বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৩

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ৩ আজর ওয়াইজম্যানের চোখ দু’টি তার সামনে টেবিলে রাখা দু’টি ফটোর উপর স্থিরভাবে নিবদ্ধ। দু’টি ফটোই আহমদ মুসার বলে কথিত। একটি ফটো ওয়াইজম্যানদের ফটো। আহমদ মুসার ফটো হিসাবে ফাইলে সংরক্ষিত। আরেকটি ফটো স্ট্রাসবার্গ পুলিশের কাছ থেকে সদ্য সংগৃহীত। ফটোটি পুলিশ তুলেছে আহমদ মুসার হোটেল কক্ষে দু’জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর। আজর ওয়াইজম্যানের হাতে একটা পাওয়ারফুল এ্যামপ্লিফায়ার লেন্স। সেটা ‍দিয়ে খুঁটে খুঁটে সে পরীক্ষা করছে ফটো দু’টিকে। আজর ওয়াইজম্যান ওয়ার্ল্ড ফ্রিডম আর্মির (WFA) প্রধান। সাও তোরাহ দ্বীপ থেকে মাত্র কিছুক্ষণ আগে সে স্ট্রাসবার্গে পৌছেছে। ফটো দুটি গভীর মনোযোগের সাথে পরীক্ষা করার পর মুখ তুলল আজর ওয়াইজম্যান। হাতের লেন্সটা টেবিলে রেখে সামনে বসা WFA এর স্ট্রাসবার্গ এর স্টেশন চীফ লাইবারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমাদের ফাইল ফটোর সাথে হোটেলের কথিত আহমদ মুসার ফটোর মুখের আদল হুবহু মিলে যাচ্ছে। কিন্তু চোখ-মুখের মাইক্রো রিডিং মিলছে না। একেবারেই আলাদা। এটা কি করে সম্ভব বুঝতে পারছি না।’ আজর ওয়াইজম্যান থামতেই লাইবারম্যান বলে উঠল, ‘কিন্তু হোটেলের এই লোক আহমদ মুসা হতেই হবে। গ্রীন সার্কেল ও হোটেলের সাংঘাতিক ঘটনা প্রমাণ করছে লোকটি আহমদ মুসা না হয়েই পারে না। হোটেলের ঘটনায় পুলিশ পর্যন্ত বিস্মিত হয়েছে। সাফল্যের সাথে আমাদের লোকেরা হোটেল কক্ষে প্রবেশ করেছিল। পুলিশের মতে তারা প্রথমে আক্রমণ করারও সুযোগ পেয়েছিল। ক্লোরোফরম ভেজা রুমাল খাটের পাশে পাওয়ার অর্থ আহমদ মুসাকে তারা নিদ্রিত অবস্থায় পেয়েছিল এবং তাকে সংগাহীন করার জন্যে ক্লোরোফরমসহ রুমালও তারা বের করেছিল। কিন্তু নিদ্রিত অবস্থায় প্রথমে আক্রমণ করেও দু’জনে আহমদ মুসাকে এঁটে উঠতে পারেনি। আহমদ মুসার মত অসাধারণ কেউ না হলে এটা সম্ভব ছিল না।’ ‘আমার কথাও এটাই। মদিনা থেকে স্ট্রাসবার্গে আসা আহমদ মুসার সিডিউলের সাথে এ লোকটির স্টাসবার্গে আসার সিডিউল মিলে যাচ্ছে। চেহারা ও মুখের আদলটাও মিলে যাচ্ছে। কিন্তু আসল জায়গায় তো মিলছে না’, বলল আজর ওয়াইজম্যান। ‘কোন কারণ নিশ্চয় আছে। কিন্তু লোক যে একই এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।’ লাইবারম্যান বলল। ‘সে কারণটা কি হতে পারে?’ জিজ্ঞেস করল আজর ওয়াইজম্যান। ‘হতে পারে দুটি ফটোগ্রাফের কোন একটিতে আহমদ মুসার ছদ্মবেশ আছে।’ বলল লাইবারম্যান। ‘কিন্তু ছদ্মবেশ তো মুখের মাইক্রোরিডিং পাল্টাতে পারে না।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘পারে স্যার। প্লাস্টিক মেকআপ সম্পর্কে আমার বিশেষ পড়াশুনা আছে। আমি জানি, সর্বাধুনিক এমন কিছু প্লাস্টিক মেকআপ আছে যা সব দিক দিয়ে চামড়ার মত। চামড়ার মতই এতে রেখা, লোম ও লোমকূপ আছে। আলট্রা মাইক্রো লেন্সেও চামড়ার সাথে এর কোন ভিন্নতা ধরা পড়ে না।’ বলল লাইবারম্যান। ‘ধন্যবাদ লাইবারম্যান। আপনার এ মত আমি গ্রহন করছি এবং আমরা এখন এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, হোটেলের এই লোকটি আহমদ মুসাই।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘অবশ্যই।’ বলল লাইবারম্যান। ‘তাহলে একথাও বলা যায় যে, সে এখন আমাদের হাতের মুঠোয়।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘তা আমরা বলতে পারি। হোটেল কক্ষে নিহত হওয়ার ঘটনার পুলিশ রিপোর্টটি আহমদ মুসার পক্ষে গেলেও পুলিশ আমাদেরকে সহযোগিতা করবে তার ব্যবস্থা হয়েছে। পুলিশ কমিশনার পুলিশের প্রতি কিছু নির্দেশ দিয়েছেন। তারা সুযোগমত আহমদ মুসাকে গ্রেপ্তার করে আমাদের হাতে তুলে দেবে।’ বলল লাইবারম্যান। ‘পুলিশের সাহায্য একটা বাড়তি বিষয়। তাদের উপর নির্ভর করে বসে থাকা যাবে না।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘না স্যার। আমরা বসে নেই। হোটেলের চারদিকে আমরা ২৪ ঘন্টা পাহারা বসিয়ে রেখেছি। আমরা আহমদ মুসাকে চোখের আড়াল হতে দেব না। সুযোগ পেলে আমরা পুলিশের অপেক্ষা করব না। আমরা নিজেরাই তাকে জালে আটকাব।’ বলল লাইবারম্যান। ‘আমি চাই আহমদ মুসাকে ‘সাও তোরাহ’ দ্বীপের খাঁচায় পুরতে। তাকে খাঁচায় ভরতে পারলে শুধু বহু তথ্য পাওয়া যাবে তা নয়, গোটা দুনিয়ায় আমাদের মিশন নিরাপদ হয়ে যাবে।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের এতবড় বিপর্যয় ঘটাতে আহমদ মুসা পারল কিভাবে?’ জিজ্ঞেস করল লাইবারম্যান। ‘আহমদ মুসা শৃগালের মত ধূর্ত, বাঘের মত ক্ষিপ্র, সিংহের মত সাহসী এবং স্যার এ.এইচ. ডুনান্টের চেয়েও মানবিক এবং পোপের চেয়েও দয়ালু। কোন গুণের ঘাটতি তার ভেতর নেই। নিজের জীবন বিপন্ন করে বিপজ্জনক ওহাইও নদীতে ডুবে যাওয়া থেকে এফবিআই চীফ মি.জর্জের নাতিকে উদ্ধার করে আহমদ মুসা এফবিআই চীফের হৃদয় জয় করে নেয়। সবুজ পাহাড় ও লস আলামাসের মধ্যকার আণবিক ও সামরিক তথ্য পাচারের ইহুদী গোয়েন্দা সুড়ঙ্গ আবিষ্কার করে তা মার্কিন সরকারের হাতে তুলে দেয়াসহ বহু নিঃস্বার্থ ও উপকারী কাজের মাধ্যমে সে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আস্থা অর্জন করে। অন্যদিকে সে আমাদের বেশ কিছু অপরাধমূলক বড় ধরনের কাজকে হাতে নাতে ধরিয়ে দেয়। এভাবেই সে গত একশ বছরে মার্কিন মাটিতে প্রোথিত আমাদের শেকড়কে আমূল উপড়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছে। মার্কিন সরকার, মার্কিন কংগ্রেস ও মার্কিন সমাজে আমাদের শক্তিশালী লবি আজ সম্পূর্ণই অকার্যকর হয়ে পড়েছে এক আহমদ মুসার তৎপরতায়। এই আহমদ মুসাই এসেছে স্ট্রাসবার্গে। স্পুটনিক যে কাজ হাতে নিয়েছিল, সে কাজ করার জনেই সে যদি স্ট্রাসবার্গে এসে থাকে, তাহলে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। কয়েক বছর আগে সংঘটিত নিউইয়র্কের ‘লিবার্টি ও ডেমোক্র্যাসি’ টাওয়ার ধ্বংস আমরাই করেছি একথা যদি সে প্রমাণ করতে পারে, তাহলে দুনিয়ার কোথাও আমাদের জায়গা হবে না। সুতরাং স্ট্রাসবার্গে এখন আমাদের একমাত্র কাজ সর্বশক্তি দিয়ে আহমদ মুসাকে ধ্বংস করা।’ দীর্ঘ বক্তব্য দেয়ার পর থামল আজর ওয়াইজম্যান। তার চোখে-মুখে সফরের ক্লান্তি এবং কন্ঠে হতাশার সুর। ‘স্যার, আপনি কি নিশ্চিত আহমদ মুসা ‘স্পুটনিক মিশন’ নিয়ে স্টাসবার্গ এসেছে?’ বলল লাইবারম্যান উদ্বিগ্ন কন্ঠে। ‘এছাড়া কোন কাজে সে স্ট্রাসবার্গ আসবে? আহমদ মুসার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এ ধরনের মিশন নিয়ে সে বার বার বিভিন্ন জায়গায় গেছে। আর ‘স্পুটনিক মিশনে’র ব্যাপারটা সফল হয়, তাহলে একদিকে মুসলিম জাতিকে তারা ইতিহাসের জঘণ্য অপরাধের দায় থেকে বাচাঁতে পারবে, অন্যদিকে আমাদের তারা আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবে।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘স্পুটনিকের সবই তো ধ্বংস হয়ে গেছে। তাছাড়া স্পুটনিকের সাত শয়তানও আমাদের হাতে। আহমদ মুসা যতই করিতকর্মা হোক, আমার বিশ্বাস খুব বেশি সামনে এগুতে পারবে না। আরেকটা বড় বিষয় হলো, স্ট্রাসবার্গ পুলিশের কাছ থেকে সে ভাল সহায়তা পাবে না।’ লাইবারম্যান বলল। লাইবারম্যানের চোখে-মুখে যতটা স্বস্তির ভাব ফুটে উঠেছিল, ততটাই অস্বস্তি প্রকাশ পাচ্ছিল আজর ওয়াইজম্যানের মুখে। তার কপাল কুঞ্চিত। অস্বস্তিকর ভাবনায় ডুবে যাওয়া তার মুখমন্ডল। লাইবারম্যান থামার পর একটু সময় নিয়ে ধীরে ধীরে সে বলল, ‘স্পুটনিক অফিসের সবরকমের দলিল দস্তাবেজ আমরা ধ্বংস করেছি। কিন্তু অফিসের দলিল দস্তাবেজই যে সবটুকু এটা কে বলবে। এ সবের কপি তারা অন্যকোন নিরাপদ জায়গায় রাখবে, এটাই স্বাভাবিক। এগুলো তো আহমদ মুসা পেয়েও যেতে পারে। কারণ, স্পুটনিকের সাথে জড়িত সব পরিবার থেকেই সে সমান সহযোগিতা পাবে।’ থামল আজর ওয়াইজম্যান। উদ্বেগে ভরে উঠেছে লাইবারম্যানের চোখ-মুখ। বলল, ‘তাহলে এ দলিলগুলো তো আমাদের যে কোন মূল্যে খুঁজে পেতে হবে। সাও তোরাহে ওদের কাছ থেকে কিছু জানতে পারেননি, বলেনি কিছু তারা?’ লাইবারম্যানের কন্ঠে উত্তেজনা। ‘না কিছুই বলেনি। কোনওভাবেই তাদের মুখ খোলা যায়নি। যে নির্যাতনে হাতিও চিৎকার করবে, সে নির্যাতনও তারা হজম করে।’ আজর ওয়াইজম্যান বলল। ‘মানুষ এমন হতে পারে?’ বিস্ময় লাইবারম্যানের কন্ঠে। ‘তারা ভিন্ন মানুষ।’ বলল ওয়াইজম্যান। ‘কেমন?’ ‘মৃত্যুকে ওরা সাফল্যের সিংহদ্বার বলে মনে করে। সেই সাফল্যের তুলনায় এই কষ্টটা নাকি খুবই ছোট।’ ওয়াইজম্যান বলল। ‘তাহলে?’ ‘পথ একটাই, আহমদ মুসাকে সরিয়ে দেয়া।’ বলল ওয়াইজম্যান। ‘সেটা তো এক নাম্বার কাজ। স্পুটনিক পরিবারে কি হানা দেয়া যায় না এই দলিল দস্তাবেজের সন্ধানে?’ লাইবারম্যান বলল। ‘কেন, গত রাতে তো স্পুটনিকের ৭ নেতার বাড়িসহ ওদের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের বাড়ি আদ্যপান্ত সার্চ করেছ।’ বলল আজর ওয়াইজম্যান। ‘আচ্ছা, তাহলে এসব কাগজই কি খুঁজেছি গত রাতে? কিন্তু কিছুই তো মেলেনি!’ লাইবারম্যান হতাশ কন্ঠে বলল। ‘মিলবে কি এত সহজে! ওদের বৌ-বেটিকেও নিয়ে যেতে হবে সাও তোরাহতে। দেখা যাবে তারপর তাদের মুখ বন্ধ থাকে কতক্ষণ।’ বলল ওয়াইজম্যান। ‘ঠিক বুদ্ধি। ওদের দেহ যতটা শক্ত, তাদের নৈতিকতা ততটাই স্পর্শকাতর। বৌ বেটির ইজ্জত যেতে দেখলে, স্রোতের মত বেরিয়ে আসবে ওদের মুখ থেকে কথা।’ বলে একটু থেমেই সে আবার বলা শুরু করল, ‘তাহলে এই কাজে আমরা দেরি করছি কেন? নির্দেশ দিন আমরা শুরু করি।’ ‘না মি.লাইবারম্যান। আহমদ মুসাকে ধ্বংস করাই প্রথম কাজ। তাকে শেষ করলে, অন্য কাজ ধীরে সুস্থে করায় কোন ক্ষতি হবে না।’ এ সময় টেলিফোন বেজে উঠল লাইবারম্যানের। টেলিফোন কানের কাছে তুলে নিল লাইবারম্যান। ওপ্রান্তের কথা শুনে সে বলে উঠল, ‘জরুরী খবর? বল বল।’ ওপারের খবর শুনল। তারপর এক ঝলক তাকাল সে ওয়াইজম্যানের দিকে এবং বলল ওপ্রান্তকে, ‘একটু হোল্ড কর, কথা বলি স্যারের সাথে।’ বলে টেলিফোন এক পাশে সরিয়ে নিয়ে ওয়াইজম্যানকে লক্ষ্য করে দ্রুতকন্ঠে বলল, ‘স্যার, আহমদ মুসা হোটেল থেকে বেরিয়েছে। সে একা একটি ট্যাক্সিতে চড়ে বিষমার্ক রোড ধরে এদিকেই এগিয়ে আসছে।’ থামল লাইবারম্যান। লাইবারম্যান থামতেই আজর ওয়াইজম্যান বলে ঊঠল, ‘ওরা যারা আছে সবাইকে পিছু নিতে বল। ঈল পার্কের মোড়ে ওকে চারদিক থেকে আটকাতে হবে। এ অঞ্চলটায় মানুষের যাতায়াত খুবই পাতলা। এখানেই ওর নিপাত ঘটাতে হবে। বলে দাও আমরা আসছি।’ লাইবারম্যান সব কথা ওদের বুঝিয়ে বলে টেলিফোন রাখল। ওয়াইজম্যান লাইবারম্যানকে লক্ষ্য করে বলল, ‘আরও যাদের দরকার তাদের বলে দাও সেখানে যেতে। দেখ, আমাদের ব্যর্থ হওয়া চলবে না। আর তৈরী হও এখনি।’ বলে ওয়াইজম্যান উঠে দাঁড়াল। উৎসাহের সাথে উঠে দাড়াল লাইবারম্যানও। ওয়াইজম্যান তার কক্ষের দিকে পা বাড়াতে গিয়ে পাশে ফিরে তাকিয়ে লাইবারম্যানকে বলল, ‘পুলিশ কমিশনারকে কি আমাদের এই মিশনের কথা বলবে?’ ‘হ্যাঁ, বলল তাদের সাহায্যও পাওয়া যেতে পারে।’ লাইবারম্যান বলল। চিন্তা করছিল ওয়াইজম্যান। বলে উঠল, ‘না লাইবারম্যান, পুলিশকে জড়িয়ে লাভ নেই। তাদের কারণে কোন সমস্যারও সৃষ্টি হতে পারে।’ বলে সে পুনরায় চলতে শুরু করল তার কক্ষের দিকে তৈরী হওয়ার জন্যে। লাইবারম্যানও এগুলো তার কক্ষের দিকে। ঈল পার্কটি স্ট্রাসবার্গ শহরের মতই পুরাতন। পার্কটি নদীর সমান্তরালে। বিরাট জায়গা জুড়ে। পার্কের পাশ দিয়ে রাস্তা। রাস্তার সমান্তরালে নদীর তীর ঘেঁষে মাঝে মাঝে হোটেল ও ট্যুরিস্ট ভিলায় মাঝে মাঝে রয়েছে বাগান। এ বাগানগুলো নদীর পানি পর্যন্ত নেমে গেছে। শান্ত নিরিবিলি এলাকা। শহরের হৈ-হুল্লোড়ের বিন্দুমাত্রও এখানে নেই। পার্কের পাশের সড়ক ধরে চলছে আহমদ মুসার গাড়ি। আহমদ মুসার টার্গেট নগরীর মেয়র অফিস। মেয়র অফিসের রেজিস্ট্রেশন বিভাগ থেকে আহমদ মুসা একটা ঠিকানা যোগাড় করতে চায়। গতকাল বিকেলে তাড়া খেয়ে যে গাড়ি ছেড়ে ওরা পালিয়েছিল, সে আমেরিকান গাড়িটার কাগজপত্রে যে নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে, তাতে রাস্তার নাম আছে, কিন্তু বাড়ির নাম ও নাম্বার নেই। মেয়র অফিস থেকে এই নাম নাম্বার পাওয়া যায় কিনা, সেটাই সে দেখতে চায়। আহমদ মুসার গাড়ি চলছিল মধ্যম গতিতে। সামনেই ঈল পার্কের একটা মোড়। মোড়টা ত্রিরাস্তার একটি সংযোগ স্থল। এই মোড় থেকে একটা রাস্তা ঈল নদীর কিনারা পর্যন্ত নেমে গেছে। মোড়টাতেও তেমন ভীড় ও গাড়ি ঘোড়ার সমাগম নেই। তবে বেশ কিছু গাড়ি পার্ক করা আছে দেখতে পেল আহমদ মুসা। সবগুলো গাড়িরই মুখ মোড়ের দিকে। হয়তো আরোহীরা নেমে পার্কে ঢুকেছে ভাবল আহমদ মুসা। মোড়ে প্রবেশ করল আহমদ মুসার গাড়ি। আহমদ মুসার গাড়ি তখন মোড়ের মাঝামাঝি এসে পৌঁছেছে। হঠাৎ আহমদ মুসা বিস্ময়ের সাথে দেখল, সামনে ও বাম দিক থেকে এক জোড়া করে দুই জোড়া গাড়ি তীরবেগে এগিয়ে আসছে। প্রথমে আহমদ মুসা মনে করেছিল মোড় ঘুরে গাড়িগুলো কোন দিকে চলে যাবে। কিন্তু পরক্ষনেই তার বুঝতে বাকি রইল না গাড়িগুলো তার গাড়ি লক্ষ্য করেই পাগলা গতিতে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ করেই ব্রেক কষেছে আহমদ মুসা তার গাড়ি। সামনে এগুনো যায় না, বামেও না। আর ডাইনে পার্কের দেয়াল। পেছনে হটা ছাড়া পথ নেই। কিন্তু পেছনে হটতে গিয়ে রিয়ারভিউতে চোখ পড়তেই দেখল, পেছন থেকে আর এক জোড়া গাড়ি সেই একই গতিতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। গাড়িতে আবার ব্রেক কষে গাড়ি থেকে আহমদ মুসা বেরোতে যাবে এমন সময় তিন দিক থেকে বৃষ্টির মত গুলী শুরু হলো। তিন দিকের গুলির বৃষ্টি এসে ছেঁকে ধরল তার গাড়িকে। গাড়ির সামনে ও পেছনের উইন্ড স্ক্রিন ও সব জানালা মুহূর্তেই উড়ে গেল। ঝাঁঝরা হতে লাগল গাড়ি। হোটেল থেকে ভাড়ায় আনা গাড়িটার জন্যে কষ্ট লাগল আহমদ মুসার। গাড়ির মেঝেয় শুয়ে নিজের আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করল। পাল্টা আক্রমনের কোন সুযোগ পেল না আহমদ মুসা। তিন দিকের অবিরাম গুলিবৃষ্টির মধ্যে মুহূর্তের জন্যেও মাথা তোলার কোন সুযোগ নেই। আর একটা মাত্র রিভলবার দিয়ে সে সামলাবে কোন দিকে। হঠাৎ গুলীবর্ষণ তিন দিক থেকেই থেমে গেল। কি ব্যাপার? মুখ ঘুরিয়ে চোখ উপরে তুলল আহমদ মুসা। দেখল, চারদিক থেকেই ছয়টি স্টেনগানের নল প্রবেশ করেছে আহমদ মুসার গাড়ির মধ্যে। আহমদ মুসা গাড়ির মেঝে থেকে উঠে বসল। শান্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, ‘কি ব্যাপার? কে তোমরা? এভাবে কেন আমাকে আক্রমন করেছ, আমার গাড়ি ধ্বংস করেছ?’ ‘বাঃ আহমদ মুসা বাঃ! ছয় ছয়টি স্টেনগানের মুখে দাঁড়িয়েও এমন স্বাভাবিক কন্ঠে কথা বলতে পার তুমি?’ বলল সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও নেতা গোছের একজন লোক। বলেই সে একজনকে নির্দেশ দিল, ‘ওকে বের করে আন।’ তাদের পেছন থেকে আরও দু’তিন জন লোক ছুটে এল। তাদের একজন টান দিয়ে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া একটা দরজা খুলে ফেলল। দু’জনে হিড় হিড় করে টেনে আহমদ মুসাকে গাড়ি থেকে বের করল এবং শুইয়ে দিল রাস্তায়। সাড়ে ছয় ফুট লম্বা সেই লোকটি এগিয়ে এল আহমদ মুসার কাছে। বলল, ‘ওয়েলকাম আহমদ মুসা। গত দুদিন ছিল তোমার, আজ তৃতীয় দিনটা আমাদের এবং এই তৃতীয় দিনটাই ফাইনাল। তোমাকে হত্যা করতেই চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখলাম, তোমার পেটের অনেক কথা তাহলে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে যাবে। সে কথাগুলো আমাদের খুবই দরকার। এ জন্যেই এখনও তুমি প্রাণে বেঁচে আছ।’ ‘আমার সৌভাগ্য।’ বলল আহমদ মুসা লোকটির দিকে তাকিয়ে। এই সাথে ভাবল আহমদ মুসা, এই লোকটিই কি স্পুটনিক ধ্বংসের নেতা? নেতা না হলে নেতা গোছের যে কেউ হবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ‘সৌভাগ্য নয়, প্রমাণ হবে এটাই চরম দুর্ভাগ্য, যখন যাবে ‘সাও তোরাহ’তে। আলেকজান্ডার সোলঝেনিৎসিনের ‘গুলাগ’টা কাল্পনিক ছিল, ঈশ্বরের এই ‘গুলাগ’ কিন্তু কাল্পনিক নয়।’ ‘ঈশ্বরের কোন ‘গুলাগ’ থাকে না মি.। তাঁর আছে জাহান্নাম।’ আহমদ মুসা বলল। ‘হ্যাঁ ‘গুলাগ’ না বলে ‘জাহান্নাম’ও একে বলতে পার। কারণ এখানেও লোক ঢোকে, কিন্তু বের হয় না।’ বলল সেই সাড়ে ছয় ফুট লম্বা লোকটা। ‘দুনিয়ার সাজা নকল ঈশ্বরদের জাহান্নাম সম্পর্কে এ দাবী করা যায় না মি.।’ আহমদ মুসা বলল। ‘আমরা দুনিয়ার ঈশ্বর নই, অধীশ্বর আহমদ মুসা। জাহান্নাম সম্পর্কে ঐ কথা বলছ? ঠিক আছে তোমাকে দিয়েই তার প্রমাণ হবে, তুমি দেখতে পাবে।’ বলেই লোকটি যারা আহমদ মুসাকে টেনে বের করেছিল, তাদের একজনকে লক্ষ্য করে বলল, ‘একে ক্লোরোফরম লাগাও।’ সংগে সংগেই লোকটি এগিয়ে এল। আহমদ মুসার কাছে এসে পকেট থেকে বের করল ক্লোরোফরম স্প্রেয়ার। আহমদ মুসাও তাকাল ক্লোরোফরম স্প্রেয়ার কনটেইনারের দিকে। দেখেই চিনল ওটা ভয়ংকর ধরনের একটা ক্লোরোফরম। এ ক্লোরোফরম দিয়ে কাউকে অজ্ঞান করলে দশ বারো ঘন্টার আগে তার জ্ঞান ফেরে না। এর কার্যকারিতাও অত্যন্ত দ্রুত। কারো নাকে স্প্রে করার দুই তিন সেকেন্ডের মধ্যে সে সম্পূর্ণ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আবার এর আরেকটা গুণ হলো, কোথাও এটা স্প্রে করলে তিন চার গজের মধ্যে কেউ থাকলে সেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সুতরাং এটা যে ব্যবহার করে তাকে একটা ছোট গ্যাস মাস্ক পরতে হয়। তবে এর একটা অসুবিধা রয়েছে। সেটা হলো, এর সংজ্ঞাহীন করার কার্যকারিতা স্প্রে করার এক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। লোকটি ক্লোরোফরম স্প্রেয়ার হাতে নেয়ার সাথে সাথে নাকে গ্যাস মাস্কও পরে নিয়েছে। গ্যাস মাস্কের ট্রিগারে তার তর্জনি স্থাপন করল লোকটি। আহমদ মুসাকে ঘিরে রাখা স্টেনগানধারীরা তাদের স্টেনগান আহমদ মুসার দিকে উদ্যত রেখেই ওরা চার পাঁচ গজ দূরে সরে গেল। আহমদ মুসাকে চিৎ করে শুইয়ে রাখা হয়েছে। লোকটি স্প্রে করতে লাগল আহমদ মুসার নাকে। প্রায় পাঁচ সেকেন্ড সে স্প্রেটা ধরে রাখল আহমদ মুসার নাকের উপর। পাঁচ সেকেন্ড স্প্রে করার পর স্প্রে বন্ধ করে সে দু’তিন সেকেন্ড অপেক্ষা করল। তারপর হঠাৎ আকষ্মিকভাবে সে লোহার স্পাইকওয়ালা জুতার গোড়ালী দিয়ে প্রচন্ড এক ঘা দিল আহমদ মুসার বাম হাতের তালুতে। আহমদ মুসার দেহ নড়ল না, হাতও নয়। শুধু মুখ থেকে অস্ফুট ‘আ....