বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৬

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৬ ৬ নিউইয়র্ক হাইওয়ে ধরে একটা গাড়ি এগিয়ে চলেছে ওয়াশিংটনের দিকে। গাড়ির আরোহী দুজন। ড্রাইভিং সিটে আহমদ মুসা এবং তার পাশে কামাল সুলাইমান। ‘আমরা অর্ধেক পথ এগিয়েছি ভাইয়া। গণকবরের ১৪টি কংকালের সবরকম টেষ্ট সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করেছে, ঐ ১৪ জনই আরব বংশোদ্ভুত এবং তাদেরকে টুইনটাওয়ার ধ্বংসের দিনগত রাতে একই সময়ে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। এর অর্থ আরবদের কর্তৃক বিমান হাইজ্যাক করে টুইনটাওয়ারে আঘাত করার প্রচারিত কাহিনী মিথ্যা এবং সাজানো। অন্যদিকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া টুইনটাওয়ারের ডাষ্টের তিনটি পরীক্ষাই প্রমাণ করেছে বিশেষ ধরনের ডেমোলিশন বিস্ফোরক দিয়ে টাওয়ার ধ্বংস করা হয়েছে, বিমানের আঘাতে টাওয়ার ধ্বংস হয়নি।’ বলল কামাল সুলাইমান। ‘আমরা অর্ধেক পথ এগিয়েছি, এ কথা বলছ কেন? টুইনটাওয়ার ধ্বংসের জন্যে যাদেরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের ডকুমেন্ট আমাদের হাতে। অন্যদিকে টাওয়ার ধ্বংসের যে কারণ দেখানো হয়েছে তা মিথ্যা প্রমাণেরও ডকুমেন্ট আমাদের হাতে এসেছে। সুতরাং বলতে পারো পুরো পথই আমরা অতিক্রম করেছি। এখন আমরা উদ্ধার করতে যাচ্ছি সিভিল প্লেন কিভাবে টাওয়ারে আঘাত হানল, সেই রহস্য।’ বলল আহমদ মুসা। ‘আমরা ডা. আয়েশা আহমদের মামার কাছ থেকে ‘গ্লোবাল হক’-এর উড্ডয়ন রুট এর লগ ও ফটোগ্রাফ যোগাড়ের চেষ্টা করতে পারি। আমার বিশ্বাস তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।’ কামাল সুলাইমান বলল। ‘আমরা ‘মিউজিয়াম অব মিলিটারী হিষ্ট্রি’র ওখানে কাজ সেরে নিউইয়র্কে ফিরেই ওখানে যাব ইনশাআল্লাহ।’ আহমদ মুসা বলল। ‘গ্লোবাল হক’-এর মিসিং বলে কথিত লগ সম্পর্কে নতুন কিছু জানা গেছে ভাইয়া?’ ‘আমি একটা টেলিফোনের অপেক্ষা করছি কামাল সুলাইমান।’ ‘কে টেলিফোন করবেন।’ জিজ্ঞাসা কামাল সুলাইমানের। ‘এফ.বি.আই প্রধান জর্জ আব্রাহাম জনসন টেলিফোন করবেন। তিনি গত রাতে আমাকে টেলিফোন করে বলেছিলেন যে, মিলিটারী মিউজিয়ামের লগ সম্পর্কে স্পেসেফিক কিছু জানতে পারলে আমি সেখানে পৌছার আগেই তিনি আমাকে জানাবেন।’ আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই তার মোবাইলটা বেজে উঠল। মোবাইলটি তুলে সামনে ধরল আহমদ মুসা। ‘নিশ্চয় মি. আব্রাহাম জনসনের টেলিফোন।’ বলল কামাল সুলাইমান। ‘না বুমেদীন বিল্লাহর টেলিফোন।’ বলে আহমদ মুসা বুমেদীন বিল্লাহর কলের উত্তর দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ, আমি জোসেফ জন। তুমি কখন ফিরলে?’ ‘এই মাত্র। পৌছেই আপনাকে টেলিফোন করেছি।’ ‘শোন, আমি যা খবর পেয়েছি, তাতে প্রফেসরকে কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে, বাড়িতে তাঁর যাওয়া হবে না। আর তুমি তোমার আসল কাজ শুরু করে দাও। মূল রিপোর্টের আগে প্রারম্ভিক কয়েকটা রিপোর্ট করতে হবে। যেমন গণকবর আবিষ্কারের খবর, ধ্বংস টাওয়ারের ডাষ্ট পরীক্ষার উদ্যোগের খবর এবং এসবকে সামনে রেখে বলবে টাওয়ার ধ্বংস বিষয়ে সত্যানুসন্ধানের সামগ্রিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই রিপোর্টের পরদিনই মূল রিপোর্ট পত্রিকায় যেতে হবে। এরপর ‘লা-মন্ডে’ পত্রিকায় যা উঠবে না, সেসব বিষয়েও ফলোআপ পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তোমাকে পাঠাতে হবে FWTV এবং WNA সংবাদ মাধ্যমে। মূল তথ্য তো পাওয়া গেছে। তার ভিত্তিতে রিপোর্ট তৈরি কর। পরে একটা বিষয় সংযোজন করলেই চলবে।’ আহমদ মুসা বলল। ‘আমি কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে আপনি যে প্রারম্ভিক রিপোর্টের কথা বলেছেন তা আমার মাথায় ছিল না। আপনি ঠিকই বলেছেন। বিনা মেঘে বজ্রপাতের চেয়ে এটাই স্বাভাবিক হবে।’ বলল বুমেদীন বিল্লাহ। ‘ধন্যবাদ বিল্লাহ। রাখলাম টেলিফোন। সব কথা মনে রেখ। বাই।’ বলে আহমদ মুসা কল অফ করে দিল। কল অফ করে মোবাইল ড্যাশ বোর্ডে রাখতেই মোবাইল বেজে উঠল আবার। ‘এবার নিশ্চয় জর্জ আব্রাহাম জনসন হবেন ভাইয়া।’ বলল কামাল সুলাইমান। মোবাইল তুলে নিল আহমদ মুসা। ঠিক জর্জ আব্রাহাম জনসনই টেলিফোন করেছে। ‘গুড মর্নিং জনাব। কেমন আছেন?’ বলল আহমদ মুসা। ‘গুড মর্নিং। ভাল আছি। তুমি নিশ্চয় পথে ড্রাইভ করছ?’ ‘জি হ্যাঁ।’ ‘তাহলে তাড়াতাড়ি বলছি শোন। লগটা মিসিং বলে যে মন্তব্য ডকুমেন্ট আছে তা ঠিক নয়। একটা বিশেষ পক্ষ অফিসকে দিয়ে এটা করিয়েছে। লগটা ঠিক জায়গায় ঠিকই আছে। বলছি সেকশন ও ডেষ্ক নাম্বার। মুখস্থ করে নাও। MM-111/197, আরও শোন, ওখানে কিন্তু কড়া সিকিউরিটি। তাদের উপর ‘দেখা মাত্র গুলী’র স্থায়ী নির্দেশ দেয়া আছে। তার উপর তোমরা রিভলবার নিতে পারছো না। সুতরাং সাবধান। উইশ ইউ গুডলাক। বাই।’ বলে এপার থেকে কিছু শোনার অপেক্ষা না করে টেলিফোন রেখে দিল জর্জ আব্রাহাম জনসন। ‘আল্লাহ লোকটির উপর রহম করুন। তাঁর সরকারের কোন লাভ নেই, বরং একদিক দিয়ে ক্ষতি আছে, তা সত্ত্বেও অমূল্য সাহায্য তিনি করছেন।’ স্বগত কণ্ঠে বলল আহমদ মুসা। ‘জর্জ আব্রাহাম জনসন সত্যিই আপনাকে ছেলের মত ভালোবাসেন ভাইয়া।’ কামাল সুলাইমান বলল। ‘তোমার কথা ঠিক কামাল সুলাইমান। তিনি আমাকে তার দ্বিতীয় ছেলে মনে করেন। কিন্তু তিনি ছেলেকেও এ ধরনের সাহায্য করবেন না। আসলে কামাল সুলাইমান, তিনি আমাদের উদ্দেশ্য-আদর্শকেও ভালোবাসেন।’ বলল আহমদ মুসা। ‘ভাইয়া আরেকটা বিষয়, বর্তমান মার্কিন সরকার সম্ভবত চান টুইনটাওয়ার ধ্বংসের সত্য ঘটনা দিনের আলোতে আসুক। যে গ্রুপটা তখন মার্কিন প্রশাসন ও সরকারের একটা অংশকে কাজে লাগিয়ে ভয়াবহ কাজটা করেছিল, বিশ্বকে ও আমেরিকাকে বদলে দিতে চেয়েছিল তাদের মত করে, সেই গ্রুপটা ও তাদের হীন উদ্দেশ্য ধরা পড়ে যাক বিশ্ববাসীর চোখে, এটা আমেরিকার বর্তমান সরকার আন্তরিক ভাবেই কামনা করেন। তবে এ কাজটা অন্যের হাতে হোক, এটা তারা চাচ্ছেন।’ কামাল সুলাইমান বলল। ‘হ্যাঁ কামাল সুলাইমান, তোমার কথা ঠিক, আজকের আমেরিকা বিশ বছর আগের সেই আমেরিকা নয়। জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, টমাস জেফারসনের আমেরিকা আবার ফিরে এসেছে। এই আমেরিকা নিজের যেমন শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে চায়, তেমনি চায় অন্যেরও শান্তি, স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত থাক। এই আমেরিকা বিশ্বের জাতি ও দেশসমূহের মাথায় বসতে চাচ্ছে না, চাচ্ছে তাদের হৃদয়ে স্থান পেতে। সুতরাং আমেরিকা অবশ্যই চাইবে অতীতের একটি কালো দাগ তার গা থেকে মুছে ফেলতে।’ বলল আহমদ মুসা। আহমদ মুসার কথা শেষ হতেই কামাল সুলাইমান চিৎকার করে উঠল, ‘ভাইয়া ডান দিকে এক্সিট নিন। এ দিক দিয়ে ‘ইন্ডিপেনডেন্স’ এভেনিউতে না ঢুকলে অনেক ঘুরতে হবে।’ ‘ধন্যবাদ কামাল সুলাইমান। কথায় মনোযোগ দিতে গিয়ে রাস্তার দিকে মনোযোগ ছিল না।’ এক্সিট নেবার জন্যে গাড়িটাকে সাইড লেনে নিতে নিতে বলল আহমদ মুসা। ইন্ডিপেনডেন্স এভেনিউ ও কনষ্টিটিউশন এভেনিউ রাজধানী ওয়াশিংটনের প্রাণকেন্দ্রে। হোয়াইট হাউজ, পার্লামেন্ট ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান এই এলাকায়। ইন্ডিপেনডেন্ট এভেনিউ-এর দক্ষিণ প্রান্তে এভেনিউ থেকে একটু ভেতরে এক বিরাট এলাকা জুড়ে ‘মিউজিয়াম অব মিলিটারী হিষ্ট্রি’। মিউজিয়ামের চারদিক ঘিরে বড় বড় গাছ স্থানটাকে বাগানের রূপ দিয়েছে। মিউজিয়ামের দুপাশে পার্কিং প্লেস। উত্তর পাশের পার্কিং প্লেসটা ছায়া ঘেরা ও অপেক্ষাকৃত নির্জন। তাছাড়া মিউজিয়ামের প্রাইভেট ও ইমারজেন্সি দরজা আছে, সেটাও এদিকেই। আহমদ মুসা এই কারপার্কিং-এ তার গাড়ি পার্ক করলো। আহমদ মুসা পকেট থেকে মিউজিয়ামের ইন্টারন্যাল মানচিত্রটা বের করে চোখের সামনে তুলে ধরল। চারতলা বিল্ডিং। প্রতিটি ফ্লোরের রুম ও প্যাসেজের এ্যারেঞ্জমেন্ট প্রায় এই রকমের। পূর্ব দিকে মিউজিয়ামের এনট্রান্স। মিউজিয়ামে ঢোকার পর একটা বড় লাউঞ্জ। লাউঞ্জের দুপ্রান্ত থেকে দুটি প্রশস্ত সিঁড়ি উঠে গেছে চারতলা পর্যন্ত। একটা সিঁড়ি উপরে ওঠার জন্যে, অন্যটা নিচে নেমে আসার জন্যে। মিলিটারী মিউজিয়ামটি সার্বক্ষণিকভাবে সর্বসাধারণের