দেখছিলাম মেয়েটাকে।-কি
হল মাইকেল , আমাকে চিনতে
পারছোনা ? আমি উইলিয়াম
শেরী।
বেশ অবাক হলাম মেয়েটার কথা
শুনে। কিছুটা ভয় পেলাম বলা
যায়।-কোন শেরী ? আমি কোন
শেরীকে চিনিনা। তাছাড়া
তুমি আমার রুমের ভেতরে
কিভাবে আসলে ?-তুমি নিশ্চয়
আমাকে চিনবে মাইক। আমি
তোমাকে সব কিছু বলার জন্যই
এসেছি।-না আমি কাউকে
চিনিনা। আমার কেউ নেই।-
আমি জানি মাইকেল , তোমার
কেউ নেই। তুমি জন্মের পর থেকে
এই ফাদার উইলিয়ামস্ এর
আশ্রমেই আছো।-তুমি এতো কিছু
জানলে কি করে ? আর আমার
ব্লকেইবা কি করে এলে ? সত্যি
করে বলো কে তুমি ?-আমি
উইলিয়াম জনের একমাত্র কন্যা
উইলিয়াম শেরী।-মিথ্যে কথা ,
তারা তো কুড়ি বছর আগে কার
এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।
তুমি নিশ্চয়ই চুরি করতে
এসেছো।-না , মাইক। তুমি
আমাকে বিশ্বাস করো , আমিই
উইলিয়াম শেরী। আমাদের
মেরে ফেলা হয়েছে। খুন করা
হয়েছে। এক্সিডেন্টের
ঘটনাগুলো সব বানোয়াট। আমি
তোমাকে সবকিছু বলতে চাই
মাইক।
- আমি বিশ্বাস করিনা। আর
আমার কাছেইবা কেন এসেছো
তুমি।
আমার শরীর বিন্দু বিন্দু ঘামতে
শুরু করেছে।
শেষ পর্যনত্দ শেরীর কথাগুলো
বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম।
শেরী আমাকে হাত ধরে বাইরে
নিয়ে গেল। তারপর একে একে সব
কিছু খুলে বললো-
শেরীর বাবা উইলিয়াম জন
ছিলেন একজন সৎ ও পরিশ্রমী
ব্যবসায়ী। বিবাহের দু ' বছর পর
শেরীর জন্ম । তারপর থেকে
কপাল খুলে যায় তাদের। ক্রমেই
শহরের বড় সব ধনীদের একজন হয়ে
যান উইলিয়াম জন। পক্ষানত্দরে
জনের ছোট ভাই উইলিয়াম জ্যাক
ছিল একজন জুয়াড়ী ও মাতাল।
ভাইয়ের উন্নতি দেখে
হিংসায় ফেটে পড়ে সে। এক
রাতে পরিকল্পনা মাফিক
উইলিয়াম জনসহ তার স্ত্রী এবং
শেরীকে স্বপরিবারে হত্যা
করে লাশ গোপন করে
এক্সিডেন্টের একটা নাটক
সাজিয়ে দিল জ্যাক। এরপর
থেকে বড় ভাই জনের পুরো
সম্পত্তির উপর চেপে বসে সে।
জন এই আশ্রমটি পূর্বেই উইল করে
দেয়ায় এটির উপর কোন প্রভাব
ফেলতে পারেনি জ্যাক।
শেরীর কাছে সব কিছু শুনে বেশ
অবাক হলাম।-কিন্তু এতে আমার
কি করার আছে ? শেরীকে প্রশ্ন
করলাম।-তুমি শুধু আমাকে সাহায্য
করবে মাইক। কেবল মাত্র একজন
নিষ্পাপ এতিমই পারে আমাকে
সাহায্য করতে। তুমি শুধু আমার
কথা মত সমসত্দ ঘটনা আর লাশ
গোপন করার স্থানসহ অন্যান্য
প্রমাণের কথাগুলো উল্লেখ করে
স্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকতর্া
বরাবর একটা চিঠি লিখবে।
- কিন্তু...! আমাকে থামিয়ে
দিলো শেরী।
- আমার এসব করার ক্ষমতা নেই
মাইক। আমি একটা আত্মা মাত্র।
ভয় পেয়োনা মাইক। তুমি কেবল
আমাকে সাহায্য করছো।
তাছাড়া তুমি যে চিঠিটি
