বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

গুলাগ থেকে টুইনটাওয়ার চ্যাপ্টার-১ বাকি অংশ

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X গুলাগ থেকে টুইনটাওয়ার চ্যাপ্টার-১ বাকি অংশ গাড়িটা ছুটছে। প্রথম মুখোশধারী দ্বিতীয় মুখোশধারীকে লক্ষ্য করে বলল, ‘হাসান তারিক, গাড়ির নাম্বার প্লেট বদলেছ তো?’ ‘জি ভাইয়া।’ বলল হাসান তারিক। ওদিকে প্রথম ঘুম ভাঙল ভিক্টর রাইয়ার। সে লাফ দিয়ে উঠে বসেই ছুটল বাইরে। দেখল তার গাড়ি নেই। দ্রুত পকেট থেকে বের করল তার মোবাইল। প্রথমেই টেলিফোন করল হেড কোয়ার্টারে। তার গাড়ির নাম্বার জানিয়ে দিয়ে বলল, ‘যেখানে পাও গাড়িটাকে আটকাও এবং গাড়ির সবাইকে গ্রেফতার করো। আহত কেলভিনকে তাড়াতাড়ি ক্লিনিকে নেবে।’ এরপর ভিক্টর রাইয়া দ্বিতীয় টেলিফোনটি করল আজর ওয়াইজম্যানকে। তাকে জানাল সব কথা। টেলিফোনের ওপ্রান্ত থেকে উত্তেজিত আজর ওয়াইজম্যান বলল, ‘ওরা কি গনজালোদের লোক, না ভেতরের অন্যকোন জাতীয়তাবাদী গ্রুপ? কোন সন্দেহ নেই, এরাই গতরাতে এমানুয়েলের বাড়িতে গণহত্যা সংঘটিত করেছে। যাই হোক যে কোনভাবে ওদের পাকড়াও করা চাই। আমি দ্বিতীয় কলের অপেক্ষা করছি।’ ভিক্টর রাইয়া মোবাইল বন্ধ করে পলা জোনসদের ড্রইংরুমে প্রবেশ করল। তখনও পলা জোনস ও মিসেস জোনসের জ্ঞান ফেরেনি। ভিক্টর রাইয়া ঠান্ডা পানি এনে ওদের চোখে-মুখে ছিটিয়ে ওদের জ্ঞান ফিরিয়ে আনল। মিসেস জোনস উঠে বসেই পলা জোনসকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এসব কি সর্বনেশে কান্ড ঘটছে।’ বলেই মিসেস জোনস ভিক্টর রাইয়ার দিকে ফিরে বলল, ‘দোহাই আমার মেয়ের কোন দোষ নেই। তাকে ওরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। প্রাণে বেঁচে এসেছে। তাকে আর কোথাও নেবেন না দয়া করে।’ ‘না, মিসেস জোনস মিস পলাকে এখন কোথাও নিচ্ছি না। মি. কেলভিন ফিরে এলে দেখা যাবে কি করা যায়। আমার মনে হচ্ছে, মিস পলা ওদের নিশ্চয় চেনে না এবং তাদের সাথে কোনও সম্পর্কও নেই। এখন যারা হামলা করেছিল, তারাই সম্ভবত গতরাতে এমানুয়েলের বাড়িতে ঘটনা ঘটিয়েছিল। এরা আমাদের সবার জন্যেই বিপজ্জনক।’ বলল ভিক্টর রাইয়া। বিস্ময় ফুটে উঠল মিসেস জোনসের চোখে-মুখে। কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই ভিক্টর রাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি চলি। মিস পলা, ম্যাডাম জোনস আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন।’ বলে বাইরে বেরুবার জন্যে দরজার দিকে এগুলো ভিক্টর রাইয়া। সংজ্ঞা ফেরার পর একটি কথাও বলেনি পলা জোনস। আগেই সেই উদ্বেগ, আতংক চোখে-মুখে নেই, বরং চোখে-মুখে স্বস্তি ও আনন্দ। মিসেস জোনস উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘যাই বাছাদের ডাকি, ঝামেলা তো গেছে। ওদের দেখতে পেলে ঝামেলা আরও বাড়ত। বুদ্ধিমানের কাজ করেছে না বেরিয়ে।’ মিসেস জোনস হাঁটা শুরু করেছিল আহমদ মুসাদের ঘরের দিকে। পলা জোনস হাসল। বলল, ‘আম্মা ওরা ঘরে নেই। আমরা সংজ্ঞাহীন থাকার সময় ওরা কোথাও গেছে।’ ‘কিন্তু তুমি দেখলে কি করে? আর তারা আমাদের ওভাবে ফেলে যেতে পারে না।’ বলে মিসেস জোনস আবার হাঁটা শুরু করল। ‘ওরা নেই আম্মা।’ হেসে আবার বলল পলা জোনস। কিন্তু মিসেস জোনস পলার কথা এবার গ্রাহ্য না করে গেল আহমদ মুসাদের ঘরে। পরক্ষণেই আবার ফিরে এল। তার চোখে-মুখে বিস্ময়। বলল, ‘বাছারা এভাবে তো বাইরে যেতে পারে না। কিন্তু ঘটনা কি? কোথায় ওরা?’ ‘ভেব না আম্মা। ওরা ফিরে আসবেন।’ বলল পলা এবার গম্ভীর কণ্ঠে। ‘তুমি তাহলে জান, বলছ না কেন?’ বলল মিসেস জোনস অধৈর্য্যরে সাথে। ‘দুজন মুখোশধারী ওরাই আম্মা। মহাবিপদ থেকে ওঁরা আবার আমাকে বাঁচিয়েছেন।’ বলল পলা জোনস। তার কণ্ঠ ভারী। বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গেছে মিসেস জোনসের চোখ। তার স্বগত কণ্ঠে উচ্চারিত হলো, ‘ওরা বাছারা ছিল?কিন্তু এভাবে একাজ ওরা করল কেন? তাদের বিপদ তো আরও বাড়ল?’ বলে ধপ করে সোফায় বসে পড়ল মিসেস জোনস। তার চোখে রাজ্যের বিস্ময় আর দুর্ভাবনা। ধীরে ধীরে চোখ খুলল কেলভিন কেনেইরা। তাকাল সে সোনালী দাড়ি চুলওয়ালা পর্যটকবেশী আহমদ মুসা ও হাসান তারিকের দিকে। তারপর চারদিকে তাকাল সে। তার চোখের ভয় ও উৎকণ্ঠাটা আরও গভীর হলো। বলল, ‘তোমরা আমাকে কোথায় এনেছ। কে তোমরা? কি চাও?’ কেলভিন ঘাসের উপর শোয়া অবস্থায় ছিল। আহমদ মুসা কোন কথা না বলে তাকে তুলে বসাল। উঠতে গিয়ে গুলীবিদ্ধ ডান হাতে একটু চাপ লাগায় কঁকিয়ে উঠল সে। তাকাল কেলভিন তার গুলীবিদ্ধ ডান হাতের দিকে। ‘চিন্তা নেই মি. কেলভিন। গুলী ভেতরে নেই। ভালো করে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। আপনি বেঁচে থাকলে ঘা শুকাতে বেশি সময় নেবে না।’ বলল আহমদ মুসা। আবার চারদিকে তাকাল কেলভিন। জায়গাটা তিন দিক থেকে পাহাড় ঘেরা। সামনে শুধু সাগরের দিকটাই উন্মুখ। জায়গাটা একটা বিশাল সমতল উপত্যকা। পাথুরে ভুমির উপর ঘাসের আস্তরণ। দেখলে মনে হবে বিশাল এক ঘোড় দৌড়ের মাঠ। সবচেয়ে লক্ষণীয় দিক হলো, মাঠটার উত্তর প্রান্ত হঠাৎ খাড়াভাবে নিচে নেমে গেছে ২০ গজের মত। তারপর তা নেমে গেছে সাগরে। এর ফলে পাহাড়ের প্রাচীর ঘেরা মাঠটা যেন এক বিরাট মঞ্চে পরিণত হয়েছে। মঞ্চের পরের নিচের অঞ্চলটা গাছপালায় ঠাসা যেন এক সবুজ কার্পেট। মাঠে দাঁড়িয়ে এই সবুজের উপর দিয়ে দেখা যায় প্রশান্ত এক নীল সাগর। সত্যিই অপরূপ এখানকার দৃশ্য। কেলভিনকে আবার চারদিকে তাকাতে দেখে আহমদ মুসা বলল, ‘কি দেখছেন মি. কেলভিন? চেনার চেষ্টা করছেন জায়গাটা, হারতা থেকে খুব বেশি দূরে নয় জায়গাটা। মাত্র...........।‘ আহমদ মুসাকে বাধা দিয়ে বলে উঠল কেলভিন, ‘আমাকে আর জায়গা চিনিও না। এটা পিকনিক স্পট ‘সান্তাসিমা’। এটা আমাদেরই জায়গা। ‘এক বিশ্ব এক দেশ এক জাতি’ এনজিও এই ‘সান্তাসিমা’ লীজ নিয়েছে ৫০ বছরের জন্যে।’ থামল কেলভিন। বিস্ময় ফুটে উঠল আহমদ মুসার চোখে-মুখে। ‘এক বিশ্ব এক দেশ এক জাতি’ এনজিও মানে তো WFA (ওয়ার্ল্ড ফ্রিডোম আর্মি)। আজর ওয়াইজম্যানের ওয়ার্ল্ড ফ্রিডোম আর্মি এটা লীজহ নিয়েছে! কেন? এই প্রশ্নটাই আহমদ মুসা করল কেলভিনকে। বলল, ‘এই জায়গাটা আপনারা লীজ নিয়েছেন কেন?’ ‘এর সাথে তোমাদের কোন সম্পর্ক নেই। এখন বল তোমরা কে? কেন আমাকে ধরে এনেছ? তোমরাই কি গতরাতে পলা জোনসকে উদ্ধার করতে গিয়ে খুন করেছ অতগুলো লোককে? কিন্তু মনে রেখ.........।’ ‘থাক থাক, আপনার প্রশ্নের জবাব দেবার জন্যে আপনাকে নিয়ে আসিনি। আমাদের প্রশ্নের জবাব দেবেন আপনি।’ বলল আহমদ মুসা। ‘তোমরা কে জানি না। তবে তোমরা আমাদের চেন না বলেই মনে হচ্ছে। তুমি যে স্বরে কথা বলছ, সেই স্বরে ইউরোপের কোন সরকারও আমাদের সাথে কথা বলতে পারে না। যাক। আমি একটা সিগারেট খেতে পারি?’ কেলভিন বলল। ‘না, এখন নয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর খাবেন।’ বলল আহমদ মুসা। ‘জিজ্ঞাসাবাদ! কি জিজ্ঞাসাবাদ?’ কেলভিন বলল। ‘আজোরস দ্বীপপুঞ্জ দখলের আপনাদের ষড়যন্ত্রে সাহায্য করছে কে বা কারা?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘আমরা আজোরস দখল করেছি! না, একথা ঠিক নয়।’ বলল কেলভিন। ‘আপনারা ইতিমধ্যেই একটা দ্বীপ দখল করে নিয়েছেন। প্রত্যেক দ্বীপেই আপনারা ঘাঁটি গড়েছেন এবং আপনাদের লোক সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। এই যে ৫০ বছরের জন্যে লীজ নিয়েছেন। এটাই ঔপনিবেশিকদের দেশ দখল করার প্রধান কৌশল।’ আহমদ মুসা বলল। ‘কোন দ্বীপ আমরা দখল করেছি? সাও তোরাহ? ওটা তো আমরা লীজ নিয়েছি। এ ধরনের লীজ দেয়া-নেয়া হচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও দ্বীপপুঞ্জে। কেউ একে দেশ দখল বলে না।’ বলল কেলভিন। ‘অন্যরা যাই করুক, আপনারা দেশ দখল করছেন? আপনারা সরকারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে গোপন কম্যুনিকেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। এমনকি তার মধ্যে ‘মিনি সাবমেরিন’ ব্যবস্থাও চালু করেছেন।’ বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল কেলভিনের। তীক্ষè দৃষ্টিতে তাকাল সে আহমদ মুসার দিকে। বলল, ‘কে তোমরা? বিদ্রোহী গনজালো গ্রুপের লোক? যদি তাই হয়ে থাক শোন, আজোরস দ্বীপপুঞ্জ স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ কারো সাথেই আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।’ থামলো কেলভিন। ‘কারণ আপনরা তৃতীয়পক্ষ। আপনারাই দ্বীপপুঞ্জকে গ্রাস করতে চান। আপনারা ‘সাও তোরাহ’ দ্বীপে কাউকে যেতে দেন না। কারণ ওখানে সামরিক ঘাঁটি গড়েছেন।’ বলল আহমদ মুসা। ‘এ অভিযোগ সত্য নয়। এমন অভিযোগ সরকারের কাছেও সম্ভবত গেছে। পরশু সরকারী একটা সার্ভে বিমান দ্বীপটার উপর দিয়ে ফ্লাই করেছে। আমরা শুনেছি পাহাড়, ঘাস ও জংগলের উপত্যকা ছাড়া আর কিছুই দেখেনি। ঘাঁটি বলছ, ওখানে একটা বাড়িরও সন্ধান পাবে না। আসল কথা হলো, আমরা দ্বীপটাকে পৃথিবীর সকল বৃক্ষ-প্রজাতির অভয়ারণ্য বানাচ্ছি।’ ‘একটা বাড়িও যদি না থাকে, তাহলে যারা অভয়ারণ্য বানাচ্ছে তারা থাকে কোথায়?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। থতমত খেয়ে গেল কেলভিন কেনেইরা। কিন্তু তা মুহূর্তের জন্যে। নিজেকে সামলে নিয়ে সে দ্রুত বলল, ‘কেন প্ল্যান্টেশন কর্মীদের জন্যে অস্থায়ী তাঁবুই কি যথেষ্ট নয়?’ আহমদ মুসা হাসল। ভাবছিল সে। সংগে সংগে কোন কথা বলল না। কিন্তু কথা বলে উঠল হাসান তারিক। বলল, ‘কিন্তু এই যে বললেন সরকারী বিমান সেখানে পাহাড়, ঘাস ও জংগলের উপত্যকা ছাড়া কিছুই দেখেনি!’ ‘বিমান থেকে জংগলের মধ্যে ছোট ছোট তাঁবু দেখবে কি করে?’ বলল কেলভিন। ‘আজোরসের বিরুদ্ধে তোমার বদমতলব না থাকলে মিনি সাব দিয়ে তোমরা কি কর?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। ‘মিনি সাব’ এর কথা শুনে কেলভিন চমকে উঠে তাকাল আহমদ মুসার দিকে। চোর ধরা পড়ার মত মুখের চেহারা হলো তার। বলল, ‘মিনি সাব? মিনি সাব আমরা কি করব?’ আহমদ মুসার মুখ কঠোর হয়ে উঠল। হাতের রিভলবারটা কেলভিনের দিকে তাক করে বলল, ‘সত্য কথা বলতে যদি আর একটুও দেরী হয়, তাহলে এখনি তোমার ডান কানটা উড়ে যাবে।’ ভয়ের চিহ্ন ফুটে উঠল কেলভিনের চোখে-মুখে। মরিয়া হয়ে বলার চেষ্টা করল, ‘না আমি .............।’ সংগে সংগেই আহমদ মুসার রিভলবারের নল সরে এসে স্থির হলো কেলভিনের ডান কান লক্ষ্যে। তার তর্জ্জনি চেপে বসতে যাচ্ছিল রিভলবারের ট্রিগারে। ভয়ে বিস্ফোরিত হয়ে হয়ে উঠল কেলভিনের চোখ। কঁকিয়ে উঠল, ‘বলছি আমি।’ বলে একটু থেমেই শুরু করল, ‘নাম ‘মিনি সাব’ হলেও এটা সামরিক যান নয়। নিছক পরিবহন যান আমাদের মিনি সাব।’ ‘মিথ্যা কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়ার মত দেশও পরিবহন যান হিসাবে সাবমেরিন বা মিনি সাবকে ব্যবহার করে না। আপনাদের মত একটা এনজিও’র জন্যে এর কোনই প্রয়োজন হতে পারে না।’ বলল আহমদ মুসা। দ্বিধায় পড়ল কেলভিন। মনে হয় জবাব খুঁজছিল। অবশেষে বলল, ‘এই পরিবহন সবচেয়ে নিরাপদ ও নিরিবিলি বলে আমরা ব্যবহার করছি।’ ‘আজোরস দ্বীপপুঞ্জের নৌপথকে কোন দিক দিয়েই কি অনিরাপদ ও অনিরিবিলি মনে হয়?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। আবার দ্বিধায় পড়ে গেল কেলভিন। উত্তর ঠিক করে নিয়ে বলল, ‘নিরাপদ না হবার ও নিরিবিলি না হবার অবস্থা নেই।’ ‘তাহলে মিনি সাব পরিবহনের বিলাসিতা কেন? আসল কথা হলো, মিনি সাব সামরিক-যান। এই মিনি সাব ও সাও তোরাহ দ্বীপকে আজোরসের বিরুদ্ধে কোন সামরিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং নিশ্চয় এই ষড়যন্ত্রের পিছনে বাইরের কোন শক্তি কাজ করছে।’ বলে আহমদ মুসা একটু থেমেই আবার তীব্র কণ্ঠে বলে উঠল, ‘বলুন আপনারা কার এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন?’ কথা শেষ হবার আগেই আহমদ মুসার রিভলবার কেলভিনের বুক বরাবরে এসে স্থির হলো। ফ্যাকাশে হয়ে উঠল কেলভিনের মুখ। কম্পিত কণ্ঠে কেলভিন বলল, ‘না না আমরা আজোরসের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছি না। এমন বিষয় আমাদের কল্পনাতেও নেই।’ ‘তাহলে কি করছেন আপনারা আজোরস?‘ কণ্ঠের স্বর কঠোর হয়ে উঠেছে আহমদ মুসার। কেলভিন কোন উত্তর দিল না। তার চোখ-মুখ ভয় ও উদ্বেগে আরও চুপসে গেল। আহমদ মুসা ভাবল, আসল কথা কেলভিন বলবে না, মরলেও না। সুতরাং এ পথে না গিয়ে বরং প্রয়োজনীয় তথ্য যা পাওয়া যায় এর কাছ থেকে উদ্ধার করা উচিত। বলল আহমদ মুসা, ‘তোমাদের মিনি সাব দ্বীপপুঞ্জের কোথায় কোথায় ল্যান্ড করে? নিজস্ব জেটিতে, না কোন প্রাইভেট জেটিতে?’ ‘কোন জেটিতেই ল্যান্ড করে না। কোন দ্বীপে এলে মিনি সাব উপরে ভেসে ওঠে এবং এরপর বোটের মাধ্যমে তীরে যাতায়াত চলে।’ বলল কেলভিন। ‘মিনি সাব দ্বীপপুঞ্জের নৌপথের সব রুটেই চলে, না এর নিজস্ব রুট আছে?’ আহমদ মুসা বলল। ‘নিজস্ব রুট আছে।’ ‘এই রুটে কোন কোন দ্বীপ পড়ে?’ ‘রাজধানী পঁতা দেলগা বন্দর ও হারতা পড়ে। একটা মিনি সাব পঁতা দেলগা থেকে হারতা আসে এবং আবার পঁতা দেলগাতে ফিরে যায়। আরেকটা মিনি সাব সাও তোরাহ ও হারতা পর্যন্ত যাতায়াত করে।’ ‘সাও তোরার তো নিজস্ব জেটি আছে।’ আহমদ মুসা বলল। ‘না সাও তোরার কোন জেটি নেই কোন বন্দরও নেই।’ কেলভিন বলল। ‘তাহলে সাও তোরার বোট, জাহাজ ইত্যাদি কোথায় থাকে? মিনি সাবই বা কোথায় ভেড়ে?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। তার ভ্রু কুঞ্চিত। আহমদ মুসার কঠোর মুখভাবের দিকে একবার তাকিয়ে কেলভিন আমতা আমতা করে বলল, ‘সাও তোরাহ’র সাথে শুধু মিনি সাবের মাধ্যমেই যোগাযোগ হয়। বোট বা লঞ্চে সাও তোরাহ গেলেও উপকূলে গিয়ে মিনি সাবেই উঠতে হয়। ‘কেন?’ আহমদ মুসার চোখে-মুখে অপার বিস্ময়। নতুন ভয় ও উদ্বেগসহ একটা অসহায়ভাব ফুটে উঠল কেলভিনের চোখে-মুখে। বলল, ‘একটা সিগারেট খেতে পারি।’ ‘খান।’ আহমদ মুসা অনুমতি দিল। কেলভিন কেনেইরা পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট নয় সিগারেট বের করল। সে সিগারেট বের করার সময় হঠাৎ আহমদ মুসার চোখে পড়ল সিগারেটের গোড়ার দিকে সিগারেটের গায়ে ফিল্টার রং ঠিকই আছে, কিন্তু ফিল্টার নেই, ফাঁকা। তার উপর সিগারেটটা মনে হলো স্বাভাবিকের চেয়ে একটু লম্বা। ভ্রুকুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার। আহমদ মুসার রিভলবার কেলভিনের দিকে তাক করাই ছিল। তর্জ্জনিটাও তার চলে এল আবার ট্রিগারে। ভাবনাও তার সম্পূর্ণ হয়েছে। বলল আহমদ মুসা, ‘আপনার সিগারেটটাতো খুবই সুন্দর। দেখি কি ব্রান্ডের ওটা।’ কিন্তু ততক্ষণে কেলভিন সিগারেরটা তার ঠোঁটে তুলে নিয়েছে দ্রুত। ‘হাসান তারিক শুয়ে পড়’ বলেই আহমদ মুসার তর্জনি রিভলবারের ট্রিগারে চেপে ধরে নিজেকে মাটির উপর ছুড়ে দিয়েছে। পরপর দুটি গুলী ছুড়েছে আহমদ মুসা। একটি গুলী বিদ্ধ করেছে কেলভিনের বুক, অন্য গুলীটি বিদ্ধ করেছে তার বাম পাঁজরকে। বসে থাকা কেলভিনের দেহটা পেছন দিকে ছিটকে পড়ে গেছে। সিগারেটটা তার মুখ থেকে খসে পড়েছে মাটিতে ঘাসের উপর। আহমদ মুসা ও হাসান তারিক দুজনেই উঠে বসেছে। ‘কি ঘটেছে ভাইয়া ওকে যে গুলী করলেন? সিগারেটটাকে আপনি সন্দেহ করেছেন?’ বলল হাসান তারিক। ‘হ্যাঁ হাসান তারিক। আমার চোখ যদি ঠিক দেখে থাকে, তাহলে ওটা একটা ভয়ংকর বন্দুক।’ বলে আহমদ মুসা উঠে গিয়ে সিগারেটটা হাতে তুলে নিল। সিগারেট টিউবের দুপ্রান্তে চোখ বুলিয়ে বলল, ‘সন্দেহটা ঠিক হাসান তারিক। রীতিমত এটা একটা মেশিনগান। এর ফিল্টার টপের উপর ঠোঁটের চাপ পড়লেই টিগ্রার সক্রিয় হয়ে উঠে এবং সুচের অগ্রভাগের মত সূক্ষè ও তীক্ষè এক ঝাঁক বুলেট বেরিয়ে গিয়ে চারদিক ছড়িয়ে পড়ে আঘাত করে। সামনে দশ বারজন লোক থাকলেও তাদের সকলকে কভার করার জন্যে একবার ট্রিগারে চাপ দেয়াই যথেষ্ট।’ ‘নিশ্চয় কোন ভয়ংকর বিষ মেশানো আছে ঐ বুলেটগুলোতে। না হলে সুচাগ্র বুলেট কতটুকু আর ক্ষতি করবে?’ বলল হাসান তারিক। আহমদ মুসা বলল, ‘তুমি ঠিক বলেছ হাসান তারিক। চলত পরীক্ষা করি।’ বলে আহমদ মুসা একটু পিছিয়ে গিয়ে এক ধরনের গাছের বড় পুরু পাতায় একটা ফায়ার করল। কয়েকটা সুচাগ্র বুলেট গিয়ে বিদ্ধ করল পাতাটিকে। মিনিটখানেক অপেক্ষা করতে হলো। এর মধ্যেই বড় পাতাটি নেতিয়ে গিয়ে তার কান্ডের উপর ঝুলে পড়ল। বিস্ময় আহমদ মুসা ও হাসান তারিক দুজনের চোখে-মুখেই। হাসান তারিক বলল, ‘আহমদ মুসা ভাই এটা ভয়ংকর ধরনের এক পয়জন যা জীবিত সবকিছুকেই মুহূর্তে ধ্বংস করতে পারে।’ ‘আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন হাসান তারিক।’ বলে ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করে বলল, ‘চল হাসান তারিক, এলাকাটা একটু ঘুরে দেখা যাক।’ তারা এদিক ওদিক ঘুরে পাহাড় ঘেরা উপত্যকা করিডোরটির একদম উত্তর প্রান্তে গিয়ে দাঁড়ালো। এখান থেকে উপত্যকা প্রায় খাড়াভাবে বিশ গজ নেমে গেছে। তারপর ঘন গাছ-পালায় ঢাকা উপত্যকাটি আধা মাইলের মত এগিয়ে সাগরে মিশেছে। হঠাৎ হাসান তারিক ভ্রু কুঞ্চিত করে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘এখানে এক ধরনের তেলের গন্ধ পাচ্ছি আহমদ মুসা ভাই।’ শুনে আহমদ মুসাও সেটা অনুভবের চেষ্টা করল। মুহূর্ত কয়েক পরে আহমদ মুসাও বলে উঠল, ‘সত্যি বলেছ, এক ধরনের তেলের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’ ‘গন্ধটা বেশ ভারী আহমদ মুসা ভাই। এর উৎস খুব দূরে হবে না।’ বলল হাসান তারিক। ‘সাগরের পানিতে তেল পড়তে পারে। সাগর তো খুব দুরে নয়।’ আহমদ মুসা বলল। ভাবছিল হাসান তারিক। বলল, ‘ভাইয়া সাগরের পানিতে তেল মেশার পর তার গন্ধ এতটা ভারী হবার কথা নয়।’ ‘তাহলে?’ বলল আহমদ মুসা। ‘আমার মনে হয় ভিন্ন কোন উৎস থেকে তেলের এই গন্ধ আসছে।’ হাসান তারিক বলল। ‘সে ভিন্ন উৎসটা কি হতে পারে?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার। ‘আমি বুঝতে পারছি না আহমদ মুসা ভাই।’ বলল হাসান তারিক। আহমদ মুসারা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল। তারা এসে পড়েছে ঘাসে ঢাকা উন্মুক্ত উপত্যকাটার উত্তর-পূর্ব কোণের একদম প্রান্তে। সামনেই পাহাড়ের প্রাচীর। হঠাৎ পাহাড়ের প্রাচীরের এক টুকরো নীল রংয়ের উপর চোখ আটকে গেল আহমদ মুসার। এগিয়ে গেল আহমদ মুসা প্রাচীরের কাছে। দেখল, নীর রং দিয়ে একটা উর্ধমূখী তীর আঁকা। তীরের দন্ডটি জিগজ্যাগ। তীরের চারদিক ঘিরে বহুকৌণিক একটা সীমান্ত আঁকা সীমান্তের উপর চোখ বুলাতে গিয়ে চমকে উঠল আহমদ মুসা। বহুকৌণিক সীমান্তটিকে মনে হলো একটি হিব্রু অক্ষর যার উচ্চারণ ইংরেজী ‘প্রসিড’ এর সমার্থক। আহমদ মুসার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কিন্তু পরক্ষণেই এক প্রশ্ন এসে এই ঔজ্জ্বল্যকে আচ্ছন্ন করে দিল। আহমদ মুসা পাহাড়ের দেয়ালের অংকনটির দিকে ইংগিত করে বলল, ‘হাসান তারিক দেখ তো কিছু বুঝতে পারো।’ আহমদ মুসার সাথে হাসান তারিকও অংকনটিকে দেখছিল। বলল, ‘তীরটি উপরের দিকে অর্থাৎ সামনের দিকে একটা পথের ইংগিত করছে।’ ‘আর চারদিকের কৌণিক বৃত্তটি?’ জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। ‘আমি বুঝতে পারছি না ভাইয়া।’ ‘দেখ ওটা একটা হিব্রু অক্ষর।’ ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে উঠল হাসান তারিকের। বলল, ‘ঠিক ভাইয়া।’ তারপরেই হাসান তারিক আবার উচ্ছসিত কণ্ঠে বলে উঠল, ‘কেউ যেন সামনে ‘প্রসিড’ মানে অগ্রসর হবার জন্যে নির্দেশ দিচ্ছে।’ ‘নির্দেশ দাতা কে?’ প্রসন্ন মুখে জিজ্ঞেস করল আহমদ মুসা। ‘হিব্রু অক্ষরের উপস্থিতি প্রমাণ করছে সে নিদের্শদাতা ইহুদী কেউ।’ বলল হাসান তারিক। ‘ধন্যবাদ হাসান তারিক।’ আহমদ মুসা বলল। ‘কিন্তু কোথায় অগ্রসর হতে নির্দেশ দিচ্ছে?’ জিজ্ঞাসা হাসান তারিকের। ‘সেটাই এখন প্রশ্ন।’ বলে একটু থামল আহমদ মুসা। তারপর আবার বলে উঠল, ‘কেলভিনের কাছ থেকে আমরা জানলাম এই উপত্যকাটা ইহুদীরা মানে WFA (ওয়ার্ল্ড ফ্রিডোম আর্মি) লীজ নিয়েছে। লিজ নিয়েছে নিশ্চয় কোন কাজে লাগাবার জন্যে। সেই কাজটা কি? আমার মনে হয় এই ‘তীরটি’র সাথে এই জিজ্ঞাসার সম্পর্ক আছে।’ ‘তার মানে তীরের নির্দেশ অনুসারে সামনে অগ্রসর হলে জিজ্ঞাসাটির জবাব পাওয়া যাবে।’ বলল হাসান তারিক। ‘তাই মনে হয়।’ আহমদ মুসা বলল। ‘কিন্তু অগ্রসর হবো কিভাবে?’ চারদিকে চোখ বুলাবার সাথে সাথে জিজ্ঞেস করল হাসান তারিক। ‘চারদিকে নয় হাসান তারিক। তীরের দিক-নির্দেশনার দিকে তাকাও। দেখ আমরা পাহাড়ের প্রাচীর বেয়ে যদি উপরে উঠি, তাহলে কিছুটা উপরে গিয়েই আমরা একটা ‘ষ্টেপ’ পাচ্ছি। ষ্টেপটা দুই পাহাড়ের টিলার মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে সামনের আরেক পাহাড়ের দেয়ালের দিকে। ঐ দেয়ালে পৌছে কি করতে হবে, তার নির্দেশ বোধ হয় ওখানে গেলেই পাওয়া যাবে।’ বলল আহমদ মুসা। হাসান তারিকের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বলল, ‘চলুন ভাইয়া তাহলে অগ্রসর হই। জিজ্ঞাসাটির জবাব না নিয়ে আমরা ফিরছি না।’ ‘আমারও তাই মত। চল হাসান তারিক।’ বলে আহমদ মুসা পাহাড়ের দেয়ালে ওঠার জন্যে সামনে অগ্রসর হলো। দুজনেই পাহাড়ের ধাপে উঠে এল। ধাপ বা ষ্টেপের মুখটা সরু। কিন্তু তারা দেখল, মুখের কয়েক গজ পরেই ধাপটা প্রশস্ত হয়েছে এবং তা এগিয়ে গেছে সামনের পাহাড়টার দেয়াল পর্যন্ত। তারপর তা সংকীর্ণ এক গিরিপথ আকারে এঁকে বেঁকে এগিয়ে গেছে উত্তর দিকে। ‘চল আমরা এগোই।’ আহমদ মুসা বলল। ‘কোথা?’ জিজ্ঞাসা হাসান তারিকের। ‘জানি না। তবে পথে এগুলে এই উপত্যকা কেন WFA লীজ নিয়েছে তার রহস্য জানা যাবে। এই পথে গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ের গায়ে তীর চিহ্ন তা প্রমাণ করে।’ বলল আহমদ মুসা। গিরিপথ ধরে এগুলো তারা। হঠাৎ এক সময় মাটি থেকে একটা জিনিস তুলে নিয়ে চিৎকার করে বলল, ‘এই যে আহমদ মুসা ভাই একটা সিগারেটের গোড়া পাওয়া গেছে। তার মানে গিরিপথ দিয়ে লোকজন যাতায়াত করেছে।’ আহমদ মুসা থমকে দাঁড়িয়ে ফিরল। হাত বাড়িয়ে বলল, ‘দাও দেখি সিগারেটের গোড়াটা।’ সিগারেটের গোড়াটা হাতে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করে বলল, ‘গোড়াটা টাটকা নয় দেখছি। দুএকদিনের মধ্যে নয়, তবে এই পথে লোক যাতায়াত করেছে।’ আবার হাঁটা শুরু করল তারা। পথে সিগারেটের টুকরো, ভাঙা চারাগাছ, চকলেটের মোড়ক, প্রভৃতি মানুষ চলাচলের আরও কিছু চিহ্ন তারা পেল। কিন্তু সবই বেশ পুরানো। এক জায়গায় পেল একখন্ড দলা পাকানো কাগজ। আহমদ মুসা তাড়াতাড়ি তুলে নিল কাগজের দলাটি। কাগজের দলাটি তাড়াতাড়ি খুলল। কাগজটা আয়তাকৃতির একটা স্লিপ পেপার। কাগজের এক পৃষ্ঠা সাদা। অন্য পৃষ্ঠায় একটা মোবাইল টেলিফোন নাম্বার লেখা। তার সাথে কয়েকটি তারিখ। এলোপাথাড়ী লেখা তারিখগুলো সবই সামনের। মোবাইল নাম্বারটি চিনতে পারল আহমদ মুসা। কেলভিনের কাছ থেকে একটাই মোবাইল টেলিফোন নাম্বার পাওয়া গেছে। আর সেটা এই নাম্বার। হাসান তারিকও কাগজটি দেখল। সেও টেলিফোন নাম্বারটি চিনতে পারল। কিন্তু তারিখ সম্পর্কে বলল, ‘এগুলোর বোধ হয় কোন অর্থ নেই। কেউ এমনিই এলোপাথাড়ি লিখে থাকতে পারে।’ ‘হতে পারে, কিন্তু দেখ তারিখগুলোর একটা তারিখ কেটে দিয়ে সেটা আবার লেখা হয়েছে। অর্থহীন আঁচড় হলে একটা তারিখ কেটে দিয়ে তা আবার সংশোধন করার দরকার ছিল না।’ বলে আহমদ মুসা কাগজের খন্ডটি পকেটে রেখে দিল। গিরিপথ ধরে তারা একেবারে উপকূলে পৌছে গেল। উপকূল দেখে তারা বিস্মিত হলো। পাহাড় ঘেরা মাঠ থেকে যে উপত্যকা নেমে এসেছে তার শেষ প্রান্তটা, মানে উপকূল অংশটা পাহাড় ঘেরা ঘাসে ঢাকা মাঠটা যেমন খাড়া বিশ ফুট নেমে গিয়ে একটা সবুজ সমতল উপত্যকার সৃষ্টি করেছে, তেমনি নগ্ন পাথুরে উপকূলটি খাড়া সমুদ্রে নেমে গেছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো সাগর এখানে শান্ত। বিস্মিত হাসান তারিক বলে উঠল, ‘ভাইয়া এটা একটা ন্যাচারাল পোর্ট। পাথুরে উপকূলটা একটা ন্যাচারাল জেটিও এবং সাগর এখানে অত্যন্ত গভীর। সাবমেরিনসহ যে কোন জাহাজ এই পাথুরে জেটিতে ল্যান্ড করতে পারে। এমন ন্যাচারাল পোর্ট পৃথিবীতে আর আছে কি না সন্দেহ।’ আহমদ মুসা অপার বিস্ময় নিয়ে তাকাল হাসান তারিকের দিকে। বলল, ‘সাগর এখানে অত্যন্ত গভীর কি করে বুঝলে?’ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাসান তারিক জবাব দিল, উপকূল হওয়া সত্ত্বেও সাগর এখানে এতটা শান্ত হওয়াই তার প্রমাণ।’ ‘ও আল্লাহ! পাহাড় ঘেরা দুর্গম এই উপত্যকা ন্যাচারাল পোর্ট বলেই WFA এটা লীজ নিয়েছে।’ বলেই আহমদ মুসা প্রবল উচ্ছাসে চিৎকার করে উঠল, ‘এটাই তাহলে ওদের দুই মিনি-সাব লাইনের সংযোগ বন্দর। ‘পঁতা দেলগা’ থেকে আসা মিনি-সাব এখানে নোঙর করে, আবার এখান থেকেই মিনি-সাব সাও তোরাহ যায়।’ হাসান তারিকও উচ্ছসিত হয়ে উঠল। বলল, ‘ঠিক বলেছেন ভাইয়া, এটাই ওদের সংযোগ বন্দর।’ একটু থেমেই হাসান তারিক আবার বলে উঠল, ‘ভাইয়া তেলের যে গন্ধ পেয়েছিলাম সেটা এখান থেকেই। দেখুন এখানকার মাটি থেকেই এই গন্ধ আসছে। এটা সাবমেরিন ওয়েলের গন্ধ।’ আহমদ মুসার মুখে হাসি ফুটে উঠল। বলল, ‘হ্যাঁ তেলের গন্ধ এখান থেকেই উঠেছে। এ থেকে আরও নিশ্চিত প্রমাণ হচ্ছে যে, ওদের মিনি সাবমেরিন এখানে নোঙর করে।’ ‘কিন্তু আশ্চর্য ভাইয়া, ওরা এখানে কোন স্থাপনা গড়ে তোলেনি।’ বলল হাসান তারিক। ‘চল একটু ঘুরে দেখা যাক।’ আহমদ মুসা বলল। ‘চলুন।’ বলল হাসান তারিক।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ৩৩৯ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now