জন্যে খোলা নয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুমতি প্রাপ্তরাই শুধু মিউজিয়ামে ঢুকতে পারে। মিউজিয়ামের সকল বিভাগ সকলের জন্যে অবারিত নয়। কিছু কিছু বিভাগ আছে যা দর্শনার্থীদের জন্যে উন্মুক্ত নয়। এ ধরনের সেকশনগুলো চারতলায়। অর্থাৎ চারতলায় কোন দর্শনার্থী যায় না। জর্জ আব্রাহাম জনসন জানিয়েছেন, MM-111/117 সেকশনটা নিষিদ্ধের তালিকায় নয়। সুতরাং তাদের গন্তব্য ‘সেফ এয়ার সার্ভিস’-এ গিয়ে রেকর্ড লগ দেখায় কোন বাধা নেই। কিন্তু সমস্যা চারটি, যে ডকুমেন্টকে মিষ্ট্রিয়াস মিসিং তালিকায় তোলা হয়েছে তা, এক. দেখায় কোন বাধা আসবে কিনা, দুই. ক্যামেরা নিয়ে যেতে দিবে কিনা, তিন. ছবি তোলার সুযোগ পাওয়া যাবে কিনা, এবং চার. সেকশনটি কোন তলায় তা জানাতে ভুলে গেছেন জর্জ আব্রাহাম। আহমদ মুসা মিউজিয়ামের মানচিত্র থেকে মুখ তুলল। বলল কামাল সুলাইমানকে সব সমস্যার কথা। কামাল সুলাইমান বলল, ‘সেকশন চেনার সমস্যাটা ভাইয়া আমরা ‘ইনফরমেশন’ থেকে জেনে নেব। আমার মনে হয় প্রথম সমস্যাটা কোন সমস্যা হবে না। কারণ সেকশনটা দর্শনার্থীদের জন্যে নিষিদ্ধ নয় বলেই একে চারতলায় নেয়া হয়নি। মিসিং তথ্যটা দর্শনার্থীদের জন্যে এজন্যেই রাখা হয়েছে যাতে কোন দর্শনার্থী সেকশনটাতেই না যায়। গেলে বাধা দেয়ার কিছু নেই। সমস্যা দাঁড়াচ্ছে ক্যামেরা নেয়া ও ছবি তোলা নিয়ে।’ থামল কামাল সুলাইমান সমস্যা দুটির কোন সমাধান না দিয়েই। ভাবছিল সে। ‘কলম ক্যামেরাতো! একটা কাজ আমরা করতে পারি। আমরা ক্যামেরা থেকে ব্যাটারী এবং ফটোডিস্কটা আলাদা করতে পারি। তাতে ওদের স্ক্যানিং এড়ানো যাবে।’ বলল আহমদ মুসা। গাড়ি থেকে নামার জন্যে তৈরি হলো আহমদ মুসা। বেরিয়ে এল গাড়ি থেকে। মিউজিয়ামের লাউঞ্জে প্রবেশ করল আহমদ মুসারা। সোজা গিয়ে দাঁড়াল রিসিপশনের সামনে। রিসিপশন ডেস্কে দুজন। একজন মেয়ে, একজন ছেলে। আহমদ মুসাকে ডেষ্কের সামনে দাঁড়াতে দেখে মেয়েটি তার দিকে এগিয়ে এল। ‘গুড মর্ণিং ম্যাডাম। আমি জোসেফ জন আর আমার সাথে ইনি কুনার্ড সুলিভান। এই দুনামে রিসিপশনে দুটি প্রবেশ পত্র থাকার কথা।’ ‘প্লিজ স্যার.........’ বলে মেয়েটি রেজিষ্টারটি টেনে নিল। রেজিষ্টারে নজর বুলিয়েই মেয়েটি বলে উঠল, ‘ইয়েস স্যার, আপনাদের পাশ আছে। মেয়েটি দুটি পাশ আহমদ মুসার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘স্যার রেজিষ্ট্রারে দয়া করে সই করুন।’ আহমদ মুসারা প্রবেশপত্র নিয়ে রেজিষ্টারে সই করল। সই করে আহমদ মুসা বলল, ‘ম্যাডাম MM-111/117 সেকশনটা কোন তলায় কোনদিকে হবে?’ মেয়েটির পাশে দাঁড়ানো অন্য রিসিপশনিষ্ট আগ্রহ ভরে একধাপ এগিয়ে এল এবং বলল মেয়েটি কিছু বলার আগেই, ‘স্যার ও সেকশনটা তিন তলার ১৯৭ নাম্বার কক্ষে।’ রিসিপশনিষ্টের মুখের আকস্মিক এক পরিবর্তন এবং তার অতি উৎসাহ আহমদ মুসার দৃষ্টি এড়াল না। কিন্তু এ নিয়ে চিন্তা করার সময় তার ছিল না। প্রবেশ পত্র হাতে পেয়েছে। এখন তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হবে। সিঁড়িতে ওঠার মুখে স্ক্যানিং মেশিন। স্ক্যানিং পেরল আহমদ মুসারা। স্ক্যানিং-এর সময় ব্যাটারী ও ফটো ডিস্ককে আলাদাভাবে দেখে তারা কোন সন্দেহ করেনি। স্ক্যানিং আছে বলেই আহমদ মুসারা আজ রিভলবার নিয়ে আসেনি। কামাল সুলাইমানের কাছে একটা ক্লোরোফরম রিভলবার রয়েছে। প্লাষ্টিকের বলে তা স্ক্যানিং-এ ধরা পড়েনি। এটাই তাদের একমাত্র অস্ত্র। জর্জ আব্রাহাম জনসন তাদেরকে কৌশলে কাজ সারতে বলেছে। এখানে বড় কোন খুনোখুনি হোক তা তিনি চান না। চারতলা এই মিউজিয়ামে লিফট ব্যবস্থা আছে, কিন্তু তা দর্শকদের জন্যে নয়। আহমদ মুসা সিঁড়ি ভেঙে সোজা উঠে গেল তিন তলায়। কক্ষগুলো সুন্দর গুচ্ছাকারে সজ্জিত। এ রকম অনেকগুলো কক্ষ নিয়ে তিন তলা। আহমদ মুসারা খুঁজতে লাগল একশ’ সাতানব্বই নাম্বার কক্ষ। আহমদ মুসারা আগেই শুনেছিল, মিউজিয়ামে কোন ইউনিফরম পরা পুলিশ নেই। সিকিউরিটি পুলিশরা সাধারণ পোশাকে বিভিন্ন রুম ও করিডোরে ছড়িয়ে আছে। দর্শকদের সাথে মিশে দর্শক হয়ে তারা সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই ব্যবস্থাটা আহমদ মুসাদের জন্যে বিপদজনক। পেয়ে গেল তারা ১৯৭ নাম্বার কক্ষ। কক্ষটি উত্তর দিকের শেষ প্রান্তে। কক্ষের দরজা ওয়ালা সম্মুখ দেয়াল মিউজিয়ামের উত্তরের বহিঃদেয়ালের মুখোমুখি। মাঝখান দিয়ে প্রশস্ত করিডোর। আহমদ মুসা রুম খোঁজাখুঁজির এক ফাঁকে কলম ক্যামেরাটিকে সেট করে নিয়েছে। মাল্টি ডাইমেনশনাল এই মুভি ক্যামেরা অত্যন্ত শক্তিশালী। যে কোন বড় গ্রন্থ বা রেজিষ্টারের উন্মুক্ত দুপাতার উপর শট নিলে এক সেকেন্ডের শত ভাগের এক ভাগের মধ্যে দুদিকের দুপাতার নিচের দশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিখুঁত ফটো তুলতে পারে। আহমদ মুসারা ১৯৭ নাম্বার কক্ষে প্রবেশ করল। বিশাল কক্ষটিতে তখন পাঁচজন লোক। তাদের মধ্যে চারজন যুবক, একজন তরুণী। তারা বিভিন্ন জিনিস দেখায় ব্যস্ত। গোটা কক্ষে ‘সেফ এয়ার সার্ভিস’-এর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, প্লেনের মডেল, বিভিন্ন দেয়াল চার্ট, রেজিষ্টার ও বইপত্র সুন্দরভাবে সাজানো। আহমদ মুসা ও কামাল সুলাইমান আলাদাভাবে খুঁজছে লগ রেজিষ্টার। তাদের পরিকল্পনা হলো, তারা দুজনে এক সঙ্গে থাকবে না। আহমদ মুসা লগ রেজিষ্টার থেকে ফটো নেবে। আর কামাল সুলাইমান চারদিকটা পাহার দেবে তাকে আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্যে। ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় দরজা থেকে নাক বরাবর সামনে একটা ডেষ্কে আহমদ মুসা পেয়ে গেল লগ রেজিষ্টার। লগ রেজিষ্টারটি খোলা। খোলা পাতার দিকে তাকিয়ে আহমদ মুসা বিস্ময়ে হতবাক। লগের যে অংশটি সে চায় সেই পাতাটিই খোলা আকারে জ্বল জ্বল করছে। এটা কি কাকতালিয় ঘটনা, না শত্রুপক্ষের এটা একটা নোটিশ? যেটাই হোক এ নিয়ে সময় নষ্ট করা যাবে না। তাকাল আহমদ মুসা কামাল সুলাইমানের দিকে। দেখল, আহমদ মুসার বামে কিছু দূরে একটা যন্ত্র পরীক্ষা করছে দুজন। তাদের অল্প দূরে কামাল সুলাইমান। অবশিষ্ট দুজন কামাল সুলাইমানের কিছু দূরে দরজার কাছাকাছি জায়গায়। আর তরুণীটি ঘরের পশ্চিম প্রান্তে পশ্চিমমূখী হয়ে একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে। আহমদ মুসার সাথে কামাল সুলাইমানের চোখাচোখি হল। কামাল সুলাইমান পকেটে হাত দিল। এটা তার প্রস্তুত থাকার সংকেত। আহমদ মুসা ঘুরে দাঁড়াল। কলম ক্যামেরাটি হাতেই ছিল। কলম-ক্যামেরাটি সে রেজিষ্টারের নির্দিষ্ট পাতার উপরে ধরে ক্যামেরাটি অন করল। অফও করে দিল সেকেন্ড খানেকের মধ্যেই। আহমদ মুসা কলমটি পকেটে রাখতে যাবে। এই সময় তার বাম পাশ থেকে একটা শক্ত কণ্ঠ ভেসে এল, ‘হাত তুলে দাঁড়াও আহমদ মুসা।’ আহমদ মুসা হাত না তুলেই ফিরল তাদের দিকে। দেখল, যারা একটা যন্ত্র পরীক্ষা করছিল সেই যুবক দুজন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের দুজনের হাতেই উদ্যত রিভলবার। আহমদ মুসা ওদের দিকে তাকাতেই ওদের একজন বলল, ‘চালাকির চেষ্টা করো না। হাত তোল। গুলী করতে আমাদের বাধ্য করো না।’ তার কথা শেষ হবার আগেই কামাল সুলাইমানের হাত পকেট থেকে বেরিয়ে এসেছিল। দুপ দুপ করে শব্দ হলো দুবার। ক্লোরোফরম বুলেট গিয়ে বিস্ফোরিত হলো যুবক দুজনের সামনে। মুহূর্তেই ওরা জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। ক্লোরোফরম বুলেট ছোড়ার পর কামাল সুলাইমান রিভলবার নামিয়ে এগুচ্ছিল আহমদ মুসার দিকে। আহমদ মুসা চিৎকার করে উঠল, ‘কামাল পেছনে..........।’ দরজার পাশে যে দুজন যুবক ছিল তারা দুজনেই পকেট থেকে রিভলবার বের করে তাক করছে আহমদ মুসা ও কামাল সুলাইমানকে। তাদের একজন চিৎকার করে উঠেছে, ‘তোরা বহু জ্বালিয়েছিল আমাদের। তোদের আজ বাঁচিয়ে রাখব না। কুকুরের মত মারব তোদের।’ কামাল সুলাইমানও তাদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু আহমদ মুসা ও কামাল সুলাইমান কারও কিছু করার ছিল না। যুবক দুজন এতটা দূরে যে, তাদের উপর পাল্টা আক্রমণের সুযোগ নেই। কামাল সুলাইমানের ক্লোরোফরম রিভলবারও বিদঘুটে পজিশনে। আহমদ মুসা ও কামাল সুলাইমান দুজনেরই স্থির দৃষ্টি যুবক দুজনের দিকে। সময়ের এ রকম সন্ধিক্ষণে সাইলেন্সার লাগানো রিভলবারের গুলীর শব্দ হলো পরপর দুবার। যুবক দুজনের হাত থেকে রিভলবার ছিটকে পড়ে গেল। দুজনেরই দুহাত রক্তাক্ত। আহমদ মুসারা তাকাল ঘরের পশ্চিম দিকে। দেখল, সেই তরুণীর হাতে রিভলবার। আহমদ মুসা তার দিকে তাকাতেই মেয়েটি বলল, ‘আসুন স্যার আপনারা আমার সাথে।’ বলে তরুণীটি দরজার দিকে হাঁটা দিল। কামাল সুলাইমান তার ক্লোরোফরম রিভলবার তুলে ফায়ার করল আহত যুবক দুজনের দিকে। বলল, ‘ওরা চিৎকার করার আর সুযোগ পাবে না।’ হাঁটতে হাঁটতে মুখ ঘুরিয়ে তরুণীটি কামাল সুলাইমানকে বলল, ‘ধন্যবাদ।’ তরুণীটির সাথে আহমদ মুসারা ঘর থেকে বেরিয়ে এল। তরুণীটি হাঁটতে লাগল করিডোর ধরে প্রথমে পশ্চিমে, তারপর উত্তরে। ‘আমরা কি বের হবো উত্তরে প্রাইভেট এক্সিট দিয়ে?’ বলল আহমদ মুসা তরুণীটিকে লক্ষ্য করে। ‘জি স্যার। সামনের গেট দিয়ে অনেক ঝামেলা হতে পারে। ওদের আরো লোক আছে। আপনারা দুজন ঢুকেছেন, এ খবর সব জায়গায় হয়ে গেছে।’ ‘কিভাবে, আমাদের তো ওরা চিনে না।’ বলল কামাল সুলাইমান। ‘রিসিপশনে আপনারা সেকশনের কোড নাম্বার বলেছিলেন। এ থেকেই বিষয়টা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। শুধু ঘরের চারজন বোধ হয় জানত না যে, আপনারা দু’জন।’ তারা প্রাইভেট সিঁড়ি দিয়ে উত্তরের প্রাইভেট এক্সিটে নেমে এল। প্রাইভেট এক্সিটে একজন তরুণী দাঁড়িয়েছিল। আহমদ মুসাদেরকে নিয়ে আসা তরুণী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘এদিক সব ঠিক-ঠাক?’ ‘জি।’ ‘ঠিক আছে তোমার কাজ শেষ। তুমি এখন চলে যাও।’ বলে সে এগুলো দরজার দিকে। দরজায় ডিজিটাল লক। তরুণীটি আনলক করল। দরজা খুলে গেল। তরুণীসহ আহমদ মুসারা বেরিয়ে এল। গাড়ির পাশে গিয়ে পৌছল তারা। মেয়েটি বলল, ‘স্যার আমাকে ওয়াশিংটনের সীমা পর্যন্ত আপনাদের পৌছে দিতে বলেছেন।’ ‘ওয়েলকাম।’ আহমদ মুসা বলল। মেয়েটি পেছন দিকের দুটি দরজা খুলে আহমদ মুসাদের বসিয়ে নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল। গাড়ি ষ্টার্ট নিল।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৮০ জন


এ জাতীয় গল্প

→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ১
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ১ বাকি অংশ
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ২
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ২ বাকি অংশ
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৩
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৪
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৫
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৭
→ ধ্বংস টাওয়ারের নীচে চ্যাপ্টার- ৭ বাকি অংশ

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now