বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ বুমেদীন বিল্লাহ প্রফেসর জ্যাক সাইমনকে সোফার উপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে আকস্মিকভাবে আহমদ মুসার সামনে ঝুঁকে পড়ে আহমদ মুসার দু’পায়ে দুই হাত দিয়ে বলল, আপনার পদধুলি গ্রহন করলাম দুই আনন্দে। একটি আ্নন্দ হলো কিংবদন্তী নায়ক আহমদ মুসাকে দেখলাম। অন্যটি হলো, তাঁর সাথে একটা অভিযানে শরিক হওয়ার আনন্দ।’ বলতে বলতে উঠে দঁড়িয়ে বিস্ময় বিমূঢ়তায় স্তব্ধ ফাতিমাদের লক্ষ্য করে বলল, মিঃ যায়েদ ও মিসেস ফাতিমা আসুন পদধুলি নিন, জানেন ইনি কে? ‘আগেই পদধুলি নিয়েছি আমরা।’ বলল যায়েদ। কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছি বুমেদীন বিল্লাহ। আহমদ মুসা তাকে বাধা দিয়ে বলল, মিঃ বিল্লাহ অনেক কাজ বাকি। প্রফেসর জ্যাক সাইমন আমাদের কতটা সময় নেবে কে জানে!’ বলেই আহমদ মুসা তাকাল ফাতিমার দিকে। বলল, ‘তোমরা কি বাইরে থেকে গুলীর আওয়াজ পেয়েছ? ‘গুলীর শব্দ বলে বুঝিনি। তবে এক ধরনের শব্দ পেয়েছি। আহত আজর ওয়াইজম্যানকে পালাতে দেখে বুঝলাম ওগুলো গুলীর শব্দ ছিল।’ বলল যায়েদ। ‘ঘরগুলো ভাল শব্দ প্রুফ। নিশ্চয় বাড়ির বাইরে কোন শব্দ যায়নি। ‘আহমদ মুসা বলল। তার মুখে খুশি হওয়ার চিহ্ন। কথাটা বলেই আহমদ মুসা ফিরল প্রফেসর জ্যাক সাইমনের দিকে। প্রফেসর জ্যাক সাইমন জড়োসড়ো হয়ে সোফায় বসে ছিল। আহমদ মুসা তার কাছাকাছি হয়ে বলল, ‘প্রফেসর জ্যাক সাইমন আপনি নাম ভাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করেছে? ‘নাম ভাঁড়িয়ে নয়। আমার সার্টিফিকেট নামই জ্যাক সাইমন।’ শুস্ক কন্ঠে বলল জ্যাক সাইমন। ‘কিন্তু আপনার আসল নাম তো ডেভিড দানিয়েল।’ আহমদ মুসা বলল। কথা বলল না প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ‘খৃস্টান সেজে সারা জীবন গোপনে ইহুদীদের পক্ষে কাজ করে এসেছেন, এভাবে প্রতারণা করেছেন জনগনের সাথে।’ বলল আহমদ মুসা। মুখ খুলল না প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ‘স্পুটনিক ধ্বংস করা, স্পুটনিকের লোকদের কিডন্যাপ করার সাথে আপনি জড়িত।’ বলল আহমদ মুসা। আহমদ মুসার কন্ঠ কঠোর। মুখ নিচু করে ছিল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। চমকে উঠে মুখ তুলল সে। আর্তকন্ঠে বলে উঠল, ‘না আমি এর সাথে জড়িত নয়। আমি পরে জানতে পেরেছি।’ ‘আপনার একথা ঠিক নয়। আপনি জড়িত না থাকলে, পরে জানতে পারলে পুলিশকে আপনি এ বিষয় জানান নি কেন? বলল আহমদ মুসা। কথা বলল না প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল আহমদ মুসার দিকে। ‘আমি একজন সাংবাদিক নিয়ে স্পুটনিক ধবংস- ঘটনার অনুসন্ধানের ব্যাপারে একটা তথ্য নিতে আপনার কাছে এসেছিলাম, আপনি আমাদের খুন করার জন্যে টেলিফোন করে ক্রিমিনালদের এনেছেন। ‘খুন করার জন্যে নয়, আমি তাদের খবর দিয়েছিলাম মাত্র।’ আর্তকন্ঠে কম্পিত গলায় বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ‘খুন করার জন্যে নয় তাহলে বন্দী করার জন্যে? বলল আহমদ মুসা। ‘তাও নয়। এসব ঘটবে আমি ভাবতে পারিনি।’ বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। কান্নাজড়িত কন্ঠ তার। ‘তাহলে ঘটাল কে? আহমদ মুসা বলল। ‘ওরা এসব ঘটাবে বুঝিনি।’ বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। তাঁর কন্ঠে কান্না মিশ্রিত অনুনয়ের সুর। ‘তাহলে এই কাজ আপনি সমর্থন করেন না? জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘না সমর্থন করি না। ‘কন্ঠে শক্তি এনে বলার চেষ্টা করল প্রফেসার জ্যাক সাইমন। ‘আপনি কি স্পুটনিক ধবংস সমর্থন করেন? স্পুটনিকের ৭ জনকে কিডন্যাপ করা সমর্থন করেন? আহমদ মুসা জিজ্ঞেস করল। ‘না সমর্থন করি না।’ দৃঢ় কন্ঠে বলল প্রফেসার জ্যাক সাইমন। ‘তাহলে তাদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহায্য করা আপনার কর্তব্য নয়? আহমদ মুসা বলল। মাথা নিচু করল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। কোন উত্তর দিল না। ‘তাহলে ওদের অন্যায়কেই সহযোগিতা করবেন? বলল আহমদ মুসা কঠোর কন্ঠে। ‘ওদের সাহায্য না করলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ‘বলে কেঁদে উঠল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। একটু থামল। থেমেই আবার বলা শুরু করল, ‘জানেনা ওরা স্বজাতি হলেও শত্রুর চেয়েও বড় শত্রু। ওরা যে সহযোগিতা চাইবে, সে সহযোগিতা না দেয়ার অর্থ মৃত্যুকে আলিংগন করা। আমি একজন ধর্ম প্রান ইহুদী ছিলাম। ইহুদীবাদীদের সমর্থন করতাম না। কিন্তু প্রাণের ভয়ে বাধ্য হয়েছি তাদের সহযোগিতা করতে এবং যখন যা চায় সেই পরিমাণ অর্থ সাহায্যও করতে হয়। আরও জানেন না, ইহুদীরা আজ ইহুদীবাদীদের কেনা গোলাম। ইসরাইল রাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ইসরাইলের নাগরিকদের চেয়েও দ্বিগুন ট্যাক্স আমাদের দিতে হয় ইসরাইল রাষ্টকে। আমার সামনের যে নেমপ্লেট ওটা ওদের সরবরাহ করা। আমি টাঙাতে বাধ্য হয়েছি। এ রকম বাধ্য লোকের সংখ্যা ওদের লাখ লাখ। ‘আপনার কথা আমি বিশ্বাস করলাম। আমাদেরকে আপনি সাহায্য করুন। আমরা আপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেব।’ বলল আহমদ মুসা। উদ্বেগ ফুটে উঠল প্রফেসর জ্যাক সাইমনের চোখে- মুখে। বলল, ‘কি সাহায্য ? ‘আপাতত আমরা জানতে চাই, ‘সাও তোরাহ দ্বীপটা কোথায়? প্রফেসর জ্যাক সাইমন কম্পিত কন্ঠে বলল, ‘আপনারা এ বিষয়টা জানলেই ওরা নিশ্চিত হয়ে যাবে যে, তথ্যটা আমিই আপনাদের দিয়েছি। তখন দুনিয়ার কোথাও গিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না। যেখানে যাব সেখানে গিয়েই ওরা আমাকে হত্যা করবে। আর্তকন্ঠে বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ‘এ ভয় আপনাকে করতে হবে না। এ বাড়িতে থাকা আপনার ঠিক হবে না। আপনি এখন আজর ওয়াইজম্যানকে টেলিফোন করুন। বলুন যে, বাড়ি থেকে আমি পালিয়ে এসেছি। ফ্রান্সের বাইরে চলে যাচ্ছি, আহমদ মুসাদের হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাকে কিছু দিন আত্মগোপনে করতে হবে। এই কথা সে জানার পর আপনাকে দোষ দিতে পারবে না কোন মতেই।’ বলল আহমদ মুসা। প্রফেসর জ্যাক সাইমনের মুখ উজ্জল হয়ে উঠল আনন্দে। কৌশলটি তার খুব পছন্দ হয়েছে বলে মনে হলো। বলল, ‘কিন্তু আমি থাকব কোথায়? ‘প্যারিসেই থাকবেন। আমরা সব ব্যবস্থা করে দেব। আপনার নিরাপত্তার দিকটা আমাদের লোকেরাই দেখবে। ‘আহমদ মুসা বলল। ‘ধন্যবাদ মিঃ আহমদ মুসা। আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ যে, আপনি আমাকে বিশ্বাস করেছেন। ‘বলে একটু থামল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। তারপর বলল আবার, ‘আমি আপনার অনেক কথা শুনেছি। সাম্প্রতিক আমেরিকার ঘটনাও আমি জানি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদীবাদকে নির্মূল করার ব্যাবস্থা আপনি করেছেন। যদি এভাবে গোটা বিশ্বের ইহুদীদেরকে আপনি ইহুদীবাদের অক্টোপাশ থেকে মুক্ত করতে পারতেন, তাহলে তাদের দোয়া আপনি পেতেন।’ আবেগে কন্ঠ ভারী হয়ে উঠেছিল। প্রফেসর জ্যাক সাইমনের। ‘ধন্যবাদ প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ইহুদীবাদের পাপই ইহুদীবাদকে ধবংস করবে। কিন্তু আমার একটা ধারনা ছিল, অধিকাংশ ইহুদী ইসরাইল রাষ্ট্রকে সমর্থন করে।’ আহমদ মুসা বলল। ‘এক সময় করত। যতদিন ইসরাইল শান্তি কামনা করেছে, আরবদের উপর হাত তোলেনি ততদিন সব ইহুদীই ইসরাইলকে সমর্থন করেছে। তারা কামনা করেছে আরবরা এবং অন্য সবাই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তিতে থাকার ব্যাবস্থা করুক। কিন্তু পরে যখন ইসরাইল শক্তি নির্ভর হয়ে উঠল, অন্যের ভূখন্ড দখল করে নিতে শুরু করল এবং ফিলিস্তিনে ইহুদী বসতি বাড়ানোর অব্যাহত প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে চলল, তখন থেকেই বিশ্বের শান্তিকামী ইহুদীরা বুঝে নিয়েছে শান্তি ইসরাইল ও ইহুদীবাদীদের লক্ষ্য নয় তারা এক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে যা জ্বালিয়ে রাখবে এক অশান্তির আগুন। ধর্মপ্রাণ ইহুদীরা ইসরাইলকে আজ তাদের জন্যে বিপজ্জনক মনে করছে।’ বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। বলে একটা দম নিল। সোফায় একটু হেলান দিল। তারপর বলল, ‘নতুন গুলাগ বা সাও তোরাহ দ্বীপের কথা আপনি জিজ্ঞেস করেছেন।’ দ্বীপটা কোন মানচিত্রে নেই। পর্তুগাল থেকে ৮০০ মাইল পশ্চিমে ৩৮ ডিগ্রী নর্থ ল্যাটিচুডের উপর আটলান্টিকের ‘আজোরস’ দ্বীপপুঞ্জ। এ দ্বীপপুঞ্জ থেকে সোয়া’শ মাইল উত্তর-পশ্চিমে ক্ষুদ্র ফ্লোরেস দ্বীপপুঞ্জ। ফ্লোরেস দ্বীপপুঞ্জের মাথার উপর ‘করভো’ নামে একাটা দ্বীপ। করভো দ্বীপের ৫ মাইল সোজা উত্তরে ৩০ ডিগ্রী পশ্চিম ল্যাটিচুডের ৫০ মাইল পশ্চিমে ছোট্ট বেনামা নির্জন একটা দ্বীপ। এটাই ‘নিউ গুলাগ’। নাম রাখা হয়েছে ‘সাও তোরাহ’ দ্বীপ।’ থামল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। খুশিতে মুখ উজ্জল হয়ে উঠছে আহমদ মুসার মুখ। বলল, ধন্যবাদ প্রফেসর জ্যাক সাইমন। সাও তোরাহ দ্বীপকে আপনি নির্জন বলছেন। ওখানে কোন মানুষই বাস করে না। ‘না’ বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ‘তাহলে গোটা দ্বীপে বন্দীরা এবং তাদের পাহারাদাররাই শুধু বাসিন্দা। ‘আহমদ মুসা বলল। ‘হ্যাঁ তাই। আসলে গোটা দ্বীপ পাহাড়ের টিলায় ভর্তি। প্রায় সমগ্র উপুকুল জুড়ে কোথাও খাড়া পাহাড়ের দেয়াল, কিছু কিছু সমতল উপকূল ভূমিও রয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বীপটা সাধারণ ভাবে বাসযোগ্য নয়।’ বলল প্রফেসর জ্যাক সাইমন। ‘সেখানে কি বন্দীখানা গড়া হয়েছে, না গোটা দ্বীপকেই বন্দীখানা বানানো হয়েছে? জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা। ‘স্যরি। এ সম্পর্কে তারা কোন সময়ই আমার সামনে কোন আলোচনা করেনি এবং আমিও জিজ্ঞাসা করিনি।’ বলল প্রফেসর সাইমন। ধন্যবাদ প্রফেসর। চলুন আমরা এখন উঠি। এখনি আমাদের চলে যাওয়া উচিত, গাড়িতে শুইয়ে নিয়ে যাব আপনাকে, কেউ টের পাবে না, বাইরে গিয়ে আজর ওয়াইজম্যানকে টেলিফোন করবেন। আজকের মধ্যেই আমরা আপনাকে প্যারিস পৌছাবো।’ ‘এ লাশগুলোর কি হবে এবং আমার বাড়ির? জিজ্ঞাসা করল প্রফেসর সাইমন। ‘লাশগুলো গুম করার ব্যাবস্থা আমরা করছি। আর আপনার বাড়িটা আপাতত তালাবদ্ধ থাকবে। আপনার পালিয়ে যাওয়া লোকজন নিশ্চয় ফিরবে না আপনি না ফিরা পর্যন্ত। আহমদ মুসা বলল। ‘ঠিক আছে।’ বলে সায় দিল প্রফেসর সাইমন। সবাই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। প্রফেসর সাইমন, ফাতিমা ও যায়েদকে তাদের গাড়িতে তুলে নিল। গাড়ি স্টার্ট নিয়ে চলতে শুরু করল। আহমদ মুসা মোবাইল বের করল টেলিফোন করার জন্যে। সেদিন ফাতিমা-যায়েদের বিয়েতে গিয়ে মুসলিম সেচ্ছাসেবী একটা গ্রুপের সাথে পরিচিতি হয়েছিল, যাদের সাথে ‘সাইমুমে’র সম্পর্ক আছে বলে তারা জানিয়েছিল। তাদের নাম্বারেই টেলিফোন করতে লাগল আহমদ মুসা। উত্তেজনায় মিসেস লতিফা কামালের মুখ লাল হয়ে উঠেছে। বলছিল সে, আমার গয়না আছে ব্যাংকের লকারে। সে জন্যই লকার খুলতে গিয়েছিলাম। গত ছয়মাসের মধ্যে লকার খুলিনি। শুধুমাত্র কামাল ও আমিই এই লকার খুলতে পারি। গত ছয়মাসে কামালেই কয়েকবার লকার খুলেছে। আমার যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। বলে একটু দম নিয়ে আবার শুরু করল মিসেস লতিফা কামাল, আজ গিয়ে লকার খুলে গহনা অন্যান্য ফ্যামিলী ডকুমেনেটর সাথে ছোট ও সুদৃশ্য একটা প্লাস্টিক ব্যাগ দেখতে পেলাম। দেখে বিস্মিত হলাম এ ধরনের ব্যাগ আমাদের লকারে ছিল না। তাহলে কি কামাল পরে রেখেছে? মনে প্রশ্ন জাগায় নতুন ব্যাগটাই প্রথমে খুললাম। খুলে দেখলাম ব্যাগে রয়েছে কতগুলো কাগজ পত্র এবং তার সাথে ডজন খানেকর মত ডিস্ক। আমি একটা কাগজ হাতে নিয়ে তাতে চোখ বুলালাম। দেখলাম, ওটা স্পুটনিকের একটা অনুসন্ধান রিপোর্ট। আরেকটা কাগজেও দেখলাম তাই। বুঝলাম কাগজপত্র ও ডিস্ক সবগুলোই স্পুটনিক সম্পর্কিত। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মনে হলো, এই ডকুমেন্টগুলোই শয়তানরা খুঁজছে। এগুলোর সন্ধানেই তারা আমাদের বাড়ি এবং আত্মী-স্বজনের বাড়ি পর্যন্ত তছনছ করেছে। ভয়ে আমি কাঁপতে লাগলাম। তাড়াতাড়ি ব্যাগ বন্ধ করে লকার লক করে আমি চলে এসেছি।’ থামল মিসেস লতিফা কামাল। লতিফার পাশেই বসে ফাতিমা। তাদের সামনের সোফায় পাশা-পাশি বসে আহমদ মুসা ও যায়েদ। আহমদ মুসার চোখ-মুখ আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠেছে। বলল আহমদ মুসা দ্রুতকন্ঠে, ‘ওটা কোন ব্যাংকে? ‘আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক।’ মিসেস লতিফা কামাল বলল। ‘গুড। ম্যানেজার কে জানেন? জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা। ‘জি। মিঃ কার্টার জুনিয়র।’ বলল মিসেস কামাল। ‘মিঃ জন কার্টার জুনিয়র? জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘জি, পুরো নাম মি. জন র্কাটার জুনিয়র।’ ‘আল হামদুলিল্লাহ। লোকটা ভাল। এর আগে তিনি একবার প্যারিসে ছিলেন।’ আহমদ মুসা বলল। ‘ভাইয়া, লকারের খোঁজ কিন্তু ওরা পেয়ে যাবে। সরিয়ে নেয়াই কি নিরাপদ নয়? বলল ফাতিমা। ‘কিন্তু আমি মনে করি, লকারটাই এখন বেশি নিরাপদ। আমেরিকান ব্যাংকের সিস্টেম ভাল। তার উপর ম্যানেজার খুব ভাল লোক। তার উপর ইহুদীদের কোন চাপ পড়বে না। আমাদের কোন বাড়িই এখন নিরাপদ নেই।’ আহমদ মুসা বলল। ‘ডুপ্লিকেট করে এক সেট অন্য কোথাও রাখলে ভালো হয় না।’ বলল যায়েদ। ‘তা করা যায়। কিন্তু ডকুমেন্ট নিয়ে আমাদের কেউ মুভ করা ঠিক হবে কিনা ভাব বার বিষয়। তবে সুযোগ পেলে ডুপ্লিকিট করা যায়। ঠিক আছে, দেখা যাক অবস্থা কি দাঁড়ায়।’ আহমদ মুসা বলল। ‘যাই হোক, ডকুমেন্টগুলো আপনার একবার পড়া প্রয়োজন।’ বলল ফাতিমা। ‘এখন এ দিক চিন্তা করছি না ফাতিমা। এখন প্রথম কাজ গুলাগ অভিযান, কামাল সুলাইমানদের উদ্ধার। এরপর শুরু হবে ইনশাআল্লাহ টুইন টাওয়ার ধ্বংসের রহস্য উদ্ধার।’ আহমদ মুসা বলল। ‘তাহলে ডকুমেন্টগুলো লকারেই থাকছে? প্রশ্ন করল মিসেস কামাল। ‘হ্যাঁ। ডুপ্লিকেট যদি করা যায়, সেটা বাইরে রাখা যাবে।’ আহমদ মুসা বলল। ‘ঠিক আছে। তাই হবে মি. আহমদ মুসা।’ বলল মিসেস কামাল। আহমদ মুসা কিছু বলতে যাচ্ছিল। এ সময়ে যায়েদ ফিরে এল। সে বারান্দায় উঠে গিয়েছিল। এসে আহমদ মুসাকে বলল, ‘ভাইয়া একটা ট্যাক্সি এদিকে মুখ করে সেই আপনি আসার সময় থেকে দাঁড়িয়ে আছে। ‘ঠিক আছে আমি উঠছি। দেখবো আমি। তোমরা পরে যাবে। বলে আহমদ মুসা উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আসি মিসেস কামাল।’ ‘ভাইয়া প্রফেসর সাইমন কি প্যারিসে পৌছেছে?’ বলল ফাতিমা। ‘হ্যাঁ, বুমেদীন বিল্লাহ পৌছে টেলিফোন করেছিল।’ বলে আহমদ মুসা হাতের ব্যাগটা তুলে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। কিছুক্ষন পরে বেরিয়ে এল কাঁচা-পাকা দাড়ি-চুলওয়ালা প্রৌঢ় সেজে। পরনে ফুলপ্যান্ট জ্যাকেটের পরিবর্তে লুজ সার্ট ও ট্রাউজার। যায়েদরা সবাই হেসে উঠল। মিসেস কামাল বলল, আমার আগে জানা না থাকলে আমারই চিৎকার করে ওঠার দশা হত। ‘ধন্যবাদ সকলকে। আসসালামু আলাইকুম।’ বলে আহমদ মুসা বেরিয়ে গেল। আহমদ মুসা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ধীরে ধীরে এগুলো ট্যাক্সিটার দিকে। নিকটবর্তী হলো সে ট্যাক্সিটার। ট্যাক্সি ড্রাইভার লোকটি গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটকে ইজি চেয়ারে পরিনত করে মিসেস কামালের বাড়ির দিকে তাকিয়ে বসেছিল। প্রৌঢ় বয়সী আহমদ মুসার দিকে তাকাবার প্রয়োজনই বোধ করেনি লোকটা। আহমদ মুসা গাড়ির কাছে চলে এসেছে। হঠাৎ একটা কুকুর লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে প্রচন্ড গর্জন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল আহমদ মুসার উপর। ঘটনাটি আহমদ মুসার জন্য অকল্পনীয় ছিল। শেষ মূহুর্তে আহমদ মুসা তার মাথা লক্ষ্যে ছুটে আসা কুকুরকে মাথার কাপড় ধরা দেয়ার জন্যে বাম বাহুকে লাঠির মত শক্ত করে সামনে বাড়িয়ে দিল এবং ডান হাতটি প্রবেশ করল পকেটে রিভলবার বের করার জন্যে। উড়ে আসা চলন্ত কুকুর হাতের সাথে ধাক্কা খেয়ে হাতটা কামড়ে মাটিতে পড়ে গেল। বাহুর যেটুকু অংশ কুকুরটি কামড়ে ধরেছিল তা ছিঁড়ে নিয়ে গেল। আহমদ মুসার ডান হাত তখন বেরিয়ে এসেছে রিভলবার নিয়ে। মাটিতে পড়ে যাওয়ার সংগে সংগেই আবার কুকুরটি উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং নতুন করে আক্রমনের জন্য সামনের দু’পা উপরে তুলে পেছনের দু’পায়ের উপর ভর দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল। আহমদ মুসার ডান হাতের তর্জনি ট্রিগার টিপতে একটুও দেরী করেনি। বুলেট ছুটে গিয়ে কুকুরটির বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল। কুকুরটির দেহটা উল্টে আছড়ে পড়ে গেল মাটিতে। আহমদ মুসা গুলী করেই তাকাল গাড়ির সিটে বসা লোকটির দিকে। দেখল, লোকটির ডান হাত বেড়িয়ে আসছে কোটের পকেট থেকে। হাতে রিভলবার। আহমদ মুসা চোখ লোকটির দিকে ঘুরে যাবার সাথে সাথেই আহমদ মুসার হাতের রিভলবারও ঘুরে গিয়েছিল লোকটির দিকে। আহমদ মসার তর্জনি চেপে বসল রিভলবারের ট্রিগারে। একটা গুলী ছুটে গিয়ে কুকুরটির মতই এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল লোকটি বুক। গাড়ির দরজা খোলাই ছিল। আহমদ মুসা কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে লোকটিকে টেনে সিট থেকে মাটিতে নামিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে উঠে বসল আহমদ মুসা। দ্রুত পকেট থেকে রুমাল বের করে বাম বাহুর রক্তক্ষরণরত আহত স্থানটা ডান হাত ও দাঁতের সাহায্যে বেঁধে গাড়ি স্টাট দিল। চারিদিকে চেয়ে দেখল আশে-পাশে কেউ নেই। রাস্তার বাম পাশে