বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

টেক্সাসের সকাল বেলাটা

"ওয়েস্টার্ন গল্প" বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান নাসরুল্লাহ (০ পয়েন্ট)

X টেক্সাসের সকাল বেলাটা সব সময় অন্য রকম। নয়নাভিরাম, মনোমুগ্ধকর। আজকের সকালটাও তার ব্যতিক্রম নয়। জন রায়ান টেক্সাসের এই মনোরম সকালটা সব সময় উপভোগ করে। মনে কেমন একটা উৎফুল্ল আর পবিত্র ভাব জাগে। অথচ ধর্ম-কর্ম নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না ও। রাইসা যখন বেঁচেছিল, ওকে গির্জামুখো করার অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কখনো ওর কথায় কান দেয়নি রায়ান। কিন্তু অন্য যে কোনো ব্যাপারে সে চেষ্টা করত রাইসা কোনো কথা বললে তা রাখার জন্যে। রাইসার সঙ্গে কখনো ঝগড়াঝাটির উপক্রম হলেও সকাল বেলাটায় সেটা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করত সে। কিন্তু আজকের সকালটা রায়ানের জন্যে অন্যরকম। বার্নের ভেতর শুয়ে আছে ও। বেড়ার ফাঁকে সূর্যের আলোর ছটা এসে পড়েছে। তাপের মাত্রা বাড়ছে। অস্বস্তি বোধ করেছ রায়ান। সকালটা উপভোগ করতে পারছে না। বার্নের ভেতরটা দিনের আলোয় উদ্ভাসিত। খড়ের ওপর শুয়ে আছে ও। ওর হাত-পা শক্ত করে বাঁধা। ঘণ্টা দুই আগে জেগে উঠেছে ও। টেক্সাসের সকাল আস্তে আস্তে দুপুরের দিকে গড়াচ্ছে ওর চোখের ওপর দিয়ে। কিন্তু শক্ত দড়ির বাঁধনে বন্দি ও। ছাড়া পাওয়ার কোনো উপায় দেখছে না। তা ছাড়া ওর কাছাকাছি বসে পাহারা দিচ্ছে দু’জন কাউবয়। দু’জনেই অবশ্য কান্ত, ঢুলছে বসে বসে। অস্ফুট আওয়াজ করল রায়ান। চোখ মেলে চাইল একজন। বন্দিকে আগের অবস্থায় দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে হাই তুলল। এরপর বলল, ‘মিস্টার, গত রাতে তুমি মারাত্মক এক ভুল করে ফেলেছ। না-জেনে শুনে একদল ভুল লোকের গায়ে হাত তুলেছ। এদের মধ্যে পিট তো চাইছে তোমাকে স্রেফ চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। আর মন্ট? সে যে কী করবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু যা করার তা ঠিকই করবে। বেয়াদবির শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেবে তোমাকে। ওকে আমি শপথ করে বলতে শুনেছি।’ লোকটার দিকে খানিকণ তাকিয়ে রইল রায়ান। নেহাত সাদাসিধে কাউবয়। মন্ট কিংবা পিটের দলের সাথে খাপ খায় না। মৃদু হাসল ও। বলল, ‘তোমাদের কিন্তু ওদের মতো মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে মায়-দয়া আছে মনে। ওরা তো ঘোড়াচোর। পরের ঘোড়া দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। তাই এই নাটক সাজিয়েছে। তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও। আমি কেটে পড়ি এখান থেকে।’ ‘উঁহুঁ, সেটা পারব না।’ সজোরে মাথা দোলাল লোকটি। ‘তাহলে ওরা স্রেফ খেয়ে ফেলবে আমাদের। তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না, মিস্টার। উঁহুঁ, কখনোই না। তার চেয়ে ওরা র‌্যাঞ্চ থেকে ফিরে না-আসা পর্যন্ত চুপচাপ শুয়ে থাকো।’ নিজের হাতে ধরা রাইফেলটা একটু নাড়াল লোকটা। হেলাভরে উঁচিয়ে ধরল রায়ানের দিকে। ‘এই মন্ট লোকটা কে বলো তো?’ নিরীহ মুখে জানতে চাইল রায়ান। ‘তোমরা কোন র‌্যাঞ্চের হয়ে কাজ করছ?’ ‘কে-বার।’ রাইফেলঅলা লোকটা জবাব দিল। ‘বুড়ো রেস্টনের আউটর্র্ফিট। মন্ট বেলারের ব্যাপারটা আমি ঠিক জানি না। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নিউ মেক্সিকোর লিংকন কাউন্টি থেকে এসেছে জানি। আমাদের এখানে রাসলারের উৎপাত ছিল। তাদের দমনের জন্যে আনা হয়েছিল তাকে। ও আর পিট কেলার এসে রাসলারের উৎপাত বন্ধ করেছে। বছর তিনেক আগে এসেছিল ওরা। তার পর থেকে এখানে।’ ‘আমার পায়ের রশিটা একটু ঢিলে করে দেবে, ভাই?’ লোকটাকে অনুরোধ জানাল রায়ান। ‘রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।’ ‘উঁহুঁ, আমাদের ওপর আদেশ হলো তোমাকে পাহারা দেয়ার। তোমাকে ছোঁয়াও যাবে না, এমনকী, তোমার কাছে যাওয়াও নিষেধ। তোমাকে তেড়িবেড়ি করতে দেখলে দূর থেকে তোমার বুকে স্রেফ একটা বুলেট ঢুকিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’ কঠিন চোখে লোকদুটোর দিকে তাকাল রায়ান। তারপর বলল, ‘এই ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, আমার জানা নেই। তবে তোমাদের সৌজন্যের কথা আমার মনে থাকবে। তোমাদের কিন্তু এদের সঙ্গে মানায় না।’ ' বিব্রত বোধ করছে দুই কাউবয়। রায়ান সম্পর্কে ওদের বলা হয়েছিল, লোকটা কঠিন ও বিপজ্জনক। লোকটা কঠিন ঠিকই আছে, কিন্তু ওদের কাছে আদৌ বিপজ্জনক মনে হচ্ছে না। তবু লোকটার কঠিন আর ধূসর রঙের চোখদুটোর দিকে তাকানোর শক্তি পাচ্ছে না ওরা। চোখ ফিরিয়ে নিল। লোকটার মধ্যে যা আছে, তা হলো কঠিন পৌরুষ আর ব্যক্তিত্ব। এটা কিন্তু মন্ট বেলার আর পিট কেলারের চোখে কখনো দেখেনি ওরা। ওদের চোখে সারাণ অশুভ দৃষ্টি। তবু কেমন যেন একটা ভীতিকর ব্যাপারও দেখতে পাচ্ছে তারা বন্দির চোখে। এমন ভাব তাদের সাদাসিধে কাউবয় জীবনে তেমন পরিচিত নয়। আচমকা শিউরে উঠল একজন। বিড় বিড় করল লোকটা। তারপর উঠে বেরিয়ে গেল। সঙ্গীকে বলল, সে একটু কফি খেয়ে গলা ভেজাতে যাচ্ছে। রাইফেলঅলা লোকটা একটু পিছিয়ে বসল। তারপর রায়ানের মাথার ওপর দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। বন্দির চোখে তাকাতে চাইছে না সে। ঠিক দুপুরের দিকে কয়েকটা ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনল রায়ান। মিনিটখানেক পর খোলা দরজায় মন্ট বেলারের হালকা পাতলা শরীরটা দেখতে পেল। ওর পেছনে আরো কয়েকজন এসে ঢুকল বার্নে। লোকগুলোকে চিনতে পারল রায়ান। গতরাতের ধুন্ধুমার লড়াইয়ের সময় এরাও ছিল। এদের অনেকের শরীরের নানা জায়গায় ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজ ছাড়াও আছে দু’একজন। তবে তাদের গায়েও গত রাতের চি‎হ্ন কিছু কিছু দেখতে পেল রায়ান। ভেতরে ঢুকে ভীষণ চোখে বন্দির মুখের দিকে তাকাল মন্ট বেলার। সামান্য ভীতির চি‎হ্নও নেই লোকটার মুখে। তার বদলে এমন এক কঠিন অভিব্যক্তি ফুটে আছে, যে-অভিব্যক্তির সঙ্গে ওর কোন পরিচয়ই নেই। লোকটা যেন ভয় পেতেই জানে না। রায়ানকে বন্দি অবস্থায় জবুথবু হয়ে বসে থাকতে দেখবে আশা করেছিল মন্ট। কিন্তু লোকটার এই অকুতোভয় ভঙ্গি ওর ক্রোধ আরো বাড়িয়ে দিল। খেঁকিয়ে উঠে হুকুম দিল, ‘ওটাকে টেনে তোলো। পায়ের বাঁধন খুলে দাও।’ হুকুম পালন হতেই আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল রায়ান। রক্ত চলাচল শুরু হওয়ায় দুই পায়ে ঝিন ঝিন অনুভব করল। মনে হলো দুই পায়ে একযোগে হাজার হাজার সূঁচ বিঁধিয়ে দিচ্ছে কেউ। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে রায়ান। ব্যথার ভাব মুখে ফুটে উঠতে দিচ্ছে না। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচণ্ড আঘাত খেল ও। আচমকা সারা মুখ ও মাথায় ব্যথা ছড়িয়ে পড়ল। সেখান থেকে পুরো শরীরে। ওর শরীর থর থর করে কাঁপতে শুরু করল। দুর্বল পা দুটো শরীরের ভর যেন সইতে পারছে না। আগায় সীসে মোড়ানো চাবুকটা ফের ঝলসে উঠল মন্টের হাতে। আবার আঘাত হানল ওটা রায়ানের শরীরে। এবার পেটে লাগল। এর পর যেন বৃষ্টির মতো শুরু হয়ে গেল চাবুকের আঘাত। মন্টকে দেখে মনে হলো রাগে স্রেফ পাগল হয়ে গেছে। সমানে চাবুক চালাচ্ছে ও, এক মুহূর্ত বিরাম দিচ্ছে না। সে সাথে গালাগালি আর অভিশাপের তুবড়ি ছুটছে মুখ দিয়ে। দু’হাত বাঁধা থাকায় বাধা দেয়ার কোনো সুযোগই পাচ্ছে না রায়ান। চাবুকের আঘাতে সারা শরীরে যেন আগুন জ্বলছে। আস্তে আস্তে বোধের বাইরে চলে যাচ্ছে যন্ত্রণা। টেক্সাসের উজ্জ্বল দুপুরের রঙ মিলিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। অসহ্য কষ্টে শরীর বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। একসময় জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল রায়ান বার্নের ভেতর। * * * চেতনা ফিরে পেতেই সারা শরীরে নরকযন্ত্রণা অনুভব করল রায়ান। জীবনে আর কখনো এমন যন্ত্রণা ভোগ করেছে কিনা মনে করতে পারল না। চাবুকের ঘায়ে মুখ কেটে ফালা ফালা হয়ে গেছে, ফুলে গিয়ে চোখের পাতা বুজে এসেছে প্রায়। এমন দিনের আলোয়ও সব কেমন ঝাপসা দেখাচ্ছে। ওর চারদিকে লোকের উপস্থিতি টের পাচ্ছে সে। লোকগুলো কথা বলছে। কিন্তু ওদের গলার স্বরকে মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে ভেসে আসা শব্দের মতো। ঝাপসা চোখে চারপাশে দাঁড়ানো লোকগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে নরক থেকে এই মাত্র উঠে আসা শয়তানের দল। আচমকা মুখের ওপর ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা টের পেল ও। ঘোর কেটে গেল। আরো দ্বিগুণ হয়ে উঠল যেন শারীরিক যন্ত্রণা। একই সাথে টের পেল বুকফাটা তৃষ্ণা। গলা শুকিয়ে যেন কাঠ হয়ে গেছে ওর। মুখে পানির ফোঁটা পড়তে নিজের অজান্তে ঠোঁট ফাঁক করে লোভীর মতো জিভ বের করে চাটতে লাগল। ওর মুখের ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়েছিল মন্ট বেলার। আহতকে ভিখিরির মতো ঠোঁট চাটতে দেখে খুশিতে দাঁত বেরিয়ে পড়ল লোকটার। বুটের গুঁতো লাগাল ও রায়ানের মাথায়। খুশিতে ঘোঁৎ করে উঠল, ‘মিস্টার! তুমি আস্ত বোকা। তাই মানুষ চিনতে পারোনি। ভুল লোকের গায়ে হাত তুলেছিলে। এখানে এমন লোকও আছে, যাদের গায়ে তোমার মতো খেঁকশিয়ালের হাত তোলার সাহস থাকা উচিত নয়। আমি সেধরনের মানুষদের একজন। আমি তোমাকে এখনো তেমন কিছু করিনি। তোমার আরো শাস্তি পাওনা আছে। আমার মতো লোকের গায়ে হাত তুলতে হলে আমাকে চিরতরে শেষ করে দিতে হবে। যেমন আমি তোমাকে শেষ করে দেব। তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচানোর সাধ্য কারো নেই।’ ‘আমারও সে একই কথা, মিস্টার। তুমি লোক চিনতে ভুল করেছ। পিট কেলার এমন এক লোক, যার দিকে একটি আঙুল উঁচানো মানে নিজের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করা।’ এ-কান থেকে ও-কানজোড়া হাসি নিয়ে পিট কেলার দাঁড়িয়েছিল বেলারের পাশেই। ভূমিশয্যায় শায়িত লোকটাকে দেখে দারুণ আনন্দ পাচ্ছে। বেলারের বক্তব্য শেষ হতেই জানিয়ে দিল নিজের বক্তব্যও। গলা খাঁকার দিয়ে সাড়ম্ভরে থুতু ফেলল। তামাকের রসমেশানো বাদামি রঙের নোংরা পদার্থটুকু গিয়ে পড়ল রায়ানের চিবুকের ওপর। শায়িত বন্দির মাথার পাশে গিয়ে উবু হয়ে বসল মন্ট। ওর চিবুকের ওপর সঙ্গীর ‘কীর্তি’র দিকে তাকাল এক নজর। হাসল। মজা পেয়েছে সেও। তারপর নেহাত আলাপের ভঙ্গিতে বলল রায়ানকে, ‘শোনো, স্ট্রেঞ্জার। তোমার হাত-পা গরুর চামড়া দিয়ে বাঁধা। কাঁচা চামড়া। তোমার কপালে কী ঘটতে যাচ্ছে যদি জানতে চাও, তাহলে বলি। এই চামড়া যতই রোদে শুকোবে, ততই খিঁচে বসবে। এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাবে যে তোমার মাও কোনোদিন তোমাকে অমন করে জড়িয়ে ধরে আদর করেনি। আমরা কদিন পরে দেখতে আসব, তোমার কী অবস্থা হয়েছে। এটা এমন কিছু না। অ্যাপাচিদের কাছ থেকে শেখা ছোট্ট একটা কৌশল মাত্র।’ উঠে সোজা হয়ে ঘুরে দাঁড়াল ও। গট গট করে হেঁটে ঘোড়ার কাছে গেল। বন্দির দিকে আরেকবার তাকিয়ে লাফ দিয়ে চড়ে বসল বাহনের পিঠে। যুৎ হয়ে বসে আবার চাইল। ‘দিনকয়েক পরে আবার দেখতে আসব, স্ট্রেঞ্জার। কথা দিচ্ছি।’ হলুদ দাঁতের সারি দেখিয়ে হাসল আবার। ‘তবে তুমি আমায় দেখবে না। কারণ তুমি ততদিনে মরে কয়োটের খাদ্য হয়ে যাবে।’ রায়ান দেখল ওর ফ্যাকাসে ঠোঁটদুটো। এ-লোক নিষ্ঠুর। খুন করাই ওর আনন্দ। কাউকে কষ্ট দিয়ে মারতেই বেশি পছন্দ করে। অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় ধুঁকতে ধুঁকতে ভাবল ও। ঘোড়ার পেটে স্পার দাবাল কেলার। ওর লোকেরাও চলল পিছু পিছু। লোকগুলোর ঘোড়ার খুরের শব্দ মিলিয়ে যাওয়ার পরও কয়েক মিনিট চুপচাপ পড়ে রইল রায়ান। তারপর শরীরের ব্যথা-বেদনার কথা ভুলে গিয়ে পরিস্থিতি বিচার করার চেষ্টা করল। ব্যাপারটা সহজ নয়। কিন্তু সে জানে, এখন মাথা না-ঘামালে আর কোনোদিনই সে-সুযোগ পাবে না। বার্নের ভেতর প্রচণ্ড মারধরে সে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর তাকে এখানে নিয়ে এসেছে ওরা। জায়গাটা চিনতে পারল না ও। তবে মনে হচ্ছে মোটামুটি একটা মরুভূমি। শুকনো খটখটে মাটি। মাঝে মধ্যে বালিয়াড়িও দেখা যাচ্ছে। কাছেই ছোট ছোট পাহাড়-টিলা। আশে পাশে মানুষের বসতি আছে বলে মনে হয় না। নিজের অবস্থাটা পুরোপুরি বুঝতে পারছে রায়ান। গরুর কাঁচা চামড়া দিয়ে হাত-পা বাঁধা ওর। এ-চামড়া যতই শুকোবে, ততই শক্ত হয়ে এঁটে বসবে। একসময় চামড়া কেটে সেঁটে যাবে শরীরের সাথে। সেটা যে কেমন অমানুষিক যন্ত্রণা, ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। এই অমানুষিক যন্ত্রণা সইতে সইতে এক সময় দুর্বল হয়ে পড়বে সে। খিদেয় শরীরের শক্তি নিঃশেষ হয়ে আসবে। সময় যতই বয়ে যাবে, ততই তার মুক্তি পাওয়ার আশা কমতে থাকবে। এক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে সে এবং সে-অবস্থায় মারা যাবে। ওকে খুব খারাপভাবে মারধর করা হয়েছে। ও শরীরে যথেষ্ট শক্তি ধরে, এক কথায় অসাধারণ, তবু এখন সে দুর্বলতার চরমে পৌঁছেছে। এতটা দুর্বলতা সে আর কখনো অনুভব করছে কিনা মনে করতে পারছে না। ব্যাপারটা চিন্তা করতে অবাক লাগছে ওর। কিন্তু‘ সে যা-ই হোক, জীবনে এর চেয়ে আরো অনেক কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছে ওকে। কোনো সমস্যাই শেষ পর্যন্ত হারাতে পারেনি। প্রচণ্ড মনের জোর আর ইচ্ছাশক্তির বলে কাটিয়ে উঠেছে সেসব। ওর বিশ্বাস, এখানেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে মুক্ত করার একটা উপায় বের করে ফেলবে সে। কিন্তু শরীরের এরকম ভয়াবহ অবস্থায় কীভাবে তা করবে বুঝে উঠতে পারছে না। পুরো ব্যাপারটা শুরু থেকে ভাবতে চাইল সে। শারীরিক যন্ত্রণার কারণে ওর মাথা কাজ করতে চাইছে না। কিন্তু ও জানে, এই অমানুষিক দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে ওকে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে। সমস্যার ধরনটা বুঝতে হবে। ভয় পাওয়া কিংবা হতাশ হওয়া চলবে না। বাইসনে ঢোকার আগে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, এমনটা স্বপ্নেও ভাবেনি সে। সে নির্বিরোধী মানুষ। কারো সাতে-পাঁচে থাকার স্বভাব ওর নয়। এক সময় ল’ম্যানের কাজ করেছে, কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী কখনো কখনো কারো গায়ে হাত তুলতে হয়েছে, কারো দিকে পিস্তল উঁচাতে হয়েছে। কিন্তু এসবই ছিল চাকরির অংশ। টেক্সাসে বেয়াড়া টাইপের কিছু লোক ওর হাতে নিকেশ হয়েছে, এটা সত্যি। তবে রায়ান কখনো আগ বাড়িয়ে কারো গায়ে হাত তোলেনি, খুন করা তো দূরের কথা। রাইসাকে বিয়ে করে র‌্যাঞ্চিং শুরু করার পর থেকে ওকে আর পিস্তলের দিকে হাত বাড়াতে হয়নি। পশ্চিমের একজন সৎ ও কঠোর পরিশ্রমী র‌্যাঞ্চারের ধরনে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। এটা আসলে ওর নিজেরই স্বভাব, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রাইসার নিষেধ। র‌্যাঞ্চিংয়ে লোকসান না-হলে এবং রাইসা অকালে মারা না-গেলে ওখানেই থেকে যেত ও। টেক্সাস ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হতো না। কিন্তু সেটা অন্য ব্যাপার। তার সাথে ওর আজকের এ-অবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। এমন নয় যে, সে কোনো ভুল করেছে এবং ভুলের খেসারত হিসেবে তাকে আজকের এ-অবস্থায় পড়তে হয়েছে। এ-লোকগুলোর কাউকে সে চেনে না। কোনোদিন দেখেছে বলে মনেও করতে পারছে না। এদের সাথে ওর কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তবু তা হয়ে গেছে। কিন্তু সে জন্যে সে মোটেই দায়ী নয়। লোকগুলো আসলেই খারাপ। নিরীহ কাউকে পেলে হয়রানি করা ওদের স্বভাব। ওর যথাসর্বস্ব লুটে নেয়াই ওদের ধর্ম। ওদের লোভের আগুনে পুড়ে এখন জীবন সংশয় হয়ে উঠেছে রায়ানের। ওর হাত-পা বেঁধে মরুভূমিতে ফেলে গেছে, যাবার সময় বলে গেছে, কদিন পরে দেখতে আসবে, ও মারা গেছে কিনা। নিজের অবস্থাটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে রায়ান। ওর হাত-পা বাঁধা গরুর কাঁচা চামড়া দিয়ে। রোদের তেজে এই চামড়া আস্তে আস্তে শুকোতে থাকবে। যতই শুকোবে, ততই এঁটে বসবে বাঁধন। এক সময় হাত-পায়ে রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাবে। চামড়া কেটে বসে যাবে মাংসের গভীরে। অসহায়ের মতো যন্ত্রণায় প্রাণফাটা আর্তনাদ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বন্দির জন্যে। একসময় মরে গিয়ে কয়োটের খাবারে পরিণত হবে।


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২১১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now