বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৩

"সাইমুম সিরিজ" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X ৩ পোর্ট ব্লেয়ারের লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে বাইরের লবীতে এসে দাঁড়াল আহমদ মুসা। লাউঞ্জের এক পাশের দেয়ালে একটা বিশাল বোর্ডে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র। আহমদ মুসা একটু এগিয়ে মানচিত্রটির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দেখল, শুধু আন্দামান-নিকোবরের মানচিত্র নয়, ইনসেটে পোর্ট ব্লেয়ার শহরেরও একটা মানচিত্র আছে। আন্দামান নিকোবরের মানচিত্রে শহর, গ্রাম, পাকা রাস্তা, কাঁচা রাস্তা, পায়ে চলার রাস্তা, ফেরী যোগাযোগ, পাহাড়, বন, ঝরনা, হ্রদ, দ্বীপসমূহের অবস্থান ইত্যাদি সুন্দরভাবে চিহ্নিত। আর পোর্ট ব্লেয়ারের মানচিত্র রাস্তা, এলাকার নাম, হোটেল, সরকারী অফিস ও দর্শনীয় স্থানগুলোর অবস্থান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সবকিছুই রয়েছে। আহমদ মুসা খুব খুশি হলো। সে ইন্টারনেট থেকে যে মানচিত্র যোগাড় করেছে তা এত বিস্তারিত নয়। আহমদ মুসা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল মানচিত্র। আপাতত পোর্ট ও এর আশে-পাশের অঞ্চল সম্পর্কে একটা ধারণা সে মাথায় গেঁথে ফেলতে চায়। আহমদ মুসা অনুভব করল তার দুপাশে কিছু লোক এসে দাঁড়াল। তাকাল আহমদ মুসা। দেখল, তরুণ ও যুবক বয়সের কয়েকজন। তাদের পরনে ইউনিফর্ম। বুঝল, তারা ট্যাক্সি চালক। আহমদ মুসাকে বিদেশী ট্যুরিষ্ট ভেবে ছুটে এসেছে। আহমদ মুসা তাদের দিকে চাইতেই হাস্যোজ্জ্বল একজন তরুণ তড়িঘড়ি করে ভাঙা ইংরেজীতে বলে উঠল, ‘স্যার, আমার গাড়ি একেবারে নতুন। এসি আছে। ভাড়ার মিটার একদম নিখুঁত।’ তার কথার মধ্যেই অন্যেরাও একসাথে কথা বলা শুরু করল। আহমদ মুসা হাত তুলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘ও আগে কথা বলেছে, ওর সাথে কথাটা শেষ করি, কেমন?’ সবাই চুপ করল। আহমদ মুসা তাকাল তরুণটির দিকে। বলল, ‘তোমার গাড়ির বিবরণ পছন্দ হয়েছে, কিন্তু তুমি কেমন তার বিবরণ দাওনি।’ তরুণটি সলজ্জ হাসল। বলল, ‘স্যার, আমাকে তো দেখতেই পাচ্ছেন?’ ‘কিন্তু তুমি কেমন তাতো দেখতে পাচ্ছি না।’ আহমদ মুসা বলল। তরুণটির মুখে সলজ্জ বিব্রতভাব আরও গভীর হলো। বলল, ‘স্যার, ওটা মুখে বলার নয়, কাজে প্রমাণ হয়।’ তরুণটির উত্তরে খুশি হলো আহমদ মুসা। বলল, ‘বা! তুমি তো খুব বুদ্ধিমান ছেলে!’ আহমদ মুসা কথা শেষ করতেই কার পার্কিং এলাকা থেকে একটা চিৎকার ভেসে এল, ‘হাইজ্যাকার, হাইজ্যাকার, বাঁচাও, বাঁচাও।’ আহমদ মুসা দ্রুত তাকাল ওদিকে। দেখল, তিনজন লোক একজনকে জোর করে একটা মাইক্রোতে তুলছে। লোকটির গায়ে শেরওয়ানি। চমকে উঠল আহমদ মুসা। সে নিশ্চিত, লোকটি ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহ। আহমদ মুসা দেখতে পেল, কার পার্কিং এর বিপরীত প্রান্তে দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানো। একজন মানুষের আর্ত চিৎকারকে তারা ভ্রুক্ষেপই করছে না। আহমদ মুসা দ্রুত তাকাল তরুণটির দিকে। বলল, ‘যাবে তুমি? চল। দৌড়।’ বলে আহমদ মুসা দ্রুত হাঁটতে লাগল কার পার্কিং-এর দিকে। তরুণটিও দৌড় দিল। বলল, ‘স্যার আপনি আসুন। আমাদের ভাড়া গড়িগুলো বাইরের পার্কিং-এ আছে। আমি নিয়ে আসছি গাড়ি।’ আহমদ মুসা যখন তরুণটির গাড়িতে উঠল, ‘তখন ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহকে হাইজ্যাক করা কারটা অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। পোর্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়া রাস্তাটা তীরের মত সোজা বলে গাড়িটা চোখের আড়ালে যেতে পারেনি। আহমদ মুসা ড্রাইভার তরুণটির পাশের সিটে বসেছিল। তরুণটিকে লক্ষ্য করে সে দ্রুত কণ্ঠে বলল, ‘ঐ মাইক্রোটার পিছু নাও। গাড়িটাকে হারানো চলবে না।’ ‘সাংঘাতিক ঘটনা স্যার। আমি এ ধরনের ঘটনা আন্দামানে আর দেখিনি। একজন লোককে হাইজ্যাক করল, আর পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। স্যার, লোকটা কি আপনার পরিচিত?’ বলল ড্রাইভার তরুণটি। ‘পরিচিত নয়, আসাবর সময় জাহাজে দেখা হয়েছিল।’ বলল আহমদ মুসা। ‘আপনি কি করতে চান স্যার। তাকে উদ্ধার করবেন? তাহলে তো মারামারি হবে?’ ‘মারামারিকে ভয় কর নাকি?’ ‘ভয় করি না। কিন্তু আমার চিন্তা গাড়ি নিয়ে। অনেক কষ্টে গাড়িটা করেছি স্যার।’ তরুণটি উদ্বেগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল। কথা শেষ করেই ছেলেটি চিৎকার করে উঠল, ‘স্যার, মাইক্রোটি শহর ছেড়ে সাউথ আন্দামান হাইওয়ের দিকে যাচ্ছে।’ সাউথ আন্দামান হাইওয়েটি পোর্ট ব্লেয়ার থেকে বেরিয়ে দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্ত হয়ে লেক ব্লেয়ার ঘুরে সাউথ আন্দামান দ্বীপের উত্তরাংশে বহুদুর পর্যন্ত এগিয়ে গেছে। এই হাইওয়ে ধরে সাউথ আন্দামানের কালিকট, ওলিগঞ্জ, হায়বারতাবাদ, উইমবারলিগঞ্জ শহরগুলোতে কিংবা তার কাছাকাছি যাওয়া যায়। ‘শোন, গাড়িটার সামনে গিয়ে আটকাবার চেষ্টা করার দরকার নেই। গাড়িটাকে অনুসরণ করে, গাড়িটা যে পর্যন্ত যেতে চায়, আমরা সে পর্যন্ত যাব।’ ‘ঠিক আছে স্যার।’ ‘তোমার নাম কি?’ ‘কোন নাম বলব স্যার, ফ্যামিলী, না অফিসিয়াল?’ ‘তোমার নাম বল। দুটো মিলেই তো একটা পূর্ণ নাম হয়।’ আহমদ মুসা বলল। ‘কিন্তু আমার দুটো নামই আলাদা ও পূর্ণ নাম।’ ‘দুই নামই বল।’ ‘দুই নাম বলা যাবে না স্যার। ফ্যামিলী নাম শুধু ফ্যামিলীর জন্যে। আমার অফিসিয়াল নাম হলো গোপী কিষাণ গংগারাম।’ ‘ঠিক আছে গংগারাম। একটু স্পিড বাড়াও। সামনে রাস্তা মনে হচ্ছে আঁকা বাঁকা। কাছাকাছি না থাকলে হারিয়ে যাবে গাড়িটা।’ ‘ঠিক স্যার। সামনে রাস্তা খুবই জিগজ্যাগ।’ বলে সে গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দিল। ঠিক এ সময়ে এক বাঁকে গাড়িটা আহমদ মুসাদের চোখের আড়ালে চলে গেল। গংগারাম বলল, ‘স্যার, সামনের ঐ বাঁক না পেরুলে গাড়িটা চোখে পড়বে না। কিন্তু আমরা যখন ঐ বাঁক পার হবো, তখন ঐ গাড়িটা আরেকটা বাঁকের আড়ালে চলে যাবে।’ ‘গাড়ির স্পিড বাড়াও গংগারাম। গাড়িটাকে ধরতে হবে।’ গংগারামের গাড়ির স্পিডোমিটারের কাঁটা লাফ দিয়ে ৬০ থেকে ৯০ তে গিয়ে উঠল। এরপর কাঁপতে কাঁপতে তা উঠল একশ’তে। ঠিক আছে গাড়ির স্পিড এখানে রাখ গংগারাম। নিশ্চয় ওই গাড়ি আমাদের দেখতে পায়নি। সুতরাং ওরা এই ঝুঁকিপূর্ণ স্পিডে যাবে না। দুতিনটা বাঁক পার হবার পর গংগারামের গাড়িটা একটা সোজা রাস্তার মুখে এসে দাঁড়াল। কিন্তু সামনে কোন গাড়ি তারা দেখতে পেল না। সঙ্গে সঙ্গে গংগারাম বলে উঠল, ‘স্যঅর, গাড়ি নিশ্চয়ই সামনে যায়নি। আমার ছোট নূতন গাড়ি যে স্পিডে এসেছে এই আঁকা-বাঁকা রাস্তায়, বড় মাইক্রোটা ঐ স্পিডে যাওয়া অসম্ভব। সুতরাং সামনের লম্বা পথটায় তাকে দেখা পাবারই কথা। দেখা যখন যাচ্ছে না, তখন আমার মনে হয় পেছনে কোথাও ওরা লুকিয়েছে।’ ‘ঠিক বলেছ গংগারাম। গাড়ি ঘুরাও।’ গংগারাম গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলতে শুরু করল। ‘গংগারাম, মাইক্রোটা চোখের আড়ালে যাবার পর পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা পথে আমরা যতটা এগিয়েছি তার মধ্যে দুপাশে সরে পড়ার কোন রাস্তা আছে?’ বলল আহমদ মুসা। ‘না স্যার, এরকম রাস্তা নেই। তবে পাহাড়ের গলি আছে কয়েকটা যা দিয়ে গাড়িও চলতে পারে।’ ‘দ্রুত আগাও গংগারাম। গলিগুলো চেক করতে হবে।’ আহমদ মুসা বলল। গাড়ির স্পীড বাড়ল। ছুটে চলল গাড়ি সামনের দিকে। এক স্থানে এসে গাড়ির গতি স্লো হয়ে গেল। গংগারাম বলল, ‘স্যার ডান দিকে একটা প্রশস্ত করিডোর আঁকা বাঁকা হয়ে পূর্বদিকে চলে গেছে।’ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। ‘স্যার, এখানেই গিরি করিডোরটা। ওদিকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেব?’ বলল গংগারাম। সামনের রাস্তাটার উপর আহমদ মুসার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। এক টুকরো কাদামাটি তার নজরে পড়ল। ভ্রুকুঞ্চিত হলো আহমদ মুসার। দ্রুত নামল গাড়ি থেকে। গাড়ির সামনে গিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখল কাদামাটির ছোট্ট খ-টির উপর। দেখেই বুঝল মাটিটি কোন গাড়ির চাকা থেকে খসে পড়া। কাদামাটিটা একদম তাজা। আশে-পাশে নজর বুলাল। চোখে পড়ল কংক্রিটের রাস্তার উপর গাড়ির ভেজা চাকার শুকিয়ে ওঠা অস্পষ্ট দাগ। কংক্রিটের রাস্তার পাশেই মাটির উপরের ঘাস দুমড়ানো মুচড়ানো। ঘাসের উপরের এই দাগ অনুসরণ করে আহমদ মুসা তাকাল পূর্ব দিকে। দেখল সামনে একটা প্রশস্ত গিরিপথ। গংগারাম এসে দাঁড়িয়েছে আহমদ মুসার পাশে। ‘কি দেখছেন স্যার?’ জিজ্ঞাসা গংগারামের। ‘সামনে কোন জলাভূমি আছে গংগারাম?’ গংগারামের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞাসা করল আহমদ মুসা। ‘স্যার, এখান থেকে সাগর খুব কাছে। এই গিরিপথটা এঁকে বেঁকে সাগর পর্যন্ত নেমে গেছে। সামনে কোন জলাভূমি নেই। তবে পাথে ঝরনা ধরনের পানির ধারা আছে।’ বলল গংগারাম। ‘সেটা কতদূর?’ ‘কাছে। সামনের টিলার পরেই। কি হয়েছে স্যার?’ কেন জিজ্ঞাসা করছেন?’ আহমদ মুসা গংগারামকে কাদা খ-, রাস্তায় গাড়ির চাকার ভিজা দাগ এবং দলিত-মথিত ঘাস দেখিয়ে বলল, ‘হাইজ্যাকার গাড়িটা নিয়ে এদিকে লুকিয়ে ছিল, এইমাত্র চলে গেছে মনে হয়।’ গংগারামও ঝুঁকে পড়ে চাকার দাগ পরীক্ষা করল। বলল, ‘মনে হয় স্যার, আপনি ঠিকই বলেছেন, এটা ঐ মাইক্রো গাড়িরই চাকার দাগ।’ ‘তাহলে আর দেরি নয়, গঙ্গারাম এস। গাড়িটাকে ফলো করতে হবে।’ বলে আহমদ মুসা ছুটল গাড়ির দিকে। গংগারামও দৌড় দিয়ে গাড়িতে ফিরে এল। গাড়ি ষ্টার্ট দিতে দিতে বলল, ‘আমরা দশ মিনিটের পথ সামনে চলে গিয়েছিলাম, ফিরতে লেগেছে দশ মিনিট। মাইক্রো এতক্ষণ লুকিয়ে থাকার কথা নয়। সুতরাং স্যার আমি আশাবাদী নই যে, মাইক্রোটির দেখা আমরা পাব।’ গংগারামের কথাই সত্য হলো। আহমদ মুসারা গাড়ি নিয়ে আবার পোর্ট পর্যন্ত এল। এ ছাড়াও আরও এদিক-সেদিক ঘুরল। কিন্তু মাইক্রোটির দেখা তারা পেল না। আহমদ মুসা হতাশভাবে হোটেলে এল। হোটেলটা গংগারামই চয়েস করে দিয়েছে। বলেছিল, ‘খাওয়া থাকায় দামের দিক দিয়ে সেরা না হলেও পোর্ট ব্লেয়ারে এটাই সেরা হোটেল স্যার। মালিক খুব ভাল লোক, পোর্ট ব্লেয়ারের আদি মানুষ। বসবাসের জন্যে ভারতের অন্য এলাকা থেকে আসা নয়। পোর্ট ব্লেয়ারে আসা মানুষকে তিনি মেহমান মনে করেন। ব্যবসায় করেন, মানুষের পকেট কাটেন না।’ ‘তুমি ট্যাক্সি ক্যাব চালাও। তাঁকে এমন ঘনিষ্ঠভাবে জান কি করে? তিনি বুঝি খুব জনপ্রিয় লোক?’ জিজ্ঞাসা করেছিল আহমদ মুসা। ‘ভাল লোককে সবাই ভাল বলে জানে, কিন্তু অনেকে না মানতেও পারে।’ বলেছিল গংগারাম। হোটেলের দুতলার সুন্দর অবস্থানে একটা ঘর পেয়েছিল আহমদ মুসা। পূবের জানালা খুললে বিল্ডিং-এর দেয়ালে আছড়ে পড়া পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ শোনা আর দেখা যায় আন্দামান সাগরের অথৈ নীল জল। আর উত্তরের জানালা খুললে নিচেই সুন্দর বাগান নজরে পড়ে। আহমদ মুসা ফজরের নামাজের পর গিয়ে দাঁড়িয়েছিল পূবের জানালায়। আন্দামান সাগরের শান্ত নীল পানির দিকে তাকিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল। এই গোটা আন্দামান ছিল একদিন জেলখানা। এই সাগর পথেই অসহায় বন্দীদের আনা হতো এই জেলখানায়। এই বন্দীদের মধ্যে ছিল সুলতান-শাহজাদা, রাজা-রাজপুত্র, বিচারক-ক্রিমিনাল, মওলানা-মুর্খ, রাজবন্দী-ডাকাত সবাই। আহমদ মুসার এই আপন-ভোলা অবস্থা কতক্ষণ থাকতো কে জানে! কিন্তু চোখের উপর রোদের সরাসরি ছোবল তার সম্বিত ফিরিয়ে আনল। আহমদ মুসা জানালা থেকে সরে এল। জায়নামাজ হিসাবে ব্যবহৃত সফেদ কাপড় খ-টি মেঝে থেকে তুলে গুছিয়ে টেবিলের একপাশে রাখল এবং টেবিল থেকে ক্ষুদ্র কুরআনটি তুলে নিয়ে ব্যাগে পুরল। ব্যাগটি লাগেজ কেবিনে রাখতে গিয়ে জানালা দিয়ে বাগানটি দেখতে পেল আহমদ মুসা। পর্দা পুরোটা গুটিয়ে জানালায় গিয়ে দাঁড়াল আহমদ মুসা। সুন্দর, পরিচ্ছন্ন বাগান। ফুলের গাছ মাঝে মাঝে থাকলেও পরিকল্পিত ফলের গাছই বেশি। আন্দামানে সমভূমির পরিমাণ কম বলে সমভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহারে আন্দামানীরা যতœবান। বাগানের উত্তর প্রান্তের একটা ছোট্ট স্থাপনা আহমদ মুসার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা দশ ফুট আয়তাকার ক্ষেত্রটি দুফুটের মত উচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। চারটি খুঁটির উপর দাঁড়ানো একটা টিনের চালা ক্ষেত্রটির উপর দাঁড়িয়ে আছে। ‘ওটা কি কবর?’ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশ্নটি বেরিয়ে এল আহমদ মুসার মুখ থেকে। প্রশ্নটার রেশ আহমদ মুসার মন থেকে মিলিয়ে না যেতেই সে দেখতে পেল এক দীর্ঘাঙ্গ সৌম্যদর্শন বৃদ্ধ একটা গাছের ওপাশ দিয়ে কবরের পাশে এসে দাঁড়াল। কবরটা ঘুরে সে পূর্ব পাশে চলে গেল। কবরকে পাশে রেখে সে পশ্চিমমুখী হয়ে দাঁড়াল। মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর তার দুটি হাত উপরে উঠল। দোয়া করছে বৃদ্ধ। সন্দেহ নেই কবরবাসীর জন্যে সে দোয়া করছে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিল আহমদ মুসা দৃশ্যটা। বিস্ময়ও এসে তার মনকে আচ্ছন্ন করেছে। বুঝাই যাচ্ছে বাগানটা হোটেলের অংশ। হোটেলের বাগানে কবরটাকে এমন পরিপাটি করে রাখা কেন? হোটেলের মালিক কি কোন মুসলিম কেউ? সৌম্যদর্শন ঐ বৃদ্ধটি কে? হোটেলের কেউ? দরজায় নক হলো। ভাবনায় ছেদ পড়ল আহমদ মুসার। দরজার দিকে এগুলো আহমদ মুসা। দরজায় পৌছে বাইরে কে তা দেখার জন্যে ডোর ভিউ-এ চোখ রাখল। বাইরে কাউকে দেখতে পেল না। কে তাহলে নক করল? দ্রুত দরজা খুলল আহমদ মুসা। দরজার গোড়ায় খবরের কাগজ পড়ে থাকতে দেখে মনে মনে হেসে উঠল। হকার নিশ্চয় কাগজ দেয়ার পর নক করে তা জানিয়ে দিয়েছিল। কাগজ নিয়ে আহমদ মুসা ঘরে প্রবেশ করল। বসল গিয়ে সোফায়। আন্দামানের একমাত্র ইংরেজী দৈনিক ‘দি আন্দামান’-এর প্রথম পাতাটা চোখের সামনে তুলে ধরল আহমদ মুসা। কাগজের প্রথম পাতায় চোখ বুলাতে গিয়ে পত্রিকার ডান কোনার একটা টপ ছবির উপর আহমদ মুসর চোখ আটকে গেল। ছবিটা ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর। আহমদ মুসা কৌতুহল নিয়ে তাকিয়েছিল ছবির ইয়াহিয়া আহমাদুল্লাহর দিকে। কিন্তু ছবির নিচের ক্যাপশনে চোখ পড়তেই আঁৎকে উঠল আহমদ মুসা। নিউজের শিরোনাম পড়ল, ‘সেই সাগর তীরেই আরেকটি রহস্যজনক মৃত্যু।’ নিউজটি রুদ্ধশ্বাসে পড়ল আহমদ মুসা। পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৪০ মাইল দূরে হাইওয়ের অদূরে সমুদ্র উপকূলে অর্ধডোবা অবস্থায় তার লাশ পাওয়া গেছে। পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট অনুসারে জলে ডোবার কারণে শাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে সে। তার শরীরে অন্য কোন আঘাত পাওয়া যায়নি।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৮৩ জন


এ জাতীয় গল্প

→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ১
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ১ বাকি অংশ
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ২
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ২ বাকি অংশ
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৩ বাকি অংশ
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৪
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৪ বাকি অংশ
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৫
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৫ বাকি অংশ
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৬
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৬ বাকি অংশ
→ কালাপানির আন্দামানে চ্যাপ্টার- ৭

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now