দু’তলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দু’জন লোক এদিকে তাকিয়ে আছে। আর সামনে রাস্তার ডান পাশে মিসেস লতিফা কামালের বাড়ির ব্যালকনিতে ওদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। আহমদ মুসা খুশি হলো। অল্পক্ষনের মধ্যেই এখানে পুলিশ আসবে এবং খোজ-খবর নিয়ে জানতে পারবে যে, একজন দাড়িওয়ালা প্রৌঢ় লোককে একটি কুকুর আক্রমন করে কামড়ে ধরেছিলো। লোকটি কুকুর ও কুকুরের মালিক গাড়িওয়ালাকে হত্যা করে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গেছে। আনন্দিত হবার সাথে সাথে চিন্তিতও হলো সে। আহমদ মুসার কোন সন্দেহ নেই যে, কুকুরটিকে শিখিয়ে পড়িয়ে আনা হয়েছিল আহমদ মুসাকে ধরার জন্যেই এবং কুকুর তাকে ঠিকেই চিনেছিল। আজর ওয়াইজম্যানরা যে সাংঘাতিক বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আহমদ মুসাকে ধরার জন্যে কুকুরের ব্যাবহার এরই একটা প্রমাণ। এই ঘটনার তার গায়ে আরও আগুন ধরবে। মিসেস লতিফা কামালের এ বাড়িটা ছেড়ে দেয়া দরকার, ভাবল আহমদ মুসা। হিংসায় অন্ধ হয়ে আজর ওয়াইজম্যানরা কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। এক সময় গাড়ির স্টিয়ারিং হুইললের নীচে তাকাতেই একটা মানিব্যাগ চোখে পড়ল আহমদ মুসার। ভাবল, গুলীতে যে মারা গেছে মানিব্যাগটা সে লোকের হতে পারে। মানিব্যাগটা তুলে নিলো আহমদ মুসা। মানিব্যাগে দেখল কয়েকশ ডলারের নোট, ২টি নেম কার্ড এবং একটি চিঠি পর্তুগীজ ভাষায়। পর্তুগীজ ভাষা আহমদ মুসা জানে না বিধায় চিঠির সে কিছুই বুঝতে পারল না। কার্ডের দিকে মনোযোগ দিল। চমকে উঠল আহমদ মুসা। কার্ডটিতে ঠিকানার বটমে লেখা রয়েছে ‘আজোরস দ্বীপপুঞ্জ’। আজোরস দ্বীপপুঞ্জের নাম পড়েই কার্ডের অবশিষ্টটুকু গোগ্রাসে পড়ল আহমদ মুসা। কার্ডের নামটি হলো, ‘এ্যানটিনিও সোরেস।’ পরিচয় হিসাবে লেখা ‘ব্যাবসায়ী ও সমাজকর্মী’। আর ঠিকানা, ‘১১, গনজালো রোড, হরতা, সাও জর্জ, আজোরস। আকাশের চাঁদ হতে পাওয়ার মতই খুশি হলো আহমদ মুসা। ঠিকানা পেয়ে। চিঠি দিয়ে কার্ডটা মুড়িয়ে কার্ডটা পকেটে রেখে দিতে দিতে আহমদ মুসা ভাবল, প্রথম সুযোগেই চিঠিটা কারও কাছ থেকে পড়ে নিতে হবে। এই চিন্তার রেশ ধরেই আহমদ মুসা ভাবতে লাগল, কে এই এ্যনটিনিও? চিঠিটাও তার হবার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এসব এই সন্ত্রাসীর কাছে কেন? এ্যনটিনিও কি এদের দলের? এমন হাজারো চিন্তা এসে ঘিরে ধরল আহমদ মুসাকে। গাড়ি চলছে আহমদ মুসার। ফোটা ফোটা রক্ত ঝরছে আহমদ মুসার আহত বাম বাহু থেকে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৭৪ জন


এ জাতীয় গল্প

→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার-১ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ২ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৫ বাকি অংশ
→ নতুন গুলাগ চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now