বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
বদলে যাওয়া পৃথিবী
‘কিরে এমন তাড়াহুড়ো করছিস কেনো? গলায় ঠেকে যাবে তো!! নে ডাল দিয়ে আরেকটু ভাত নে।’- বলতে বলতেই আধ চামচ ভাত প্লেটে তুলে দেয় মেহেদীর মা মিসেস শীলা রহমান।
যেদিন তাড়া থাকে সেদিনই বুঝি এমন হয়। তা’নাহলে ভাসির্র্টি থেকে বাসায় আসতে দু’ঘন্টা জ্যামে বসে থাকার কথা না। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাবার আর টাইম পেল না।
যে করেই হোক, আজ অন্তত লেট হওয়া চলবে না।– মনে মন ভাবতে ভাবতে প্লেটে ডাল রেখেই বেসিনে হাত ধুয়ে দৌঁড়ে রুমে চলে আসে মেহেদী। রেক থেকে টি-শার্টটা হাতে নিয়েই পড়নের জিন্সটার দিকে তাকায়। ‘আজ এতেই চলবে।’-ভেবে মানিব্যাগটা নিয়ে এক ছুটে বের হয়ে যায়।
‘গেটটা লাগিয়ে দিও’- দৌঁড়তে থাকা মেহেদীর কথাটা তার মা শুনতে পেলো বলে মনে হয় না।
মেহেদীর রিখশা ছুটে চলছে সানরাইজ প্লাজার দিকে। ‘আল্লাহ, প্লিজ আবার যেন জ্যামে না পড়তে হয়।’
আজ ওদের একটা বিশেষ দিন। মানে ওর ক্লোজ ফ্রেন্ড সারকেলের- হাসিব, দিয়াব, রুনি, পাভেল ওদের সবার। কারণ আজ ওদের ফ্রেন্ড জাহিদের প্রেমাভিষেক।
‘প্রেমাভিষেক’- শব্দচয়নটা কি ঠিক হলো? প্রেম কি দিনক্ষণ ঠিক করে আসে নাকি, যে সেদিন প্রেমিক-প্রেমিকা, হাসবেন্ড-ওয়াইফ তাদের প্রেমে অভিষিক্ত হবার দিনটা সেলিব্রেট করবে। ফুল উপহার দিয়ে বলবে, ‘আজ আমাদের ৫ম প্রেম-বার্ষিকিতে এই ৫টি গোলাপ তোমার অন্তরে জিইয়ে রেখো অনন্তকাল।’
না আসলে ব্যাপারটা তা না। জাহিদ প্রেমে পড়েছে গত বছরেই। আর ওর প্রেম হয়েছে মিগ চ্যাটিং এর মাধ্যমে। আগের দিনে পায়রা দিয়ে চিঠি আদান-প্রদানের মত ট্যাক্সট ম্যাসেজ দেয়া নেয়া করে জাহিদ আর আনিকা আপু এখন দু’জন দুজনার জন্য পাগল।
হ্যাঁ, মেহেদী জাহিদের প্রেমিকাকে আনিকা আপু বলেই ডাকে। কারণ আনিকা আপু ওদের এক ব্যাচ সিনিয়র। এ.আই.ইউ.বি. থেকে বি.বি.এ. কমপ্লিট করে একটা করপোরেট ফার্মে জব করছে। প্রথম প্রথম জাহিদ রাগ করলেও মেহেদীর ‘আপু’ বলাটা এখন কানসওয়া হয়ে গেছে।
‘না, আজ আমার বিকেলভাগ্যটা ভালই।’ সানরাইজ প্লাজার সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় মনে মনে বিড়বিড় করে মেহেদী।
‘কিরে তুই কই?’
