বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা
আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ
X
বাবাকে ডিকশনারি প্রায়ই পড়তে দেখা যায়। তখন তাঁর মুখ থাকে হাসি-হাসি। এই সময় যে কেউ তাঁকে দেখলে মনে করবে তিনি রোমান্টিক কোনো উপন্যাস পড়ছেন।
তিনি টেলিভিশন দেখেন না, মাঝেমধ্যে ইংরেজি খবর পাঠ দেখেন। খবর পাঠ শেষ হওয়া মাত্র বিরক্ত মুখে বলেন, ভুল উচ্চারণ। থাবড়ানো দরকার। ‘থাবড়ানো দরকার’ তাঁর প্রিয় বাক্য। সবাইকে তিনি থাবড়াতে চান। রিকশাওয়ালা দুই টাকা বেশি নিলে তিনি বিড়বিড় করে বলবেন, থাবড়ানো দরকার।
বাবা স্বাস্থ্যের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল। প্রতিদিন ভোরবেলা তাঁকে উঠানে ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট হাঁটতে দেখা যায়। ২০ মিনিট পার হলে ১০ মিনিট ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করেন। হণ্ঠন এবং এক্সারসাইজের সময়ের হিসাব রাখেন মা। তিনি বারান্দার মাঝখানে হাতঘড়ি নিয়ে বসে থাকেন। ২০ মিনিট পার হওয়ার পর বলেন, Time out. ১০ মিনিট ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজের পর আবার বলেন Time out. বাবা চান মা তাঁর সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন। মা Time out ছাড়া আর কোনো ইংরেজি বলেন না।
খাবার-দাবার বিষয়ে বাবাকে উদাসীন মনে হয়, তবে কিছু বিশেষ খাবার তাঁর অত্যন্ত পছন্দ। এই খাবারগুলোর রন্ধনপ্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল। শুধু একটি উল্লেখ করি। কলার মোচার বড়া। কলার মোচা প্রথমে ভাপে সেদ্ধ করতে হয়। তারপর ডিম মেশানো বেসনে মেখে অল্প আঁঁচে ভাজতে হয়।
বাবার বিনোদনের ব্যাপারটা বলি। মাঝেমধ্যে তাঁকে মোবাইল ফোনে একটি গেম খেলতে দেখা যায়। এই খেলায় সাপকে আপেল, আঙুর খাওয়াতে হয়। এসব সুখাদ্য খেয়ে সাপ মোটা হয়। সাপ ঠিকমতো খাদ্য গ্রহণ না করলে বাবা চাপা গলায় বলেন থাবড়ানো দরকার।
মা
ক্লাস টেনে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে মার বিয়ে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক বিয়ের রাতে বাবা তিনটা বিড়াল মেরে ফেলেন। স্ত্রীর ইংরেজি জ্ঞান পরীক্ষার জন্যে তিনটি প্রশ্ন করেন। কোনোটার উত্তরই মা দিতে পারেননি। প্রশ্নগুলো—
বাবা: ‘Hornet শব্দের মানে কী?’
মা: (ভীত গলায়) জানি না।
বাবা: Wood Apple কী?
মা: (আরও ভীত) জানি না।
বাবা: Daily life মানে কী?
মা: (ফোঁফাতে ফোঁফাতে) জানি না।
মা পরে আমাকে বলেছেন Daily life মানে তিনি জানতেন। ভয়ে মাথা আউলিয়ে গিয়েছিল।
বাবা: তুমি তো কিছুই জানো না, ফাজিল মেয়ে। তোমাকে থাবড়ানো দরকার।
বিয়ের রাতে মা যে ভয় পেয়েছিলেন সেই ভয় এখনো ধরে রেখেছেন। বাবাকে তিনি একজন মহাজ্ঞানী রাজপুত্র হিসেবে জানেন। তাঁর সামনে সব সময় নতজানু হয়ে থাকতে হবে, এটি তিনি বিধির বিধান হিসেবেই নিয়েছেন।
মা বাবাকে ভয় পান এবং প্রচণ্ড ভালোবাসেন। ভয় এবং ভালোবাসার মতো সম্পূর্ণ বিপরীত আবেগ একসঙ্গে ধরা কঠিন কিন্তু মা ধরেছেন। বাবার প্রতি মার ভালোবাসার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
বাবাকে তার ছাত্রছাত্রীরা মুরগি ডাকে এই খবর প্রথম শুনে তিনি মাথা ঘুরে মেঝেতে পড়ে কপালে ব্যথা পেয়েছিলেন। মাথায় পানি ঢেলে মোটামুটি সুস্থ করার পর মার প্রথম বাক্য। টগর, সত্যি তোর বাবাকে সবাই মুরগি ডাকে?