আ’ শব্দ বেরিয়ে এল। তার গলার স্বরটা ঘুমিয়ে পড়ছে এমন মানুষের কন্ঠস্বরের মত শোনাল। লোকটি আবার সেকেন্ড খানেক সময় নিয়ে আহমদ মুসার নাকে স্প্রে করল। তারপর সেকেন্ড দেড়েক অপেক্ষ করে আগের মত লোহার স্পাইক দেয়া গোড়ালি দিয়ে আকষ্মিকভাবে প্রচন্ড এক আঘাত করল আহমদ মুসার পায়ের পাতায়। কিন্তু এবার আর আহমদ মুসার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বেরুল না। ‘ধন্যবাদ জ্যাকব, তোমার কাজ শেষ। এখন তুমি ওকে টেনে নিয়ে লাইবারম্যানের মাইক্রোটার কাছে চল।’ বলল সেই সাড়ে ছয়ফুট লম্বা লোকটি ক্লোরোফরম স্প্রে করা ‘জ্যাকব’ নামক লোকটিকে লক্ষ্য করে। জ্যাকব আহমদ মুসাকে টেনে নিয়ে এল লাইবারম্যানের মাইক্রোর কাছে। লোকটি এখানে পৌঁছে তার নাক থেকে গ্যাস মাস্ক খুলে ফেলল। সবাই সেখানে এল। সেই সাড়ে ছয়ফুট লম্বা লোকটিও। সে বলল লাইবারম্যানকে লক্ষ্য করে, ‘লাইবারম্যান, মিশন সফল। পূর্ণ সফল হবে যখন একে ‘সাও তোরাহ’তে নিয়ে খাঁচায় পুরতে পারব। এর জন্যে সেখানে একটা সোনার খাঁচা তৈরী করব। অন্য খাঁচায় একে মানায় না।’ বলে একটু থেমে লাইবারম্যানকে লক্ষ্য করে আবার বলে উঠল, ‘আহমদ মুসাকে নিয়ে তোমার মাইক্রোর মেঝেতে শুইয়ে দাও। আরও চারজন স্টেনগানধারীকে নাও তোমার মাইক্রোতে। সে দশ বারো ঘন্টার আগে জাগবে না। তবু সাবধান থাকবে। নিয়ে গিয়ে হাত পা বেঁধে খাঁচায় ফেলে রাখবে। আমি ‘রাইন ইন্টারন্যাশনাল হোটেল’ হয়ে ঘাঁটিতে ফিরব। ‘রাইন ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে কেন মি.আজর ওয়াইজম্যান?’ বলল লাইবারম্যান। ‘আহমদ মুসার নতুন রুম কোনটি, তার হ্যান্ডব্যাগসহ তার লাগেজ কোথায় সে সব খোঁজ নিয়ে আসব। ওগুলো হাত করার ব্যবস্থা করতে হবে। যে ডকুমেন্টগুলো আমি খুঁজছি তা আহমদ মুসার কাছে থাকার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। সাত গোয়েন্দার অসমাপ্ত কাজ এর পক্ষেই করা সম্ভব। দেখা যাক, এর কাছে ঐ সব কোন কিছু তথ্য পাওয়া যায় কিনা।’ বলল সাড়ে ছয় ফুট লম্বা আজর ওয়াইজম্যান লোকটি। ‘ঐ ছুঁড়ি-ছোঁড়া ‍দু’জনের কি করা যায়?’ লাইবারম্যান বলল। ‘ওরা জিরো। ওদের গায়ে হাত দিয়ে খামাখা কেন পুলিশের ঝামেলায় পড়তে যাবে?’ বলল ওয়াইজম্যান। ‘ঠিক আছে স্যার।’ লাইবারম্যান বলল। কথা শেষ করেই লোকজনের দিকে চেয়ে বলল, ‘তোমরা আহমদ মুসাকে আমার মাইক্রোতে তোল। আর স্টেনগানওয়ালা চারজন ওঠ আমার গাড়িতে।’ বলে লাইবারম্যান এগুলো তার গাড়িতে ওঠার জন্যে। ওয়াইজম্যানও এগুলো তার কারের দিকে। অল্পক্ষনের মধ্যেই এলাকাটা ফাঁকা হয়ে গেল। শুধু পড়ে থাকল আহমদ মুসার ভাড়া করে আনা ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া গাড়িটা। চলছে লাইবারম্যানের মাইক্রোবাসটি। গাড়ির মেঝের উপর উপুড় হয়ে আছে আহমদ মুসা। তার পাশেই গাড়ির সিটে পাশপাশি বসে আছে চারজন লোক। আর গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে আছে লাইবারম্যান। তার পাশে ড্রাইভিং সিটে আরেকজন ড্রাইভ করছে গাড়ি। স্টেনগানধারী একজন তার জুতা দিয়ে আহমদ মুসার গায়ে টোকা দিয়ে বলল, ‘ব্যাটা নাকি খুব সাংঘাতিক। কিন্তু আমাদের বুদ্ধির কাছে কুপোকাত!এমন ফাঁদে ফেলা হয়েছে যে, কিছুই করতে পারল না।’ ‘আমাদের দু’জন লোক মেরেছে গত রাতে এই লোক। মজা করে শোধ নেয়া যাবে।’ বলল তার পাশের আরেকজন স্টেনগানধারী। ‘কি শোধ নেবে, এতো দেখছি লিকলিকে ছেলে মানুষ। এর সম্পর্কে শোনা কথাগুলো আমার খুব বিশ্বাস হয় না।’ বলল আরেকজন। ‘একে আমার কোথায় নিচ্ছি, শার্লেম্যানের ৫নং বাড়িতে, না বড় বসের ফ্ল্যাটে?’ চতুর্থজন বলে উঠল। ‘কেন বলছ একথা?’ প্রথমজন বলল। ‘শোধ তোলার কথা বলছ তাই। ফ্ল্যাটে নিলে তো সেখানে আমাদের শোধ নেয়া যাবে না।’ চতুর্থজন উত্তর দিল। ‘চিন্তা করো না, তোমাদের সব ইচ্ছা পূরন হবে। তোমরা যেখানে চাচ্ছ সেখানেই নেয়া হবে।’ বলল লাইবারম্যান। তাদের এই সব গল্প কথা চলতেই থাকল। আহমদ মুসা সবই শুনছিল। ক্লোরোফরম তাকে সংজ্ঞাহীণ করতে পারে নি। ক্লোরোফরম স্প্রে করার সময় থেকে পাকা দেড় মিনিট সে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিল। তাকে গাড়ির দিকে টেনে নেয়ার সময় যখন সে নিঃশ্বাস নিয়েছে, তখন ক্লোরোফরম এর কার্যকারিতা শেষ। সংজ্ঞাহীন হওয়ার ভান করতে গিয়ে তাকে দারুণ কষ্ট করতে হয়েছে। জুতার লোহার স্পাইকওয়ালা গোড়ালী দিয়ে তার হাতের তালুতে আকষ্মিক এমন আঘাত করেছে যে চুপ করে থাকা অসম্ভব। আহমদ মুসা ধৈর্য্যের সব শক্তি একত্রিত করে চুপ থেকেছে শুধু একটা ক্ষীণ ‘আহ’ শব্দ করার মাধ্যমে। এটুকু শব্দ আহমদ মুসা ইচ্ছা করেই করেছে এটা প্রমাণ করার জন্যে যে, আহমদ মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছে। পায়ের তালুতে দ্বিতীয় আঘাতও তাকে হজম করতে হয়েছে কোন শব্দ না করে। তাদের গল্পের মাঝে আহমদ মুসা একবার পলকের জন্যে চোখ খুলল। তার ভাগ্য ভাল যে উপুড় অবস্থায় তার মুখ স্টেনগানধারীদের দিকে ফেরানো ছিল। ফলে পলকটুকুতেই দেখতে পেল তার পাশেই গাড়ির সিটে বসা চারজনকে। তাদের পাগুলো আহমদ মুসার গা প্রায় স্পর্শ করে আছে। তাদের একজনের স্টেনগানটা কোলে। অন্য তিনজনের স্টেনগান মাটিতে রেখে ব্যারেল কোলে ঠেসে দেয়া। একজনের স্টেনগানের গোড়া আহমদ মুসার ডান বাহু স্পর্শ করে আছে। আহমদ মুসা হিসেব কষল, সামনে থেকে লাইবারম্যানের এ্যাকশনে আসতে কতক্ষন সময় নেবে? এর মধ্যে সে কি পেছনটা নিকেশ করতে পারবে? কিন্তু এছাড়া তো উপায় নেই। মসৃণ রাজপথের উপর দিয়ে মাইক্রোটা চলছিল তীরের বেগে। চোখ দুটি আহমদ মুসা আবার অর্ধ নির্মিলিতের মত খুলে স্টেনগানের বাটটা আবার দেখে নিল। তারপর চোখের পলকে আহমদ মুসা বাট ধরে স্টেনগানটা টেনে নিয়েই দেহটা ঘুরিয়ে চিৎ হয়ে গেল। ওদের চারজনেরই চোখ পড়ে গিয়েছিল আহমদ মুসার উপর। কিন্তু ভুত দেখার মত আৎকে উঠেছিল সবাই। তাদের এই আৎকে ওঠার ভাব তারা কাটিয়ে ওঠার আগেই আহমদ মুসার হাতের স্টেনগান ওদের চারজনের উপর দিয়ে ঘুরে এল। কি রেজাল্ট হয়েছে না দেখেই শোয়া অবস্থাতেই মুখটা ডানদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে স্টেনগান তাক করলো লাইবারম্যানকে। চেয়ারের আড়ালে সে। তবু তার চেয়ারের ডানপাশ দিয়ে তার শরীরে ডান পাশের কিছু দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আহমদ মুসার হাতে নিখুঁত টার্গেট নেবার সময় ছিল না। সঠিক লক্ষ্যেই আহমদ মুসার স্টেনগান থেকে গুলির ঝাঁক বেরিয়ে গেছে। গুলি করেই আহমদ মুসা উঠে দাড়াল। গাড়ি কিন্তু ছুটে চলছে তীর বেগেই। আহমদ মুসার হাতের স্টেনগান তাক করা ড্রাইভারের দিকে। বলল, ‘ড্রাইভার, সামনে গাড়ি দাঁড় করাও। মনে রেখ দ্বিতীয়বার বলব না, গুলী করব।’ বলার সংগে সংগেই ড্রাইভার গাড়ির লেন চেঞ্জ করে রাস্তার কিনারে নিয়ে গেল। কয়েক গজ গিয়েই গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। আহমদ মুসা হাতের স্টেনগানটা গাড়ির পেছনে ছুঁড়ে দিয়ে দরজা খুলে নামতে নামতে বলল, ‘ড্রাইভার, এখনি এদের কোন ক্লিনিকে নিলে এদের কেউ কেউ বেঁচে যেতে পারে।’ কথা শেষ হবার আগেই আহমদ মুসা গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিল। আহমদ মুসা গাড়ি থেকে নেমে ওখানেই দাড়িয়ে থাকল। মাইক্রোটি চোখের আড়ালে চলে যাবার পর একটা ট্যাক্সি ডেকে তাতে উঠে বসতে বসতে বলল, ‘হোটেল রাইন ইন্টারন্যাশনাল’। হোটেল রাইন ইন্টারন্যাশনাল যাওয়ার কথা আহমদ মুসা বলল বটে, কিন্তু পরে চিন্তায় এল, ওদের বড় বস আজর ওয়াইজম্যান তো হোটেল রাইনেই গেছে। সে সেখানে কি করবে, কি বলবে কে জানে!হুট করে হোটেলে যাওয়া তার ঠিক হবে কিনা। কিন্তু হোটেলে না গেলে সে যাবে কোথায়? সে যে লাইবারম্যানদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে একথা আজর ওয়াইজম্যান এখনি জানতে পারবে। জানতে পারার সংগে সংগে সে নিশ্চয় এবার পুলিশকে লেলিয়ে দেয়ার ব্যাপারে তৎপর হবে। এই সাথে ওয়াইজম্যানরাও আরও মরিয়া হয়ে উঠবে। এই অবস্থায় খোঁজ খবর না নিয়ে হোটেলে প্রবেশ করা তার জন্যে ঠিক হবে কিনা। তাছাড়া হোটেলের টুরিস্ট সেকশনের যে গাড়ি সে ভাড়ায় নিয়ে গিয়েছিল, সেটা কোথায় এ প্রশ্নও উঠবে। গাড়ি হারিয়ে গেছে এ কথাও বলা যাবে না, আবার যে হাল হয়েছে গাড়ির সেটাও বলা যাবে না। কারণ তাতে অনেক প্রশ্ন উঠবে, যার জবাব সে দিতে পারবে না। এসব চিন্তার মধ্যেই আহমদ মুসা পৌঁছে গেল হোটেলের কাছে। সে ঠিক করল হোটেলে না গিয়ে আপাতত সে গীর্জার সামনে নেমে যাবে। গীর্জার পার্কিং এ নেমে পাশের একটা গাড়ির দিকে তাকাতেই খুশি হয়ে উঠল আহমদ মুসা। দেখল, ফাতিমা ও যায়েদ একটা গাড়িতে বসে। ওদের দেখে খুশি হওয়ার পরক্ষনেই আবার চিন্তিত হয়ে পড়ল আহমদ মুসা। ফাতিমারা হোটেলের বদলে গীর্জার পার্কিং এ কেন? হোটেলে কি কিছু ঘটেছে? আহমদ মুসা এগুলো ওদের দিকে। ওরাও দেখতে পেয়েছে আহমদ মুসাকে। ওরা ছুটে এল আহমদ মুসাকে দেখে। ওদের মুখে এ সময় যে হাসিটা থাকা স্বাভাবিক সেটা নেই। ওদের এই অবস্থা দেখে আহমদ মুসাও হাসতে পারল না। ওরা কাছে আসতেই আহমদ মুসা বলল, ‘কি ব্যাপার, তোমরা এখানে? ভাল আছো তো?’ আহমদ মুসার জিজ্ঞাসার কোন জবাব না দিয়ে ফাতিমা ও যায়েদ এক সাথে বলে উঠল, ‘আপনি সুস্থ আছেন, আপনি ভাল আছেন তো ভাইয়া?’ তাদের কন্ঠে উদ্বেগ। ‘তোমরা একথা বলছ কেন? উদ্বিগ্ন কেন তোমরা এত?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। ‘ভাইয়া আপনাকে ওরা ধরে নিয়ে যায়নি?’ বলল যায়েদ চোখ কপালে তুলে। ‘হ্যাঁ গিয়েছিল। মুক্ত হয়ে আসলাম। কিন্তু তুমি জানলে কি করে?’ ‘এই তো ক’মিনিট আগে আমি আসার সময় ঈল পার্কের মোড়ে আপনার গাড়ি ঝাঁঝরা অবস্থায় দেখলাম। আমি গাড়ির নাম্বার দেখে চিনতে পারি ও গাড়ি থেকে নেমে পড়ি। জিজ্ঞেস করে সেখানে জড়ো হওয়া লোকদের একজনের কাছে শুনলাম, ছয় সাতটা গাড়ি এ গাড়িটাকে ঘিরে ফেলে বিরামহীন মেশিনগানের গুলী চালিয়ে গাড়ির এ হাল করেছে। এ গাড়ি থেকে একজনকে বের করে ঐ গাড়িওয়ালারা ধরে নিয়ে গেছে। কি ঘটেছিল ভাইয়া, কি করে আপনি মুক্ত হলেন?’ বলল যায়েদ।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩০৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার-১
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার-১ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ২
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ২ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৪
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৫
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৫ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৬
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৭ (শেষ)

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now