‘এসে পড়েছি দোস্ত। তুই স্কেলেটর এর সামনে আয়, আমি ওখানে আছি।’- বলেই লাইন কেটে দেয় মেহেদী।
‘চল, বসুন্ধরা সিটিতে চল।’- মেহেদীকে দেখতে পেয়েই বলে ওঠে জাহিদ।
‘ক্যান, এখানে প্রবলেম কি? দেখনা, ওইদিকের কর্ণারে কিছু ভাল কালেকশন আছে।’
‘আরে আমি একঘন্টা ধরে দেখছি। একটাও চয়েজ হয় নাই। চল বসুন্ধরা সিটির এস্টেসিতে চল।’
‘দোস্ত, তুই কি নার্ভাস নাকি এক্সাইটেড?’- রিকশায় সিগেরেট টানতে টানতে জিজ্ঞেস করে মেহেদী।
‘না, নার্ভাস হবার কি আছে। বাট আজ প্রথম দিন তাই টাইম মেইনটেইন করার ব্যাপারে একটু কর্ণসারণ।’
‘আইসে আমার টাইম মেইনটেইন করনেওয়ালা।’- পেটে খোঁচা দিয়ে বলে মেহেদী। ‘ক্লাশে ত প্রতিদিন লেট লতিফের মত ঢুকিস্ সবার শেষে।’
‘প্রতিদিনের ক্লাশ আর আজকের দিন কি এক হলো নাকি? আর তাছাড়া ওর ইভিনিং এম.বি.এ. এর ক্লাশ প্রেশেন্টেশন দিয়ে আসবে। ওকে শুধু শুধু ওয়েট করানোর কোন মানে হয়না।’
‘ভাইরে, এত বুঝিস তোরা দুজনরে? ফোনে কথা বলেই এত প্রেম!! আজকের পর তো মনে হয় তোদের দু’জনের প্রেম শিরীন- ফরহারদরেও পাশ কাটাইবো।’- হাসতে হাসতে বলে মেহেদী। ‘কিন্তু ওর সাথে দেখা হবার পর, সরাসরি কথা বলার পর যদি ওর প্রতি তোর ধারণা পাল্টে যায় বা রিয়েল লাইফের আনিকা আপু যদি তার কল্পনার ভার্চুয়াল জাহিদের সাথে তোকে না মেলাতে পারে- তখন কি করবি?’
‘সবই বিশ্বাসরে দোস্তো, এখন আর ওসব চিন্তা করে কোন লাভ নেই। তোর সাথে তানিয়ার যদি এমন কোন রিলেশন ডেভেলপ করে তখন তুইও বুঝবি ব্যাপারটা।’
তানিয়া চিটাগাং মেডিকেলে পড়ে। মেহেদীর সাথেও তানিয়ার পরিচয় মিগ চ্যাটের মাধ্যমেই। এখন মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়। মেয়েটাকে ভালই লাগে মেহেদীর। কিন্তু এসব ব্যাপারে মেহেদী খুবই প্র্যাক্টিক্যাল। জাহিদের মত ফোনে ফোনে পাগল করা প্রেম মেহেদী হয়তো করবে না।
দোস্তো, যে জায়গায় ইমোশন নাই, সে যায়গায় প্রেমও নাই।’- জাহিদের কথা স্ট্রংলি অপোজ করে মেহেদী। ‘সো তানিয়া উইল রিমেইন অন আদার সাইড অফ দ্যা ফোন ইন ফিউচার অলসো।’
‘কে বলসে আমার প্রেমে ইমোশন নাই।’- সামনে জ্যামের দিকে তাকিয়ে মুখে বিরক্তি নিয়ে বলে জাহিদ।
‘হমম, ঠিকই তো বলসি।’- বলে ওঠে মেহেদী। ‘আনিকা আপু হাসলে তার চোখ তুই দেখতে পাস্? কাদলে চোখের পানি মুছতে পারিস্? রাগলে চোখের অভিব্যাক্তি দেখতে পারিস্? পারিস্ না। তাহলে ইমোশন ক্যামনে আসে?’