ভাইয়া বলল, মুরগি সবাই ডাকে না, কেউ কেউ ডাকে মুর্গ, মুরগির চেয়ে মুর্গ শব্দটা ভালো। মুর্গ শুনলে মাথায় আসে মুর্গ মুসাল্লাম। মুর্গ মুসাল্লাম একটি উচ্চমানের মোঘলাই খানা। কাউকে মুর্গ ডাকা তার প্রতি সম্মানসূচক।
রূপবান পুরুষদের স্ত্রীরা কুরূপা হয় এটা নিপাতনে সিদ্ধ। মা নিয়মের ব্যতিক্রম। তিনি শুধু যে রূপবতী তা না, তাঁর বয়স মোটেই বাড়ছে না। তাঁকে এখনো খুকি মনে হয়। আমেরিকান সায়েনটিস্টরা খবর পেলে মার ‘জিন’ নিয়ে গবেষণা করে কিছু বের করে ফেলত।
মা অত্যন্ত অলস প্রকৃতির। সকাল ১০-১১টার আগে কখনো বিছানা থেকে নামেন না। তিনি অনেক ধরনের রান্না জানেন কিন্তু রাঁধেন না।
মার একটি বিশেষ অর্জন বলা যেতে পারে। স্কুলে ক্লাস এইটে পড়ার সময় মা শরৎচন্দ্রের দেবদাস উপন্যাস পুরোটা মুখস্থ বলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। দেবদাস এখনো তাঁর মুখস্থচর্চার মধ্যে আছে। প্রায়ই তাঁকে দেবদাস হাতে নিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়।
টগর ভাইয়া
খুব ভালো রেজাল্ট করে বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাস করেছে। তাকে বুয়েটে লেকচারার পদে যোগ দিতে বলা হলো। ভাইয়া বলল, আমি ‘চিৎকারক’ হব না। লেকচারার হওয়া মানে ক্লাসে চিৎকার দেওয়া এর মধ্যে আমি নই।
মা বললেন, তাহলে কী হবি?
ভাইয়া বলল, কিছুই হব না। চিন্তা করে করে জীবন পার করে দেব।
মা বললেন, কী সর্বনাশ!
ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে বলল, সর্বনাশের কিছু না মা। এই পৃথিবীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছেন, যাঁরা কোনো কাজকর্ম ছাড়া শুধু চিন্তা করে জীবন পার করে দিয়েছেন। যেমন গৌতম বুদ্ধ।
তুই গৌতম বুদ্ধ হবি?
গৌতম বুদ্ধ হওয়া যায় না। আমি অন্য কিছু হব।
অন্য কিছুটা কী?
চট করে তো বলা যাবে না। ভেবেচিন্তে বের করতে হবে।
প্রায় তিন বছর হয়ে গেল ভাইয়া চিন্তা করে যাচ্ছে।
বেশির ভাগ সময় বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে তাকে পা নাচাতে দেখা যায়। এই সময় তার চোখ বন্ধ থাকে। ভাইয়া কখন জেগে আছে, কখন ঘুমাচ্ছে বোঝা যায় না। ঘুমের মধ্যেও সে পা নাড়তে পারে।
গতকাল রাতে বাবার সঙ্গে ভাইয়ার কথা হয়েছে। বাবা বললেন, তোমার মার কাছে শুনলাম তুমি গৌতম বুদ্ধ হবে।
ভাইয়া শুয়ে ছিল। শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বলল, তোমরা সবাই যদি চাও তাহলে গৌতম বুদ্ধের মতো কেউ হওয়ার চেষ্টা করতে পারি। অনেক দিন হলো পৃথিবীতে নতুন কোনো ধর্ম আসছে না। নতুন ধর্ম আসার সময় হয়ে গেছে।
বাবা ঝিম ধরে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। ভাইয়াও বসে ঘন ঘন হাই তুলতে লাগল। এক সময় বাবা উঠে চলে গেলেন। বিড়বিড় করে কিছু একটা বললেন। কী বললেন পরিষ্কার বোঝা গেল না। মনে হয় থাবড়ানো বিষয়ে কিছু বললেন।
ভাইয়ার ঘরের দেয়ালে তার মাথার কাছে আইনস্টাইনের একটা ব্ল্যাক এক হোয়াইট ছবি টাঙানো। ছবিতে জিভ বের করে আইনস্টাইন ভেঙাচ্ছেন। ছবির নিচে ভাইয়া লিখে রেখেছেন—The great fool.
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন
গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now