লিখবে সেটা হবে বেনামী
চিঠি।
শেরীর কথা মতো চিঠিটা
লিখে ফেললাম। শেরীই ওটা
পোস্ট করার দায়িত্ব নিলো।
এদিকে সকালও প্রায় হয়ে
এসেছে। শীতের রাত কুয়াশায়
চারদিক ঢেকে আছে কিন্তু
আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম
জমে যাচ্ছে।
- তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মাইক।
কুড়ি বছর পর আমার প্রতিশোধের
পালা শেষ হতে যাচ্ছে।
আমাদের আত্মা এবার শান্ত হবে
আর জ্যাক পাবে উপযুক্ত শিক্ষা।
আমার বাম হাতটা ধরে নিজের
ডান হাতের আঙ্গুল থেকে একটা
আংটি খুলে আমার আঙ্গুলে
পরিয়ে দিলো শেরী।-তুমি
উইলিয়াম পরিবারকে ঋণী
করেছো মাইক। তোমার জন্য
ছোট্ট এই উপহার।
আমি শুধু বিমুগ্ধ চোখে
মেয়েটার সৌন্দর্য আর সরলতা
অনুভব করছিলাম। আমরা হাত
থেকে চিঠিটা নিয়ে
বাতাসে মিলিয়ে গেলো
শেরী। ঘন্টার শব্দে আমার ঘুম
ভাঙলো। দশ মিনিটের মধ্যে
তৈরী হয়ে প্রার্থনা কক্ষে
হাজির হতে হবে। সময় মত হাজির
না হতে পারলে সে দিন আর
সকালের নাস্তা দেয়া হবেনা।
এটা আমাদের আশ্রমের নিয়ম।
প্রতিদিন সকালে প্রার্থনার মধ্য
দিয়ে দিনের শুরু। এই নিয়মেই বড়
হয়েছি।
তাড়াহুড়ো করে তৈরি হয়ে
প্রার্থনা কক্ষে হাজির হলাম।
শীতের দিনে এতো সকালে
উঠতে কিছুটা কষ্টই হয়।
অন্যান্য দিনের মত সারাদিন
রুটিন মাফিক ব্যস্ততার সাথেই
কেটে গেল। সন্ধ্যাবেলায়
লাইব্রেরি গিয়ে
সান্ধ্যকালীন খবরের কাগজটি
হাতে নিয়েই দশ হাজার
ভোল্টের শক্ খেলাম। খবরের
কাগজের শিরোনামে ছাপা
হয়েছে, "কুড়ি বছর পর উইলিয়াম
পরিবারের খুনের রহস্য উন্মোচন"
আমার হাত পা কাঁপতে শুরু
করেছে। তবুও পড়তে থাকলাম।
উইলিয়াম পরিবারকে কুড়ি বছর
আগে তার ছোট ভাই জ্যাক হত্যা
করে লাশ গোপন করে এবং
যাবতীয় সম্পদের মালিক বনে
যায়। আজ দুপুরে গোয়েন্দা
বিভাগ এক উড়ো চিঠির
ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে
সকল প্রমাণাদী সহ জ্যাককে
গ্রেফতার করেন। জ্যাক তার কু -
কর্মের কথা স্বীকার করেছে।
আমি আর বেশি পড়তে
পারছিলাম না। চেয়ারে
হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। কাল
রাত্রে এগুলোই আমি স্বপ্নে
দেখেছি। কি অদ্ভুত ব্যাপার!
হঠাৎ মনে পড়লো শেরীর দেয়া
আংটিটার কথা। আমার বাম
হাতের উপর চোখ পড়তে দেখি
সেই রিংটা এখনো আমার
হাতেই আছে। কিছু বুঝে উঠতে
পারছিনা। সব কিছুই যেন স্বপ্ন।
কিন্তু স্বপ্নই যদি হবে তবে
শেরীর দেয়া এই রিংটা আমার
আঙ্গুলে জ্বলজ্বল করছে কেন ?
আমি যেন বাস্তব আর অবাস্তবের
মাঝামাঝি কোন এক অতল গহ্বরে
তলিয়ে যাচ্ছি।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now
¤-ইশিকা-¤
User ৫ বছর, ৪ মাস পুর্বে