জাহিদ এবার আর কোন জবাব খুঁজে পায় না। এসব ব্যাপারে মেহেদীর ফিলোসোফি আসলেই স্ট্রং।
‘চাচা, সামনে বামে রাখো।’- সিগারেট ফেলে দিয়ে রিকশাওয়ালাকে বলে মেহেদী। ‘হেটে রাস্তা পার হতে হবে।’
ওরা দুজন সোজা এস্টেসির শোরুমে ঢোকে। টি-শার্ট কর্ণারে যেয়ে মেহেদী হাতড়ে বেড়ায় জন্য বেস্ট কম্বিনেশনটা খুঁজে পেতে।
জাহিদের এখন দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোন কাজ নেই। কারণ ড্রেস চুজিং এর ক্ষেত্রে মেহেদী এক কথায় অসাধারণ।
হঠাত জাহিদের ফোন বেজে ওঠে। কল এটেন্ড করে জাহিদ-
‘হ্যাঁ, বলো।’
…………….
‘ক’টায় শেষ হবে তোমার?’
……………..
‘ও’কে আমি সাড়ে সাতটার আগেই থাকবো।’
…………….
‘বাই’
‘নিশ্চয়ই আনিকা আপু।’ হঠাৎ মেহেদীর গলা শুনে চমকে পেছনে তাকায় জাহিদ। মেহেদীর হাতে অ্যাশ-ব্লু’র কম্বিনেশনের খুব সুন্দর একটা টি-শার্ট আর মুখে সেই ট্রেডমার্ক হাসি।
‘মামা আমি সবই শুনসি। আনিকা আপুর গলা আগেও ভালো লাগতো, বাট আজকে বেশী জোশ লাগলো। আমি শিওর আনিকা আপু তার কন্ঠের চেয়েও বেশী সুন্দরী হবে।’- হাসতে হাসতেই বলে মেহেদী।
‘সুন্দর অসুন্দর যাই হোক, ওর মন আমার কল্পনার সাথে মিলে গেলেই হবেরে দোস্তো।’- হাসি ফিরিয়ে দিয়ে বলে জাহিদ।
‘উইশ ইউ অ্যাল দ্যা বেস্ট। যা ট্রায়াল রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আয়। শার্টটা তোর জিন্সের সাথে দারুণ মানাবে। পুরাই ম্যানলি। আর এটা আমার পক্ষ থেকে তোর এই শুভ দিনে ছোট্ট একটা গিফট। আমি কাউন্টারের সামনে আছি।’
জাহিদ জানে মেহেদীকে টাকা সেধে কোন লাভ নেই, ও আগে থেকেই এটা প্ল্যান করে রেখেছিলো।
‘দোস্তো, ছ’টা তো প্রায় বাজে। যাবি কিভাবে বেইলী রোড?’- স্কেলেটর দিয়ে নামতে নামতে জিজ্ঞেস করে মেহেদী।
‘ট্যাক্সি করেই চলে যাই।’- দ্রুত বলে জাহিদ, যেন জবাবটা ওর তৈরীই ছিলো।
‘ও’কে, আমি ঠিক করে দিচ্ছি।’- বলেই রাস্তার দিকে চলে যায় মেহেদী।
প্রায় সাথে সাথেই কিভাবে যেন ম্যানেজ করে ফেলল একটা ট্যাক্সি। অথচ ট্রাফিক লোড চিন্তা করে ডেস্টিনেশন সিলেক্ট করা আধুনিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের বেইলী রোডের চরম জ্যামের দিকে যেতে রাজি হবার কোন কারন নেই।
‘থ্যাংকস দোস্তো।’
‘ফ্রেন্ডশিপে কোন থ্যাংকস নাই, জানিস না। নে তাড়াতাড়ি ওঠ।’ জাহিদকে গাড়িতে প্রায় ঠেলে ঢুকিয়ে দেয় মেহেদী।
জাহিদ আর কোন কথা বলে না।
‘গুড লাক দোস্তো।’- চেঁচিয়ে বলে মেহেদী। পান্থপথ রোড ধরে ছুটতে থাকা ক্যাবে জাহিদ এই উইশ শুনতে পায় কিনা কে জানে।
মেহেদীর এখন কোন কাজ নেই। আর তাছাড়া কাল ওর ভারসিটির ওফ ডে। তাই রাস্তা ধরে আপন মনে হাটতে থাকে সে। কিছুদিন আগে পড়া একটা রিসার্চ পেপারের কথা মনে পড়ে যায়।– মিতশুবিশির রিসারচ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের ডিরেক্টর এর তথ্য উপাত্ত বিশ্নেষণ অনুসারে ২০৫০ সালের মধ্যে রোবোট প্রায় সকল দিক দিয়ে মানুষের প্রায় সমকক্ষ হয়ে উঠবে।
মেহেদীর কেন যেন মনে হতে লাগলো আসলে ঘটনা ঘটবে ঠিক এর উল্টো। মেহেদীর মনে হতে লাগলো ২০৫০ সালের আগে মানুষই পৌঁছে যাবে রোবোটের কাছাকাছি।
গত সপ্তাহেই মেহেদীর ছোটোখালার বিয়ে হয় মোবাইল ফোনে। ছেলে জার্মানীতে কার্বন ন্যানো টিউবের উপর পি.এইচ.ডি. করছে। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। ছেলের বাবা-মা জার্মানীতেই থাকে আগামী মাসে এসে খালাকে নিয়ে যাবে। তখন জাস্ট একটা রিসেপশন পার্টি হবে।
মেহেদী মনে মনে ভাবে আজকাল তো অনেকেই টেস্টটিউব বেবী নিচ্ছে। শুক্রাণু-ডিম্বাণু আলাদা একটা কন্ট্রোল এনভায়রনমেন্টে মিট করিয়ে পরে ওটা জরায়ুতে স্থাপন করা হচ্ছে। ক’দিন পর হয়তো কোন মেয়েই দশ মাসের এই কষ্টটাও করতে চাইবে না। হাসবেন্ড-ওয়াইফ কোন ফ্যাক্ট্রিতে যেয়ে বলবে আমার ছেলে বা মেয়ে চাই, সাদা বা শ্যামলা চাই। তখন তাদের ডি.এন.এ. স্যাম্পল রেখে দেয়া হবে। কয়েকদিন পর দরজা খুলে দেখবে ফ্যাক্ট্রি নার্সের কোলে হাসছে একটি শিশু। বিল পরিশোধ করে ওই সন্তানের মালিকানা কিনে নেবে বাবা-মা। এটাই হয়তো হবে ২০৫০ সালের ভার্চুয়াল জগত।
ধূর, এগুলো কি ভাবছে মেহেদী। আজ বুঝি সিগারেটের নিকোটিন খুব বেশী এফেক্ট করেছে ব্রেইনে।
না, সে আর কিছুই ভাবতে চায় না। তার চারপাশের পৃথিবী এখনো অনেক বাস্তব। তার বন্ধু-বান্ধব বাস্তব। তার আপনজন বাস্তব। সে এই বাস্তব জগতেই থাকবে।
সিগারেট ফেলে দিয়ে রিকশা নেয় মেহেদী। ছুটন্ত রিকশায় হেমন্তের হিমেল হাওয়ায় শীতের প্রথম আঁচড় লাগে মেহেদীর গায়ে।
‘মামা, কয়টা বাজে?’- রিকশাওয়ালার কথা শুনে সম্বিত ফিরে পায় মেহেদী। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে পৌনে আটটা। হঠাৎ মনে পড়ে সাড়ে সাতটা বাজেতো জাহিদ আর আনিকা আপু দু’জনের প্রথম দেখা হবার কথা। তবে কি হয়ে গেছে প্রথম চোখে চোখ রাখা? আনিকা আপু কি জাহিদকে আবার বলবে ওই একই কথা? লাজুক জাহিদ কি তাকাতে পারবে আনিকা আপুর চোখের দিকে? দীর্ঘ এক বছরের জাহিদ-আনিকার ভার্চুয়াল রিলেশেন কি রিয়েল লাইফেও একই ছন্দময় হবে?
মেহেদীও জানে না এ উত্তর।
বদলাতে থাকা এ পৃথিবীর জমাট বাধতে থাকা রহস্য সমাধানের ফিলোসোফি মেহেদীর জানা নেই।
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now